[শিলংয়ের কবি,লেখক ও গবেষক অ্যাভনে পারিয়েটের (জন্ম ১৯৮৬) কবিতা ও নিবন্ধ ইকনমিক এন্ড পলিটিকাল উইকলি,ক্যাফে ডিসেনসাস,রায়ট ডট ইন-সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজে ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে।তিনি ২০১৬ সালের ন্যাশনাল পোয়েট্রি মেল অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন ।২০১৬ সালেই তাকে ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন ফর দ্য আর্টস-এর পক্ষ থেকে শিল্প সম্বন্ধিত গবেষণা বিষয়ক ফেলোশিপ প্রদান করা হয়।তাছাড়া তিনি লিটারেচার এক্রস ফ্রনটিয়ার্স আয়োজিত পোয়েট্রি কানেকশনস ইন্ডিয়া-ওয়েলস প্রজেক্টেও অংশগ্রহণ করেছেন।বর্তমানে তিনি দূরদর্শন কেন্দ্র শিলংয়ে কর্মরত। ] # উত্তরপূর্বের উঠতি লেখকদের জন্য লেখা বিষয়ক দশটি প্রস্তাবনা ১ সহজ সরল ভাষায় ‘উত্তরপূর্ব বলতে যা বোঝায়, সেসব নিয়ে লেখো; যেমন,আহা কি মনোরম আমাদের গাঁ-গঞ্জ,পাহাড়-পর্বত, আদিবাসীদের আচার -আচরণ ও এই মন্ত্রপূত বনজঙ্গল, কি বিশুদ্ধ জলবায়ু আমাদের, এইসব আপাত-পরিচ্ছন্ন জঞ্জাল ছড়াতে থাকো আর কি। ২ এছাড়া, অযথা টেক্সটের কাচড়া করতে যাবে না। ৩ একটু সময় বার করে কবিতা লেখারও চেষ্টা করো (কী করবে, যেহেতু জায়গাটাই এত মায়াবী, ইত্যাদি) কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যেন কবিতা লিখতে বসে তুমি টুকরো টুকরো করে একেকটা বদমাইশ শব্দকে ভাঙ্গতে পারছো এই এবং এই (শৈল্পিক) পদ্ধতিতে ৪ কখনও, কখনোই মহানগরকেন্দ্রিক কিছু লিখতে যাবে না। যেহেতু তা ‘মূল ভূখণ্ড’-এর লেখকদের এক্তিয়ারভুক্ত। তোমার নিজস্ব মতামত অবশ্যই রাখতে পারো, যেমন,দিল্লী কোলকাতা কিংবা চেন্নাইয়ের কোন কোন জিনিস তোমার ভালো লাগে এবং তাদের কোন কোন ব্যাপারে তোমার বিবমিষা হয়। তবে এই নিয়ম লাগু করার ক্ষেত্রে অসমীয়াদের কিছুটা ছাড় দিলেও দেওয়া যেতে পারে। ৫ নিজে আদিবাসী হলে অন্যান্য আদিবাসী গোষ্ঠী ও দলিতদের ব্যাপারে লেখার কোনো প্রয়োজন নেই। কে না জানে,স্বয়ং ঈশ্বরও জানেন, একটা মোটামুটি রকমের কাজ চালানোর মত সংহতি দিয়েই বা আমরা কী করব। ৬ হিন্দুধর্ম ও ইসলাম, এই দুই ধর্মের ব্যাপারে কিছু লিখতে হবে না। তার কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, উত্তর পূর্বের সবাই, নির্বিচারে আমরা সব্বাই হচ্ছি প্রকৃতি-উপাসক, সর্বপ্রাণবাদী, যারা কোনোরকমের ধর্মীয় আলোচনায়, সমালোচনায় ও চর্চায় নিজেদের ধর্ম ব্যতিরেকে অন্য কোনো ধর্মের প্রসঙ্গ উঠলে শুধু হাত কচলাতে জানি। সেই তর্কে নতুন কোনো ভাবনা ও আঙ্গিকই