[স্টেসিয়্যান চিন একজন স্পোকেন ওয়ার্ড কবি, পারফর্মার ও এলজিবিটি রাইটস অ্যাকটিভিস্ট। জন্মসূত্রে জামাইকান স্টেসিয়্যানের বাবা ছিলেন চীনা ও মা জামাইকান। জামাইকায় তাঁর ছোটবেলা কাটে অসম্ভব দারিদ্র ও প্রখর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীকালে তিনি আমেরিকার অধিবাসী হন ও তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে সমকামী নারী হিসেবে বেড়ে ওঠার যন্ত্রণা লিপিবদ্ধ করেন 'দ্য আদার সাইড অফ প্যারাডাইস' গ্রন্থে। দ্য নিউ ইউর্ক টাইমস ও দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের মত দৈনিকে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রতিটি লেখায় উঠে আসে নারী, কৃষ্ণাঙ্গ ও সমকামীদের যন্ত্রণার প্রসঙ্গ যার সাথে মিশে থাকে অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়। ছাপার অক্ষরে তার প্রথম কাব্যের সঙ্কলন এ বছরই প্রকাশিত হবে যা এতদিন স্পোকেন ওয়ার্ড হিসেবেই সচরাচর পাঠ করা হত।] নিতান্ত অহঙ্কারের বশেই নিতান্ত অহঙ্কারের বশেই আমি ভেবে উঠতে চাই আমি ঠিক কেমন নারী হয়ে উঠবো যখন আমার আগুনে যৌবনের বসন্ত অতিক্রান্ত তখনো আমার কি হাতে ধরা থাকবে এই বিপ্লবের নিশান আর কন্ঠে সেই উদ্দীপ্ত ভাষণ যা কিনা ওই গাঢ় নীল কলারের রক্ষণশীল ছদ্ম-উদারনৈতিকদের পুষে রাখা ক্ষোভকে চাগাড় দিয়ে তুলবে সেই বছরগুলোয় যখন আমি আমার সক্ষম মুত্রথলিটিকে ধন্যবাদ দেব যেহেতু তা থেকে তখনো ডায়াপারে অপাচিত ফলের রস চুঁইয়ে পড়েনা কোনো অবস্থাতেই যা আর সুন্দর নয় আমি কি তার কাছেই বেশি কৃতজ্ঞ থাকবো সংগ্রামী কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে পথ হাঁটার চেয়ে আর তখনো কি তা এতটাই মূল্যবান থাকবে আর তখনো কি এতটাই মূল্যবান থাকবে এই দীর্ঘ নির্ঘুম প্রহরগুলি যা ব্যয় হয়েছিল সেই দিস্তা কাগজগুলোর সাহচর্যে আর সেসব কাগজে বুনে তোলা জঘন্য কবিতাগুলোর পিছনে যেগুলি আমায় নিক্ষেপ করেছিল এক একটি কাব্যময় খিঁচুনিতে অথচ যেগুলি নিউ ইয়র্কের সবচে অখ্যাত কবিতা-ক্যাফের রাত-তিনটের জমায়েতের খিদে মেটাতে ব্যর্থ হয়েছিল আমি কি তখন আক্ষেপ করবো ব্যাঙ্কের কাজটা ছেড়ে দেওয়ার জন্য অথবা সেই বয়স্ক মহিলাকে দেখাশোনার কাজটা যার ঠোঁট দিয়ে ক্রমগত লালা গড়িয়ে পড়তো ওই আধসিদ্ধ ডিমগুলোর উপরে আর তিনি আমায় তাঁর যৌবনের কথা শোনাতেন কীভাবে সেই ষাটের দশকে তাঁর উন্মত্ত রূপের আকর্ষণে যেকোনো পুরুষ তাঁর হাতের মুঠোয় আসতে পারতো কিন্তু তিনি ঘর বাঁধেন তাদের মধ্যে সবথেকে অকর্মণ্যটির সাথে আর সেজন্যই সেই কুত্তার বাচ্চাটা মরলে শুধুমাত্র সরকারি ভর্তুকির আশায় অবশেষে তিনি এইখানে চলে আসতে বাধ্য হন আমিও কি আমার অল্পবয়সী পরিচারিকাটিকে শোনাবো আগে আমি কেমন তন্বীটি ছিলাম আর এঁকে দেখাবো আমার এমন ছবি যা আদতে আমার চেয়েও সুন্দরী এক মহিলার যাতে সাময়িকভাবে সে ভুলে যেতে পারে আমার এই খসখসে কাগজের মতো চামড়া আর এই ছোপওয়ালা অথচ মসৃণ দাঁতগুলোকে আর সেই পেচ্ছাপের হাল্কা গন্ধ যা সাধারণত এই ধরণের ঘরগুলোতেই পাওয়া যায় যা বিশেষভাবে সেইসব একদা-বিপ্লবীদের জন্য তৈরি যাদের বিপ্লব সমাপ্ত অথবা বিস্মৃত হয়েছে। আমি কি তখনো এমনই সমকামী থেকে যাবো নাকি ততদিনে চার্চ আর পরিবারের চাপে বিয়ে করে ফেলবো কোনো এক অক্ষম পুরুষকে যার শিশ্ন আমায় সেই উন্মত্ত আর ক্রমান্বয়িক শীর্ষসুখ দিতে অপারগ যা দিয়েছিলো আমার বান্ধবীদের হাতের কৃত্রিম যৌনাঙ্গ কর্মচারীরা কি আমাকে দেখে সৌজন্যের হাসি হাসবে আর মুখোমুখি আমার পাগলামোগুলোর তারিফ করবে অথচ নিজেদের ঘরের আড়ালে হাসাহাসি করে বলবে যৌবনে নির্ঘাত ডাঁসা মাল ছিলেন মহিলা বেশীর ভাগ দিনই আমি বুঝে উঠতে পারিনা ভবিষ্যতে আমি কী হয়ে উঠবো কিন্তু প্রত্যেকটা দিনই আমি জানি আমি এখন কী হতে চাই আমি সেই কণ্ঠ্স্বর হতে চাই যা গিলানীকে এমন ভড়কে দেবে যে সে বাধ্য হয়ে দুজন(সমকামী) কৃষ্ণাঙ্গ রাখবে তাকে পাহারা দেবার জন্যে আমি সেই কবিতাটা লিখতে চাই যা নিউ ইয়র্ক টাইমসও ছাপাতে ভয় পাবে কারণ তা মুহূর্তের মধ্যেই সূত্রপাত ঘটাতে পারে কোনো সমকামী অথবা কৃষ্ণাঙ্গ এমনকি কোনো শ্বেতাঙ্গ বিপ্লবেরও আমি সেই গোপন মিটিংগুলোয় যোগ দিতে চাই যেখানে তরুণ বিপ্লবীদের আনাগোনা আর মেয়েলি বন্ধুত্বের অছিলায় বিছানায় নিয়ে যেতে চাই সেইসব বিপ্লবী মেয়েদের যারা বিপ্লব নিয়ে উৎসাহের আতিশয্যে ভুলে যায় সেইসব মেয়েদের কথা যারা শহর থেকে শহরে তাদের অনুসরণ করে এসেছে বিপ্লবের ঘরে তবু যাদের ঠাঁই হয় নি আমি চাই আমার চল্লিশ বছর বয়েস হোক আমি চাই আমার ওজন হোক তিনশো পাউন্ড আর শীতকালে একটা মোটরবাইকে চেপে আমি পাড়া দাপিয়ে বেড়াই আর সাথে থাকুক আমার চার চারটে আগুনখেকো বাচ্চা আর থাকুক আমার রোগাসোগা তরুণী বান্ধবী যে কবিতা লিখবে আমায় আর আমার বাচ্চাদের নিয়ে আর প্রগাঢ় ভালোবাসবে আমায় যেমনভাবে কখনো কেউ বাসেনি আমি সেই দৃষ্টান্ত হতে চাই যাকে দেখিয়ে বাবা মায়েরা তাদের বাচ্চাদের সাবধান করবে এমন মেয়েমানুষ কখনোই হোয়ো না আমি সেই সমকামী নারী হতে চাই যে পুরুষেকে চুদতে ভালোবাসে আমি সেই রাজনীতিবীদ হতে চাই যে কখনো মিথ্যে বলে না আমি সেই মেয়ে হতে চাই যে একফোঁটাও কাঁদেনা আমি চাই ইতিহাস বইয়ের পাতায় আমার নাম কোন খোপে পুরবে সেটা বুঝতে না পেরে ঐতিহাসিকরা 'বিবিধ' অধ্যায়ে আমায় অন্তর্ভুক্ত করুক যে কোনো মূল্যে শ্রেণিভুক্ত করাটাই যে পৃথিবীর দস্তুর আমি সেই মাটিতে দাঁড়িয়ে সীমারেখাগুলো দুমড়ে মুচড়ে দিতে চাই যাতে আমি স্রেফ 'আমি' হয়ে উঠি
1 Comment
[মার্কিনী নাট্যকার ও অভিনেত্রী ইভ এন্সলার এই মুহূর্তের আন্তর্জাতিক নারীবাদী আন্দোলনের একজনের প্রথিতযশা নেত্রী। থিয়েটার কর্মী হওয়ার সাথে সাথে তিনি একজন সমাজসেবী ও রাজনৈতিক কর্মী। তিনি সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত তার নাটক 'ভ্যাজাইনা মনোলগ' এর জন্য যা আজ অবধি ৪৮ টি ভাষায় অনূদিত ও ১৪০ টি দেশে অভিনীত হয়েছে। ভ্যাজাইনা মোনলগে অভিনয় করেছেন জেন ফন্ডা, হুপি গোল্ডবার্গ ও অপরা উইনফ্রের মত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্না অভিনেত্রীরা। মহিলাদের বিরূদ্ধে ঘটে চলা ক্রমিক হিংসার বিরূদ্ধে ইভ গড়ে তুলেছেন তাঁর 'ভি ডে ফাউন্ডেশন' যা বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত মহিলাদের পাশে দাঁড়ায়৷ পেয়েছেন অসংখ্য পুরষ্কার যার মধ্যে টোনি অ্যাওয়ার্ড ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মিডিয়া স্পটলাইট অ্যাওয়ার্ড উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য নাটকের মধ্যে 'গুড বডি', 'নেসেসারি টার্গেটস' ও 'ইমোশনাল ক্রিচার' বিশেষভাবে সমাদৃত। ] ভূমিকা ১ যোনি শিহরক, হৃদয় বিস্ফোরক সেই দেবদূতকে । আমরা সেই প্রজন্মের মানুষ যখন যোনিকে বলা হত “ওই জায়গাটা”। তাও ফিসফিস করে। এমন নয় যে কেউ যোনি, ক্ষুদ্রোষ্ঠ, বৃহদোষ্ঠ, ভগাঙ্কুর, যোনিদ্বার এই শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত ছিল না। তবু… হিন্দু মন্দিরে প্রথম দেখি লিঙ্গম ও যোনি। পুরুষ ও স্ত্রী যৌনাঙ্গের প্রতীক। সংস্কৃত শব্দ যোনি, যার প্রতীক ফুলের মত, তার পুরুষ অর্ধাঙ্গের থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী বলে পূজিত হত। সেই বিশ্বাস তন্ত্রসাধনাতেও চারিত হয়। তান্ত্রিকদের বিশ্বাস, পুরুষ আধ্যাত্মিকতার শীর্ষে পৌঁছাতে পারে না, যতক্ষণ না তার দৈহিক ও মানসিক মিলন হয় উচ্চতর শক্তি, স্ত্রীশক্তির সঙ্গে। আধ্যাত্মিক খ্রীষ্টানরা সোফিয়াকে আরাধনা করেছেন পবিত্র আত্মা হিসেবে, মেরি ম্যাগড্যালেনকে যীশুর বিচক্ষণতম শিষ্য হিসেবে। তান্ত্রিক বৌদ্ধরা এখনো বিশ্বাস করেন বোধির বাস স্ত্রীযোনিদ্বারে। ইসলামের সুফী সাধকেরা বিশ্বাস করে্ন ‘ফানা’ অর্থাৎ নির্বাণ লাভ সম্ভব শুধুমাত্র ফ্রাভাশি বা স্ত্রী আত্মার মধ্যে দিয়ে। ইহুদী ধর্মে শেকিনা হল স্ত্রীশক্তির এক রূপ। এরকম অজস্র উদাহরণ আছে। এসব বিশ্বাস ও আচারকে যদিও পরবর্তীতে মূলধারার ধর্ম সম্পূর্ণ উলটে দিয়েছে, প্রান্তিক করে দিয়েছে নারীকে। ইন্দো-ইউরোপিয়ান শব্দ কান্ট এসেছে দেবী কালীর কুণ্ডা বা কান্তি থেকে। এখন যে নারীবাদীরা কান্ট-পাওয়ার শব্দবন্ধটিকে প্রতিষ্ঠা করছেন, টিশার্ট থেকে বোতামে লিখে, এই মূল্যহীন হয়ে যাওয়া বা সরিয়ে দেওয়া শব্দের পুনরুদ্ধারকে আমার সেই প্রাচীন স্ত্রীশক্তির পুনর্প্রতিষ্ঠা মনে হয়। ১৯৭০ থেকে শুরু করে তৎপরবর্তী নারীবাদের তিন দশককে এক দুরন্ত রাগের প্রকাশ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। নারীশরীরের ওপর যাবতীয় অত্যাচার, ধর্ষণ থেকে শুরু করে জরায়ু ও জন্মদানের সিদ্ধান্তের অধিকারে বাধা, ধর্মের নামে শৈশবেই ভগাংকুর কেটে যোনিদ্বার সেলাই করার যে বিশাল মাপের আন্তর্জাতিক অপরাধ, সব যখন আলোচনায় উঠে আসে, রাগ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সুস্থির হয়ে ওঠা প্রয়োজন। এই রাগকে সৃষ্টিশীলতায় বদলে দিয়ে নিজেদের যন্ত্রণাকে প্রশমিত করা এবং হিংস্রতাকে দূর করা যায়। প্রথম যখন ইভ এন্সলারের এই উপস্থাপনা দেখতে যাই, দ্য ভ্যাজাইনা মনোলগ, যা কিনা দু’শ জন নারীর অত্যন্ত গভীর, নিবিড় ও লুকিয়ে থাকা অভিজ্ঞতা ও চিন্তার সাক্ষাতকারকে একটা নাটক ও কাব্যের রূপ দেওয়া—আমার মনে হয়েছিলঃ আমি তো এই পথ চলার কথা সবটাই জানি, এই যে সত্যিকে তুলে ধরা, গত ত্রিশ বছর ধরে হচ্ছে। কিন্তু এই বইটি বিগত তিন দশকের রাগ উগরোতে থাকা ওই নেতিবাচক প্রকাশের থেকে একটু আলাদা। এতে রয়েছে ব্যক্তিগত, শরীরে ও মনে গেঁথে থাকা অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার কথা বলে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবার প্রয়াস। ~ গ্লোরিয়া স্টেইনেম ভূমিকা ২ ভি-ডে অর্থাৎ ভ্যাজাইনা ডে আমি জানিনা কী থেকে ঠিক হ’ল। ছোটবেলায় এমন কোন দিবাস্বপ্ন আমি দেখিনি যে বড় হ’লে আমাকে সবাই “দ্য ভ্যাজাইনা লেডি” বলে ডাকবে। কোনদিন ভাবিওনি যে যোনি নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কথা বলে বেড়াব এথেন্স, গ্রীসে অব্দি, কিংবা বাল্টিমোরে চার হাজার পাগল মহিলামহলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ভ্যাজাইনা মন্ত্র আবৃত্তি করব। ফেব্রুয়ারী ১৪, ১৯৯৮, ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে জন্ম হয় আমাদের ভ্যাজাইনা ডে-র। নিউ ইয়র্কের হ্যামারস্টাইন বলরুমের বাইরে আড়াই হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছিল আমাদের এই উন্মাদ কার্যকলাপ দেখতে। ২০০০ সালে তা ছড়িয়ে পড়ে লস এঞ্জেলেস, সান্তা ফে, সারাসোতা, অ্যাস্পেন ও শিকাগোয়। তারপরে হাজার হাজার কলেজে ছাত্রছাত্রীরা উপস্থাপনা করেছে এই নাটকের। বর্তমানে ভি ডে র যে ফান্ড তা সারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে, প্রান্তিক নারীরা যেখানে অত্যাচারিত ও কঠিন লড়াইয়ে রত, তাঁদের সাহায্যে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হয়। ~ইভ এন্সলার যোনিকাহন আপনাদের ভয় করছে নিশ্চয়ই? আমারও ভয় ছিল। সেজন্য এই লেখা শুরু করা। আমার ভয় ছিল নিজের যোনি নিয়ে। ভয় ছিল যোনি নিয়ে আমরা কী ভাবি তা নিয়ে, আর তার থেকেও বেশী ভয় ছিল যোনি নিয়ে আমরা যা এখনও ভাবি না তা নিয়ে। নিজের যোনি নিয়েই ভয় ছিল। আমার যোনির দরকার ছিল অন্য যোনিদের- একটা গোষ্ঠীর, একটা চর্চার। ব্যাপারটা ঘিরে এত লুকোচুরি আর অন্ধকার—যেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। সেখান থেকে কেউ ফিরে আসেনা, তাই সেখানকার খবরও বাইরের দুনিয়ায় পৌঁছয় না। প্রথমতঃ নিজের যোনি খুঁজে পাওয়াটাই একটা কঠিন কাজ। মেয়েদের, মহিলাদের সপ্তাহ, মাস এমনকি বছরও কেটে যায় নিজের যোনির দিকে একবারও না তাকিয়ে। আমি একজন বেশ প্রতিপত্তিশীল ব্যবসায়ী ভদ্রমহিলা কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সাক্ষাতকার নিতে গিয়ে; তিনি বলেছিলেন তিনি ব্যস্ত, এতটাই ব্যস্ত যে তাঁর সময় হয়নি নিজের যোনির দিকে তাকিয়ে দেখার। ওঁর বক্তব্য অনুযায়ী, নিজের যোনিকে আবিষ্কার করা মানে একটা গোটা দিনের কাজ। একটা লম্বা আয়নার সামনে থেবড়ে বসতে হবে, তারপরে সঠিক অবস্থান খুঁজে পাওয়া গেলেও চাই ঠিকঠাক আলো, যেন আয়নায় প্রতিফলনের সঙ্গে বসার কৌণিক অবস্থানের কাটাকুটি না হয়, ইত্যাদি। নিজের শরীরকে বাঁকিয়ে চুরিয়ে এত কিছু করার পর উঠে যখন দাঁড়াবে, ঘাড় শক্ত, পিঠে কোমরে ব্যথা, তুমি ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত। সে সময় ওঁর নেই। তাই আমি ঠিক করলাম কথা বলব যোনি নিয়ে, মহিলাদের সঙ্গে, যোনির জন্য সাক্ষাতকার, আর তার থেকেই জন্ম নিল এই যোনিকাহন বা ভ্যাজাইনা মনোলগস। দুশ’র ওপর মহিলার সঙ্গে আমি কথা বলেছি। কেউ বৃদ্ধা, কেউ তরুণী, কেউ বিবাহিতা, কেউ একা থাকেন, কেউ সমকামী, কেউ হয়তো কলেজে পড়ান, কেউ অভিনয় করেন, কেউ কর্পোরেট জগতে, যৌনকর্মী, আফ্রিকান আমেরিকান, হিস্প্যানিক, এশিয়ান আমেরিকান, নেটিভ আমেরিকান, ককেশীয়, ইহুদী, ইত্যাদি। প্রথম প্রথম মেয়েরা একটু অনিচ্ছুক ছিল কথা বলতে। লজ্জা পেত একটু। কিন্তু, একবার যদি বলা শুরু হয়ে যায়, তাহলে থামানোই মুশকিল। আসলে মেয়েরা নিজেদের যোনি নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসে, একান্তে। ব্যাপারটা নিয়ে আমি ওদের মধ্যে একটা ভীষণ উত্তেজনা লক্ষ্য করেছি, কারণ আগে কেউ এরকম প্রশ্ন তাদের করেইনি। আচ্ছা, প্রথমে শুরু করা যাক যোনি শব্দটা দিয়ে। শুনলে যেন মনে হয় একটা ছোঁয়াচে রোগ, কিংবা ডাক্তারি কোন যন্ত্র। “নার্স, যোনিটা দিন, জলদি।“ যোনি যোনি যতবারই বলুন না কেন, ফারাক পড়ে না। শব্দটা এমনই যে কখনই যেন বলতে ইচ্ছে করে না। একটা হাস্যকর শব্দ, যৌনতার গন্ধও নেই। যৌনমিলনের সময়, পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকার জন্য যদি যৌনসঙ্গীকে বলেন “সোনা, আমার যোনিতে আঙুলটা ঘষ”, কতখানি হাস্যকর শোনায়!! যোনিকে নিয়ে ভয় হয়। তাকে যে কী নামে ডাকব, আর কী নামে ডাকব না। একজন ভদ্রমহিলা বলেছিলেন তাঁর মা তাকে বলতেন “পাজামার নীচে প্যান্টি পরিস না, তোর পুসিক্যাটকে হাওয়া লাগাতে দিতে হবে তো!”। ওয়েস্টচেস্টারে কেউ বলে পুকি, নিউ জার্সিতে টোয়াট। এছাড়া রয়েছে পাউডারবক্স, ডিরিয়ারি, পুচি, পুপি, পিপি, পুপেলু, পুনানি, প্যাল, পিচে, টোডি, ডিডি, নিষি, ডিগনিটি (!!), মাংকিবক্স, কুচি স্নরচার, কুটার, ল্যাবে, উই উই, হর্সস্পট, ন্যাপি ডাগ আউট, মঙ্গো, ফ্যানিবু, কনি, মিমি, তমালি, মার্শ্মেলো, ঘুলি, পসিবল, শমেন্ডে, স্প্লীটনিশ, এমনিতর কত শত নাম। তাও আমি বেশ ভয়ে আছি। যোনি নিয়ে। কাহিনী ১: যৌনকেশ লোম না ভালোবাসলে যোনিকে ভালোবাসা যাবে না। অনেকেই লোম পছন্দ করে না। আমার প্রথম স্বামী একদমই লোম পছন্দ করত না। ও বলত নোংরা লাগে। আমাকে শেভ করাতো। আমার যোনি ফুলে ফুলে থাকত, নিরাভরণ, যেন ছোট বাচ্চা মেয়ের, সেটা ওকে উত্তেজিত করত। কিন্তু সঙ্গমের সময় আমার যেন মনে হত দাড়ি ঘষার মত লাগছে। ছড়ে যেত, জ্বালা করত। লাল লাল হয়ে ফুলে ফুলে উঠত। আমি বললাম আমি শেভ করব না। তা আমার বর অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ল। যখন আমরা থেরাপি করাতে গেলাম, ও বলল যে আমি ওকে শারীরিক তৃপ্তি দিতে পারি না, তাই অন্য মেয়েদের সঙ্গে ওকে শুতেই হয়। থেরাপিস্ট এর পরামর্শ মত বিয়ে বাঁচাতে, যেহেতু বিয়ে নাকি একটা জটিল ব্যাপার, আমি আবার শেভ করলাম, ওই করে দিল খুশিতে। যদি এইভাবে ওর অন্য সম্পর্ক বা অন্য মেয়েদের দিকে আকর্ষণ কমে। কিন্তু আবার সঙ্গমের সময় আমার ব্যথা লাগতে থাকল, আমার বরের যৌনকেশের তীব্র ঘষা। আমি বুঝলাম যে লোমটা আছে একটা কারণেই। ফুলের গর্ভাশয়ের চারপাশে পাপড়ির মত, বাড়ির চারপাশে লনের মত। যোনিকে ভালোবাসতে গেলে যৌনকেশকে মেনে নিতেই হবে। ইচ্ছেমত বেছে তো নেওয়া যাবে না। তাছাড়া, আমার বরের অন্যান্য মেয়েদের সঙ্গে শুয়ে বেড়ানো বন্ধ হয়নি যদিও। কাহিনী ২: জলস্রোত (ইনি একজন ইহুদী মহিলা) ওইখানটা? ওইখানটার ঠিক কোন খোঁজ রাখি নি ১৯৫৩ থেকে। না না, আইসেনহাওয়ারের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। ওই জায়গাটা আসলে বাড়ির বেসমেন্টের সেলারের মত। স্যাঁতসেঁতে, চিটচিটে। সচরাচর কেউ যেতে চায় না। কিছু মনে কোরো না,তোমার সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলতে পারব না। একজন আধুনিকা, সপ্রতিভ মেয়ে, কী যে আমাদের মত বুড়িদের এইসব নিয়ে জিজ্ঞেস করে বেড়াচ্ছ! উফফ জিসাস। আচ্ছা। বলছি। একটা ছেলে ছিল, ভালো লাগত তাকে। অ্যান্ডি লেফটকভ। আমার মতই লম্বা। একদিন সে আমাকে ডেট এ ডাকল… তার গাড়িতে করে বেরনো। ইসস!! বলতে পারব না তোমাকে এসব। অসম্ভব। ছি ছি। জানোই তো ওই জায়গাটা, সেলারের মত, নানারকম অদ্ভুত শব্দ শুনতে পাবে মাঝে মাঝে। যেমন সেলারের পাইপ, ইঁদুর পোকামাকড় বা ছোটখাটো আরও কত কী আটকা পড়ে যায় সেখানে, ভিজে ওঠে কখনও কখনও, তখন কাউকে গিয়ে সেই ফুটোফাটা বন্ধ করতে হয়। নইলে বন্ধই থাকে ওখানকার দরজা। মানে, বাড়ির এই অংশটা সবাই ভুলেই যায়। কিন্তু একটা সেলার সবার বাড়িতেই আছে। যাহক। বলছিলাম অ্যান্ডি র কথা। দারুণ দেখতে ছিল। বেশ দাঁও বলতে পারো। অন্তত সেযুগে আমরা তাইই বলতাম। ওর শেভি বেল এয়ার গাড়িতে যাচ্ছিলাম। মনে আছে, আমার পা লম্বা বলে বসতে অসুবিধে হচ্ছিল। ড্যাশবোর্ডে বারবার ঠোকা খাচ্ছিল। ও হঠাৎ করেই সিনেমার মত আমাকে টেনে নিয়ে চুমু খেল। আমি খুব উত্তেজিত হয়ে পড়লাম স্বাভাবিকভাবেই। এতটাই উত্তেজিত যে ওইখানটা ভিজে উঠল। কিছুতেই সামলাতে পারছি না, যেন বাঁধভাঙা বন্যার জল। প্যাণ্টি ভেসে সিট পুরো ভিজে গেল। নতুন গাড়ি। হিসি নয় ওটা, গন্ধও পাচ্ছিলাম না আমি তেমন কোন। কিন্তু অ্যান্ডি বলল, পচা দুধের মত গন্ধ নাকি পাচ্ছে, তাছাড়া ওর গাড়ির সিটে দাগ লেগে গেল। ওর কাছে আমি একটা নোংরা অদ্ভুত মেয়ে হয়ে গেলাম। আমি বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে এমনিতে এমন হয় না, চুমুর জন্যই। আমার হলুদ রঙের সুন্দর নতুন জামা দিয়ে সীট টা মুছলাম, জামায় দাগ, বিশ্রী। ও আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিল ঠিকই, কিন্তু আর একটাও কথা বলল না। সেই যে গাড়ি থেকে আমি নামলাম, ওই দরজাটা ওইখানকার দরজাটাও বন্ধ করে দিলাম। পরে আরও অনেকের সঙ্গে ডেট এ গেছি, কিন্তু এত ভয় করত যে আবার যদি ওরকম হয়, তাই বেশি ঘনিষ্ঠ হইনি। এ নিয়ে ভয়ানক সব দুঃস্বপ্ন দেখতাম একসময়। দেখতাম বার্ট বলে আরেকটি ছেলে, যদিও আমার জীবনে সে বেশিদিন ছিল না। তবু স্বপ্নে তাকে দেখতাম। বার্ট আর আমি, একটা রেস্তোরাঁইয় গেছি। , আটলান্টিক সিটির মত একটা জায়গায়। বিশাল বড় রেস্তোরাঁ, ঝাড়লন্ঠন, ভেস্ট পরা পরিচারক পরিচারিকা। বার্ট আমাকে একটা অর্কিড করসেজ দিচ্ছে, আমি আমার ব্লেজারে সেটা লাগাচ্ছি, হাসছি, ককটেল খাচ্ছি, চিঙড়ির দারুণ দারুণ পদ। হঠাত বার্ট আমাকে টেনে নিয়ে আমার চোখের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে চুমু খেতে যাবে-- ঘরটা কেঁপে ওঠে। টেবিলের তলা থেকে একঝাঁক পায়রা বেরিয়ে ডানা ঝাপ্টাতে থাকে, ঘরময় উড়তে থাকে, পায়রা ওখানে কোত্থেকে এলো জানি না। আর তারপরেই আমার ওইখান থেকে বন্যার জল হুড়হুড় করে বেরিয়ে আসবে। তার মধ্যে মাছ অব্দি খেলা করে বেড়াবে, ছোট ছোট নৌকো। সারা রেস্তোরাঁ সেই জলে ভরে যাবে। বার্ট সেই হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ভয় আর