ভ্রমণের গল্প হল মানুষের সাথে দেখা হবার গল্প। মানুষ আর তাদের অযাচিত ভালোবাসার গল্প। সেই পস্কো অত্যাচারিত গোভিন্দপুর গ্রামের বৃদ্ধা মহিলার কথা আমার মনে পড়ে, যিনি হাসি মুখে নিজের গায়ে ছররা গুলির ক্ষত দেখাবার পর বলেছিলেন তার বাড়ি থেকে কিছুতেই না খেয়ে যেতে দেবেননা। আমার মনে পড়ে গোপেন চন্দ্র শর্মার কথা যার সাথে মুর্শিদাবাদের সীমান্তে সীমান্তে ঘুরে মানুষের গল্প শুনেছি। আমার ঠাকুর্দার বাবা তার ছেলেবেলায় মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় চলে আসেন। তারপর আর কখনো ফিরে যাননি। তার সেই গ্রামের বাড়ি আমি দেখিনি। গোপেনদা আমায় বলেছিলেন একদিন সেই গ্রামের বাড়ি খুঁজে বের করবেন আমার সাথে বেরিয়ে। চীনের সেই বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীর ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে এখনো আমার কাছে একটি লাল সুতো রয়ে গেছে। তাঁর ভাষা আমি বুঝিনি। শুধু বুঝেছিলাম ভাষা বড় ব্যবধান নয়। আমার কাছে ভ্রমণ মানে তাই চীনের প্রাচীর, পারির আইফেল টাওয়ার বা তাজমহল নয়। তা হল আইফেল টাওয়ারের নিচে দেখা হওয়া বিন আহমেদ খানের গল্প, হিমাচলে হঠাৎ দেখা হওয়া কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এহসান-উল-হকের সাথে আলাপ, চীনের ফুটপাতে বসে মদ খেতে খেতে মাজিদ কারিমির কাছে শোনা কুর্দিস্তানের কিসসা। প্রায়শই মনে হয় তাদের সাথে যদি আবার দেখা হত। কিন্তু সেই ‘আ ম্যাপ ফর স্যাটারডে’র সাংবাদিকের মত আমিও জানি সেই জায়গায় আর ফেরা যাবেনা। ওই ভ্রমণগুলো আর নেই। কারণ সেই মানুষগুলো ওই ভ্রমণের থেকে এগিয়ে গেছে। শুধু সে ভ্রমণের গল্পগুলো রয়ে গেছে। প্রকৃত ভবঘুরের সাথে আলাপ আমি তখন প্রায় দেড় মাস ধরে চীনের শহরগুলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছি। চীন দেশের পশ্চিম প্রান্তে আগেই ছিলাম ২০১৭ নাগাদ প্রায় ছয় মাসের জন্য। এখন থাকি পূর্ব প্রান্তে। প্রথমবার ফিরে যাবার পর প্রত্যেকের দাবি ছিল চীনের প্রাচীরের অভিজ্ঞতা শোনার। অথচ আমি তা না দেখেই সেবার দেশে ফিরে আসি। এবারও এসে নানজিং, শিয়ান এসব ঘুরে ফেলেছি। টেরাকোটা ওয়ারিয়ার্স এর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। তবু কিছু করেই আর চীনের সেই সুবিশাল প্রাচীরের সামনে যাওয়া হচ্ছিল না। এই ভাবতে ভাবতে গ্রীষ্মের প্রবল দাবদাহে হঠাৎ একদিন বেরিয়ে পড়লাম। বেরোবার দিনটি যদিও ঠিক দাবদাহের দিন ছিল না। ছিল টাইফুন এর দিন। লোকজন মানা করছিল বেরোতে। পূর্ব চীন নাকি ডুবে যাবার অবস্থায় যেতে চলেছে। আমি যদিও আগেভাগে এক ডবল সাইজের রেইনকোট কিনে রেখেছিলাম। সকালবেলা প্রবল বৃষ্টির মাঝে সেই রেইনকোট দিয়ে পিঠের ব্যাগ পর্যন্ত ঢেকে বাস ধরে সোজা স্টেশন। ভয় হচ্ছিল ট্রেন পাব কিনা, এই প্রবল বৃষ্টিতে তা বন্ধ করে দেয়া হবে কিনা, কিন্তু ভাগ্যের মহিমায় অবশেষে বেজিং যাওয়ার সুযোগ হলো। Suzhou থেকে বেইজিং পৌঁছতে প্রায় ১৮ ঘণ্টা লেগে যায় স্লো ট্রেনে। পয়সাকড়ি নাই ফলে আমার চীন দেশের ভ্রমণ এই ট্রেনেই হয়েছে। তাও জেনারেল কামরায়। বসে বসে। মানুষ এসে বন্ধুত্ব করেছে সম্পূর্ণ অচেনা ভাষায়। নানজিং যাবার পথে একজন চৈনিক ভদ্রলোক গান গেয়ে শুনিয়েছিলেন শাহরুখ খানের। সাংহাই থেকে ফেরার পথে একজন তার বস্তার পাশে সরে গিয়ে বসার জায়গা করে দিয়েছিলেন। কমলালেবু ভাগ করে নিয়েছিলেন সম্পূর্ণ অচেনা ভিনদেশী ভাষা না জানা মুহূর্তের বন্ধুরা। বেইজিংয়ের ট্রেন রাতের ছিল। পরদিন সকালে পৌঁছে দেখি অঝোরে বৃষ্টি। এদিকে থাকার জায়গা বুক করার সময় দেখেছিলাম যে যেদিন পৌঁছাব ঐদিন কোন সস্তার জায়গা ফাঁকা নেই। জীবনে রাস্তায় বহুবার থেকেছি, ফুটপাতে, মন্দির চাতালে, মশার কামড়ে আরামে ঘুমিয়েছি। ফলে তা নিয়ে চিন্তা না করে বেইজিং চলে এলাম। কিন্তু এসে ভয় ধরল যে এই বৃষ্টি যদি সারারাত চলে তাহলে রাস্তায় কিভাবে থাকবো! যাই হোক যে ক্ষেত্রে উপায় নেই সে ক্ষেত্রে আল্লাহ সহায় ধরে এগিয়ে যাওয়া সহজ। আমি পিঠের বিশাল ভারি ব্যাগ ( দেড় মাস চালানোর জন্য যা জরুরি ছিল) নিয়ে সেদিন সোজা চলে যাই সামার প্যালেস-এ। ভাগ্যের জোরে তখন বৃষ্টি থেমে গেছে। পিঠের ভারী ব্যাগ এবং হাতের ব্যাগ নিয়ে সামার প্যালেসের পাহাড়ে ওঠা যে কি দুর্বিষহ তা বলাই বাহুল্য। এমনকি ফেরার সময় দেখি ব্রিজের পর ব্রিজ হেঁটে পার হতে হবে ওই ব্যাগ নিয়ে! ফিরে এসে এক পার্কে রাত্তিরের আস্তানা গাড়ি। আগের দিন সারাক্ষণ ট্রেনে না ঘুমিয়ে বসে এসে সামার প্যালেস-এর চড়াই উতরাই তখন আমার চোখে রাজ্যের ঘুম নিয়ে আসছে। অথচ পার্কের বেঞ্চে ঘুমানো মুশকিল। এ দেশে এক শহর থেকে অন্য শহরে গেলে রেজিস্ট্রেশন করতে হয় পুলিশ স্টেশনে, নতুন থাকার জায়গার। আমার তো নেই ফলে পার্কে হঠাৎ করে পুলিশ চলে এসে ঘুমোতে দেখলে উটকো ঝামেলার সম্ভাবনা বেশি। ঈশ্বরের কৃপায় সেদিন রাতে বৃষ্টি নেই। পার্কে পায়চারি করতে করতে দেখতে পাই সারারাতের একটি খাবারের দোকান। সেখানে ঢুকে ধীরে ধীরে খেতে খেতে ভোর হয়ে যায়। ওই দোকানটাই সেদিন প্রাচীন যুগের কোন রাজার বানানো ভবঘুরেদের সরাইখানা আমার জন্য। আমার থাকার জায়গার ব্যবস্থা পরের দিন দুপুর ১২’টার পর। এদিকে ভোর হয়ে গেছে। বেইজিংয়ের থাকার প্ল্যান চারদিনের। সময় নষ্ট করব না ভেবে ওই ক্লান্ত শরীর নিয়ে ভোরের মেট্রো ধরে চলে যাই টেম্পল অফ হেভেন-এ। ভুল মেট্রো গেট দিয়ে বেরিয়ে অনেক হেঁটে অবশেষে মন্দিরের দরজায় পৌঁছই। সে এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। ভোরবেলা সেই মন্দিরের বাগানে মানুষ কুংফু শিখছে। আস্তে আস্তে মন্দিরের দরজা খুলছে। আর আমি দেখতে পাচ্ছি সাদা ধবধবে শান্তির প্রতীকের মত সেই প্রকাণ্ড মন্দির ভেতরে আসতে বলছে। এ ঘুমের আরামের থেকে কিছু কম নয়। মন্দির দেখে চলে যাই টিয়ানানমেন স্কোয়ারে। মাও জে দং-এর শরীর সেখানে শুয়ে আছে। ভাবি তা দেখে নিয়ে পৌঁছে যাব থাকার জায়গায়। সেখানে পৌঁছে বীভৎস বড় মানুষের লাইন আমায় হঠাৎ করে মনে করিয়ে দেয় ক্লান্তির কথা। কেন জানি না ঘুম পেতে থাকে। অবশেষে সবকিছুর পাততাড়ি গুটিয়ে থাকার জায়গায় পৌঁছে যাই। সেখানে শোয়ার ব্যবস্থা বসার ঘরের সোফায়। মানুষজন যাতায়াত করছে সমানে। কিন্তু শরীরের নিজস্ব দর্শন আছে, আমার মত ইন্ট্রোভার্ট মানুষ অত লোকের সামনেই সটান নাক ডেকে ঘুমোতে শুরু করে দেয়। সে ঘুম চলে সেদিন বিকেল পাঁচটা অবধি। ঘুম থেকে উঠে বিকেলবেলা সেদিন সোজা চলে যাই Wangfujiang স্ট্রিটে। সে রাস্তা বেইজিংয়ের বড় বড় শপিং মল, খাবারের দোকান এবং রাত্রি জীবনের। এই রাস্তা বিখ্যাত ছিল তার স্ট্রিট-ফুড এর জন্য। বিশেষ করে সেখানকার এগজটিক খাবার-দাবারের দোকানগুলোর কারণে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পৌঁছে দেখি সেইসব সাপ, কাঁকড়া বিছে অথবা কুমির খেতে হলে আপনাকে শুধুমাত্র একটি দোকানের শরণাপন্ন হতে হবে। রাস্তা সারাবার জন্য স্ট্রিট ফুডের দোকানগুলি সব বন্ধ। সেখানে রাস্তায় ঘুরে বেরিয়েছি অনেক রাত অব্ধি বেইজিংয়ের বিখ্যাত কোল্ড নুডলস খেয়ে। পায়ে জলকাদা গরমে ফোসকা পড়ে গেছে। সেখানকার শপিং-মলে ঢুকে ব্যান্ডেড কিনে, লাগিয়ে আবার বেরিয়ে পড়েছি। পরদিন সকালে আমার গ্রেট ওয়াল যাত্রা শুরু। বেইজিংয়ের বাস স্ট্যান্ড থেকে উঠে যখন গ্রেট ওয়ালের দিকে যাচ্ছি, উপলব্ধি করি ম্যাপে কাজ হবে না। ম্যাপ দেখাচ্ছে বাসের শেষ প্রান্তে যেতে হবে। অপরদিকে বিদেশি যাত্রীরা তার কিছু স্টেশন আগে নেমে যাচ্ছে। তাদের পেছনে পেছনে আমিও নেমে পড়ি। কোন বাসে যেতে হবে কোন স্টেশনে নামতে হবে তা কিছুই জানি না। হঠাৎ আলাপ হয় এক সিঙ্গাপুরের ছেলের সাথে। সেও গ্রেট ওয়াল দেখতে যাচ্ছে। গল্প করতে করতে আমরা একসাথে পৌঁছে যাই সেই প্রাচীন বিস্ময়ের সামনে। সেই ছেলে, ওই প্রবল গরমে রোপওয়ে নেবে স্থির করে। তার ভাড়া প্রায় ২০০০ টাকা ভারতীয় মূল্যে। আমি সিদ্ধান্ত নিই সেই চাঁদি ফাটা রোদ্দুরেও হেঁটেই উঠব। ওই পয়সায় আমার তিন দিন থাকা হয়ে যাবে বেইজিংয়ে! কিন্তু অর্ধেক সিঁড়ি ওঠার পর বুঝতে পারি এই সিদ্ধান্তের ভয়াবহতা। গরমে, ঘামে, তেষ্টায় গলা ফেটে যাচ্ছে। সঙ্গে জল পর্যন্ত নেই। সিঁড়ি সটান উঠে গেছে স্বর্গের দিকে। নিচে গিয়ে আবার রোপওয়ে তে ওঠার কষ্ট আর উপরে হাঁপের টানে জর্জরিত হয়ে ওঠার কষ্টের মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে দেখি ২০০০ টাকার বেঁচে যাওয়া কিছু নিঃশ্বাস দিচ্ছে। সেই ওপরে উঠতে থাকি। তারপরের অভিজ্ঞতা যাঁরা সেই প্রাচীন দেওয়ালের উপর চড়েছেন, তাঁরা বুঝবেন। মাইলের পর মাইল এগিয়ে চলছে সেই দেওয়াল। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে। দেওয়ালের উপর থেকে আপনি দেখতে পাচ্ছেন পাহাড়ের ওপর ভুলভুলাইয়ার মত, নদীর স্রোতের মতো, প্রাচীর এগিয়ে চলে যাচ্ছে পাহাড়ের ভেতর দিয়ে। পরদিন সকালে বেরিয়ে পৌঁছাই টিয়ানানমেন স্কোয়ারে-এর কাছে ফরবিডেন সিটিতে। সেই প্রাসাদ আদতে একটা শহরের মত। তার একটি ঘর যেন আস্ত একটা মহল্লা। সেই ফরবিডেন সিটিতে দেখেছি সব হলুদ ঘরের ভেতর জেগে আছে একটা কালো প্রাসাদের বাড়ি। সেটা তাদের লাইব্রেরি। কালো রং তাকে আগুন থেকে বাঁচাবার জন্য। বেইজিং দেখে ট্রেনে চড়ে যাচ্ছি ইনার মঙ্গলিয়া। তাদের রাজধানী হোহট শহরে। ট্রেনে দেখতে পাচ্ছি মোঙ্গলদের। পার্থক্য করতে পারছি। হানদের থেকে তাদের কান, গায়ের রং, চোখ অন্যরকম। দেখতে তারা অনেক বেশি কাঠখোট্টা। মনের দিক থেকে ততটাই সরল। সেই শহরের হোস্টেলে দেখেছি দেওয়ালে আমার ভাষা বাংলায় কেউ লেখে দিয়ে গেছে ‘আবার ফিরে আসবো’। এই শহর থেকে যাই ইনার মঙ্গলিয়ার Baotou শহরে। যে শহর অবস্থিত একটি আস্ত গ্রাসল্যান্ড-এর ওপর। ট্রেন চলেছে হলুদ হয়ে থাকা গ্রাস ল্যান্ড-এর ভেতর দিয়ে। কখনো মাইলের পর মাইল সবুজ ঘাস। আশেপাশে মোঙ্গলদের তাঁবু, ভুঁইফোড়ের মত বেরিয়ে আসছে সেই ঘাসের ভেতর থেকে। ইনার মঙ্গলিয়া তে আমি খেয়েছি ঘোড়ার দুধ। চারিদিকে দেখেছি চেঙ্গিস খানের ছবি, মূর্তি, মদের পাত্র। ইনার মঙ্গলিয়া থেকে তিব্বতের রাস্তায় গেছি এরপর। ট্রেন চলেছে পাহাড়ের মাঝখান থেকে। রাস্তায় ভর্তি সুড়ঙ্গ। আশেপাশে বরফে ঢাকা পাহাড়। অল্টিটিউড-এর উপর দিকে উঠতে উঠতে দেখতে পাই পাহাড় কেটে কীভাবে চাষের জমি তৈরি হয়েছে। কাছের সবুজ পাহাড়, দূরের সাদা পাহাড় একে অপরের মধ্যে মিলে যায় এই রাস্তায়। এই শহরের নাম শিনিং। এখানে আমি এক লবণ হ্রদ দেখেছিলাম। তার নাম চাকা। সেই হ্রদ ধরে যতোটুকু যাবেন ততটুকু সাদা। তার চারপাশের বালি, সেই বালি দিয়ে তৈরি মূর্তি, তার আকাশের মেঘ। তেমন স্বচ্ছ জল আপনি কখনো দেখেননি। সেই জল মেঘের আয়না হয়ে রয়ে গেছে এই লেকে। এই শহরের পাহাড়ের মধ্যে বৌদ্ধরা কোন প্রাচীনকালে মন্দির বানিয়েছিল। পাহাড়ের খাঁজ কেটে কেটে। আর মুসলমানেরা বানিয়েছিল চীন শহরের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ এর একটি। সেই মসজিদের সামনে বসে বয়স্ক চৈনিক মুসলমান বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা বিকেলে গল্প করেন। পামের জুস আর খেজুর দিয়ে তৈরি ভাতের পদ খেতে খেতে। এই শিনিং এর পরের শহর ছিল Zhangye । যে শহরকে আমি দেখেই ভালোবেসে ফেলি। শহরের ঠিক মাঝ বরাবর মার্কোপোলোর একটি মূর্তি আছে। কথিত যে তিনি এই শহরে এসে মুগ্ধ হয়ে যান এবং এক বছর থাকেন। এই শহরে আমার সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিল এক রেস্তোরাঁর কর্মচারীর। সে ও তার বন্ধুরা আমায় খাবার সময় তাদের সাথে ডেকে নেয় এবং আমরা একসাথে অনেকটা বাইজু খাই। শহর ছেড়ে আসার আগে সে আমায় গরুর মাংসের ঝোল খাবার নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সকালের তাড়াহুড়োয় তার সাথে আর দেখা হয়নি। এই শহরের এক মন্দিরের চাতালে আমার আলাপ হয়েছিল এক চৈনিক ভদ্রলোকের সাথে। আমাকে যিনি Suzhou শহরের বাগানের ইতিহাস বলেছিলেন। আমি দেখেছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মন্দিরের ভেতর শয়নরত বুদ্ধমূর্তি। আর আলাপ হয়েছিল বিহারের ছোট্ট গ্রাম থেকে আসা এক প্রকৃত ভবঘুরের সাথে। আমার গুরু রাহুল সাংকৃত্যায়ন কে আমি চোখে দেখিনি কিন্তু তার দেশের ভবঘুরেকে চাক্ষুষ করতে পেরেছি এই শহরে। তার গল্পের জন্যই এত বড় ভূমিকা লেখা। Zhangye শহরে আমি পৌঁছই রামধনু পাহাড় দেখার জন্য। শুনেছিলাম এই পাহাড় আছে ল্যাটিন আমেরিকায়। তারপর একদিন এক বন্ধু মারফত খবর পাই চীন দেশেই এই রেনবো মাউন্টেন এর দেখা মিলতে পারে। তা খুঁজতে খুঁজতেই সেই একদম পূর্ব প্রান্ত থেকে এক মাসের ওপর টানা ভ্রমণ করে এই শহরে হাজির হওয়া। Zhangye ছোট শহর হলে কি হবে সেখানে দুটি রেলস্টেশন। আমার গরিবের মত করে বিশ্ব ভ্রমণ। মোবাইলে ট্যাক্সির অ্যাপ পর্যন্ত নেই যাতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ছাড়া গতি না থাকে। বহুবার এমন হয়েছে যে এক বাসে করে বহুদূর গিয়ে বুঝেছি ভুল বাসে চড়েছি। আবার নেমে ঘুরতে ঘুরতে শেষে গন্তব্যে পৌঁছানো। চিনে এই সমস্যা আরো ভয়ঙ্কর কারণ না আমি চৈনিক ভাষা বলতে জানি না পড়তে পারি। এই দেশে শতকরা প্রায় 90 শতাংশ মানুষ এদিকে ম্যান্ডারিন ছাড়া বলতে বা পড়তে পারে না। ইংরেজির কোথাও কোন নাম গন্ধ নেই। কিন্তু অদ্ভুতভাবে মানুষ সাহায্যে এগিয়ে আসে। শিনিং শহরে যেমন হোস্টেলের ম্যাপ ভুল থাকায় আমি সম্পূর্ণ অন্য জায়গায় পৌঁছে যাই। সেখানে কেউ আমার ভাষা বোঝে না। লোকজনকে হোস্টেলের নাম জিজ্ঞেস করতে করতে হঠাৎ সেখানে বসে থাকা দুটি অজানা মেয়ে আমাকে হোস্টেল অব্ধি ছেড়ে দিয়ে আসে। ভ্রমণ আপনাকে এভাবে মানুষের কাছে নিয়ে যাবেই। ভ্রমণ আমায় শিখিয়েছে ভাষার প্রয়োজন বড় কম দূরত্ব মেটাতে। Zhangye শহরে ঢোকার পরও এভাবেই এক অচেনা ভাষা না জানা যুবক আমাকে আমাদের হোস্টেল দেখিয়ে দেয়। হোস্টেলে ঢুকেই লক্ষ্য করি আমি যে ডরমিটরি তে থাকব সেখানে এক ভারতীয় দর্শন যুবক বসে। উপমহাদেশীয়দের আমি সাধারণত ঘোরার সময় এড়িয়ে চলি। একে দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ মানুষ তাদের পুরুষতান্ত্রিক, বর্ণবাদী মানসিকতায় পরিপূর্ণ। দ্বিতীয়ত: সঙ্গে একই ভাষার মানুষ থাকলে ঘোরাঘুরির মূল উদ্দেশ্য অচেনা মানুষের কাছে পৌঁছানো, তা বিব্রত হয়। সুতরাং ঘরে এসে বসেছি এবং অবন্ধুত্বপূর্ণ হাসি হাসছি এমন সময় অপরপক্ষ বলে ওঠে। “আপ কেয়া ইন্ডিয়ান হো?” নিজের বাঙালি পরিচয় দেওয়ার পর জানতে পারি ছেলেটি আমাদের প্রতিবেশী বিহার রাজ্যের। কিন্তু বিস্মিত হয়ে যাই যখন সে বলে যে সে চিনে থাকে না, শুধুমাত্র ঘুরতে বেরিয়েছে। ঘুরতে বেরিয়েছে! এত অল্প-বয়সী ছেলে! দেখে আমার ধারণা হয়েছিল, যে সে প্রচুর ভারতীয় ছেলেপুলের মতো চীনে কোন পড়াশোনার কোর্স করছে। তাকে আবার জিজ্ঞেস করে বসি। “আদতে তুমি কি করো, পড়াশুনো?” সে আমায় বলে উচ্চমাধ্যমিকের পর সে পড়াশুনো ছেড়ে দিয়েছে। জীবনে তার একটাই উদ্দেশ্য। ভ্রমণ। hitchhiking করে করে সে ল্যান্ড এর মাধ্যমে ভারত থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা যেতে চায়। এখনো পর্যন্ত মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড লাওস ঘুরে সে চীনে এসেছে। তার সামনে মুগ্ধ হয়ে বসে থাকি। সে জিজ্ঞেস করে, “ভাবি, পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কোন ভুল করলাম কিনা?” আমি বলি, “জীবন আমায় শিখিয়েছে পড়াশুনো একভাবেই হয়, ভ্রমণের মাধ্যমে।” ছেলেটির নাম শুভম কুমার। বিহারের গ্রামের ছেলে। বাবা শিক্ষক, মা গৃহবধূ। হিন্দি মিডিয়ামে পড়াশোনা করা এই ১৯ বছরের ছেলেটি সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিজেকে বিশাল ভবঘুরে ভেবে বসা আমি তাকে বলি “যেন কখনো তোমার মত সাহস আমারও হয়।” গল্প করতে করতে সে জানায় সেই দিন বিকেলেই সিয়ান চলে যাবে। আমায় এসে বলে তার কাছে ভারতীয় চা আছে। সে আমায় বানিয়ে খাওয়াতে চায়। হোস্টেলের বাইরে আমরা চা খাচ্ছি এমন সময় এক চীনে ছেলে এসে হাজির। আমরা বসে আছি দেখে সে পাশে এসে বসে। বলে কয়েক মাস আগে সাইকেল নিয়ে সে উত্তর ভারত চক্কর দিয়ে আরেক ভবঘুরে। সে গোটা চীন ঘুরে বেড়াচ্ছে সাইকেল নিয়ে। একদম দক্ষিণ প্রান্ত থেকে সাইকেল চালিয়ে এসে হাজির হয়েছে পশ্চিমের শেষ প্রান্তে। তার ইচ্ছা সে এই সাইকেল নিয়ে টিবেট অবধি যাবে। পরের ধাপেই সে যেতে চলেছে শিনজিয়াং। আমরা গল্প করছি এই সময় আরো দুজন এসে আমাদের আড্ডায় জড়ো হয়। একজনের নাম লু লাও আর অপর জনের নাম ঝাং শিউ পু। বছর একুশ বাইশের এর এই দুটি মেয়ে একসাথে চীন দেশ দেখতে বেরিয়েছে। লু পড়াশুনো করে উত্তর কোরিয়া-তে আর ঝাং দক্ষিণে। শুভম তাদের নাম হিন্দিতে লিখে তাদের উপহার দেয়। লু শুভম কে উপহার দেয় উত্তর কোরিয়ার টাকা। শুভম এর মাঝে একটি কার্ডবোর্ড তুলে নিয়ে আসে। লু তাতে লিখে দেয় সিয়ান, চাইনিজ ক্যারেক্টারে। এই বোর্ড দেখিয়ে শুভম এই শহর থেকে সিয়ান অব্ধি লিফট নেবে। শুভম এর কাছ থেকে জানতে পারি hitchhiking-এর পন্থা। সে জানায় কিভাবে হাইওয়েতে পেট্রোল পাম্প-এর কর্মচারীরা তাকে রাতে শুতে দিয়েছে, খেতে দিয়েছে, কথা বলে লিফটের বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। চীনের রাস্তায় যখন সে তাঁবু খাটিয়ে শুয়ে থেকেছে, পুলিশ এসে তার পাশে চুপচাপ বসেছে যাতে তার কোনো ক্ষতি না হয়। যাবার আগে সেই হোস্টেলে শুভম লিখে দিয়ে গেছে হিন্দি ভাষায় তার থাকার স্মৃতি। তারপরে এগিয়ে গেছে সি’আনের