যোগ করতে পারি না। তাই এই বিষয়টিকে ‘সাদাচামড়া’ ও ‘কালোচামড়া’-দের জন্যই তুলে রাখা শ্রেয়। ৭ জঙ্গিদের ব্যাপারে লিখে অনেকদূর যেতে পারবে কিন্তু সেক্ষেত্রে তোমাকে আবার তাদের খুঁজে বার করতে হতে পারে যা কিনা রীতিমত ভয়ের! এই প্রসঙ্গে সাধারণ বদ্ধমূল ধারণাটির বিরোধিতা করে এটুকু বলতে পারি যে উত্তর পূর্বের সব পরিবারেই একজন করে জঙ্গি থাকে না। বলতে পারো, গবেষণা করেই আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। ৮ মাঠে-ময়দানে নেমে কাজ করা ও লোকজনের সাথে কষ্টেসৃষ্টে দেখা-সাক্ষাৎ করার বদলে বরং বুদ্ধিদীপ্ত ফাজলামি করে বেড়াও, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে যাও। অথবা চাইলে এমন আরেকটা লিস্টও বানাতে পারো। ৯ নিম্নবর্গের তত্ত্বটা মনে আছে তো? ঠিক, সেই তত্ত্বটাই যার সম্বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দৃঢ় বিশ্বাস, কথায় কথায় ব্যবহার করতে পারলে সাহেবদের মন একদিন ব্যথায় আনচান করে উঠবেই। তবে সেটা ‘তোমার’ ব্যবহারের জন্য নয়। এইসব শক্ত তত্ত্ব একমাত্র ‘ভারতীয়’রাই দেশের বাইরে, সভায়, সেমিনারে ব্যবহার করতে পারবে। আগ বাড়িয়ে আবার এই লব্জটাকে তুমি ‘ভারতীয়’দের ওপরই ব্যবহার করতে যেয়ো না। ১০ স্থানীয় ভাষায় লিখছে যারা, তাদের জনসমক্ষে তারিফ করো ও গোপনে শোষণ করে যাও, পারলে তাদের হাড় থেকে অন্তিম মজ্জাটুকুও শুষে নাও। তবে, তার পাশাপাশি, করুণাময় ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতেও ভুলে যেয়ো না, কেননা ভাগ্যিস হারামজাদারা ইংরেজিতে লিখতে পারে না, নয়তো কবেই কাজফাজ হারিয়ে আমাদের বাড়িতে বসে থাকতে হত। # মাঙ্কি/ম্যান আজকাল হনুমান হয়ে গেছে একটা স্থূল জিসিবি, সে নিয়মিত আসে ও পাহাড়ের সম্পদ লুট করে চলে যায়। এই বিষয়ে আদিবাসীদের কী বলার আছে? আরেকটা বহিরাগত, তারও চোখের কোণদুটো চিকচিক করছে লোভে অথচ আমরা তখনও যুদ্ধ কিংবা সাম্রাজ্য নির্মাণের কিছুই জানতাম না। টিভির পর্দার ভেতর থেকে তারা তোমাকে দেখে দাঁত কেলিয়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই, তবু তোমার দায়িত্ব হল কোনোভাবেই তাদের ঘৃণা না করা-- কারণ, বুঝতে হবে, তারা শুধু একটা নির্ভেজাল দুষ্টুমি করছে হয়তো এটাই এদের তরিকা--ঠোঁট টিপে, পাছা দুলিয়ে, টিটকিরি মেরে মেরে একই ঢংয়ে সমানে নাচতে থাকা। বিশ্বের সমস্ত সংস্কৃতিতেই বানরদের সিংহাসন জুড়ে যে বসে আছে, সেই রাজা আজও তার পুরনো কৌশলগুলোই অতর্কিতে ব্যবহার করে চলেছে: নিহত শান্তিতে ভরা চোরাগলিতে, পরিত্যক্ত কারখানায়, সাধারণ বাড়িঘরে, পার্কে, চলন্ত গাড়িতে অথবা বাসের গভীরে। # লুক ইস্ট লুক ইস্ট কিন্তু এই রাষ্ট্র ও তার রাজধানী দিল্লির খাতিরে নয়। লুক ইস্ট কিন্তু এই হাইওয়ে যদি আমাদের স্বাস্থ্য ও সম্পদ লুট করতে না আসে, তবেই। লুক ইস্ট কিন্তু আমাদের গ্রাম-গঞ্জের চেয়ে বেশি অন্য কোনো কিছুকেই যদি অগ্রাধিকার না দেয়া হয়। লুক ইস্ট কিন্তু হাইওয়ের রাস্তা মাড়িয়ে তোমাদের মালখোর চালকেরা যদি বারবার একরাশ ধুলো উড়িয়ে চলে না যেতে পারে। লুক ইস্ট কিন্তু এই হাইওয়ের হাত ধরে তোমাদের দালালি ও খুনখারাপিও যদি অতর্কিতে হানা না দেয়। লুক ইস্ট কিন্তু বড়ো বড়ো কোম্পানি ও তাদের অমিত শক্তিশালী মালিকদের পথ যদি আরও সুগম না হয়ে যায় তাতে। লুক ইস্ট কিন্তু এই হাইওয়ে যদি আমাদের ধানক্ষেতগুলো কেড়ে না নেয়। অন্যথায়, অন্যত্র দেখো : পশ্চিমে, দক্ষিণে, উত্তরে, মোটকথা পুবদিক ছাড়া যেদিকে মন চায় তোমাদের।
0 Comments
[সিঙ্গাপুরের কবি সিরিল উয়ঙ্গ-এর জন্ম ১৯৭৭ সালে। তার লেখা ইতিমধ্যেই আটলান্টা রিভিউ, ফালক্রাম, পোয়েট্রি ইন্টারন্যাশনাল ও এশিয়া লিটেরারি রিভিউ এর মত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৫ সালে সিরিল সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল আর্টস কাউন্সিলস ইয়ঙ্গ আর্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড-এ সম্মানিত হন। প্রকাশ্যেই নিজের সমকামী অস্তিত্বকে উৎযাপন করা এই তরুণ কবিকে অনেকক্ষেত্রেই সিঙ্গাপুরের প্রথম 'কনফেশনাল পোয়েট' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যদিও তার সাহিত্যকে কোনো অবস্থাতেই শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত অস্তিত্ব বা যৌনতার পরিসরে সীমাবদ্ধ করা যায় না। বরং অনেকাংশেই তার উচ্চারণ ব্যক্তিগতকে ছাপিয়ে গিয়ে উত্তর আধুনিক নাগরিক হতাশা থেকে জন্ম নেওয়া এক ধর্মপরিচয়হীন অভিনব আধ্যাত্মিকতার প্রতিফলন। হয়তো সেজন্যই তার তথাকথিত 'অরাজনৈতিক' লেখাগুলিও আদতে প্রবলভাবে 'রাজনৈতিক'। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে 'আনমার্কড ট্রেজার্স', 'টিল্টিং আওয়ার প্লেটস টু ক্যাচ দ্য লাইট', 'দ্য ডিক্টেটর্স আইব্রো' এবং 'দ্য লাভার্স ইনভেন্টরি' উল্লেখযোগ্য। কবিতা ছাড়াও তিনি একজন সার্থক ছোটগল্পকার এবং ঔপন্যাসিক। নীচের কবিতাগুলি তার কাব্যগ্রন্থ 'দ্য ডিক্টেটর্স আইব্রো' নামক বইটির নির্বাচিত কিছু অংশের অনুবাদ। বাংলায় এই প্রথমবার। ] # গর্বিত, উদ্ধত, পুরুষ্টু... একজোড়া চোখ থেকে শেল হয়ে ছুটে আসা ওই রশ্মিগুলোর জন্য এক তুখোড় ধনুকই শুধু