হতাশা মেশানো একটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে। উফফফ… আবার সেই একই কাজ করে ফেললাম আমি!! নাহ এখন আর এইসব স্বপ্ন দেখি না। যবে থেকে ক্যান্সারের জন্য গর্ভাশয় এবং গোটা ব্যাপারটাই বাদ পড়েছে। নাও এবার খুশি? বলতে বাধ্য করলে তুমি আমাকে। আমার মত এক বুড়িকে ওই জায়গাটা নিয়ে কথা বলতে বাধ্য করলে। খুশি তো। তবে কী জানো, এই প্রথম এই নিয়ে কারুর সঙ্গে কথা বললাম। সত্যি বলতে কি, ভালোই লাগছে। কাহিনী ৩: ভ্যাজাইনা ওয়ার্কশপ! আমার যোনি একটা ঝিনুকের খোলার মত। একটা সুডৌল গোলাপী, ঝিনুকের খোলা যেন। খুলছে, বন্ধ হচ্ছে, বন্ধ হচ্ছে, খুলছে। আমার যোনি একটা ফুলের মত, টিউলিপ ফুলের মত মাঝখানটা গভীর, একটা মৃদু সুগন্ধ, নরম কিন্তু সটান পাপড়ি। এসব আমি উপলব্ধি করেছি এক ভদ্রমহিলার সঙ্গে আলাপ হবার পরে, যিনি ভ্যাজাইনা ওয়ার্কশপ করেন। প্রথমদিন উনি আমাদের প্রত্যেককে নিজের নিজের অপূর্ব, অদ্বিতীয় সুন্দর যোনির ছবি আঁকতে বললেন। একজন, যার বাচ্চা হবে, একটা বড় লাল মুখ আঁকল, যার থেকে টাকা ঝরছে। একজন খুব রোগাটে ভদ্রমহিলা আঁকলেন ডেভনশায়ার নকশা আঁকা একটা বড় থালা । আমি আঁকলাম একটা কালো বড় ব্ল্যাকহোলের মত গর্ত, চারপাশে হিজিবিজি রেখা। আমার যোনিকে আমি সবসময় ভেবেছি শরীরের মধ্যে যেন একটা ভ্যাকুয়াম, যা চারপাশের সবকিছুকে গিলে খেয়ে নেবে। আমার যোনিকে আমার সবসময় একটা আলাদা সত্ত্বা মনে হয়েছে, নিজের ছায়াপথে ঘুরতে থাকা একটা নক্ষত্র, ধীরে ধীরে নিজেকেই পুড়িয়ে বিস্ফোরিত হয়ে, হাজার হাজার টুকরোয় ছড়িয়ে পড়ে জন্ম দিচ্ছে নতুন ছোট ছোট যোনির। তারা আবার ঘুরতে থাকছে তাদের ছায়াপথে। আমি আমার যোনিকে কোন অঙ্গ হিসেবে দেখি না, যা শুধুমাত্র আমার দু পায়ের ফাঁকে আটকে থাকবে। তারপরে আমাদের বলা হ’ল হাত আয়না দিয়ে নিজেদের যোনি দেখতে এবং তারপরে বর্ণনা করতে। সত্যি বলতে কি, এর আগে কখনও আমি দেখিইনি নিজের যোনি, মনেই হয় নি। প্রথমে একটু অস্বস্তিই হচ্ছিল। সবচেয়ে আশ্চর্য লাগল এতগুলো চামড়ার স্তর দেখে। বাকরুদ্ধই হয়ে গেছিলাম। যেন গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, সুপ্রাচীন এবং সুন্দর। একটা টাটকা তাজা বাগানের মত সরলতাও আছে। বেশ মজাও লাগছিল, হাসি পাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, ওয়ার্কশপে ওই নীল ম্যাটে শুয়ে শুয়ে সারাদিন যেন আমি আমার যোনিকে পরীক্ষা করে যেতে পারি। তখন সেই ভদ্রমহিলা আমাদের জিজ্ঞেস করলেন কতজনের অর্গ্যাজম হয়েছে। দু’জন হাত তুলল। আমি তুলিনি। যদিও অর্গ্যাজম আমার হয়েছিল, কিন্তু সবগুলোই আচমকা। কখনও স্বপ্নে, কখনও স্নানের সময়, কখনও সাইকেল চালাতে গিয়ে বা ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে, কিন্তু নিজে নিজে কী করে অর্গ্যাজম করা যায় তা আমি জানতাম না। চেষ্টাই করিনি কোনদিন, কারণ ব্যাপারটা খানিকটা নিষিদ্ধ মনে হয়েছিল, খানিকটা যেন রহস্যাবৃত রাখাই সমীচীন মনে হয়েছিল। উনি আমাদের বললেন হাত আয়না দিয়ে দেখে ভগাঙ্কুর খুঁজতে। আমার হঠাত করে ভয় করতে শুরু করল। বুঝতে পারলাম যে চিরকাল আমি ব্যাপারটাকে এড়িয়ে গেছি এই ভয়ে যে আমার হয়তো ভগাঙ্কুর নেইই। আমি হয়তো একটা অক্ষম, ঠাণ্ডা, শুকনো, তেতো মেয়ে—উফফফ। মনে পড়ল দশ বছর বয়সে, সাঁতার কাটতে গিয়ে সোনার আঙটি হারিয়ে ফেলার কথা। লেক এর নীচ অব্দি খুঁজেই যাচ্ছি, খুঁজেই যাচ্ছি, পাচ্ছি না। উনি এগিয়ে এলেন আমার কাছে আমাকে ঘেমে নেয়ে হাঁফিয়ে যেতে দেখে। বললাম, “আমার ভগাঙ্কুর নেই, হারিয়ে গেছে।“ উনি হেসে উঠলেন। আমার কপালে আলতো টোকা দিয়ে বললেন, কিচ্ছু হয় নি, ভগাঙ্কুর কোন হারানোর জিনিষ না। আবার চেষ্টা করতে করতে আমার মনে হ’ল যেন আমি এক মহাকাশচারী, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আবার ঢুকছি। ধীরে ধীরে, শান্তভাবে। নিজের পেশী, রক্ত, কোষ যেন নতুন করে আবিষ্কার করছি। তারপরে এক ঝটাকায় পিছলে ঢুকে গেলাম, সহজেই। ভেতরটা উষ্ণ, অল্প অল্প কাঁপছে, জীবন্ত যেন। চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে থাকলাম আর মনে হ’ল আমার আঙুলের ডগায় যেন আমি নিজেই। প্রথমে একটা শিরশিরানি হ’ল, যেটা উপভোগ করতে ইচ্ছে হ’ল, মনে হচ্ছিল থাকুক আরেকটু। তারপরে যেন একটা ভূমিকম্প হয়ে গেল, লাভাস্রোত বেরিয়ে এল, ওই অতগুলো চামড়ার স্তর ভেদ করে। আমি গিয়ে দাঁড়ালাম আলো আর নৈঃশব্দে মাখামাখি একটা দিগন্ত, যা মিলিয়ে যাচ্ছে আমার একটা ফুল ফল গান ভরা সাজানো সুন্দর সবুজ মাটিতে। স্তব্ধ হয়ে শুয়ে রইলাম খানিকক্ষণ।আমার যোনিই যেন আমার ভবিতব্য। আমার যোনি আমার যোনি, আমিই। কাহিনী ৪: ও দেখতে ভালোবাসত বলে আমার যোনিকে ভালোবাসতে শেখাটা কিন্তু ঠিক পলিটিক্যালি কারেক্ট নয়। মানে বাথটাবে বসে আত্মরতিতে মগ্ন অবস্থায় তেমনটা হওয়া হয়তো উচিত ছিল, কিন্তু উঁহু, তা হয়নি। যোনি সুন্দর। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতা আমাদের হাড়েমজ্জায় গেঁথে যাওয়া নিপীড়ন নিজেদের ঘেন্না করতে শেখায়। আমিও তাই শিখেছিলাম। এতই ঘেন্না করতাম নিজের ঊরু, নিজের যোনিকে যে, ভাবার চেষ্টা করতাম আমার দু’পায়ের ফাঁকে একটা অন্য কিছু আছে। এই নরম, সুন্দর, আরামদায়ক, রাজকীয় একটা বিছানা; কিংবা রেশমী রুমাল, বা ফুলদানি, বা ছোট্ট সাজানো বাগান, স্ফটিকজল একটা ছোট্ট পুকুর- ইত্যাদি। মোটামুটি ভুলেই গেছিলাম যে যোনি বলে একটা কিছু সত্যি সত্যিই আছে। যখনই কারুর সঙ্গে শুতাম, সেই পুরুষটিকে কল্পনা করতাম মিঙ্ক ফার এর দামী মাফলার, অথবা টকটকে লাল গোলাপ, বা চিনেমাটির পাত্র, এই ধরণের কিছু। তারপরে আলাপ হ’ল বব এর সঙ্গে। বব অতি সাধারণ, রোগা লম্বা, খাকি রঙের জামাকাপড় পরা। বব মশলাদার খাবার পছন্দ করত না, প্রডিজি দের গান শুনত না। সেক্সি অন্তর্বাসে কোন আগ্রহ তার ছিল না। নিজের অনুভূতির কথাও বিশেষ বলত না। জীবনে যে গভীর কোন সমস্যা ছিল, তাও না। মদ্যপ ছিল না, রহস্যময় ছিল না, খুব ঠাট্টা ইয়ার্কি বা গুছিয়ে কথা বলা এসবও পারত না। আবার বাজে ব্যবহার করছে, কিংবা সময় দিচ্ছে না, তাওও নয়। নিজেকে নিয়ে মগ্নও থাকত না, জোরে গাড়িও চালাতো না। খুব যে পছন্দ আমার তাকে হয়েছিল, তা না। ওকে আমার চোখেই পড়ত না কোনদিন, যদি না আমার পড়ে যাওয়া কয়েকটা খুচরো পয়সা কুড়িয়ে দিতে গিয়ে হাতে হাত ঠেকে যেত। সেই থেকে একটা কী হ’ল, আমিও ওর সঙ্গে শুয়ে পড়লাম! ঠিক তখনই অত্যাশ্চর্য ঘটনার সূত্রপাত। বব কে বলা যায় যোনিবিশেষজ্ঞ, বা যোনিপ্রেমিক, বা যোনির সমঝদার। যোনি বিষয়ক সবকিছু বব ভালোবাসত- স্বাদ, গন্ধ, স্পর্শ, এবং সবচেয়ে বেশী ভালোবাসত দেখতে। প্রথমবার যৌনতার সময় আমাকে ও বলল -তোমাকে দেখতে চাই। - আমি এখানেই আছি। -না, সেরকম না, আমি দেখতে চাই। -আলোটা জ্বালাও তালে। আমি মনে মনে তখন ভাবছি অদ্ভুত একটা লোক, ভয় ও করছে… আলোটা জ্বালিয়ে বব বলল “হুঁ তৈরি, দেখি।“ আমি হাত নাড়িয়ে বললাম “আমি এখানেই আছি, এইখানেই।“ তারপরে ও আমার জামাকাপড় খুলতে শুরু করল। -কী করছ বব?” -দেখতে চাই তোমাকে। -কেন, কোন দরকার তো নেই, এমনিই ঝাঁপ দাও। -না, আমাকে দেখতেই হবে। -তা তুমি কি আগে কখনও লাল রঙের চামড়ার কাউচ দেখো নি? বব কোন উত্তর না দিয়ে খুলতে থাকল। আমার বমি পেল। বললাম “ এতটা ঘনিষ্ঠতা আমি চাই না, কেন তুমি এমনি করতে পারবে না?” না, আমাকে দেখতেই হবে তোমায়। আমি নিঃশ্বাস বন্ধ করে রইলাম। আর বব দেখতে শুরু করল। বড় বড় চোখ করে, গভীর শ্বাস নিয়ে, হাসল, একটা মৃদু শব্দ করল, আবার দেখতে থাকল। ওর নিঃশ্বাস আরও দ্রুত ও ঘন হয়ে উঠতে থাকল, একটা হিংস্র, ক্ষুধার্ত কিন্তু সুন্দর জন্তুর মত দেখাতে থাকল ওকে। আমায় বলল, “তুমি অসম্ভব সুন্দর, মার্জিত, গভীর, নির্মল এবং বন্য।“ “তুমি ওইখানে এইসব দেখতে পাচ্ছ? “হ্যাঁ, তার চেয়েও অনেক অনেক অনেক বেশী কিছুও দেখতে পাচ্ছি। “ প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে ও শুধু তাকিয়েই রইল যেন ম্যাপ দেখছে, বা চাঁদ, কিন্তু দেখছে আমার যোনি! আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওর মুখের ভাব এতটাই অকৃত্রিম আর বাঙময় ছিল যে আমি ভিজতে শুরু করলাম। উত্তেজিত বোধ করলাম। ওর চোখ দিয়ে যেন নিজেকে দেখতে পেলাম। নিজেকে একটা মহামূল্যবান ছবির মত সুন্দর লাগতে শুরু করল। ববের মুখে কোন ভয় নেই, ঘেন্না নেই। আমার গর্ব হতে থাকল, নিজের যোনিকে নিয়ে।