রাস্তায়। সে চলে যাবার পর আমি, লু আর ঝাং একসাথে খেতে গেছি। আর মুগ্ধ হয়ে শুধু আলোচনা করেছি শুভম এর কথা। পরদিন লু আর ঝাং এগিয়ে গেছে Magao caves-এর দিকে। আমি, এরিক গেছি রামধনু পাহাড়ে। সেই পাহাড়ের হাজার হাজার রঙের ভিড়ে আমাদের আলাপ হয়েছে লি ইয়াং-এর সাথে। সে চীনের সবচেয়ে শীতল অঞ্চল হারবিন-এর মেয়ে। আমরা সেই রামধনু পাহাড়ে সূর্যাস্ত দেখেছি একসাথে। যেখানে কমলা লাল গোলাপি পাহাড় গুলিতে মেখে গেছে। দূরে দেখতে পেয়েছি বেগুনি রংয়ের টিলা। আর অসংখ্য হট এয়ার বেলুন হাওয়াকে ভাসিয়ে রেখেছে। ফিরে আসার পর এরিক, লি, লু আর ঝাং চীন দেশে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হয়ে রয়ে গেছে। ফিরে এসেই আমার চীনের ঠিকানায় পেয়েছি লু-র পাঠানো উত্তর কোরিয়ার স্ট্যাম্প ও টাকা। এরিক এর সাথে কথা হয়। সে গোটা শিনজিয়াং ঘুরে এখনো তিব্বতে। প্যানডেমিক-এর সময়ও তার সাইকেল থামেনি। লি এখন হারবিন ছেড়ে শিনজিয়াংয়ে। আর ঝাং দক্ষিণ কোরিয়াতে তার পড়াশুনা শেষ করছে। আমরা বুঝি আমাদের এক-তারের মত করে বেঁধে রেখেছে একজন ভবঘুরে। যে এখন তার ১৮ নম্বর দেশ ভ্রমণে ব্যস্ত। নাজিম তুল্লাহ ২০১৭ সালে তখন আমি চীন দেশের সিচুয়ান প্রদেশের চেংদু শহরে বসবাসরত। আমার দুই রুমমেট হিমাচল প্রদেশের শিবম কাইলা এবং শিবম গুপ্তা। চরম নিরামিষাশী, খানিক হিন্দুত্ববাদী ব্যক্তিবর্গ। আমার দিন কেটে যায় মুজিব আহমদীর সাথে ঘুরেফিরে মদ্যপান করে। আমার সাথে চেংদু-তে এসেছিল মেহেদী হোসেন এবং নেহা লোহামারোর। দুজনেই জেএনইউ-এ আমার ডিপার্টমেন্ট থেকে গবেষণারত। মনিপুরের মেহেদী আমার বন্ধু এবং অত্যন্ত কট্টর মুসলমান। মুজিব আমার সাথে মদ খেতে বসে বারবার একই কথা বলে চলত “অভিষেক ভাই, ইয়ে সাব মেহেদী কো মত বাতানা।” শুনেছি মেহেদী মাঝেমাঝেই তার প্রকৃত কর্তব্য হিসেবে ছোট ভাই মুজিবকে আমার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ডেকে একটু-আধটু জ্ঞান দিত। এভাবে দিন কাটছিল। রাতের দিকে দুই শিবমের আমায় গো মাতার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে এবং সকালের দিকে মেহেদীর মুজিবকে হালাল না খাওয়ার হাহাকারের ব্যাপারে ভীতসন্ত্রস্ত করে। যদিও ততদিনে মুজিব একটা আস্ত খরগোশের মাথা পর্যন্ত সাবরে দিয়েছে খানিক কাঁকড়া বিছের চাট সমেত। এমতাবস্থায় আমি Antwerp ইউনিভার্সিটিতে এক সামার স্কুলে অংশগ্রহণের জন্য অ্যাপ্লিকেশন করে বসি। চীন থেকে ফিরেই তারপর বেলজিয়াম। হাতে রয়েছে মাত্র ২০০ ইউরো। সাথে কোন মোবাইলের কানেকশন নেই। ১০০০ টাকা বাঁচাবার জন্য। কিন্তু এই অনিশ্চয়তার সাথে রয়েছে উৎফুল্লতা। রাহুল সাংকৃত্যায়ন বলতেন নিশ্চিন্ত না হলে ভবঘুরে হওয়া হবে না আর ভবঘুরে না হলে নিশ্চিন্ত হওয়া সম্ভব নয়। সেই টাকাপয়সাহীন, ইন্টারনেট ছাড়া ইউরোপের রাস্তার আমি যে প্রশান্তি পেয়েছি জানি না কোটি কোটি টাকা থাকা মানুষজন সে নিশ্চিন্ততা কোনো দিনও পেতে পারেন কিনা। ব্রাসেলসের রাস্তায় রাস্তায় প্রথম দিন অচেনার মতো ঘুরে বেরিয়েছি। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মানুষের ভিড় দেখে আন্দাজ হয়েছে সম্ভবত এই এলাকা অঞ্চলের সিটি সেন্টার। পৌঁছে গেছি গ্র্যান্ড প্যালেস-এর সামনে। দাঁড়িয়ে দেখেছি তার সুবিশাল প্রাসাদ। তার চারিদিক মূর্তিতে ঘেরা। পাশ দিয়ে রাস্তা চলে গেছে। দেখতে পেয়েছি সেই রাস্তায় কেউ রামধনু এঁকে রেখেছে। মানুষ পোশাকের বৈষম্য ত্যাগ করে নিজেদের মতো করে সেজে উঠেছে। তাদের কেউ ঘুরে ঘুরে তাকিয়ে দেখছে না। মানুষের ভিড়ের সাথে হাটতে থেকেছি। পৌঁছে গেছি Manneken-pis এর সামনে। সেই ছোট্ট বাচ্চাটার মূর্তি যে হিসি কোরে বোমা ভিজিয়ে দিয়ে ব্রাসেলস শহরকে বাঁচিয়েছিল। সেখান থেকে চলে গেছি মানুষের ভিড়ের সাথে Les Galeries Royales Saint Hubert এর শপিং স্ট্রিটে। সেই রাস্তার আলোর ঝলকানি স্তম্ভিত হয়ে দেখেছি। ফুটপাতের ওপর দিয়ে তার আলোর ছাদ চলে গেছে। সেই ছাদ থেকে নেমে এসেছে তারার মত ছোট ছোট টুনি বাল্ব। সেসব রাস্তায় আমার খাওয়া হয়নি। ফেরার পথে যখন বাড়ি খুঁজে পাইনি অচেনা ফরাসি মহিলা আমায় রাস্তার বুঝিয়ে দিয়েছে। বলেছে “ভাষা নিয়ে চিন্তা করো না, মানুষ সর্বত্র নিজেদের ভাঙাচোরা ভাষা নিয়েই গল্প করতে পারে।" হোস্টেলের কাছে এসে পেয়ে গেছি ছোট্ট বার্গারের রেস্তোরাঁ। পরদিন সকালে চকলেট বিয়ারের বোতল হাতে ব্রাসেলসের রাস্তায় ঘুরেছি। সে রাস্তায় ফুটপাতের দোকানে সারি সারি টিনটিন, ক্যাপটেন হ্যাডক, ক্যালকুলাসের পুতুল। দোকানে দোকানে চকলেট। ১ ইউরোর সস্তা দোকানে ঢুকে খেয়ে নিয়েছি সেদেশের পাঁউরুটি। তারপর ট্রেন ধরে Antwerp। সেখানে পৌঁছে আলাপ হয়েছে ভারতীয় মেয়ে বেণু ভার্মা, ইন্দোনেশিয়া-জাত অস্ট্রেলিয়া নিবাসী মে, ইজিপশিয়ান অরিজিন আমেরিকান মনিকা আর আমাদের বাংলার মোরশেদ আলমের সাথে। রাতের ডিনার হিসেবে ছিল বেলজিয়ামের সবচেয়ে প্রিয় খাবার। মাসেলস। ভারতীয় সহ বাকি অনেক লোকজন নাক মুখ কুঁচকে সে খাবার দেখে পালাতে চেষ্টা করছে। কেউ কেউ নিজেদের বাঁচার তাগিদে বলে বসেছে তারা ভেজিটেরিয়ান। আর আমি এক আস্ত কড়া ভর্তি মাসেলস সাঁটিয়ে চলেছি। ইউনিভার্সিটির ডাইরেক্টর বলে বসেন “এ খাবার তো তোমার বেশ পছন্দ হয়েছে দেখছি।” জীবনের প্রথম শ্যাম্পেন এবং সবচেয়ে সুন্দর ওয়াইন এই দেশেই খাওয়া আমার। বেলজিয়াম ছেড়ে এরপর চলে গেছি ফ্রান্স। সেখানে প্যারিসের পাশে মফস্বলে থাকা ন্যুডিস্ট দের সাথে। বাড়ির মালিকের নাম সের্গেই। তার বয়স হবে ৬৫ বছরের কাছাকাছি। বাড়িতে থাকে আরও তিনটি যুবক। তাদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৫ এর মধ্যে। সের্গেই প্রথম দিনই রুম দেখাতে গিয়ে আমায় বলে বসে “কম্ফোর্টেবল হয়ে জামা কাপড় খুলে বসো না কেন?” আমাদের কম্ফর্ট যে কতটা আলাদা তা পর দিন সকালে আরো ভালো করে বুঝতে পারি। দেখি তাদের স্নানঘরে কোন ছিটকিনি নেই! এরপর ফ্রান্স ঘুরেছি। ভাষা না জেনে, টাকা ছাড়া, মোবাইল ছাড়া। রাস্তায় হেঁটে হেঁটে পৌঁছে গেছি সিমন, সার্ত্রের কবরে; মেট্রো ভাড়া বাঁচানোর জন্য। রাস্তার দিকচিহ্ন হিসেবে নজরে রেখেছি আইফেল টাওয়ার। যেদিন সে দেশ থেকে ফিরব, সের্গেই-এর থেকে বিদায় নিয়ে, স্টেশন পৌঁছে দেখি ভয়ংকর কাণ্ড। রেল স্টেশনের টিকিট বিক্রির কাউন্টার বন্ধ। চারিদিকে প্রচুর লোকজন, তবে কেউ কোন ভাষা বোঝে না। অবশেষে এক বুড়ো ব্যক্তি এসে বলে কাউন্টারের লোক সকাল থেকে আসেনি। সকাল থেকে আসেনি মানে! আমি তাজ্জব বনে যাই। এত বড় দেশ, প্রথম বিশ্ব, তার রেলস্টেশনের টিকিট বিক্রির কাউন্টারে মানুষ নেই! বুড়ো আমায় বলে “এ ছোট শহর, প্যারিস তো নয় ভায়া। এখানে আমাদের সবার রেলস্টেশনের কার্ড আছে”! আমার ততক্ষণে অ্যাংজাইটি তে মাথা ঘুরছে। পরদিন সকালে ফ্লাইট ব্রাসেলস থেকে। দুপুরে আমার বাস ছেড়ে দেবে। সঙ্গে না আছে টাকা না ইন্টারনেট। প্লেন মিস করা যাবে না, পরদিন ভিসা শেষ হয়ে যাবার কথা। এমতাবস্থায় আমারই বয়সী এক ফরাসি ছোকরা এসে আমায় বলে “আপনি আমার কার্ড দিয়ে স্টেশনে ঢুকে ট্রেন ধরে প্যারিস চলে যান। ওখানে গিয়ে স্টেশন মাস্টারকে বুঝিয়ে বলবেন। কোন সমস্যা হবে না।” আমি তাকে বোঝাই এই পথ নেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। একে বিদেশ-বিভূঁই তায় খানিক বাদেই বাস। কোন কারণে আটকে পড়লে আর বেলজিয়াম যাওয়া হবে না। ইউরোপে এসে শেষে জেল খাটবো নাকি! সে ছেলে খানিক ভাবে, তারপর বলে “চলো, আমরা ট্রাম ধরে মেট্রো করে প্যারিস যাই।” আমি তো অবাক। বলি “আমার জন্য এত সময় নষ্ট করবে কেন? পথ বাতলে দাও, আমি চলে যাই।” সে বলে “তোমার দেশে আমি ফেঁসে গেলে কি করতে? নিজের দেশে আবার সময় নষ্ট হয় নাকি!” আমরা গিয়ে ট্রামে উঠি। ভুল ট্রামে উঠে যাই। ফেরার পথে আবার টিকিট কাটতে গেলে সে বলে “আবার টিকিট কেটো না” কন্ডাক্টরকে বুঝিয়ে বলে আসে সমস্যা। তার কাছে শুনি সে পরিবেশ বিদ্যার ছাত্র। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে তার যাবার বড় শখ। সে ট্রামে বসে আমায় বলে “আবার কখনো প্যারিসে এলে আমার বাড়িতে থেকো। আমরা একসাথে কফি খাবো।" তার আসল নাম আমি ভুলে গেছি। মেট্রো সামনে পৌঁছে সে আমায় বলেছিল তার নাম্বার ইমেইল করে দেবে। সেই ইমেইলে তার নাম নাজিম তুল্লাহ। নাজিম তুল্লাহ তার এই ইসলামিক নামের পেছনে একটি গল্প আছে জানায়। “এই গল্প আমরা একদিন কফি খেতে খেতে করব,” বলে আমায় মেট্রো স্টেশনের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয় সে। থিং বু দং চেংদু শহরে প্রায় দুমাস হল এসেছি। ঘোরা বলতে তখন সেখানকার ওয়াইড এন্ড ন্যারো অ্যালি, জিনলি স্ট্রিট, চুনসি রোড, সিচুয়ান মিউজিয়াম, পান্ডাদের থাকার জায়গা আর তিয়ানফু স্কোয়ার। তিয়ানফু স্কোয়ার আমাদের হোস্টেল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার। চেংদু শহরের সিটি সেন্টার বলা যায় একে। রাস্তার মাঝে এক বিশাল মাওয়ের মূর্তি আকাশের দিকে হাত রেখে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। মূর্তির ঠিক বাম পাশে সিচুয়ান মিউজিয়াম। সেখানে প্রাচীন চীনের অজস্র আর্কিওলজিক্যাল সামগ্রী ভর্তি। চীনের বেশিরভাগ পাবলিক মিউজিয়াম বিনামূল্যে। দেশের জনগণ এবং বিদেশিদের ক্ষেত্রে কোন ভেদাভেদ করা হয় না। আপনি আপনার পাসপোর্ট নিয়ে এই মিউজিয়াম গুলিতে হাজির হলেই ঢুকতে পারবেন। চেংদুর কাঠফাটা গরমের হাত থেকে বাঁচতে বহুবার আমি মিউজিয়ামে ঢুকে জিরিয়ে নিয়েছি। এই শহরে আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা গুলির একটি হলো জিনলি স্ট্রিট। এই স্ট্রিট খাবারের জন্য বিখ্যাত। এমনিতেই চীনের সবচেয়ে মসলাদার কুইজিন হলো সিচুয়ানিজ। চেংদু শহরকে বলা হয় খাদ্য রসিক এর শহর। এ শহরে বয়স্ক আর অসুস্থ ছাড়া কেউ বাড়িতে রান্না করে খায় না বলে কথিত। রোজ বিকেলে আমি এই রাস্তায় ঘুরে বেড়াতাম। হাতে কখনো থাকতো বিফ কাবাব এর স্টিক, কখনো বা ব্যাঙের মাংসের ঝাল ঝাল ভাজা। মুজিব আর আমি একদিন এই রাস্তাতেই সাহস করে খেয়ে ফেলেছিলাম কাঁকড়া বিছে ভাজা। এত কড়া যেন পপকর্ন! চেংদু শহরের বিখ্যাত খরগোশের মাথা, ব্লাড স্যুপ আর মাড পাই এখানে পেয়ে যাবেন আপনি। আর রাতের ডিনার এর জন্য পাবেন সিচুয়ান এর বিখ্যাত হটপট। শহরের ওয়েনসু মনেস্ট্রি হল আরেক খাবারের জন্য বিখ্যাত জায়গা। তবে সেখানের খাবার-দাবার নিরামিষ। সিচুয়ানের মসলাদার হলুদ জেলি নুডুলস এতই সুস্বাদু যে নিরামিষ না আমিষ ভাবার সুযোগ পাবেন না। ওয়াইড এন্ড ন্যারো অ্যালি হল চেংদু এর প্রাচীন যুগের রাস্তা। চীনে প্রায় প্রতিটা শহরে এমন কিছু কিছু প্রাচীন যুগের রাস্তা সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। যেখানে পৌঁছলে আপনার মনে হবে প্রাচীন চীনের রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। এখানে আমি খেয়েছি পামের তৈরি জেলি বার, নারকেলের দুধের শরবত আর পৃথিবীর অন্যতম নরম শুয়োরের মাংসের কাবাব। চেংদু চীনের পান্ডাদের রাজধানী ও বটে। এই শহরে গেলে পান্ডা না দেখে আসা সম্ভব নয়। পান্ডাদের জন্য এখানে একটা বিশাল খোলা প্রান্তর রাখা আছে। যেখানে তারা গাছে চড়ে ঘুমোয়, নরম নরম বাঁশ খেতে খেতে গা এলিয়ে দেয় ঘাসে। চেংদু এর দোকান গুলি পান্ডার সফট টয়ে ভর্তি। আমি যখন প্রথমবার এ শহরে আসি, না চিনে ভাষায় একটা শব্দ বুঝতে পারতাম না পড়তে পারতাম। খাবারের দোকানে গিয়ে তখন অচেনা হিজিবিজি অক্ষরের দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল দিয়ে অর্ডার দিয়ে দিতাম। যা খাবার আসতো তাই খেতাম। কখনো তা মহার্ঘ এসেছে আবার কখনো এসেছে এক বাটি শাক বা এক পিস পাঁঠার মাংস। চেংদু এর রাস্তায়-রাস্তায় আছে ছোট ছোট খাবারের স্টল। সেখানে গরমকালে জেলির ওপর বরফ আর ফলের কুচি দিয়ে তৈরি হয় অপূর্ব ঠাণ্ডা মিষ্টি। আবার রাস্তায় রাস্তায় বিক্রি হয় পিগ ব্লাড সুপ। হালাল খাবারের দোকানে আঙ্গুলের তৎপরতায় সবার সামনে রাঁধুনি বানিয়ে ফেলে নুডুলস। আমার বন্ধু মেহেদী সেই নুডুলস বানানোর ছবি তুলতে গিয়ে একবার ব্যাপক ঝাড় খায় রাঁধুনির কাছে। দিন এভাবেই কেটে যাচ্ছিল এমন সময় সকালবেলা আমার রুমমেট শিবম কাইলা আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় তড়বড় করে। তার বক্তব্য হলো চেংদু এর পাশে যে পিঙ্গল নামক গ্রামটি আছে সেখানে যেতে হবে। " মুজিব অউর দীপিকা অলরেডি উধার চলে গায়ে হ্যায়, আপ জলদি উঠো।” ফলে অগত্যা আমি শিভম কাইলা এবং শিভম গুপ্তা তিনজনে মিলে চেংদু বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে পিঙ্গলগামী বাসে উঠে পড়ি। সেখানে পৌঁছে শুনি আমাদের সঙ্গী মুজিব আহমদী এবং দীপিকা ধীমান পাহাড়ের উপরে চড়ে পড়েছে। সে পাহাড় চড়তে লাগে ভারতীয় টাকায় প্রায় ৮০০। আমরা গরিবগুরবো লোকজন। পাহাড়ের সিঁড়ি বাদ দিয়ে যে পথে কেউ যায় না সেই দিক দিয়ে উঠতে থাকি। গাছে, ঘাসে ভরা সে পাহাড়। আমরা সেই চেংদূর গরমে ঘামতে ঘামতে উঠছি। উঠে শুনি পাহাড়ের উপরে যে ব্রিজ তাতে উঠতে গেলে সেই ৮০০ টাকাই দিতে হবে। তাহলে এতো খাটনি বেকার যাবে নাকি! সন্ধ্যে হয়ে আসছে, ব্রিজের পাহারাদার নিচে নামতে থাকে। আর আমরা বিনে পয়সায় সেই ৮০০ টাকার ব্রিজের উপরে! রাতে পিঙ্গলে থাকতে হবে অথচ সেই গ্রামে থাকার কোনো হোটেল নেই। আমরা চলে যাই এক খাবারের দোকানে। দুই শিবম ও দীপিকা নিরামিষাশী। আমার আর মুজিবের সব খাবার চলে। আমরা শুয়োরের মাংসের নুডুলস নিয়ে বসে আর দীপিকা ও শিভম-রা দোকানিকে বোঝাচ্ছে নিরামিষ কাকে কয়। খাবার খেতে শুরু করার পর তারা দেখি হঠাৎ চমকে ওঠে। “একি! আমাদের ভাতের মধ্যে এই গোলাপি গোলাপি জিনিসগুলো কি!!” দেখা যায় তা সসেজ এর টুকরো। দোকানি তাজ্জব হয়ে বলে “আপনারাই তো বলেছিলেন ভেজিটেরিয়ান খাবার, মশাই! তা সে আলু, পিঁয়াজ, শাক সব নিরামিষই তো দিয়েছি! এত ভেজিটেবলস দেওয়ার পর আবার বলছেন এটা ভেজিটেরিয়ান নয়!” সে রাতে ঐ দোকানির বাড়িতে ঘুমিয়ে আমরা চলে যাই পিঙ্গল-এর সবচেয়ে প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরে। এমনিতেই পিঙ্গল গ্রাম প্রায় দু’ হাজার বছরের প্রাচীন। গ্রাম দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আপনি পৌঁছে যান সেই প্রাচীন চীনে। আমরা এক ছোট্ট টোটো ভাড়া করে পৌঁছই সেই প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরের পাহাড়ে। সেই পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে বুদ্ধদেবের মূর্তি আর জাতকের কাহিনী। পাহাড়ের একদম চূড়ায় বুদ্ধদেবের এক বিশাল মূর্তি। পাহাড় চড়ার ক্লান্তি আমাদের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে ততক্ষণে। বুদ্ধদেবের মূর্তির সামনে আমরা পাঁচজন বসে হাঁপাচ্ছি, এমন সময় আমাদের পাশে এসে এক বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনী চীনা ভাষায় প্রশ্ন করেন। সন্ন্যাসিনীর বয়স আশির কোটায়, মমতা ভরা চোখ। কিন্তু তার ভাষা আমরা বুঝতে পারি না। আমরা তার দিকে তাকিয়ে আছি আর তিনি মৃদুমন্দ হাসছেন। এমতাবস্থায় শিবম কাইলা আমায় বলে “এক বুদ্ধিস্ট মন্ত্র বলিয়ে না। উনহে আচ্ছা লাগেগা।” আমি আমার স্বল্প জ্ঞানে বলেছি “বুদ্ধাং সারানাং গাচ্ছামি।” অমনি কাইলা গিয়ে সন্ন্যাসিনী কে তা জানায়। এদিকে সন্ন্যাসিনী তখনো মৃদুমন্দ হাসছেন এবং এমন কিছু বলছে যা আমাদের বোধগম্য নয়। কাইলা সিদ্ধান্ত নেয় “উনি ওনার ভাষায় বুদ্ধদেবের মন্ত্র বলছেন ফলে আমাদেরও আমাদের ভাষায় বুদ্ধদেবের মন্ত্র বলতে হবে।” ফলত সন্ন্যাসিনী চৈনিক এ বলতে থাকেন আর আমরা বলতে থাকি বুদ্ধাং সারানাং গাচ্ছামি। মিনিট দশেক তা চলার পর বৃদ্ধা আমাদের একটি কাগজে কিছু লিখে দেন। বলা বাহুল্য আমরা তাও পড়তে অপারগ হই। তবু কাইলা সে সংকেত বুঝতে পারে। সে বলে “এ হল চীনে ভাষায় বুদ্ধদেবের মন্ত্র। আমাদের হিন্দিতে তা লিখে ফেরত দিতে হবে।” গুপ্তা সন্ন্যাসিনীর থেকে এক কাগজ চেয়ে নেয়। তাতে লেখা হয় বুদ্ধাং সারানাং গচ্ছামি। আমরা দেখতে পারি বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনী আরো কিছু চাইছেন আমাদের থেকে। তার চোখ-মুখ উত্তেজিত। কাইলা নিশ্চিত হয় আমরা সঠিকভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছি ওঁর সাথে। সন্ন্যাসিনী আমাদের দিকে তাকিয়ে হাতজোড় করে বারবার বলেন “থিং বু দং।” কাইলা বুঝতে পারে এ হলো চৈনিক ভাষায় বুদ্ধদেবের সাধনার মন্ত্র। আমরা হাতজোড় করে বুদ্ধদেবের দিকে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে চোখ বন্ধ করে বলতে থাকি থিং বু দং, থিং বু দং, থিং বু দং। সম্ভবত আমাদের সাধনায় খুশি হয়ে সন্ন্যাসিনীর মুখে হাসি ফোটে। তিনি আমাদের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেন এবং একটি করে লাল ফিতে দেন, মনস্কামনা পূরণের জন্য। দুদিন পরে আমরা আমাদের চাইনিজ ভাষার ক্লাসে বসে। আমাদের শিক্ষক মিস কিকো পড়াচ্ছেন। মুজিব হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসে “মিস কিকো, থিং বু দং মানে কি?” মিস কিকো তো অবাক। বলেন “আমি তো এই শব্দ শেখাইনি, তুমি জানলে কি করে?” মুজিব বলে যে সে রাস্তায় শুনেছে। মিস কিকো জানান এ শব্দের মানে হল “আমি বুঝতে পারছি না।” আমরা একে অপরের দিকে তাকাই আর স্তম্ভিত হয়ে কল্পনা করতে থাকি। পাহাড়ের চূড়ায় বিশাল বুদ্ধ মূর্তির সামনে ৪ ভারতীয় এবং এক আফগান হাতজোড় করে বারংবার বলে চলেছে “আমি বুঝতে পারছি না। আমি বুঝতে পারছি না। আমি বুঝতে পারছি না।” (চলবে...)
4 Comments
Dear Citizen dear citizen, you drank white wine for lunch, while sneezing. congratulations on superfluous snot sentences, while Cheetos make America hate again you took a monster sized dump, too congratulations, such significance to souls separated at the borders, children of abuse. light slams against walls Mexico won’t pay for dear citizen, you liked a post from Congressman X or Y, inequality while you drove your BMW, sneered at sobbing inequity in Dodge Stratuses. so much effort to like, but to get out to feel, to fight, save that for tomorrows perpetually procrastinated and you posted about the sandwiches underwear you wore lace lavender, briefs, nonetheless how you smelled of sweat while blood-red MAGA caps rose into the sky dear citizen, take off the underwear stop drinking the wine write about the bitterness, the calluses souls waiting for scapegoat time but you drank white wine congratulations Tweeting Sorrow I’m tweeting coronavirus statistics on the toilet older sister’s handling corpses in overcrowded fields how do you confront fucking grief? I’m sorry, motherfucker? It’ll get better? I could go tell death jokes, corpse jokes, pretend to smile but thank God for toilets. it’s hard to get up. Truth You think your truth is proclaimed in electronic glow of unsterilized phones, words like dissection, intersection, problematic, paradigm and likes, bandied while you tweet from a Starbucks bathroom and corpse statistics rise. But it’s all right. You just had a twelve-dollar latte Dear YouTube I got 68 likes why not 69? I just quoted Robert Downey Jr going full retard in appalling Tropic Thunder satirical parlance but most importantly I said that Bad Santa brought me to Chopin and vampires brought me to Debussy not everyone can hear Downey Jr doing a black accent, whatever that is and after all deaf people are X percent of Y viewers on YouTube and I just want people to like Chopin and Debussy but Bad Santa and vampires even more even the poor, dear, deaf people so why not give me one more like and let it be a sexy 69 although 420 likes would be a blaze of glory Funeral March For Mendacity Funeral March For A Marionette plays,
while I try to write beauty into the moonlight but store another lecture from waddling father who looks like the Penguin and walks beside Lady Mendacity (I just want to sleep on the moon and shadows) clarinet wails lavender insistence truth, truth, she proclaims strings rumble brown and black Lady Mendacity purrs in her loose purple gown, father proclaiming truth is a waste, use people, life’s a jungle, no one cares about you but me (for the record, he’s got a lawsuit for assault, fucks left and right, and is on the cusp of losing position) while Lady Mendacity whispers new grievances, seducing his mustache you’re too artistic, he growls, serve your father, give up your time while triangles tinkle with silver sorrow (he’s his own art form, angrily proclaiming himself saintly, calm, transcending the self) clarinet wails lavender truth while Lady Mendacity tries to keep her garments on bassoon turns gray and grim a father clings to naked Lady Mendacity but naked is just another object to him (breasts, buttocks, all disposable to the saintly father) I laugh a bassoon’s grim laugh battering the bullshit heave, heave, he waddles, even while he trips (and Lady Mendacity tries to right her garments. was she ever truthful?) but I ready myself again the clarinets weep the bassoons boom the father finds a new mendacious grievance waddling. the Lady surrenders garments (logic is more and more inconvenient) I can’t cry so I laugh while the clarinet croons lavender truth louder and louder ব্লাউজের কাপড়টি পাতলা। শ্রাবণঘন গহন ঘামে ভিজে সেটি ত্বক খুবলে খেতে থাকে। ভাঁজে ভাঁজে নুন জমে। এমতাবস্থায় ঘটনাটি ঘটে। ব্লাউজটি বগলের কাছে চিৎকার করে ফেটে যায়। ব্লাউজটি প্রিয়, নাকি প্রিয়তম। ব্লাউজটিকে রিফু করতে হবে। ছেঁড়া কাপড়ের সুতো তুলে তুলে রিফু করতে হয়। ব্লাউজের কাপড়টি পাতলা। দোষ একে দেওয়া যেতে পারতো। তবে রিফু প্রসঙ্গে রিপুর কথাই বলা যাক। আষাঢ় মাসের সন্ধ্যাগুলো শান্ত আর ম্যাজম্যাজে। বালাপোষের হালকা জ্বর জ্বর হয়। সেই সঙ্গে বালাপোষের ভেতরের মানুষটিরও। বাড়ির পাশে কামিনী ফুলের গাছ বৃষ্টি ভিজে রোমশ এবং চকচকে। শাদা শাদা ফেনার মতো ফুল এই ক্রান্তীয় মফস্বলের সন্ধ্যা জুড়ে ফুটে রয়েছে। হালকা ফুলের গন্ধ বালাপোষ ছেঁচে ভেতরের মানুষটিকে তোলপাড় করে তোলে। আষাঢ় মাসের সন্ধ্যাগুলোতে ল্যাম্পপোস্টের আলো ছোট ছোট অলিগলিতে লালা মাখিয়ে রাখে। এরকমই একটি তস্য গলির শেষে একটি তস্য বাড়ির একটি ফুলকাটা বালাপোষের ভেতরের মানুষকে এই বালাপোষের জ্বর জ্বর মানুষটি কামনা করতে থাকে। এই কামনা নিষ্কাম নয় যথারীতি সকাম। মানুষটি জানে সে জন্মান্তরে পশুযোনি প্রাপ্ত হবে। তবুও মানুষটি কামের বশীভূত হয়ে বর্ষার লালামাখা রাস্তা দিয়ে তস্য বাড়িটির দিকে হেঁটে যায়। তস্য বাড়ির ফুলকাটা বালাপোষের ভেতরে মানুষটি যদিও একা ছিল না। তবু তার মাঝে মাঝে একা একা লাগে। মাঝে মাঝে। বাকিটা সময় বিভিন্ন রকমের জৈবিক প্রক্রিয়া মল-মূত্র শ্বাসপ্রশ্বাস ক্ষুধা নিষ্পত্তি আর যৌনকর্ম করে কেটে যায়। আষাঢ়ের দমচাপা সন্ধ্যা জীবদেহের শারীরবৃত্তীয় কাজগুলোকে কিরকম যেন এলোমেলো করে দেয়। প্রাণীবিজ্ঞান বিষয়টি কঠিন। মনোবিজ্ঞান কঠিনতর। ফুলকাটা বালাপোষের মানুষটি সাত-পাঁচ ভেবে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। রেলিংয়ের খোপখোপ ঘর খাঁচার মতো ছায়া ফেলেছে মেঝের ওপর। এই খাঁচা স্পর্শাতীত অবিনশ্বর । ফুলকাটা বালাপোষের মানুষটি এই অতীন্দ্রিয় খাঁচার ভেতর দাঁড়িয়ে দ্যাখে। রাস্তার ওই পারে জ্বর জ্বর বালাপোষের মানুষটি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আষাঢ়ের কামিনী ফুলের গাছ। নিশ্চুপ। কামাতুর। ফুলকাটা বালাপোষের মানুষটির ক্রোধ জাগে। একদিকে রাগ অন্যদিকে অনুরাগ দুটি বিষধর সাপের মত লড়তে থাকে। রাস্তার ওইপাড়ের মানুষটি কিন্তু লোভী। লোভ অদম্য হয়। এই তস্য বাড়ির ফুলকাটা বালাপোষের ঈষদুষ্ণ জাগতিক মানুষটিকে ইন্দ্রিয় স্নায়ু মস্তিষ্কের কোষে কোষে পাওয়ার লোভ। ছায়া আবছায়া, জলকণার বিচ্ছুরণ আর রেলিংয়ের নকশা, বারান্দার মানুষটির চারদিকে ঈষৎ স্বচ্ছ জড়ি-ঘেরা চিলমান সৃষ্টি করেছেন। দক্ষিণের দিক থেকে ভেজা ভেজা বাতাস আসে। দূরে কোথাও কুকুরের ডাক। মধ্যবিত্তের বাড়িতে হারমোনিয়াম বাজছে। আষাঢ়ের সন্ধ্যায় মফস্বলের ছাপোষা মানুষজন সাধারণত তমোগুণ প্রাপ্ত হয়। মোহের পর্দা তির তির করে কাঁপে। মোহ আত্মাকে নগ্ন, নির্লজ্জ ও বেসামাল করে তোলে। বালাপোষ বেসামাল হয়। বালাপোষের মানুষ দুটিও। এমতাবস্থায় ফুলকাটা বালাপোষের তৃতীয় মানুষটি বারান্দায় আসে এবং ফুলকাটা বালাপোষের অপর মানুষটাকে আশ্লেষে জড়িয়ে ধরে। পরিখার ওপাড়ে জ্বর জ্বর বালাপোষের মানুষটি দাঁড়িয়ে থাকে। উন্মত্ত, ঈর্ষাকাতর অথচ অগম্য। এই শ্লেষ আশ্লেষের টানাপড়েনে পাতলা কাপড়ের ব্লাউজটি চিৎকার করে ফেটে পড়ে। আষাঢ়ের শ্বাসরোধী সন্ধ্যায় দুটি বালাপোষ নির্বিকারভাবে পড়ে থাকে। একটি খাঁচা ঘেরা বারান্দায়, আরেকটি রাস্তার ওই পাড়ে পাড়ে। মাঝখানে বৈতরণীর ঘোলা পাঁক। বিষ্ঠা, মূত্র, পুঁজ, রক্ত, কেশ, নখ, অস্থি, মেদ, মাংস ভেসে বেড়াচ্ছে। পাপযন্ত্রণা চিৎকার। এই নরক অপেক্ষমাণ। পাপতাপ, রক্ত, রিরংসা-মাখা দুটি মানুষ জানে। পরলোক তমসাচ্ছন্ন। যমদূতের পেয়াদারা একদিন ধাক্কা মেরে ফেলে দেবে এই পুতিগন্ধময় দরিয়ায়। ডুবতে ডুবতে ওরা হয়ত বালাপোষ আঁকড়ে ধরবে। শতসহস্র আষাঢ় মাসের শতসহস্র সন্ধ্যারাত এই স্বর্গ-নরকের মাঝখানে ডুবে থাকে। হাড়-হিম মহাজাগতিক জলচর আর অন্ধকার। অন্ধকারের প্রসঙ্গে মনে পড়লো আলো চলে যাওয়ার আগে আগে পেঁজা পেঁজা কাপড়ের সুতো তুলে ঠাস বুনোটে রিপু করতে