নয় (ঠিক এমুহূর্তে ওরা বিমান হানার মুখে অতর্কিতে পড়ে যাওয়া কিশোরের মত এলোপাথাড়ি ছুটছে), অশান্ত সরোবরের মত তোমার মুখ থেকে অনেকটা উঁচুতে এ আমাদের নিজস্ব এক দুর্গ, আমি আর আমার শান্ত স্বভাবের স্ত্রী, কালচে দুর্যোগের মত আমরা ঘন হয়ে এসেছি টেবিলের ওপর গেঁথে রাখা একটা দেশের মানচিত্রে, একটা দেশ যে মনেপ্রাণে দখল হয়ে যেতে চাইছে। # অবশ্য আমরা একা নই-বহুল-চর্চিত দুই চোখ, ওই ধূর্ত চোয়াল, এমনকি নাসারন্ধ্রে গুজবের মত জেগে থাকা ওই লোম ক'টাও- সকলেই তোমাকে এই ভয়ানক সাদামাটা পৃথিবীতে ঠিক যতটা দরকার ততটা আকর্ষণীয় করে তুলেছে, কিন্তু নিঃসন্দেহে, ভুরুই পৌরুষের আসল চিহ্ন; ঘন, বর্ণাঢ্য এক মুকুট অথবা ঝাঁ চকচকে একটা শিরস্ত্রাণ যা দৃষ্টিকে যা আরো বেশী আবেদনময়, আরো বেশী ধ্বংসাত্মক করে তোলে। শুধুমাত্র আমরা আছি বলেই, তোমাকে সহজে ভুলবে না কেউ। # দাঁত মাজার পর আয়নায় তুমি সস্নেহে আমাদের দেখছো, আমি আর আমার স্ত্রী আর তোমার মনে পড়ছে কীভাবে একজোড়া উল্টো হাসির রেখা হয়ে আমরা ঝুলছিলাম, যখন একের পর এক ধাপ টপকাতে টপকাতে তুমি অবশেষে এইখানে, পার্লামেন্টের ঠিক মাথায় এসে বসেছিলে। গর্বিত অভিভাবকের মত গদগদ হয়ে আমরা ভাবছি, তোমার এখনো কতটা উঁচুতে ওঠা বাকি! (তবে সাবধানে, রাস্তা অসীম আর নিয়মিত কাঁটা উপড়ানো দরকার) । তুমি ভালোবেসে একে একে আমাদের ছুঁয়ে দেখছো, নতুন করে তোমাকে মনে করানোর প্রয়োজন নেই; এই আমরাই তোমার শ্রেষ্ঠ সম্পদ। # ওসব শারীরিক অত্যাচারের চল গত শতাব্দীতেই উঠে গ্যাছে, যদিও খুন করে তাকে সহজেই এখন ন্যায়বিচারের নাম দেওয়া যায়। আমাদের সাবলীল মোড়কে কোনো রক্তের ছিটে নেই, শুধু মাথার পিছনের ওই পর্দায় যেটুকু, তাও খুব সন্তর্পণে আমি টেনে দিয়েছি (বউ তেমনটাই বলেছিলো। ও নিয়ে দ্বিতীয়বার মাথাও ঘামাইনি।) পয়সার বিনিময়ে যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বীকেই জ্যান্ত পুঁতে ফেলতে পারো তুমি অথবা পিষে ফেলতে পারো একাধিক মিথ্যে অভিযোগে যাকে সত্যি প্রতিপন্ন করতে প্রয়োজন সংবাদপত্রের একটিমাত্র উপযুক্ত প্রতিবেদন। # প্রথমত ধরো কালো-রা (অতঃপর দাসপ্রথা) তারপর ইহুদী (অতঃপর গণহত্যা) আমরা আধুনিক হতে পারি কিন্তু জুজু কার না দরকার! আতংকই সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। সেক্ষেত্রে অর্থনীতি অথবা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সামরিক শক্তিকে ভয় পাওয়ানোর অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাও। তবে সত্যিকারের যুদ্ধ আর রক্তপাত ঠেকিয়ে রাখো (এ ব্যবস্থাই