বব তো নিজেকে হারিয়ে ফেললই, আমিও। কাহিনী ৫ : আমার জমি, আমার গাঁ ১৯৯৪ সালে লরেন লয়েড এর সহায়তায় দুমাস ক্রোয়েশিয়া আর পাকিস্তানে কাটানোর সুযোগ পাই, বসনিয়ার উদ্বাস্তু মেয়েদের সাক্ষাতকার নিতে। যখন নিউ ইয়র্কে ফিরলাম, অসহ্য কষ্ট, রাগ নিয়ে। ২০০০০- ৭০০০০ মেয়ে তখন মধ্য ইউরোপে ধর্ষিত হচ্ছে ১৯৯৩ থেকে, যেমন হয় যুদ্ধের নিয়মে, এবং সেটা থামাতে কেউ কিচ্ছু করছে না। য়ামার এক বন্ধু বলল এত আশ্চর্য হবার তো কিছু নেই। পাঁচ লাখেরও বেশি মেয়ে প্রত্যেকবছর এদেশে ধর্ষিত হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি ছাড়াই। এটা সেইরকম একজন ধর্ষিতার গল্প। আমি তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ আমাকে বলার জন্য। তার সাহস ও শক্তির কাছে মাথা নুইয়ে আসে। প্রত্যেকটি মেয়ে যারা এই প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়ার ভয়াবহতার শিকার। বসনিয়ার মেয়েদের জন্য… আমার যোনি তো ছিল যেন আমার নিজের গ্রামের মত। সবুজে ঘেরা, গোলাপী ফুলে ভরা মাঠ, গরু চরে বেড়াচ্ছে, আর সূর্য ঢলে পড়ার মুখে আমার প্রেমিক নরম খড়ের টুকরো বোলাচ্ছে আমার গায়ে। আমার দুপায়ের ফাঁকে কিছু একটা ছিল। কী তা জানি না। কোথায় তাও জানি না। ছুঁয়েও দেখিনি কখনো। তখনও না, এখনও না, সেই ঘটনার পর থেকে কোনদিনই না। আমার যোনি কথা বলত খুব, অধৈর্য, ছটফটে, কিছুতেই থামতে চায় না, কিছুতেই থামে না তার আহ আহ করে পুলকিত চিৎকার। কিন্তু যবে থেকে দুঃস্বপ্ন আসতে শুরু করল যে ওইখানে একটা মোটা কালো মাছ ধরার জালের মধ্যে একটা মরা জন্তু আটকে পড়েছে। সেই মরা দেহের গন্ধটা কোনদিন যাবে না। গলাটা চেরা, আর রক্ত ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার জামাকাপড়। আমার যোনি মেয়েদের গান গাইত, ছাগলের গলায় বাঁধা ঘণ্টার মত মিষ্টি শব্দ করত, হেমন্তের মাঠের গান, যোনির গান, ঘরের গান। কিন্তু সেই যে জওয়ানরা এসে ওখানে রাইফেল ঢুকিয়ে দিল, সেই থেকে আর গায় না। এত ঠাণ্ডা সেই লোহার দণ্ড, যে হৃদপিণ্ড অব্দি চিরে দিল। বুঝতে পারছিলাম না ওইভাবেই গুলি করে ঘিলুসমেত উড়িয়ে দেবে কিনা। ছ’জন, ছ’টা কালো মুখোশ পরা রাক্ষস, যা পারছিল ঢোকাচ্ছিল। বোতল, লাঠি, ঝ্যাঁটাও। আমার যোনিতো ছিল স্বচ্ছতোয়া নদীর মত, তার টলটলে জল ছাপিয়ে উঠত রোদ ঝলমলে পাড়। আমার ভগাঙ্কুর যেন নুড়িপাথর, তার ওপর দিয়ে বয়ে যেত কুলকুল করে। সেই তখন থেকে আর নয়, যখন টের পেলাম আমার ভগাঙ্কুর ছিঁড়ে নিচ্ছে ওরা, ছিড়ে নিচ্ছে ঠোঁট, যোনিমুখের চামড়া, লেবুর খোসা ছাড়ানোর মত করে। আমার যোনি ছিল আমার শস্যশ্যামলা গ্রাম, আমার গ্রাম। তখন থেকে আর নয় যখন ওরা সাতদিন ধরে ক্রমাগত একের পর এক ওদের নোংরা বীর্য ঢালল। পোড়া মাংস আর গুয়ের গন্ধ। আমি একটা দূষিত, পুঁজ রক্ত বিষ ভরা নদী হয়ে গেলাম। সব মাছ মরে গেল, শুকিয়ে গেল সব ফসল। ওরা আমার গ্রামে হামলা করল, ভেঙেচুরে আগুন ধরিয়ে দিল আমার ঘরবাড়িতে। আমি এখন আর ছুঁই না, তাকাই না। এখন আমি অন্য কোথাও থাকি। জানি না কোথায়। কিছু তথ্য: ১। ভগাঙ্কুর একটা অদ্ভুত জিনিস। এর একটাই কাজ, সেটা হচ্ছে শিহরণ অনুভব করা, অনন্য শিহরণ। আট হাজার স্নায়ু রয়েছে এই ছোট্ট প্রত্যঙ্গটায়, যা শরীরের আর কোথাও নেই। পুরুষের লিঙ্গের দ্বিগুণ। উনিশ শতকে যেসব মেয়েরা হস্তমৈথুন করে কামশীর্ষে পৌঁছনো শিখে ফেলত, পেয়ে যেত অপূর্ব সুখের সন্ধান, তাদের অসুস্থ ভাবা হত। তাদের “সারিয়ে” তোলা হত, ভগাঙ্কুর কেটে বাদ দিয়ে, কিংবা সতীত্বের পর্দা পরিয়ে অর্থাৎ, যোনির ওষ্ঠদুটি সেলাই করে দিয়ে। কখনো কখনো গর্ভাশয় বাদ দেওয়া হত। কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে ছেলেদের হস্তমৈথুন বন্ধ করার জন্য অণ্ডকোষ বাদ দেবার কোন নথি নেই। যোনিকে পঙ্গু করে দেবার এই কাজ আট থেকে দশ কোটি মেয়ের ওপর হয়ে চলেছে। মূলতঃ আফ্রিকান দেশগুলোয়। সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকরভাবে এবং কোন সঠিক ডাক্তারি পদ্ধতি ছাড়াই এভাবে ভগাঙ্কুর কেটে বাদ দেওয়া বা ল্যাবিয়া (ওষ্ঠ) সেলাই করার ফলে টিটেনাস, সেপটিসেমিয়া, হেমারেজ, কঠিন ইনফেকশন গর্ভাশয়ে, ফিসচুলা, গর্ভপাত, প্রসবের সময় চরম কষ্ট ও ঝুঁকি এবং তা থেকে মৃত্যু এসব তো সাধারণ ব্যাপার। ২। ১৫৯৩ সালে ডাইনি বলে চিহ্নিতকরণের পর এক মহিলার বিচারসভায় একজন আইনজীবী, যিনি নাকি একজন বিবাহিত পুরুষ, প্রথমবার ভগাঙ্কুর আবিষ্কার করেন এবং নাম দেন শয়তানের বোঁটা, যা নাকি ডাকিনী হবার অকাট্য প্রমাণ। একটা মাংসপিণ্ড। [অনুবাদকের বিবৃতি বইটির অংশবিশেষ অনুবাদের চেষ্টা করলাম। আমাদের দেশে নারীবাদ এখনো এই স্তরে এসে পৌঁছয়নি। ভারতের গ্রামেগঞ্জের নিপীড়িত শোষিত ধর্ষিত এবং প্রতিমুহূর্তে পর্বতপ্রমাণ বাধা অতিক্রম করে ন্যূনতম অধিকার আদায় করতে চাওয়া বা না চাওয়া বা একেবারেই না পাওয়া নারীদের কাজে হয়তো এই অনুবাদ লাগবে না। এমনকি মধ্যবিত্ত সমাজের সাধারণ মেয়েদেরও না। এখনই লাগবে না। এ হয়তো শুধুমাত্রই সুযোগ সুবিধাপ্রাপ্ত বুদ্ধিজীবি গোষ্ঠীর নারীবাদের আখ্যান। অনেকে বলবেন বড়লোক শৌখিন নারীবাদীদের বাড়াবাড়ি। ইত্যাদি। কিন্তু সবকিছুই তো কোথাও না কোথাও শুরু করতে হয়। আমরা শুরু করলাম। রইল। অনেকের কাজে লাগতেও পারে। কিছু আগুন জ্বলতেও পারে।] [স্বাধীনতা উত্তর ভারতের অন্যতম আধুনিক লেখক বিলাস সারং-এর জন্ম ১৯৪২ সালে। জীবদ্দশায় তিনি অসংখ্য ছোট গল্প, কবিতা ও উপন্যাস লিখে গ্যাছেন। জন্মসূত্রে মারাঠী এই লেখক তাঁর মাতৃভাষা ও ইংরেজি-উভয় ভাষাতেই সমান সাবলীল ছিলেন। প্রকৃত প্রস্তাবে একজন উত্তর-ঔপনিবেশিক লেখক, বিলাস সারং-এর দ্বিভাষিকতা তাঁকে দিয়েছিল এক অনন্য আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গী যার শিকড় গভীরভাবে প্রোথিত ছিল মারাঠী সাহিত্যে। তাঁর লেখায় অসংখ্য পূর্বজদের মিশ্র প্রভাব লক্ষ্যণীয়। ৫০ ও ৬০ এর দশকের "মারাঠী নবকথা” আন্দোলনের লেখকদের থেকে তিনি পেয়েছিলেন তাঁর ছোটগল্প লেখার অনুপ্রেরণা যাতে মসৃণভাবে এসে মিশেছিল কাফকা, কামু, সার্ত্রে ও বেকেটের মত পশ্চিম ইউরোপীয় লেখকদের প্রভাব। ভারতীয় ও পাশ্চাত্য জীবনবোধের আপাত দ্বন্দ, যা তাঁর সমসাময়িক ভারতীয় লেখকদের আছন্ন করে রেখেছিল, তা অতিক্রম করে তিনি লিখেছেন প্রকৃত আন্তর্জাতিক সাহিত্য যা দেশ ও কালের গন্ডীতে বাঁধা অসম্ভব। উল্লেখযোগ্য মারাঠী গল্প সংগ্রহ 'সোলেদাদ' ও 'আতঙ্ক' যার স্বকৃত ইংরেজি অনুবাদ 'আ ফেয়ার ট্রি অফ দ্য ভয়েড' ও 'আ উওম্যান ইন কেজেস'এ সঙ্কলিত হয়েছে। তাঁর ইংরেজি উপন্যাস 'দ্য ডাইনোসর শিপ' ও মারাঠী উপন্যাস 'এনকিচ্চা রাজয়াত'ও পাঠককে সমানভাবে গ্রাস করে। ফরাসী ভাষাতেও তাঁর লেখা অনূদিত হয়েছে। ২০১৫ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।] ১ ডানদিকে ফিরে জেনারেল কোর্মা বিছানার পাশে অ্যালার্ম ঘড়িটার দিকে তাকালেন। অন্ধকারে মিনিটের কাঁটার হলদেটে আলো ফসফরাসের মত জ্বলজ্বল করছে। কাঁটাটা লম্বালম্বি দাঁড়িয়ে, য্যানো গার্ড-অফ-হনার অনুষ্ঠানের কোনো সৈনিকের হাতের খাড়া তলোয়ার। ঘন্টার কাঁটার পাত্তা নেই। যার মানে দাঁড়ায় ঘন্টার কাঁটা মিনিটের কাঁটার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে। অর্থাৎ কিনা এখন ঠিক মাঝরাত। কিন্তু সত্যিই কি তাই? ঘন্টার কাঁটাটা আবার বেমালুম হাপিস হয়ে যায় নি তো? লোকজন তো রাতবিরেতে হামেশাই হাপিস হয়ে যাচ্ছে, পরে আর কখনো তাদের দ্যাখা পাওয়া যায় না। ঘন্টার কাঁটাটারও ওই হাল হল নাকি? কয়েক মুহূর্তের জন্য, জেনারেল কোর্মা উদ্বিগ্ন হলেন। আচ্ছা সত্যি সত্যিই যদি ঘন্টার কাঁটাটা উবে গিয়ে থাকে? শুধু শুধু একটা মিনিটের কাঁটা নিয়ে তখন তিনি করবেনটা কী? আর ঘন্টার কাঁটা ছাড়া কীভাবেই বা সেক্ষেত্রে জেনারেল কোর্মা তার সামরিক অভ্যুত্থানের সময়-নির্ঘন্ট স্থির করবেন? জেনারেল কোর্মা এসব ভাবতে ভাবতেই ঘন্টার কাঁটা চুপিসাড়ে এগিয়ে মিনিটের কাঁটার বাঁদিক দিয়ে উঁকি দিলো। জেনারেল কোর্মা নিঃশব্দে হাততালি দিয়ে উঠলেন। ঘন্টার কাঁটা দীর্ঘজীবী হোক! বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক! জেনারেল কোর্মার মনে হল ওনার সামনেও ঠিক এই মিনিটের কাঁটার মতই একটা অবয়ব ঠায় দাঁড়িয়ে ওনাকে অদৃশ্য করে রেখেছে, যার নাম জেনারেল পোলাও। ঘড়ির ভিতরের মিনিটের কাঁটা তো কিছুক্ষণেই সরে যাবে, কিন্তু জেনারেল কোর্মার সামনের মিনিটের কাঁটাটির মধ্যে কোনো নড়ন-চড়নের লক্ষণ দ্যাখা যাচ্ছে না। কাঁটাটিকে উপরে ফেলে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে, আর কে না জানে ঘন্টার কাঁটাই হচ্ছে ঘড়ির আসল প্রভু। ঘন্টার কাঁটা দীর্ঘজীবী হোক! মিনিটের কাঁটা ধীরে ধীরে ঘড়ির অতলে তলিয়ে যায়। জেনারেল কোর্মা অধৈর্য হয়ে অপেক্ষা করেন কখন সেটা এক্কেবারে অধোবিন্দুতে গিয়ে পৌছবে, যাকে বলে জমির সাথে নাক ঘষা অবস্থায়। ও ব্যাটার ওখানেই থেমে যাওয়া উচিত, বরাবরের মত, জেনারেল কোর্মা ভাবলেন। ঘন্টার কাঁটা দীর্ঘজীবী হোক! জেনারেল কোর্মা অন্যদিকে পাশ ফিরে নিজের স্ত্রীর দিকে তাকালেন। দেখলেন ওপাশে তার বিশালবপু গিন্নী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওর ঢাউস শরীরের উপরিভাগে দুইখানা পেল্লায় স্তন য্যানো দুই দিকে উপচে পড়ছে। প্রতিটা নিঃশ্বাসের তালে তালে, স্তনদুটো এমনভাবে ফুলে উঠছে য্যানো ওরা যেকোনো মুহূর্তেই লাফিয়ে উঠে দৌড় লাগাবে। ওর ভুঁড়িখানা নিশ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সাথে উঠছে আর নামছে, নাভির গর্তখানাও ক্রমান্বয়ে প্রসারিত আর সংকুচিত হচ্ছে। জানলা দিয়ে আসা জ্যোৎস্নার আলোয় শুধু গলা থেকে পাছার অংশটুকুই দ্যাখা যাচ্ছে। মুন্ডু আর ঠ্যাঙ দুখানা অন্ধকারে ডুবে আছে। জেনারেল কোর্মার মনে হল চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ ওর স্ত্রীর শরীরেও এক আশ্চর্যরকমের হড়কা বান এনেছে। জেনারেল কোর্মা জানতেন অন্তত আগামী ঘন্টাদুয়েকের মধ্যে ওনার ঘুম আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। উনি ধীরপায়ে খাট থেকে নেমে রান্নাঘরে গেলেন। তারপর আলো না জ্বালিয়েই ফ্রিজের কাছে এসে দাঁড়ালেন আর সামান্য হাতড়ে দরজা খুললেন। তারপর ফ্রিজ থেকে এক প্যাকেট চীনাবাদাম বের করে এক এক করে খেতে শুরু করলেন। ঠান্ডা চীনাবাদাম ওনার ভারী পছন্দ। বৌ ওনাকে একসাথে বেশী চীনাবাদাম খেতে দেন না। জেনারেল কোর্মা মনে মনে স্থির করলেন একবার নিখুঁত ভাবে ওনার সামরিক অভ্যুত্থান সম্পন্ন হয়ে গেলেই যত ইচ্ছে চীনাবাদাম খাবেন। আরে, যখন তোমার স্বামীই দেশের প্রেসিডেন্ট, তখন কোন স্ত্রীর ঘাড়ে কটা মাথা যে তাকে হুকুম করে? সামান্য আলোর জন্য জেনারেল কোর্মা ফ্রিজের দরজা হাল্কা ফাঁক করে রেখেছিলেন। ফ্রিজের মৃদু ঘরঘরের সাথে চীনাবাদাম চেবানোর কচরমচর মিশ খেয়ে যাচ্ছিলো। চিবোতে চিবোতে জেনারেল কোর্মা ফ্রিজের ভিতরে উঁকি মারলেন একবার। ভিতরে সে এক আলাদা জগত। শীতল, ভাবলেশহীন, ভিনগ্রহের মত। হঠাতই জেনারেল কোর্মার নিজেকে খুব একা বোধ হলো। সেনাবাহিনীর অন্যান্য অফিসার আর সৈনিকরা ওকে পুরোপুরি সমর্থন করবে তো? ফ্রিজ থেকে জল খেয়ে জেনারেল কোর্মা শোওয়ার ঘরে ফিরে গেলেন। কিছুক্ষণ খাটের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে তারপর তিনি বারান্দার দরজা খুলে বাইরে গিয়ে দাঁড়ালেন। উজ্জ্বল জ্যোৎস্নায় চারপাশ ভেসে যাচ্ছে। আকাশে মেঘের চিহ্নমাত্র নেই। অথচ মে মাস শেষ হতে চললো, সামনেই বর্ষাকাল, যেকোনো দিন বৃষ্টি নামলো বলে। বর্ষা আসার আগেভাগেই সামরিক অভ্যুত্থানটা সেরে ফেলা দরকার। বিপ্লবটা গরমকালেই করা দরকার, যখন লোকের মাথা গরম হয়ে থাকে। পৃথিবীর যাবতীয় বিপ্লব গরমকালেই হয়ে এসেছে। একবার বৃষ্টি নেমে গেলে লোকজনের মাথাও ঠান্ডা হয়ে যায়, তখন আর বিপ্লবেরও বিশেষ সুযোগ থাকেনা। জেনারেল পোলাও ও তো চারবছর আগের এক গ্রীষ্মেই বিপ্লব ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। যে গ্রীষ্মে ক্ষমতায় আসে সে গ্রীষ্মতেই ক্ষমতাচ্যুত হয়। একবার ক্ষমতায় চলে এলে, জেনারেল কোর্মা ঠিক করে রেখেছেন যে তিনি গ্রীষ্মকালকে নিষিদ্ধ করে দেবেন। গরমকালের আর কোনো অস্তিত্বই থাকবে না; কেউ আর ও বিষয়ে উচ্চারণ ও করবে না। ক্ষমতায় এলে এটিই হবে ওনার প্রথম ফরমান। জেনারেল কোর্মা তার বাড়ীর কোর্টইয়ার্ডের দিকে নজর দিলেন। ওর চোখ গিয়ে পড়লো বাগানের ঠিক মাঝবরাবর সদ্য সদ্য খাড়া করা স্ট্যাচুটার ওপর-জেনারেল পোলাও এর স্ট্যাচু। এমনিতে জেনারেল পোলাও আর জেনারেল কোর্মা একইসাথে মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে পাস করে বেরিয়েছিলেন, বহু বছর বেশ ঘনিষ্ট বন্ধুত্বও ছিল দুজনের। চার বছর আগে এক সামরিক উত্থানের মাধ্যমে জেনারেল কোর্মা ‘প্রেসিডেন্ট’ হয়েছিলেন। অথচ তা সত্ত্বেও জেনারেল কোর্মা ওকে ‘জেনারেল’ বলেই সম্বোধন করা চালু রেখেছিলেন। প্রেসিডেন্ট পোলাও ওকে বলেছিলেন ‘জেনারেল কোর্মা, আমি এখন প্রেসিডেন্ট। ফলে তোমারো এখন আমাকে ‘প্রেসিডেন্ট’ বলেই ডাকা উচিত।‘ ‘কী করি বলো তো, জেনারেল-থুড়ি, প্রেসিডেন্ট পোলাও, অ্যাদ্দিনের অভ্যাস বদলাই কীভাবে।‘ ‘চুক চুক’ মুচকি হেসে জবাব দিয়েছিলেন জেনারেল পোলাও। ‘ তুমি যদি এমন করিত্কর্মা না হতে তাহলে বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে তোমাকে এক্ষুনি আমি ফাঁসিতে ঝোলাতুম।‘ জেনারেল কোর্মা অবশ্য খুব কড়াভাবে ভেবে রেখেছিলেন, একবার প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলে সব্বার ওনাকে ‘প্রেসিডেন্ট কোর্মা’ বলেই সম্বোধন করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছুতো দ্যাখানো চলবে না, উঁহু, একেবারেই না। বাগানে প্রেসিডেন্ট পোলাও এর স্ট্যাচু দেখতে দেখতে জেনারেল কোর্মার ভুরু কুঁচকে গ্যালো। গুচ্ছ জায়গায় প্রেসিডেন্ট পোলাও এর এই স্ট্যাচু দেখতে দেখতে উনি এমনিতেই হাঁফিয়ে উঠেছিলেন। আর এখন, হবি তো হ, ওনার নিজের কোর্টইয়ার্ডের মধ্যিখানেই একখানা স্ট্যাচু গজিয়ে উঠেছে। বছর দুয়েক হল, প্রেসিডেন্ট পোলাও সর্বত্র নিজের স্ট্যাচু লাগানোর এক নিঃশব্দ প্রয়াস চালু করেছেন। রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে ওনার স্ট্যাচু। প্রতিটি সরকারী ইমারত, প্রতিটি স্কুল আর কলেজ, প্রতিটি হাসপাতাল আর স্টেডিয়াম, সর্বত্র ওনার স্ট্যাচু বিদ্যমান। এত কিছুতেও সন্তুষ্ট না হয়ে প্রেসিডেন্ট পোলাও সম্প্রতি এমন এক ফতোয়া জারি করেছেন যে দেশের সব মুরুব্বিদের নিজের নিজের বাড়ীতেও ওনার একটা করে স্ট্যাচু রাখা বাধ্যতামূলক। শহরের এক প্রান্তে একটা স্ট্যাচু-কারখাণা তৈরী হয়েছে, আর সেখান থেকে শয়ে শয়ে স্ট্যাচু বেরিয়ে গোটা শহর ছেয়ে ফেলেছে। প্রত্যেকটা স্ট্যাচুই অবিকল একরকম দেখতে। একই ছাঁচের থেকে তৈরী সিমেন্টের সব স্ট্যাচু। মুখ, হাত, পোশাক, ফিতে সব এমনভাবে রঙ করা হয়েছিল যাতে দেখে অবিকল জ্যান্ত প্রেসিডেন্ট পোলাও বলে মনে হয়। শিল্পে বাস্তবধর্মিতা আবার একনায়কদের বিশেষ পছন্দ। প্রেসিডেন্ট পোলাও বিশ্বাস করতেন যে প্রতিটি দেশবাসীর এমনটা অনুভব হওয়া উচিত যে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট পোলাও তাদের প্রত্যেকটা গতিবিধির উপর নজর রাখছেন। আকাশে একটা বোঁ বোঁ শব্দ পেয়ে জেনারেল কোর্মা নিজের বাঁদিকে তাকালেন। পশ্চিম থেকে পূব পানে একটা হেলিকপ্টার উড়ছে। প্রেসিডেন্ট পোলাও এর নৈশ ছোটাছুটি চলছে। ইদানীং বেড়ে গ্যাছে বিষয়টা। রাজধানীর আলাদা আলাদা ভাগে প্রেসিডেন্ট পোলাও এর ন-নখানা খাসমহল আছে। প্রত্যেক রাত উনি এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটা প্রাসাদে কাটান। কেউ জানেনা কোন রাতে উনি কোথায় থাকবেন। প্রেসিডেন্ট পোলাও এর ধারণা ছিল এইভাবে চোরাগোপ্তা আক্রমণের হাত থেকে বাঁচা যাবে । কিন্তু গুপ্তহত্যার ভয় ক্রমেই আরো জাঁকিয়ে বসছিলো, আর উনি একটা গোটা রাত কোনো এক জায়গায় কাটানোটা নিরাপদ বলে বোধ করছিলেন না। ফলতঃ, উনি মাঝরাতে জায়গা বদল করা শুরু করলেন। এ জিনিস বাড়তে বাড়তে শেষে এমন পর্যায়ে পৌছলো যে এক এক রাতে উনি তিন থেকে চারবার প্রাসাদ বদল করা শুরু করলেন। শেষটায় তো এমন দাঁড়িয়েছে যে এখন উনি কোনো একটা প্রাসাদে এক ঘন্টাও কাটান না। সারারাত ধরে উনি নয় খানা প্রাসাদ ক্রমান্বয়ে চক্কর কাটেন। ফলস্বরূপ, সারারাতে ওনার খুব সামান্যই ঘুম হয়। আকাশের বুকে প্রেসিডেন্ট পোলাও এর হেলিকপ্টার ক্যামন ছোট্ট একটা পোকার মত দ্যাখাচ্ছে! জেনারেল কোর্মার ইচ্ছে হচ্ছিল কিং কং এর মত ওটাকে খপ করে মুঠোর মধ্যে ধরে পিষে ছুঁড়ে ফেলতে। প্রেসিডেন্ট পোলাও এর বিষম অনিদ্রা দিগন্তের ওপারে অদৃশ্য হয়ে গ্যালো আর জেনারেল কোর্মার সম্ভাব্য বিষম অনিদ্রা বারান্দায় পায়চারি দিতে থাকলো। আর এই দুই অনিদ্রার মাঝামাঝি চাঁদ তার চিরায়ত গান গেয়ে চললো একমনে। ২ শহরের দক্ষিণপ্রান্তে ছিল এক প্রকাণ্ড বস্তি। কেউ কেউ দাবি করতো যে ওই বস্তি নাকি আয়তনে মূল শহরের চেয়েও ঢের বড়। দেশের বেশীরভাগ লোকই অবশ্য এ কথা বিশ্বাস করতে চাইতো না। অবশ্য ওটিই যে এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত ছিল না। ওই প্রকাণ্ড বস্তি গড়ে উঠেছিল জলাজমির ওপর ফলে সারাবছরই জায়গাটা কাদাটে হয়ে থাকতো। আর সেই কাদার পরত ছিল অত্যন্ত গভীর। যদি বাইরের লোক ওই বস্তি এলাকায় ঢুকে পড়তো কোনোভাবে, তাহলে অচিরেই সে সেই কাদায় তলিয়ে অদৃশ্য হয়ে যেত। ওই বস্তিতে থাকার বলতে একদল নিঃস্ব আর হাড়হাভাতে মানুষের দল যারা গ্রাম থেকে রাজধানীতে এসেছিলো। এরা এতটাই কৃশকায় আর হাল্কা ছিল যে কাদার ওপর চলাফেরা করে বেড়ালেও এরা ডুবতো না। বস্তির সরু আর আঁকাবাঁকা গলিগুলো বেয়ে এই কাঠের গুঁড়োর মত মানুষগুলো অনায়াসে ভেসে বেড়াতে পারতো। থাকার জন্য তারা যে ঝুপড়িগুলো বানিয়েছিলো সেগুলোও ছিল হাল্কা। আর সম্পত্তি বলতেও এদের প্রায় কিছুই ছিল না, ওই কয়েকটা অ্যালুমিনিয়ামের বাসন কোসন ছাড়া। এ সত্ত্বেও, যখন বর্ষা আসতো আর কাদা নরম হয়ে যেত, বেশ কিছু ঝুপড়ি কাদার তলায় ডুবে যেত। কখনো কখনো তো ঘুমন্ত মানুষ শুদ্ধু আস্তে আস্তে আস্ত ঝুপড়ি কাদায় তলিয়ে যেত। বস্তির কিছু কিছু বাসিন্দা, যারা শহরে কাজ পেয়েছিলো, যারা ভালো পয়সা কামাতো, ভালোমন্দ খেতে পেতো আর খেয়ে ওজন বাড়িয়ে ফেলতো, তারাও ফলস্বরূপ রাতে ঘুমের মধ্যে ঝুপড়ি সমেত কাদার নীচে অদৃশ্য হয়ে যেত। এভাবে জনসংখ্যা কমে আসলেও গড়ে বস্তির বাসিন্দার সংখ্যা একই থাকতো কারণ এদের জায়গায় আবার নতুন করে নিঃস্ব আর হাড়হাভাতে মানুষ গাঁ থেকে এসে উদয় হোতো। রাজধানীর গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ভুলেও এই বস্তির ধারেকাছে ঘেঁষতেন না। এমনকী কাদায় ডুবে যাওয়ার ভয়ে পুলিশ অথবা সেনাবাহিনীর লোকজনও সচরাচর বস্তিতে ঢুকতোনা। নেহাত খুব দরকার পড়লে, হাতে বিশাল বিশাল গ্যাস বেলুন বেঁধে পুলিশ বস্তিতে পৌছত। বেলুন থাকার ফলে তারা কাদার উপর হাল্কাভাবে পা ফেলতে পারতো। কিন্তু মুশকিলটা হল, হাতে ওই ধামসা বেলুন ধরে থাকার দরুণ তারা আর স্বাভাবিক ভাবে নড়াচড়া করতে পারতোনা, ফলে তারা একপ্রকার অথর্বই হয়ে পড়তো। একবার তো বস্তির ছেলেপুলেরা বেলুন লক্ষ্য করে পাথরের টুকরো ছুঁড়েছিল আর এক পুলিশের হাতের বেলুনগুলো ফেটে গেছিলো। এরপরই সে চিৎকার করতে করতে কাদায় তলিয়ে চিরতরে অদৃশ্য হয়ে যায়। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে শহরের চেয়ে বস্তিতেই স্বাধীনতা ছিল বেশী। গোটা শহর নিজের স্ট্যাচু দিয়ে ভরিয়ে ফেলার পর প্রেসিডেন্ট পোলাও ওই একটা ব্যাপারেই অসন্তুষ্ট ছিলেন-ওই প্রকাণ্ড বস্তিতে ওনার একখানাও স্ট্যাচু নেই। স্ট্যাচু ডিপার্ট্মেন্ট ওই বস্তিতে প্রেসিডেন্টের একটা স্ট্যাচু বসানোর নানা প্রকারেণ চেষ্টা চালাচ্ছিলো, কিন্তু প্রত্যেকবারই তারা বিফল হয়ে ফিরছিলো। প্রথমে তারা চেষ্টা করছিলো পাথর আর সিমেন্টের বস্তা দিয়ে তৈরী একটা শক্তপোক্ত বেদীর উপর স্ট্যাচুটাকে বসানোর; কিন্তু কাদার স্তর এতটাই গভীর আর অদম্য ছিল যে বেদী টেদী সমেত স্ট্যাচু অচিরেই কাদায় তলিয়ে গেল। বস্তির অশিক্ষিত লোকগুলি দাবী করতো ওই কাদা নাকি এক্কেবারের পৃথিবীর কেন্দ্র অব্ধি গ্যাছে। এরপর স্ট্যাচু ডিপার্টমেন্ট শয়ে শয়ে গ্যাস বেলুন বাঁধা অবস্থায় একটা স্ট্যাচু এরোপ্লেন থেকে বস্তির উপর ফেলার চেষ্টা করলো। বেলুনের জেরে স্ট্যাচুখানা কাদার স্তর হাল্কা স্পর্শ করে শূন্যে ঝুলে রইলো। আর যখন হাওয়ায় বেলুনগুলো দুলতো, সাথে সাথে স্ট্যাচুও দুলতো। হাতে অতগুলো বেলুন বাঁধা অবস্থায় স্ট্যাচুখানা এতটাই হাস্যকর দেখতে লাগতো যে বস্তির লোকেরা ওটাকে বেলুন আদমি বলে ডাকা শুরু করেছিলো। আর তারপর বস্তির বাচ্চারা একে একে দড়ি ছিঁড়ে বেলুনগুলি চুরি করা শুরু করলো। বেলুন সংখ্যা কমে আসার সাথে সাথে স্ট্যাচুও কাদায় আস্তে আস্তে ডুবতে শুরু করলো। অনতিকাল পরেই বেলুন আদমি কাদার তলায় পুরোপুরি উধাও হয়ে গেলেন। এদিকে প্রেসিডেন্ট পোলাও জেদ ধরে রয়েছেন, বস্তিতে ওনার স্ট্যাচু চাই ই চাই। এমনিতেই ওই বস্তির ওপর ওনার নিয়ন্ত্রণ কম। নিদেনপক্ষে কটা স্ট্যাচু বসানো গেলেও একটু মানসিক শান্তি পাওয়া যেত। স্ট্যাচু ডিপার্ট্মেন্টের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রতি তিনি কড়া নির্দেশ পাঠালেন-হয় নিজেদের কাজে হাত লাগাও নইলে হাত কাটা পড়বে। স্ট্যাচু ডিপার্ট্মেন্টের কর্মকর্তারা ভয়ে কাঠ হয়ে রইলেন। তারা বুঝেই উঠতে পারছিলেন না এই পরিস্থিতিতে তাদের ঠিক কী করণীয়। হাতে খানিক সময় পাওয়ার জন্য তারা উত্তর পাঠালেন ‘বর্ষা এলো বলে। বর্ষা চলাকালীন চেষ্টা চালিয়ে কোনো লাভ নেই। বৃষ্টি থামলেই একটা পরিকল্পনা পেশ করা হবে।