হবে ব্লাউজটিকে। সুতোয় সুতোয়, ঠেসে ঠেসে ভরিয়ে দিতে হবে ছেঁড়া-ফাটা দুমড়ানো জায়গাগুলো। জায়গাগুলো নাজুক, বড়ই নাজুক। আর ব্লাউজের কাপড়টি পাতলা। দোষ একে দেওয়া যেতেই পারতো। i’m locked inside w/ gratis maggot lap dances from all my dead loves i’m locked inside w/ a dozen cherries of cigarettes punched out upon the lid of my soul’s eye i’m locked inside w/ my boxcutter-slashed angel weeping every which way from 10,000 screaming mouths i’m locked inside w/ my father’s white knuckles around an incoming bayonet w/ “for my boy” etched in its blade i’m locked inside w/ a stream of tears whose roots stretch into the earth w/ the worms i’m locked inside w/ my traumatized sunflowers whose crowns suffer flashbacks of hell i’m locked inside w/ demons whose horns carve “you can’t handle shit” across my inner skull every day i’m locked inside zipped up in a body bag w/ in another body bag w/ in yet another body bag, weeping in a terrible trifecta i’m locked inside w/ the heavy wheels of my mother’s deathbed running up & down my arms i’m locked inside w/ busted knuckles shuffling a deck of toe tags ready to play a deadly game of solitaire i’m locked inside w/ boyhood rainbows that morphed into the undertaker’s tape measure i’m locked inside w/ a tourniquet-turned -noose i’m locked inside w/ a halo of long black splinters i’m locked inside w/ a morgue drawer core that never seems to thaw i’m locked inside w/ zig zag paper cuts across the wincing windows of my soul i’m locked inside w/ bloody hand prints covering the walls from nights i tried to claw myself back to the stars i’m locked inside w/ the lump in my throat that kicks the shit out of my smile i’m locked inside w/ my umbilical like a sick snake snickering from the shelf at my collapsed will i’m locked inside w/ ticking crack-ups stitched beneath the skin of my wrists i’m locked inside w/ the butterfly drawn & quartered behind my trembling temples i’m locked inside snorting the chalk outline of my own shape at the center of the taped off room & choking on my own ghost i’m locked inside w/ a bleeding bull slumped at my soles that no longer chases death over the hills Decree 349 Five naked women had been lined up against the wall. Something about the one in the middle caught the captain’s eye, whether a tattoo or the way she shyly covered her breasts with her hands. “May I offer you some candy?” he asked. It was only then she remembered that Kafka was buried in a plain wooden coffin, a curious fact that under other circumstances might have been interesting to share. That’s just the sort of place this is, no time for a chat, not even about who it was that tracked in blood on the bottom of their shoes. Chili Con Carnage There were always more volunteers than spots available on the riot squad. I covered my ears, but I still heard them anyway, a sound like pit bulls tearing screaming children to pieces. After that, I realized something I probably should have realized long before – it isn’t the monsters we need to fear most; it’s their enablers. So I started sleeping with a butcher knife under my pillow and a loaded gun on the night table. My mistake. One night, just as I was falling asleep, some teeth got knocked out. Winking, the angel of death promised to stay in touch. The Fireworks Galaxy People my age, we don't think something like this is ever going to happen. And then it happens. By midnight there were so many stars that the sky looked more white than dark. It was a long night. It was a long day. We saw satellites, meteors. The next thing I knew bodies were hitting the floor. Hundreds of people could be dead today. Three or four minutes, and that could have been us shielding our baby from bullets. Oh, America, how can this be? The light changes, the sea level changes, even birdsong goes back to just being noise. Borderlands What happens after you pass this border? After you enter this gate? One guy is like: “Oh, not a big deal. Nothing will happen. Sit down.” Wrong. The police are throwing dissenters off roofs, out windows, from speeding cars. Under the mud, I’m sure there must be more. “You better look at a gun,” she tells me. “You don’t know what a gun really looks like.” So for my birthday she got me a plastic AK-47. And that was just fine with me. Growing up, I spent a lot of time watching TV alone in the basement in the dark. Still Life with Firearms It’s now a whole year later, and we still haven’t returned, haven’t even tried. Some of us carry a capsule of sand or a seashell as a keepsake. Some wake up every morning hoping to be surrounded by family, only to discover drool and sweat and worse on their sheets. I just want it to be over already. At the traffic light, a man with cruddy teeth limps over to my car. He offers to sell me a fully functioning surplus Army flamethrower. Funny, right? This is our revolution. People have started naming their kids after guns: Kalashnikov, Markov, Remington. Season 2 Episode 3 Back then, almost everyone seemed to be spying on someone, the Reds or the queers or the KKK. We would go to five bars a night just to see who was there. It’s more doable than you might think, especially if there’s money involved and no weather. Some nights we would wind up in a place where we couldn’t tell at first what the hell was going on, like the time we saw pit bulls being posed for a rap album cover amid abandoned buildings. A breeze swept in, and debris with it, and enough nasty laughter to surround us. Written with a Twig You never know when you might be part of a nationwide telephone survey about the aesthetics of teenagers’ bedrooms. So use discretion in arranging your time. Just today I was punched in the face outside the supermarket by a man yelling, “Trump 2016!” Give it a few more months, and millions of us will be living on crap from bus station vending machines. Already the one-percenters are regularly helicoptering over traffic jams. “Government,” a tearful 11-year-old girl pleads, “please show some heart.” I can see for myself that nothing grows back at the many spots where old people have fallen. Postmortem Blues It was like my legs had carried me there by mistake. The little black dots I’d seen in the distance turned out to be the farmer’s wife beating a tramp with a garden hoe. “Hey, man,” I was just about to say, “you all right?” when I went over the waterfall. I didn’t expect that, or that sirens would be wailing and dictators humping dead boys. Even the birds had all kinds of problems staying aloft in the hot, dirty air. One person in six hadn’t heard yet, didn’t know what it was, a planet of funeral homes and cemeteries. Swiss Made Some long suffering person brought a full container of gasoline to the museum and emptied it slowly, ever so slowly, in order to achieve the maximum destructive effect. “You die!” he howled. This will continue. This will be allowed to happen again and again and again. It doesn’t have to make sense. Why, right now, as I wait at the doctor’s for my name to be called, a thick black boot crushes a guy's skull on the wall-mounted