বেশী মজাদার আর দীর্ঘমেয়াদী) । এ কথায় মহামতি ম্যাকিয়াভেলির কানদুটিও সায় দেবে। # বিরোধীদের 'নৈরাজ্যবাদী' হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া যাক। পরিষ্কার ভাগ করা যাক 'আমরা' আর 'ওরা' য়। তারপর 'ওদের' যেকোনো পছন্দমত একটা নাম দিয়ে ক্রমাগত বলা হোক, আমাদের এই তিলে তিলে গড়া সভ্যতা আর সংস্কৃতি ওরা ধ্বংস করতে চায়। মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাগে, ঘেন্নায় আমরা কেঁপে উঠি। নতুন জোটসঙ্গীরা চমৎকৃত হয়, আতঙ্কে গা ঢাকা দেয় শত্রুরা। মঞ্চে তখন বাছা বাছা শব্দগুলোয় তুমি জোর দাও- জোর দাও 'স্থিতাবস্থা', 'উন্নয়ন' আর 'স্বদেশ'-এর সঠিক উচ্চারণে। # প্রথমেই খবরের কাগজগুলো কিনে নাও। প্রতিটা ব্যাঙ্ক কে নিয়ন্ত্রণ করো। দরকারে ক'জন মন্ত্রীকেও কিনে রাখা ভালো। সেনাবাহিনীকে ইশারামত নাচাও। পুরনো বন্ধুরা হঠাৎ-ই সুর বদলালে, সর্বসমক্ষে তাদের অপমান করো। নিজের স্বার্থমত বদলে নাও দেশের আইন। এরপর ঘুমোও; এই এত পরিকল্পনা আর জটিল জটিলতর বিশ্লেষণের পর ভুরুদের-ও বিশ্রাম লাগে বই কি! # ইতিহাস বলে (অবশ্য ইতিহাস বরাবরই অ-নির্ভরযোগ্য কারণ অতীতের মহান পুরুষেরা বরাবর নিজের পছন্দমত তথ্যটুকুই শুধু নথিভুক্ত করতেন), মহামহিম ক্যালিগুলা নাকি অপরাধীর অভাবে শেষটায় নির্দোষ পথচারীদের হিংস্র জন্তু দিয়ে খাওয়াতেন। উন্মাদনা বিষয়টা কিন্তু ঝুঁকির। তাই বিকৃতি মাত্রা ছাড়ানোর আগেই আমি নিজেকে সামলে নিই প্রতিবার। কোনো অনিয়ন্ত্রিত ঝাঁকুনি বা ঝাঁপ নয়। আর তাছাড়া, পুরোপুরি নির্দোষ কাকেই বা বলা যায়? # 'গণতন্ত্র' শব্দটাকে প্রথমে প্রাইজ ট্যাগের মত প্রত্যেক বক্তব্যে গুঁজে দাও তারপর দেশের সবাই যখন ব্যাবহারিক আর বৈষয়িক সব চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছে তখন সবার অলক্ষ্যে শব্দটাকে উপড়ে সটান আস্তাকুঁড়ে পাঠাও। আপাতত সবকিছু হুবহু পরিকল্পনা অনুসারে এগোচ্ছে। আপাতত উত্থানই তোমার একমাত্র ভবিষ্যৎ। গোয়েন্দাবিভাগকে নির্দেশ দাও, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যে কোনো অযৌক্তিক অভিযোগ দায়ের করুক; সন্ত্রাসবাদ-এর মত হালফ্যাশনের কিছু। আর সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বটুকু আমার ওপর ছেড়ে দাও। তোমার মুখে আমি হুবহু ফুটিয়ে তুলেছি বেদনার্ত অথচ দৃঢ় এক অভিভাবকের আদল। ভবিষ্যৎ এখন পুরোপুরি আমাদের মুঠোয়। # আবার নতুন এক সকাল, আবার নতুন করে চিরুনি তল্লাশি। দেশনায়কের কোনো ছুটি নেই। ভেবে দ্যাখো, কত কত সহকর্মী, সাংবাদিক অধ্যাপক, বিরোধী