‘ প্রেসিডেন্ট পোলাও রাজী হলেন। ৩ বর্ষার শুরুতেই জেনারেল কোর্মা সেনাবাহিনীর কিছু উচ্চপদস্থ পদাধিকারিকের সহায়তায় একটা সামরিক অভ্যুত্থান সম্পন্ন করে প্রেসিডেন্ট পোলাও কে গদিচ্যুত করলেন। এরপর জেনারেল কোর্মা হলেন প্রেসিডেন্ট কোর্মা। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টারে চেপে নিকটবর্তী প্রতিবেশী রাষ্ট্রে পালানোর তালে ছিলেন। কিন্তু রাজধানীর পশ্চিমপ্রান্তের পাহাড়ের পাদদেশে ওনার হেলিকপ্টারখানি গুলি করে নামানো হয়। সশব্দে মাটিতে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাতে আগুন ধরে যায়। প্রেসিডেন্ট পোলাও এর দেহাবশেষ অবশ্য কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায় না। সকলেই ধরে নেয়, লাশ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গ্যাছে। ক্ষমতায় এসে প্রথমেই প্রেসিডেন্ট কোর্মা যে কাণ্ডটি করলেন সেটি হল রাজধানী থেকে প্রেসিডেন্ট পোলাও এর যাবতীয় স্ট্যাচু সরিয়ে ফেললেন। শয়ে শয়ে স্ট্যাচু নামিয়ে অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে বেশ কয়েক হপ্তা লেগে গ্যালো। স্ট্যাচুগুলিকে ডাঁই করে ফেলে রাখা হল রাজধানীর পশ্চিমদিকের একটা পতিত জমিতে, যার খুব কাছেই প্রেসিডেন্ট পোলাও এর হেলিকপ্টার ভেঙ্গে পড়েছিলো। স্ট্যাচু তো সরানো হল, কিন্তু স্ট্যাচুর বেদীগুলো রয়ে গ্যালো। প্রেসিডেন্ট কোর্মার পারিষদরা এসে বললো ‘মহামান্য প্রেসিডেন্ট, এবার ওই বেদীগুলোর উপর আমরা আপনার স্ট্যাচু বসাতে পারি।‘ প্রেসিডেন্ট কোর্মা বিরক্ত হয়ে বললেন ‘দূর দূর, সব জায়গায় নিজের স্ট্যাচু দ্যাখার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।‘ ফলে শহর জুড়ে খালি বেদীগুলো পড়েই রইলো। বিষয়টা বেশ দৃষ্টিকটু লাগতো। প্রেসিডেন্ট কোর্মার পারিষদরা আবার এসে তদবীর করলো ‘মহামান্য প্রেসিডেন্ট, আপনি যদি নিতান্তই নিজের স্ট্যাচু না চান, তাহলে নিদেনপক্ষে আমাদের ওই ফাঁকা বেদীগুলো নষ্ট করে ফেলতে দিন।‘ প্রেসিডেন্ট কোর্মা কিছুক্ষণ ভাবলেন, তারপর বললেন ‘নাহ, ওগুলো থাকুক। স্ট্যাচু তো আর নেই। কটা ফাঁকা বেদীর জন্য আর কার কী অসুবিধে হচ্ছে?’ পারিষদরা ভাবলো, মুখে যতই অনিচ্ছা প্রকাশ করুন না ক্যানো, মনে মনে হয়তো প্রেসিডেন্ট অদূর ভবিষ্যতে ‘জনগণের দাবী’তে ওই বেদীগুলোতে নিজের স্ট্যাচু বসানোর পরিকল্পনা করে রেখেছেন। তো বেদীগুলো রইলো। ফাঁকা বেদী দেখতে দেখতে লোকজনের বিরক্তি চরমে পৌছলো, কিন্তু এ বিষয়ে কারোরই কিচ্ছুটি করার ছিল না। আগে লোকে গোপনে প্রেসিডেন্ট পোলাও এর শাসনকালকে ‘স্ট্যাচুর শাসনকাল’ বলতো; এখন তারা প্রেসিডেন্ট কোর্মার শাসনকালকে ‘বেদীর শাসনকাল’ বলে ডাকা শুরু করলো। ইতিমধ্যে বর্ষা শেষ হয়েছিল, শীতকালও দেখতে দেখতে কেটে গ্যালো, কিন্তু গ্রীষ্মের দ্যাখা পাওয়া গ্যালো না। কারণ, শীত ফুরোনোর আগেই প্রেসিডেন্ট কোর্মা ফরমান জারি করে গ্রীষ্মকালকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। আর গ্রীষ্ম যেহেতু নেই, কারো গ্রীষ্মের ছুটিও নেই। কিন্তু রাজধানীতে তাপমাত্রার পারদ বাড়তেই থাকলো। সব্বাই, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রী আর সরকারী কর্মচারীরা, গরমের ছুটিতে পাহাড়ে বেড়াতে যেতে না পেরে যারপরনাই বিরক্ত বোধ করছিল। জনগণের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছিলো। প্রেসিডেন্ট কোর্মার গোয়েন্দা দপ্তর মন্ত্রণা দিল, গ্রীষ্মকালকে নিষিদ্ধ করার কারণে পাবলিক ক্ষেপে গিয়ে আরেকটা বিপ্লব করে ফেলতে পারে। প্রেসিডেন্ট কোর্মা নিজেও তার পাহাড়ের প্রাসাদখানিতে ছুটি কাটাতে উৎসুক ছিলেন। তিনি তড়িঘড়ি গ্রীষ্মকে পুনর্বহাল করার ফরমান জারি করলেন। এতে প্রেসিডেন্ট কোর্মা সহ সব্বাই খুশী হল। এরপর তিনি ব্যাগপত্তর গুছিয়ে মার্সিডিজ গাড়ির কনভয় নিয়ে পাহাড়ের দিকে রওনা হলেন। ৪ প্রেসিডেন্ট কোর্মা এখন দিনের অনেকটা সময় রান্নাঘরে কাটান। ওনার জ্যোতিষী স্বামী অগ্নিমান্দ্য ওনাকে খাবারে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সাবধান করেছেন। তাই প্রেসিডেন্ট কোর্মা এখন নিজের রান্না নিজে করেন। ক্ষমতায় আসার পর ওর গিন্নি আয়তনে আরো বেড়েছেন ফলে তিনি আর বিশেষ কাজকর্ম করে উঠতে পারেন না। আর আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কাউকে প্রেসিডেন্ট কোর্মা বিশ্বাস করতেন না, ফলে নিজের রান্না নিজেই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। ওনার পরামর্শদাতারা অভিযোগ করছিলেন, প্রেসিডেন্ট কোর্মার আর রাষ্ট্রের কাজে মন দেওয়ার মত সময় নেই, কিন্তু প্রেসিডেন্ট কোর্মা নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল রইলেন। পাহাড়ে থাকাকালীন, হিমালয়ের কোলে একটা ছোট্ট রাজ্যের প্রতিনিধি প্রেসিডেন্ট কোর্মার সাথে দ্যাখা করতে এসেছিলেন। প্রেসিডেন্ট কোর্মা তখন রুটি বেলছিলেন। (উনি আবার প্রচুর রুটি খেতেন, এক একবারে দশটা করে।)। প্রেসিডেন্ট কোর্মা হাতে বেলন নিয়ে বসার ঘরে ঢুকলেন। প্রতিনিধি মশাই, যার নিজের স্ত্রীও এমন বেলন হাতে মাঝেমধ্যে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসতেন এবং যার ফলাফল ওনার পক্ষে একেবারেই সুখকর হতো না, এ দৃশ্য দেখে ঘাবড়ে এমন চম্পট দিলেন যে আর কখনোই ওনার দ্যাখা পাওয়া গেল না। প্রেসিডেন্ট কোর্মা মুচকি হেসে রান্নাঘরে ফেরত গেলেন। সব্জী কাটতে কাটতে উনি একবার জানলা দিয়ে বাইরে তাকালেন। কিন্তু বাইরে যা দেখলেন তাতে উনি চমকে উঠলেন। কাঁটাতারের বেড়ার বাইরের পাথুরে জমিতে দাঁড়িয়ে একটা লোক ওনাকে লক্ষ্য করছে। লোকটা আর কেউ নয়, স্বয়ং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পোলাও। প্রথমটায় প্রেসিডেন্ট কোর্মা ভেবেছিলেন এ নিশ্চই প্রেসিডেন্ট পোলাও এর ভূত। কিন্তু পরক্ষণেই ওনার মনে পড়লো, প্রেসিডেন্ট পোলাও এর লাশ কখনো খুঁজে পাওয়া যায় নি। হয়তো দূর্ঘটনা থেকে কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে প্রেসিডেন্ট পোলাও কোথাও লুকিয়ে-টুকিয়ে ছিলেন অ্যাদ্দিন। পোলাও বেঁচে আছে! সব্জী কাটার ছুরিখানা শূন্যে উঁচিয়ে প্রেসিডেন্ট কোর্মা তৎক্ষণাৎ রান্নাঘর থেকে এক ছুটে বেরিয়ে জেনারেল পোলাও এর দিকে ধেয়ে গেলেন। জেনারেল পোলাও এ দৃশ্য দেখে উল্টোপানে ঘুরে দিলেন দৌড়। প্রেসিডেন্ট কোর্মা যতক্ষণে পাশ কাটিয়ে কাঁটা তারের বেড়া পেরোতে সক্ষম হলেন, ছুটন্ত লোকটা ততক্ষণে অনেকটা দূর পৌছে গ্যাছে। জেনারেল পোলাও লম্বা লম্বা পা ফেলে পাহাড় থেকে নেমে পড়লেন। পাথর আর কাঁটাওয়ালা ঝোপগুলোকে অগ্রাহ্য করে প্রেসিডেন্ট কোর্মা তার পিছন পিছন ছুটলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই জেনারেল পোলাও সেই পতিত জমির কিনারায় এসে পৌছলেন যেখানে শয়ে শয়ে তার নিজেরই পরিত্যক্ত স্ট্যাচুগুলো ডাঁই করা ছিল। যতক্ষণে প্রেসিডেন্ট কোর্মা সেখানে এসে হাজির হলেন, জেনারেল পোলাও ততক্ষণে ওই স্ট্যাচুর জঙ্গলে উধাও হয়েছেন। হাঁফাতে হাঁফাতে প্রেসিডেন্ট কোর্মা স্ট্যাচুর জঙ্গলের প্রান্তে এসে দাঁড়ালেন। স্ট্যাচুগুলকে অবিকল জেনারেল পোলাও এর আয়তনে গড়া হয়েছিল, আর রঙ ও ছিল হুবহু এক, ফলে আসল জেনারেল পোলাও কে ওই জঙ্গলের মধ্যে থেকে খুঁজে বের করা ছিল কার্যতঃ অসম্ভব। ‘জেনারেল পোলাও!’ প্রেসিডেন্ট কোর্মা সবজি কাটার ছুরিখানা মাথার উপর উঁচিয়ে চিৎকার করে উঠলেন ‘মরদের বাচ্চা হলে বেরিয়ে আয়! আমরা ডুয়েল লড়বো।‘ দুপুরের চড়চড়ে সূর্যের নীচে স্ট্যাচুর জঙ্গলের ওপর দিয়ে একটা হল্কা বয়ে গেল। আর তারপরই সেই জঙ্গল থেকে ভেসে এলো একটা অট্টহাসি : ‘হা! হা! হা!’ রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে প্রেসিডেন্ট কোর্মা এদিক ওদিক তাকালেন কিন্তু হাসির উৎস খুঁজে পেলেন না। শব্দটা আবার প্রতিধ্বনিত হল; ‘হা! হা! হা!’ রাগে অন্ধ হয়ে প্রেসিডেন্ট কোর্মা ওই স্ট্যাচুর জঙ্গলে ঢুকে পড়লেন তারপর যত্রতত্র স্ট্যাচুগুলোর গায়ে ছুরি মারতে শুরু করলেন। সিমেন্টে ধাক্কা খেতে খেতে ছুরির ফলা ভোঁতা হয়ে বেঁকে গ্যালো; কিন্তু উনি উন্মাদের মত স্ট্যাচুগুলোর গায়ে ছুরি মেরেই চললেন। অবশেষে সেনাবাহিনীর লোকজন ঘটনাস্থলে পৌছিয়ে প্রেসিডেন্টকে বুঝিয়েসুঝিয়ে ঠাণ্ডা করে ফেরত নিয়ে যায়। ডাক্তাররা ওনাকে বেশ কড়া ডোজের ট্রাংকুইলাইজার দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখেন। পরদিন সকালবেলা, প্রেসিডেন্ট কোর্মা রাজধানীতে ফিরে যান। জেনারেল পোলাওকে নিয়ে এই ঘোরতর সমস্যাটার একটা চটজলদি ও ফলপ্রসূ সমাধান দরকার। স্ট্যাচুর ওই জঙ্গলে বোম মারা যেত বটে। কিন্তু লোকটা এ সত্ত্বেও যদি পালিয়ে যায়? আর তাছাড়া, প্রেসিডেন্ট কোর্মা জেনারেল পোলাও কে জ্যান্ত অবস্থায় ধরতে চাইছিলেন যাতে উনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে তার উপর অত্যাচার করতে পারেন। আর তারপরই গোয়েন্দা দপ্তর ওনাকে সেই ভয়ানক খবরটা দিল-ওই পতিত জমির সবকটা স্ট্যাচু উঠে দাঁড়িয়েছে আর তারা মার্চ করতে করতে রাজধাণীর দিকেই আসছে। স্ট্যাচুগুলো হাঁটছিলো থপথপিয়ে, য্যানো তাদের লম্বা ঘুম থেকে এইভাবে উঠে পড়তে যথেষ্ট কষ্ট হয়েছে। এমনিতে কাক ও স্ট্যাচুদের একটা সহজাত সখ্যতা আছে; কাকেরা সাধারণত স্ট্যাচুর মাথায় বসতে পছন্দ করে। এদিকে স্ট্যাচুরা হঠাতই তাদের স্ট্যাচু-ধর্ম বিসর্জন দিয়েছে, ফলতঃ বিপদসঙ্কেত পেয়ে স্ট্যাচুর জঙ্গলে বসবাসকারী শয়ে শয়ে কাকেরা রাজধানীর দিকে উড়ে আসতে আরম্ভ করলো। রাজধানীর লোকজন হঠাৎ তাদের চারপাশে এই অকারণে উড়ে যাওয়া শয়ে শয়ে কাকের উপদ্রব দেখে চিন্তিত হল। কথায় আছে এরকম হঠাৎ করে কাকের উদয় হওয়ার মানে বাড়িতে কোনো কুটুম আসতে পারে। লোকে অবাক হয়ে ভাবার চেষ্টা করলো কোত্থেকে এই এত এত কুটুম তাদের সাথে দ্যাখা করতে আসতে পারে। প্রেসিডেন্ট কোর্মা বুঝলেন নির্ঘাত জেনারেল পোলাও ওই হেঁটে আসা স্ট্যাচুগুলোর মধ্যে সশরীরে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। একটা বিশাল অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা স্ট্যাচুগুলোর উপর বোমা ফেলেও খুব একটা লাভ হবে না। এমনকী সিমেন্টের স্ট্যাচুর গায়ে বুলেট ছুঁড়েও ফল নেই। প্রেসিডেন্ট কোর্মা ভয়ানক চিন্তিত হলেন। এদিকে সেকেন্ডে সেকেন্ডে স্ট্যাচুরা এগিয়ে আসছে। তারপর প্রেসিডেন্ট কোর্মা মৃদু হাসলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ হুকুম দিলেন শহরের সবকটা ফাঁকা বেদীকে তুলে এনে রাজধানীর প্রান্তে জড়ো করতে। সেনাবাহিনী ও নগরবাসীদের প্রতিটি গাড়িকে যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করা হল আর বেদীগুলোকে রাখা হল শহরে ঢোকার ঠিক মুখে। ওয়াচ টাওয়ারের উপর থেকে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট কোর্মা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে গোটা সমতলের উপর নজর রাখলেন। তিনি অর্ডার দিয়েছেন স্ট্যাচু বাহিনীর উপর গুলি না চালাতে। সৈনিকেরা হতভম্ব হয়ে রইলো। এরপর সেই সুবিশাল স্ট্যাচু বাহিনী এসে উপস্থিত হল ঠিক সেই জায়গায় যেখানে বেদীগুলোকে রাখা হয়েছিল। ফাঁকা বেদীগুলোকে দেখে একে একে প্রত্যেকটা স্ট্যাচু যার যার জায়গায় উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। ঠিক য্যামনটা প্রেসিডেন্ট কোর্মা ভেবেছিলেন, ফাঁকা বেদীগুলো দেখতে পেয়েই স্ট্যাচুদের মধ্যে ফের তাদের স্ট্যাচু-ধর্ম জেগে উঠেছিল, আর তাদের ধর্ম অনুসারেই তারা একে একে স্বস্থানে ফেরত যাচ্ছিলো। বিজয়ীর উল্লাসে প্রেসিডেন্ট কোর্মা এই গোটা ঘটনাটা লক্ষ্য করে চললেন। তিনি জানতেন তার উদ্দেশ্য তখনই সফল হবে যখন সবকটা স্ট্যাচু নিজের নিজের বেদীতে উঠে দাঁড়িয়ে পড়বে। শুধুমাত্র জেনারেল পোলাও-মানে সত্যিকারের জেনারেল পোলাও-একা দাঁড়িয়ে থাকবেন। আর তখন খুব সহজেই ওকে পাকড়াও করা যাবে। সবকটা স্ট্যাচু শেষমেষ নিজের নিজের বেদীতে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। ফাঁকা মাঠে শুধু একজনই দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্ত সেনাবাহিনীর কর্ণধার অফিসার পিছন ফিরে চিৎকার করে উঠলেন, ‘মহামান্য প্রেসিডেন্ট, এটা তো শুধু একটা সিমেন্টের স্ট্যাচু!’ ‘অ্যাঁ?’ প্রেসিডেন্ট কোর্মা হতভম্ব হয়ে গেলেন। পরমুহূর্তেই তিনি বুঝলেন যে আসল জেনারেল পোলাও-ও ফাঁকেতালে কোনো একটা বেদীতে উঠে পড়েছেন, ফলে শেষ স্ট্যাচুটা অসহায় ভাবে মাঠে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ‘শয়তান!’ প্রেসিডেন্ট কোর্মা বিড়বিড় করলেন। তারপর সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললেন: ‘সবকটা স্ট্যাচুকে গুলি করো!’ সেনারা গুলি করা শুরু করলো। সিমেন্টের স্ট্যাচুর গায়ে গুলি লেগে স্প্লিন্টার উড়তে থাকলো। আর স্ট্যাচুরা যখন দেখলো তাদের গুলি করা হচ্ছে তারাও বেদী থেকে লাফিয়ে নেমে তাদের পিস্তলগুলি বের করে চালানোর উপক্রম করলো। কিন্তু তাদের পিস্তলে কোনো গুলি ছিলো না। ফলে স্ট্যাচুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে আরম্ভ করলো। ছুটন্ত স্ট্যাচুদের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে জেনারেল পোলাও পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করলেন। পালাতে থাকা স্ট্যাচুদের ভিড়ে মিশে গিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচানোটা তার কাছে খুব একটা কঠিন নয় এখন। কিন্তু তার মনে ততক্ষণে একটা অন্য প্রশ্নের উদয় হয়েছে; উনি কি সত্যিই জেনারেল পোলাও, নাকি একটা স্ট্যাচু? উনি নিজে আর খুব একটা নিশ্চিত হতে পারছিলেন না, আর এই প্রশ্নটা ওনাকে কুরে কুরে খাচ্ছিলো। উনি নিজের গা ছুঁয়ে টিপেটুপে বোঝার চেষ্টা করলেন, কিন্তু সেই হেলিকপ্টারের দূর্ঘটনার পর থেকেই ওনার নিজের শরীরটা একেবারে সিমেন্টের মত শক্ত হয়ে গ্যাছে। ওনার সন্দেহ গাঢ় হতে থাকলো যে উনিও বোধহয় একটা স্ট্যাচুই। মাঠ থেকে পালিয়ে গেলে ওনার এই সমস্যা মিটবে না। বরং এগিয়ে গিয়ে গুলি খেলেই একমাত্র এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। উনি যদি স্ট্যাচুই হন, তাহলে শুধুই স্প্লিন্টার উড়বে; আর উনি যদি আসল জেনারেল পোলাও হন, সেক্ষেত্রেও উনি একা মরতে চান না। উনি প্রেসিডেন্ট কোর্মাকে মেরে মরবেন। জেনারেল পোলাও স্ট্যাচুদের ভিড় থেকে আলদা হয়ে ধীরপায়ে সামনে এগিয়ে গেলেন। ওয়াচ টাওয়ার থেকে এ দৃশ্য দেখে প্রেসিডেন্ট কোর্মা গুলি থামানোর নির্দেশ দিলেন। বন্দুকগুলো শান্ত হয়ে গ্যালো, আর স্ট্যাচুরাও তাই দেখে মাঝপথে দাঁড়িয়ে পড়লো। হঠাতই পরিবেশটা আশ্চর্যরকম ঠাণ্ডা আর থমথমে হয়ে উঠলো। আর ওই শান্ত পরিবেশে জেনারেল পোলাও এক পা এক পা করে এগিয়ে আসতে থাকলেন। ওয়াচ টাওয়ারের ঠিক তলায় এসে তিনি প্রেসিডেন্ট কোর্মার দিকে তাকালেন। জেনারেল কোর্মার স্থির অবয়বের পিছনে সারি সারি স্ট্যাচু, একই রকম নিথর, আর আঙ্গুলগুলো ট্রিগারে রাখা অবস্থায়, বন্দুকগুলো জেনারেল পোলাও এর দিকে তাক করে রেখে সৈনিকরাও ঠিক ততটাই নিশ্চল। এই এত এত মানুষ আর স্ট্যাচুর ভীড়েও জেনারেল পোলাও এর নিজেকে বড্ড একা বোধ হল। এটা সেই ধরণের একাকীত্ব যখন কেউ বুঝে উঠতে পারে না যে সে আসলে সে নিজেই-ই নাকি অন্য কেউ। ‘প্রেসিডেন্ট কোর্মা, আ-আমি-আমি জেনারেল পোলাও!’ জেনারেল পোলাও চিৎকার করে বললেন। ওই মুহুর্তে এতটা আত্মবিশ্বাসের সাথে এইরকম দাবী করাটা ওনার কাছে রীতিমত হাস্যকর ঠেকলো। ‘হা! হা!’ টাওয়ারের উপর প্রেসিডেন্ট কোর্মা অট্টাহাসিতে ফেটে পড়লেন। ‘পোলাও, তুই কি আত্মসমর্পণ করবি?’ ‘না, আমি আত্মসমর্পণ করবো না,’জেনারেল পোলাও উত্তর দিলেন। ‘না? সেক্ষেত্রে, জেনারেল পোলাও,আমি নিজে তোকে জাহান্নামে পাঠাবো,’ এই বলে প্রেসিডেন্ট কোর্মা নিজের পিস্তল বের করে সোজা গুলি চালালেন। গুলিটা যে সোজা ওর হৃৎপিণ্ডে এসে বিঁধেছে, এবং উনি যে মরতে চলেছেন, এই বোধের সাথে সাথেই ওনার এই উপলব্ধিও হল যে তাহলে উনিই আসল জেনারেল পোলাও এবং এর ফলে এক অদ্ভুত পরিতৃপ্তিতে ওনার মন ভরে উঠলো। মাটিতে পড়তে পড়তেই জেনারেল পোলাও তার সর্বশক্তি দিয়ে নিজের পিস্তল উপরে তুলে গুলি চালালেন। বুলেটটা সটান গিয়ে বিঁধলো প্রেসিডেন্ট কোর্মার বুকে, আর উনি খুব আস্তে করে ওয়াচ টাওয়ার থেকে নীচে গিয়ে পড়লেন। ৫ দুই জেনারেলের মৃত্যুতে দেশে সাময়িক ভাবে নৈরাজ্য নেমে এলো। অন্য কোনো জেনারেলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার মত ক্ষমতা ছিলে না। পরিস্থিতি শেষটায় এতটাই খারাপ হয়ে দাঁড়ালো যে কিছু মানুষ তো খোলাখুলি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলতে শুরু করলো। এই সময়টাতেই সেই প্রকাণ্ড বস্তির বাসিন্দারা তাদের প্রাকৃতিক বিবর্তনের চূড়ায় এসে পৌছলো। বছরের পর বছর, ওই বস্তির লোকগুলো ক্রমেই হাল্কা ও কৃশকায় হয়ে উঠছিল। আর এখন, তাদের শরীর থেকে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, মাংস আর চামড়া পুরোপুরি খসে পড়লো। পড়ে রইলো শুধু কঙ্কাল। বিনা মৃত্যুতেই এই মানুষগুলো কঙ্কাল হয়ে গিয়েছিলো, আর সে অবস্থাতেই তারা তাদের দৈনিক কাজকর্ম সারতো। একথা ঠিক যে তাদের আর বাচ্চা কাচ্চা হোতো না; কিন্তু যেহেতু তারা এমনিতেই কঙ্কাল হয়ে গিয়েছিল, তাদের আর নতুন করে মরারও প্রশ্ন ছিল না। ক্রমে এই জীবেদের একটা সম্পূর্ণ নতুন জাত হিসেবে লোকে চিনতে আরম্ভ করলো; এমনকী গুণমানের বিচারে এদের স্থান ব্রাহ্মণদের চাইতেও উঁচুতে ধরা হল, যেহেতু কঙ্কালেরা শুধুমাত্র দেখতেই ফর্সা নয়, এমনকী বিশুদ্ধতার নিরিখেও এরা অনন্য, আর কে না জানে জাত পাতের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতাই হচ্ছে আসল কথা। দেশে এই নৈরাজ্যের পরস্থিতি দেখে, কঙ্কালেরা ঠিক করলো তারাই সরকার গড়বে। খুব একটা বাধার মুখেও তাদের পড়তে হল না, কারণ কঙ্কালের সাথে আর কেই বা যুদ্ধ করবে? তা তো ঢেউ এর সাথে যুদ্ধ করার শামিল। যেহেতু কঙ্কালদের নিজেদের খুব একটা বিলাসবহুল জীবনযাপনের প্রয়োজন ছিল না, এমনকী খাবার-দাবারেরও প্রয়োজন ছিল না, তারা দেশে সাম্য আর ন্যায়-এর এক শাসন কায়েম করলো। আর কঙ্কালদের বিরুদ্ধে কেউ অভ্যুত্থান ঘটাবে এমন সম্ভাবনাও ছিল না। আর স্বামী অগ্নিমান্দ্য, যাকে কিনা জাতীয় জ্যোতিষী হিসেবে পুর্নবহাল করা হয়েছিল, ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, কঙ্কালদের এই সাম্রাজ্য চিরতরে স্থায়ী হবে। 