TV. Given the choice, I’d prefer to live in a peace-loving place like Switzerland, but, if possible, without all the cows and glaciers. Hope Is Kind of Like Dominoes What dust will rise! Saucy cherubs with adorable smiles, self-anointed experts on most things. Donald Trump shouldn’t exist, or if exist, shouldn’t compete in volume with the German opera blasting from the kitchen radio, music to invade Poland to. Miss Plum in the bedroom with the candlestick strains to recall the exact words of Adorno’s much-cited dictum, “White man got no dreaming.” Our mothers were sisters, both dead now. The flesh was theirs, the bones are ours. It’s these kinds of thoughts that make us dark. Then the wind rolls in and I feel the rain that hasn’t fallen yet. ১ বামনেরা আমার ভাষা বুঝতে পারেনি। আর ভাষা যেহেতু শুধুমাত্র প্রকাশমাধ্যম নয়, অস্তিত্বও সে। ফলে তারা আমার দু পা হাঁটুর ঠিক নিচ থেকে কেটে ফেলে – যাতে সমউচ্চতায় চোখে চোখ রাখা যায়, আর মুখের গন্ধ শুঁকে তারা বুঝতে পারে, গতরাত্রে আমি কী কী খেয়েছি, পালং শাকের কুচি দাঁতে লেগে কি না। অবশ্য এ'কাজ তারা চৌকি বা চেয়ারে উঠেও করতে পারত, কিন্তু তা ঐতিহ্যবিরোধী। আমার শেকড় নেই, ফলে মাটির সঙ্গে আমার যাবৎ যোগাযোগ সংস্কারবিহীন, শুধুমাত্র নিউটনের গতিসূত্র অনুযায়ী আমার সমস্ত নড়াচড়া, ফলে আমার পায়ের প্রয়োজন হয়। কাঠের বা স্টীল ও প্লাস্টিকের। কাঠ অর্গানিক, যতক্ষণ না তাতে বার্নিশ লাগে। রসায়ন বলে, হাইড্রোকার্বন অর্গানিক, নাইট্রোজেন লাগলে তাতে রসবোধ জাগে (অন্তত স্ক্যাটোলজিকাল)। সে হিসেবে পেট্রোলিয়াম – যা মিট্টি কা তেল – অর্গানিক। অন্তত যতক্ষণ সে গভীরে জ্বলনশীল দ্বৈপায়ন হ্রদ হয়ে আছে, অথবা গ্রামীণ তাকে র্যাশন দোকানে খুঁজে পাচ্ছে ডিলারের মুনাফা পেরিয়ে। তবে পেট্রোপণ্য যথা পলিয়েস্টার, পলিথিন, প্লাস্টিক (এমনকী রেয়ন, যা আদতে সেলুলোজ) – যা কিছু মানুষের গবেষণাগারে তৈরী হয়ে থাকে, অর্গানিক নয় – এ কথা বামনরা বলে। বামনরা বলে, সিন্থেসিস, আত্মাবর্জিত, আর আত্মা তাই যা শরীরকে স্বতস্ফুর্তি দেয় – স্পন্টানেইটি। প্রকৃত স্বতস্ফুর্তি হলো কেওসের সূত্র মেনে চলা। রেগুলেটর ঘুরিয়ে বাড়িয়ে দেয়া ব্রাউনিয় গতি। অর্গানিক তাই যা পচনশীল। তবে আত্মা অজর এবং সেও অর্গানিক, আর লোহায় মরিচা লাগে কিন্তু সে অর্গানিক নয় – এই প্যারাডক্স বামনেরা আমাকে বোঝায়নি – বরং সাবধান করেছে, আত্মাহীন মানুষ – হয় জম্বি নয় নোয়াম চমস্কি। কবিতা পচে ক্লিশে হয়, ক্লিশের মরণ নেই, ফলে অর্গানিক কবিতার পরিণতি ক্লিশে – যেমন হীরা, হীরা – কার্বন শুধু, তাপে ও চাপে ব্রাউনিয় গতির বিপক্ষে তার স্টেবল ল্যাটিস। তবে হীরার প্রতি মানুষের লোভ, খুনোখুনি, এ'সমস্তই অর্গানিক – লোকে বলে। বামন বলেছে, আত্মা ঐতিহ্য, কবিতা তাকে বহন করবে, এই মাত্র। আমার ঐতিহ্য আমি কেওসের সূত্র মেনেই আটাকামা থেকে গ্রীনল্যান্ডে ছড়িয়ে এসেছি জানাতে, তারা বলে স্বতস্ফুর্তি অভ্যাস করো – প্রস্রাবত্যাগের সময় পৈতে জড়িয়ে নাও কানে। আমি তাদের প্রভাতে তাদেরই মতন ঘুম থেকে উঠে দেখি, নুংকু শক্ত হয়ে আছে, বিক্ষিপ্ত ঝলকে ঝলকে পেচ্ছাপ বেরোচ্ছে-- স্ট্রীম নেই, ধারা নেই। স্বতস্ফুর্তি যদি উত্তেজনা হয়, পেচ্ছাপ; প্রকাশ, এই মুহূর্তে যা চূড়ান্ত ব্যহত, এ কথা বোঝাবো কাকে? ফলে অপেক্ষা করি নেতিয়ে পড়ার তারপর যা লেখার লিখি। লিখেছি – বৃহৎ বনে, ক্ষুদ্র এক পুষ্প ফুটে আছে, তিলফুল হেন নাকে, হীরকের ঘাম, দুলিছে নোলক। বামনেরা বলেছে, এ লেখা ভারতচন্দ্র লিখলে অর্গানিক হতো, কিন্তু তোমার হাতে এ সেলুলয়েডের গজদন্ত বিশেষ...। বুঝেছি, শ্রীহরি, শেষপর্যন্ত অর্গানিক হলো গিয়ে পাত্রভিত্তিক। ২ কুয়াশা আর প্রার্থনার গন্ধ এক – যে বলেছিল, সে এখন নিজেই কুয়াশা। এইখান থেকে আলো আসে। সেলার থেকে। মাকড়সার জাল বেয়ে। ধুলোজমা তাক আর ওয়াইন বোতল পেরিয়ে। সিঁড়ি বেয়ে তার পায়ের শব্দ, দরজার ফাঁক দিয়ে ঘরে ঢোকে। আর আমরা, কাঁপতে কাঁপতে প্রার্থনা করি। সে বছর অবশ্য আলো, আকাশ থেকে এসেছিল – এর মধ্যে কোনো চালাকি নেই, লোকে বলে। লোকে বলে – প্রার্থনার সময় মানুষ চোখ বুজে ফেলে – কারণ সে অন্য কোনো মুখ ভেবে উঠতে চায় না – অন্তত সেই অন্য এক মানুষের মুখ, যার প্রার্থনা সে ভেস্তে দিতে চাইছে। দৃশ্য ছাড়া মানুষ কিছুকে অর্গানিক ভাববে কি করে? আনপালিশড ডাল হাতে নিয়ে সে কিছুই বোঝে না – যতক্ষণ না ম্যাড়ম্যাড়ে অনুজ্বলতা এসে তাকে বলছে – উজ্বল হোক তোমার ত্বক – সে চোখ বুজে প্রার্থনা করে, তার ত্বকের সেন্সিটিভিটি তাকে ফিরিয়ে দেয়া হোক উজ্বলতার বিনিময়ে। আমি যে কবিতা লিখতে চাইছি না – সেটা কেউ বিশ্বাস করে না – যতই বোঝাই, আমি জাস্ট নিজের চারপাশের অর্থ বুঝতে চাইছি, আর যা বুঝছি, তা নিজের ভাষায় লিখে রাখছি – যে ভাষা আমার নিজের আর ইফ্রিতের আর কুয়াশার। প্রার্থনার কথা যখন ওঠে, তখন সোজাসুজিই বলি – শুধুমাত্র কাউন্টার ন্যারেটিভের চমক আনার জন্য ইফ্রিতের কাছে প্রার্থনা করব – আমি তেমন বান্দা না। প্রার্থনার ভান আমাকে মানায়, আমার ফুলশার্ট আর তার আস্তিনের ময়লা, লুকোনো ছুরি, এই সমস্তই আমাকে মানায় – আমি ফালতু মরতে কেন আশা-ভরসার কাছে যাব? আমি তো জেনেই গেছি, সেই এক বছর ছাড়া আলো বরাবর সেলার থেকে আসে। কাঠের মেঝের ওপর তার পায়ের ঘষটানি শহরের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে যায়। ৩ অক্ষরবৃত্তে, উপনিবেশ হোক আর প্যান্টির বিজ্ঞাপণ সমস্তই অর্গানিক লাগে। আমি, যে ক্লাইম্যাক্স চাই না – ফোরপ্লে শুধু – সেও অব্দি কন্ডোমে ব্রেইল লিপিতে অক্ষরবৃত্তেই পদ্য লিখে দিই। ডটেড কন্ডোম। কন্ডোলেন্স লিখি, এপিটাফ, এগনি কলাম, ফিরে এসো ফিরে এসো ক্ষমা দিয়ে কোরো না অসম্মান...। ৪ চার কাহার মিল মোরি ডোলি সজাই রে -- গোমতীর চরে র্যালিস্থল আর মাদ্রাসার ছেলেগুলি সাদা পাজামা-কুর্তা ক্রিকেট খেলছে। এক কোণে শিমুলের গাছ, সে কি জানে, ফুল ফুটুক আর না ফুটুক সে বেমানান। বেমানান তাই যা অর্গানিক নয়। আর অর্গানিক হতে চেয়েও যে আমি প্লাস্টিকের বস্তা থেকে মুঠোমুঠো ইউরিয়া নিজের লেখায় ঢালি, লোকজনকে বলতে পারতাম একে একে পেচ্ছাপ করে যাও, অথচ বলি না, কারণ প্রস্রাব তো ইউরিয়া মাত্র নয়, সে এক অ্যাক্ট, ডিফায়েন্সের। আর অন্যের মাধ্যমে নিজেকে ডিফাই করা কাজের কথা নয়। চার কাহার ডোলি উঠালে, আপনা বেগানা হলে, দূর দেখা যায়, কাছও দেখা যায়, পরিষ্কার ক্রীস্টালের মত, তাই আজকাল অভিযোগ তুলতে পারি না – যা বলছি আর যা বলতে চাইছি তা এক নয়। রাত্রের দিকে তোমার মুখে ভিন্ন ভাষার গন্ধ টের পাই। নিজের মুখেও। Maznu Shah (b. March 26, 1970) is an acclaimed Bangladeshi poet from the 90s. He has published seven poetry books thus far. The following poems are part of his sixth collection of poetry titled ‘Aami Ek Dropout Ghora(2016)’. He now resides in Brescia, Italy.
1. The deeper you get into the Library, the closer you see Charles Baudelaire –smiling at you from the top of a snake crate. 2. Mistakenly I’ve reached the land of mute and deaf. And my horse out here is almost blind, immobile. 3. The Muse is tuning a radio knob. Here I do nothing but stimulate her art-cells on. 4. Getting down from the spaceship, the celestial poet is now chattering with the Rai grasses. Barefoot, he will then reach his secret Swan-lake. 5. You are loitering with your fishing hook. After a while, a bride-fish shall seduce a Lotus. How inestimable everything here, how awfully materialistic! 6. Sometimes the world goes wrong when their tender bride slumps down her vermilion pot. 7. Slowly I pour some bizarre slangs straight into the heart of a rose-bud. 8. That’s the Peacock-mound, our Ice-Cream had melted slowly before we reached for the velvet-apple tree at the top. 9. Hatred is a downward spiral. My deity, here is the query, the coffee-cup, the cruel thrash and all your subterranean write-up. Now tell me how you managed this intonation. 