1.Imperfect Planet Venus means Vino, Sex and Luck to be older than John Lennon ever was living to see the man standing on an empty street corner talking on a phone gesticulating wildly promises and apologies, how we disappoint the ones we love at least, I have awoken at night, walked naked onto the balcony and heard the soft slap of the waves below. Life can improve something even I knew you’re either in the circle or Venus turns her back, Today I bought a radio and a bed. 2.The Mellow Drama in a whirlpool interminably flailing out of control twirling progressively downwards dense panic to no avail gulping gasping dashing on cragged undersea rocks yet living is dying so let go, man, and catch a wave your baby has a fever catch a wave your business can't keep the lights on catch a wave your college tuition paid by selling pills catch one that lump is not going away living is dying let go 3. On the Edge of a Knife Butterbutt slips The fall imminent The cuts hard to bare But what a view! He's in over his head He's scared This is beyond his skill level He's too weak; he'll give out. BB does this because he must Put himself in a situation In which he has no choice -- Succeed or die. The torment will soon be over He'll rest Then find another knife blade To ride. 4. Saving the World One word at a time one word at a time the superheroes of mighty pens reminding us how to begin to feel about a sunset that's not on video or posters sitting quietly to soak it in without naming the 'it' just naming the 'in' practicing like a poet priest avoiding the traffic, the dump, the stock exchange you know what your problem is ... what's really important ... no questions, no answers just the discipline dropping one word after another a trail of cookies into the scary woods on a fern path after sunset. Forget Me Not According to statistics one of us is mad, two of us are murderers, three of us have gone the way of the mail order catalogue – we are unnecessary and old, like shoes out of fashion, like sedans at the auto wreckers, like the ones you loved so long ago you can’t remember their names or faces. You chew the rag of memory and can’t remember. Incommunicado My true love calls from a fold in the earth, her voice a lengthening shadow, her voice a high cloud in winter. My true love calls from an airliner’s berth. From an inconvenient crag on a Hollywood back lot. From a fault under the ocean. My heart is a chalk outline of a body. My heart is an immigrant’s untold struggle, her one true voice mispronouncing my name, sounding like a bell ringing in a baby-blue sky, my beloved’s voice shining like a new penny. Like a match struck in a mausoleum Governance It’s a machine made for flying, possibly. Or it’s designed to travel underwater – we, the committee, have yet to decide. Long meetings into the night but we’ve yet to choose from a spectrum of eye-watering colours. Let’s throw money at it, the chairwoman declares, her campaign promises long a thing of the past. And make it streamlined, demands a senator. Make the machine make other machines. It shall bear our sponsor’s crest and have no purpose. Arthur Rimbaud From what distant star had he arrived with his diary of the damned? He came from the womb with his craft fully formed, his vocabulary and passions realized. Did Verlaine know this too, attempt a mercy-killing, before the fire of poems wrung itself exhausted from Rimbaud's limbs? Long after he abandoned stanzas and tropes, the wordsmiths left behind could not wrest themselves, nor did they want to. There is such a thing as too much knowing. L'enfant terriblé--but he was never a child, only and ever a poet. The Banker Once there was a banker who mistook her life for a poem. She searched under staples and wrapped coins for metaphors. She looked for meaning and a reflection of herself in the eyes of her clients and co-workers. She longed so hard for something, anything really, to be there. My Old Honda It has become a giant purse or suitcase, a mishmash of wrappers and receipts, of books and boxes. Even my clothes are there: sports bras, high-heeled shoes, dresses I wear to the bank, dresses I shuck off for my lover. Items collect in my car and remain there until I reach for them and find the sweater or trousers missing. ১ তোমার যতটুকু হৃদয়, তারচেয়েও বৃহৎ যাবতীয় খাঁচা। বেঁধে রাখো, বেঁধে বেঁধে রাখো তারে। তারে সুর বয়ে যায়। কী স্বভাব, কবি স্বভাব মিলেমিশে নেশা হয়। তবুও বিষম খাই। কীভাবে যে বিছানায় টানি আর কীভাবে কবুতর দিল উড়ে যায়! ২ মিছিল নিয়ে বার কয়েক ভাবি। বারান্দায় বসি, কফি খাই, সিগারেট-সহ। বলো ব্রহ্ম, বলো আয়ু। এইভাবে বারান্দায় জড়ো হয়ে বসে মিছিল। একা একা হাঁটি। স্লোগানে স্লোগান তুলি ঘরময়। রাজনীতি নিয়ে বদভ্যাসটা আর গেল না! যতটুকু দোষ আর যতটুকু ফাঁক, মিছিলে মিছিল আমি হাত মেলাবই। ৩ আজ ফোন, কাল আসা। এইভাবে জীবন থেকে 'তুমি' চলে যায়, নেশা যায় না। কাল থেকে কী হবে ভেবে টেবে আজকের আরও দু-পেগ। আজ নেশা, কাল মেশা। ভালোবাসাবাসি আজ দু'ভাগ হয়। রাষ্ট্র কি আমাদের মেনে নেবে হে ছোকরা? ৪ মৃদু ছড়াচ্ছি শুধু। মই থেকে একটা পাখি- ওড়াচ্ছি শুধু। জীবন তো বৃথা নয়। একটা কম্পন থেকে আরেকটা কম্পনে যেতে খেলা করে কিছু মিউজিক্যাল গ্রাফ, টিকা-টিপ্পনী। উঠছি নামছি, অথচ ভাঙচি না। এই পরিমিতি বোধ। তবু ঠোঁটের রাঙা স্বভাবে জুড়ে বসবে পাখি। মে মাস যন্ত্রণার। এই যন্ত্রণাটুকুর পাখি হোক। ১। মায়াবন্দরের রাত দশটা পাঁচটার একঘেয়ে পুনরাবৃত্তি শেষ হল দীর্ঘ অবসরে যেতে হবে অনেকটা শীতঘুমের মতন আর ক্যালেণ্ডারের পাতা উল্টিয়ে দেখতে হবে না কবে রেড লেটার ডে যা হবার ছিল, তা হল না যা হবার ছিল না, তাও না আর কত কালক্ষয় করব ব্যাভিচারে পাহাড়ী উপত্যকার গাছ যাদের দেখেছিলাম সিলোরিগাঁওয়ের রাস্তায় তারা কি আমার জন্য দরজা খুলে দেবে আমি কি যেতে পারব তরতরিয়ে উঠে যেতে উঁচু পাহাড়ের গম্বুজে বয়স হয়েছে হিমছুরির মতন আমাকে বিঁধছে শীত দূরে খাদ নিথর জলের পাশে ট্রানজিট ক্যাম্প চোরা কুয়াশায় ঢাকা পাইনের বন আর নষ্টালজিক হওয়া যাবে না এই বয়সে এসে চড়াই ভাঙা সম্ভব না বরং নিশ্চিন্তে পুরনো বইয়ের ধুলো সরিয়ে দেখে নেব স্মার্ট যুবতীদের হেঁটে যাওয়া বাই লেন অথবা পুরনো ট্যাক্সির প্রেমে বৈপ্লবিক প্ররোচনা কিছুই থাকবে না জানি বর্ণহীন হযবরল ভ্রমণের পরে আমার ঘুমিয়ে পড়ার সময় এসে যাবে আপেল সিডারের গন্ধে ভরে যাবে উপত্যকা জাপানী হাইকুর মতো একটি ক্ষুদ্র ব্যাঙ লাফ দিয়ে প্রখর নৈঃশব্দে ডুবে যাবে তিতকুটে বর্ণের স্বাদ আমার কফি কাপে এলিয়টের মতন পরিমেয় জীবনকে মাপছি রকিং ফানুসের সাথে উড়ে আসা তরুনীকে দেখতে পেলে চিৎকার করে বলব হ্যালো বেবি চলো ওকে গাছের নীচে পুরনো কমিক্সগুলি এসো পড়ি পানশালার দরজা বন্ধ হতে কিছুটা সময় বাকি হাতে তুলে নিয়েছি রত্নখচিত গবলেট চূড়ান্ত বলে যা জেনেছি চরম উপেক্ষায় ছুঁড়ে দিয়ে চলো যেদিকে দু’চোখ যায় নীলাভ পরীদের সঙ্গে আমাদের যৌন সংলাপ শুরু করা যাক ফিরে আসে মায়াবন্দরে রাত ২।ডেকালগ সূর্য ডুবে যাবে কিছুক্ষণ পরে এই নিবিড় উপত্যকা অন্ধকারে ঢেকে যাবে বারান্দায় যারা বসেছিল যারা সেলফি তুলছিল টেরাসে তারা সব নিচে নেমে গেছে কফি খেতে পরিত্যক্ত প্যাগোডায় যারা নারকোটিক নিচ্ছিল তারাও হয়তো চলে গেছে বিয়ার পাবে সুইসাইড পয়েন্টের দিকে যে যুবক-যুবতী হেঁটে গেল তারা এখনও ফিরে আসেনি। অল্প বৃষ্টির পরে সাত রঙ দেখা দিল অদূর পাহাড়ের মাথায় কেউ কেউ ছবি তুলে আপলোড করল কেউ হাততালি দিল উল্লাসে কেউ আবার নিশ্চুপ আলতো ভেজা অন্ধকারে চেয়ে রইল অবহেলায় বনাঞ্চলের দিকে হোটেল লবিতে কেউ নেই সুন্দরী মেয়েরা সব গাড়ি নিয়ে চলে গেছে এদিকে সেদিকে একটি গিটার বাজছে অসম্ভব তারুণ্যের পাশে শুয়ে আছে মৃত্যুভুক অরণ্য প্রবাদ আমরা এসেছি অজানা উৎসবের খোঁজে সবাই কি এসেছে ভয়াতুর জীবনের পরিক্রমায় স্মৃতির ঘুলঘুলি তুলে কেউ উঁকি দেয় আপেল বাগানে অপার্থিব গ্রেভ ইয়ার্ড আমরা দেখিনি শুনিনি ভৌতিক ঝিঁঝিঁদের ডাক সন্ধ্যা নামছে ব্ল্যাক আউট হবে কয়েক মিনিটে ঘরে ঢোকে হলদে পোকাদের দল রাতপাখি ডাকে আলো জ্বলে দুখিয়া কুঠিরে মেক শিফট ক্যাম্পে কারা যেন আগুন জ্বালল কেউ বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে বলল – চল – রেকং গিয়ে দুটো পেগ ঠাণ্ডা বরফে আজ রাতে চাঁদ উঠবে না অর্থহীন অনুরাগ রাম মিশেছে কফিতে উড়ে যাই চলো গাছ থেকে গাছে পাখিদের মত ওই মেয়েটিকে ডাকো যে তার স্তন থেকে জ্বেলে দেবে রাতের মশাল সূর্যের হৃদ্পিণ্ড থেকে রক্ত ঝরছে অদৃশ্য কুয়াশায় মিলিয়ে যাচ্ছে শূন্যতার মেঘ এই শীতার্ত বাতাসের আদর খেতে খেতে আমরা ঘুমিয়ে পড়ব পাথর কেটে যারা উর্বর করবে ক্ষেত তারা এসে আমাকে জাগাবে আমাদের অবুঝ প্রেমিকরা আমাদের ভালোবাসা দেবে অনেক দুরারোগ্য অবসাদ থেকে সেরে উঠে চলে যাব লছমনঝুলা |