10. The silhouette is moving now. The bonfire is adorning the Grand-lotus. Today I am here to assemble. I am here to find my stuffed owl and my crimson calendar. মালয়েশিয় কবি সেসিল রাজেন্দ্র জন্মেছিলেন মালয়েশিয়ার পেনাং প্রদেশে। তাঁর ছোটবেলার অধিকাংশ সময়টাই কাটে তানজুং তোকোং নামের জেলেদের এক ছোট্ট নামে। তার নিজের জবানীতে, এগারো বছর বয়েসে রবীন্দ্রনাথ আর ওমর খৈয়ামের কবিতা পড়ার পরই বদলে যায় সেসিলের জীবন। পেশায় আইনজীবী হলেও, সেসিল একাধিকবার জানিয়েছেন তিনি 'পোয়েট বাই কমপালশন।' তাঁর কবিতা অনেকক্ষেত্রেই সোজাসাপ্টা প্রতিরোধের কবিতা। সমকালীন বিশ্ব পরিস্থিতি, উত্তর ঔপনিবেশিক জীবন থেকে শুরু করে পরিবেশ সচেতনতা...নিজের বাইশেরও বেশি প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থে তিনি প্রতিনিয়ত স্পষ্ট ভাষায় বলে গ্যাছেন এক শ্রেণী সচেতন রাজনীতির কথা। ফলস্বরূপ, বিতর্ক আর শাষক শ্রেণীর কোপদৃষ্টিও সহ্য করেছেন একাধিকবার। তাঁর স্বদেশের সাহিত্যিক মহল ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মাতব্বররা একাধিকার তাঁর কবিতাকে 'অশ্লীল', 'রাষ্ট্রদ্রোহী' অথবা 'অ্যান্টি ন্যাশনাল' আখ্যা দিয়েছে। গুপ্তচর বিভাগের নজরবন্দী ছিলেন দীর্ঘদিন। এমনকি সরকার একসময় তাঁর পাসপোর্টও বাজেয়াপ্ত করে। তবে তাঁর কবিতা একটানা থেকে গ্যাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। জার্মান, ফ্রেঞ্চ, জাপানী, সোয়াহিলি ও তামিল সহ পঞ্চাশেরও বেশি ভাষায় তাঁর কবিতা অনূদিত হয়েছে। তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে টাইমস, এশিয়া উইক, পোয়েট্রি ইন্টারন্যাশনাল কিংবা ইউনিসেফের মুখপত্রের মত একাধিক বিখ্যাত আন্তর্জাতিক পত্রিকায়। ২০০৫ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হন। বাংলায় তাঁর অনুবাদ খুব সম্ভবত এই প্রথম। শিল্পতত্ত্ব আসুন ভদ্রমহোদয়গণ আমরা কবিতাকে এই বর্বরগুলোর হাত থেকে বাঁচাই.. যারা কবিতাকে রাস্তায় নামিয়ে এনেছে যারা কবিতাকে পতাকা অথবা স্লোগান অথবা মগজধোলাই-যন্ত্রের মত ব্যবহার করেছে আসুন ভদ্রমহোদয়গণ, আমরা রাজনীতি, মতবাদ, সংগঠন...এইসব খুচরো বেনিয়াবৃত্তি আর মোটা দাগের সব প্রচারকৌশল ছেঁটে ফেলে কবিতাকে ফের ঝাঁ চকচকে বানিয়ে ফেলি। আসুন ভদ্রমহোদয়গণ, কবিতাকে আমরা ফের পৌছে দিই সেই শুদ্ধ শিল্পের স্বর্গে আসুন কবিতাকে আমরা উদ্ধার করে তার মুখে গুঁজে দিই নিসর্গ শোভা আজ্ঞে হ্যাঁ ভদ্রমহোদয়গণ, সময় এসেছে কবিতাকে তার আভিজাত্য ফিরিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে সংস্কৃতির গর্ভগৃহে জ্বলন্ত বিগ্রহের মত, যথাযথ সম্মানের সাথে কবিতাকে স্থাপন করার। তবে সমস্যা একটাই... যখন বিষে ঝলসে যাওয়া পৃথিবীর শেষতম গাছ থেকে শেষতম পাতাটা টুপ করে খসে পড়বে তেতে ওঠা মাটিতে আর শেষতম ফড়িঙ, লেঙচে লেঙচে উধাও হবে দিগন্তের দিকে, আর শেষতম পিপীলিকাভুক সমুদ্রের দিকে এগোবে, দোটানায়, অসহায়ভাবে আর শেষতম সুরেলা পাখি ছাই-ঢাকা ডাল থেকে বেমালুম ঝরে পড়বে আর শেষতম সৈনিক সুরঙ্গের মধ্যে কেঁপে উঠবে শেষবারের মত আর শেষ তেলের স্তর গুঁড়ি মেরে এগোবে আমাদের শেষতম সৈকতটাও গিলে নিতে তখন খাবি খেতে থাকা মাছেদের 'শিল্পতত্ত্ব' ঠিক কে বোঝাবে? একটি ব্যতিক্রমী মৃত্যু আমার ঘরে বউ আছে আছে এক ছেলে, মেয়ে, ভাই-বোন, দাদা-দিদি আর আছে যৌথ পরিবার কিন্তু ভালোবাসা বলতে যদি শুধু এটুকুই বুঝি তাহলে আমাকে জ্যান্ত কেটে কুকুরগুলোকে খাইয়ে দাও তোমরা। বহু আগেই আমি মরে গেছি। আমার বাগানে খ্যাপামোয় ভর করে বেড়ে ওঠে গুচ্ছ গুচ্ছ পেঁপে আর তরমুজ আর বোগেনভিলিয়া কিন্তু শুধুমাত্র ওরাই যদি আমায় ভাবায় তাহলে আমাকে জ্যান্ত কেটে কুকুরগুলোকে খাইয়ে দাও তোমরা। বহু আগেই আমি মরে গেছি। কবিতা আমাকে অদ্ভুত টানে আর টানে ছন্দ, সুর... পাইন গাছের জঙ্গল, সমুদ্রের অশান্ত ঢেউ কিন্তু চাওয়া বলতে যদি শুধু এটুকুই বুঝি তাহলে আমাকে জ্যান্ত কেটে কুকুরগুলোকে খাইয়ে দাও তোমরা। বহু আগেই আমি মরে গেছি। আমার চাকরিতে মাইনে ভালোই, একটা ভর্তি পেট, একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, মাথার ওপর একটা ছাদ। বাদবাকিদের জন্য যদি এর চেয়ে এক কণাও কম দাবি করি তাহলে আমাকে জ্যান্ত কেটে কুকুরগুলোকে খাইয়ে দাও তোমরা। কারণ বহু বহু বহু আগেই আমি মরে গেছি। 'প্রকৃত' কবিদের প্রতি নির্দেশসমূহ (১ কোটি সত্তর লক্ষ মৃত শিশু; শুধুই অস্বস্তিকর একটা ভাবনা নয়, বরং ভয়ানক বাস্তব। গতবছর যখন প্রায় গোটা পৃথিবী ক্রমবর্ধিত মুদ্রাস্ফীতি প্রভৃতি নিয়ে মাথার চুল ছিঁড়ছিল, সেই সময়ে এই গ্রহে ঠিক ততজন শিশু মারা যায়: দিনে ৪০০০০ জন, ঘন্টায় ১৬৬৬ জন, মিনিটে ২৭ জন, প্রতি ২.২ সেকেন্ডে একজন।) যথেষ্ট হয়েছে সেই সব জঘন্য ক্লিশে সেইতো এক দাঙ্গা, রক্তপাত, দুর্ভিক্ষ আর সস্তা গড়পড়তা ঘটনাক্রম। আগামীর জন্য বরং লিখে রাখো চিরন্তন সত্য আর সুন্দরের কথা: লেখো প্রেম, যৌনতা, একাকীত্ব লেখো সারল্যের মৃত্যু লেখো মিষ্টি এই মুহূর্তদের গল্প লেখো কীভাবে প্রেয়সী দ্রুতপায়ে বাগানের দরজা খোলা রেখেই তাকে ছেড়ে গিয়েছিল; লেখো ঠাকুর্দার পায়ের নখ উপড়ে উঠে আসা যন্ত্রণার কথা। লেখো দূরদেশের কোনো এক লেখকের ব্যক্তিগত আর সৃজনশীল উদ্বেগ.... মৃত্যুর কথাও লিখতে পারো (যদি নিতান্তই, বাধ্যত লিখতেই চাও), তবে তা নিজস্ব পরিসরেই আর যথাযথ অনুপাত বুঝে। যেমন এক আধজন মাসি-পিসি অথবা দূরসম্পর্কের এক মামা... তবে কিছুতেই একটা আস্ত দেশ আর তার জনসংখ্যার মরে যাওয়া লিখো না। বরং মিষ্টি মুহূর্তগুলোতে মন দাও; যেমন প্রেম, যৌনতা, একাকীত্ব সারল্যের মৃত্যু.... কিন্তু কিছুতেই কঙ্কালসার শিশুদের দিকে নয়! আর কেউ যদি চিৎকার করে ওঠে প্রতি বছর এক কোটি সত্তর লক্ষ শিশু অপুষ্টিতে মরছে (অর্থাৎ প্রতি দু সেকেন্ডে গড়ে দুজন) জানাও সে সমস্যায় অন্য কেউ মাথা ঘামাক কারণ তোমাকে ভাবতে হবে মিষ্টি মুহূর্তদের কথা, যথা প্রেম, যৌনতা, একাকীত্ব প্রভৃতি তখন রক্তপাত আর মৃতপ্রায় শিশুদের মত গা ঘিনঘিনে ক্লিশেদের সযত্নে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। রুবাইয়াৎ ও রেডিয়েশন আর হ্যাঁ, আমিও প্রতিবাদ আর প্রতিরোধে ক্লান্ত এই উন্মত্ত পৃথিবী ছেড়ে যদি খৈয়মের মতই নিরালায় পালাতে পারতাম সাথে এক টুকরো রুটি এক পাঁইট মদ এক বই কবিতা আর একদম পাগলী একটা মেয়ে কিন্তু ওমার, এই পারমাণবিক আশঙ্কার ছায়ায় আজ আর কোথাও কোনো স্বর্গ নেই। রুটির গুঁড়োগুলো তেজষ্ক্রিয় টুকরো হয়ে খসে গ্যাছে, সব মদ এখন বিষাক্ত আর আমার প্রেমিকা, রক্তাল্পতায় ভোগা একটা হাড্ডিসার দেহ, ছাইয়ের স্তূপে দাঁড়িয়ে আর গান নয়, শুধুই চিৎকার করছে। আমার বার্তা আর এখন তুমি জানতে চাইছো আমার অন্তর্নিহিত বার্তার কথা আর আমি নবোকভের ভাষায় বলছি- আমি কবি ডাকহরকরা নই বিলি করার মত কোনো বার্তা নেই আমার। কিন্তু আমি চাই আমার কবিতা কাঁপতে কাঁপতে ঔদাসিন্যের এই শক্ত বর্মে ফাটল ধরাক। আমি চাই ওরা রুপোলি আঠায় জুড়ে থাকা অলস চোখের পাতাগুলোকে সটান খুলে দিক। আমি চাই অক্ষরগুলো ব্যালে নাচতে নাচতে ধরা দিক লাস্যময়ীদের যৌন স্বপ্নে আমি চাই স্বরবর্ণগুলো বাতিল মানুষের ঘুমের গভীরে ভেসে ভেসে উঠুক আমি চাই আমার ব্যঞ্জনবর্ণরা দৃষ্টিহীনেদের চোখের পর্দায় ছুঁড়ে দিক রঙিন আর জ্যান্ত সব দৃশ্য আমি চাই পঙক্তিগুলো দশ হাজার ম্যান্ডোলিন হয়ে ফেটে পড়ুক বধীরের কানের পর্দায় আমি চাই এমন ছন্দ যা পাইন, ওক আর শাল শেগুনের অতলান্তিক ঘুমের ভিত নড়িয়ে দেবে শিকড় উপড়ে তারা নিজেদের নিক্ষেপ করবে দুনিয়ার বুলডোজার আর ইলেকট্রিক কুড়ুলের শরীরে আর উদ্ধত পায়ে এগোবে জঙ্গলের ঠিকাদারদের গুঁড়ো করে দিতে। আমি চাই এমন সব স্তবক যা মেরু ভাল্লুক আর বাঘেদের থাবায় গুঁজে দেবে এক একটা আস্ত স্টেনগান আর প্রত্যেকটা সীল, তিমি আর শুশুকের পাখনার নিচে লুকিয়ে রাখবে হারপুন আর স্বপ্রজাতির প্রতিটা হত্যাকাণ্ডকে ওরা সশস্ত্র প্রতিরোধ করবে আমি চাই প্রতিটা ছেদ-যতি চিহ্ন.... দাঁড়ি, কমা আর সেমিকোলন ভাত, গম, জোয়ার, বাজরা আর বার্লির দানা হয়ে ঝরে পড়বে বুভুক্ষুর মুখে, আর চাই রুপকগুলো রুপ নেবে গৃহহীনের মাথা গোঁজার মত ছাদে আমি চাই অনুপ্রাস অনায়াসে হাসির রেখা হয়ে জ্বলে উঠুক অসুস্থ, অসহায় আর ভয়ানক একা ওই মানুষগুলোর ঠোঁটে আর দুনিয়ার তাবত মজদুর আর কৃষকের যুদ্ধবিধ্বস্ত, হা-ক্লান্ত শিরায় অ্যাড্রিনালিন হয়ে ছুটুক আর হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি চাই আমার কবিতা বইয়ের পাতা থেকে লাফিয়ে নামুক আর প্রচ্ছদ ছিঁড়ে ফেলে কুচকাওয়াজ করে এগিয়ে যাক আধা জাগ্রত মানুষের সমুদ্রে আর সব বিশেষ্য, বিশেষণ, অব্যয় কার্য, কারক, সন্ধি সমাস.... নিজের শরীর থেকে খুলে রেখে বলুক 'এই আমার আঘাত, আমার ক্ষত; এই আবার ছেঁড়াখোড়া উদর, এই..এইখানে আমি জরাজীর্ণ আর ক্ষুধার্ত; আর ওইখানে ওরা আমায় মেরে রক্তাক্ত করেছিল; আর এই ইলেকট্রিক ক্রুশকাঠে আমি মরে গিয়েছিলাম, ভাই আমার, বোন আমার, আমি এসেছি!' |