দলনেতা, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী আর ছাত্রকে স্রেফ হাজতবাসের ভয় দেখিয়ে তুমি চুপ করিয়ে রেখেছো (বিশেষত পরিবারকে চাপ দিলে কাজটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহজ)! কিন্তু আজ রবিবার: আজ বিশ্রামের দিন। আজকের দায়িত্ব নাহয় তোমার পোষা স্বেচ্ছাসেবকেরা সামলাক। # ভাষণ, আরো ভাষণ। প্রত্যেকটা বাক্যকে নিখুঁত করে তোলা, প্রত্যেকটা কথার নিখুঁত পুনরাবৃত্তি; বার বার একই বক্তব্য, কিন্তু বিভিন্ন ভাবে। শ্রোতাদের আস্ত করো, মাথা নোয়াও; কোনো মহানায়িকার রত্নখচিত গাউনের মত ব্যাপ্ত এই আমি সৌজন্যের ভঙ্গীতে অবনত হই। টিভির পর্দায় তখন তোমাকে বিচক্ষণতা আর বিনয়ের জলজ্যান্ত মূর্তি বোধ হয় যখন তুমি আসলে বোঝাতে চাইছো যা করি তা তো সবার ভালোর জন্যই এমনকি অভিনয়-গুণে তুমি নিজেও মাঝেমধ্যে এমনটা বিশ্বাস করে ফেলছো। # অতএব দ্যাখা যাচ্ছে কেউ একটা চালু ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে লেখালেখি করছে। তোমার প্রিয়তম সাংবাদিকটিকে এবার ডাকো। বলো স্থিতাবস্থার স্বপক্ষে আহ্লাদে গদগদ সমর্থকদের মুখ থেকে প্রশংসাসূচক কিছু বাক্য রেকর্ড করা হোক। রেকর্ড করা হোক তুমি ছাড়া অন্য যেকোনো বিকল্পে তাদের সন্দেহ। দেশের মানুষের ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার অনিবার্য দ্বৈত নিয়ে সম্যক ধারণা থাকা দরকার। আঘাতের প্রত্যুত্তর আঘাত; অন্ধকারের প্রত্যুত্তর আলো; এক ভুরুর পাশে আর এক ভুরু; অশুভের প্রত্যুত্তরে শুভর আগমনের মত। # দরজার বাইরে অপেক্ষারত তোমার অগুনতি সচিব আর দেহরক্ষীদের কেউই জানে না এখন তুমি মোটেই জরুরী কোনো ফোনে নেই বরং ইন্টারনেটে বসে উইকিপিডিয়ায় ইতিহাসের কুখ্যাত স্বৈরাচারী-দের তালিকা থেকে নিজের নাম উড়িয়ে দিচ্ছো তুমি। শ্রেষ্ঠ স্বৈরাচারীরা তাদের শাসনকালে কখনই 'স্বৈরাচারী' চিহ্নিত হন না; এটাই তাদের বেশীদিন ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল। আর তাছাড়া, আমরা বরাবরই জানতাম, তুমি আদপে জনগণের পরিত্রাতা। # “A Lost Generation” I am singing banshee notes this morning as raisins and dates fall from my mouth. Thick bands of cerebral clouds build up their satin layers in my Great Beyond. There is too much traffic at the flagpole, I need to shout at the top of my voice GET THE HELL OUT OF HERE! But I’m too polite, afraid of the afterbite of acidic bile. There is much work to be done by the giants who hold me hostage, tying wedding ring knots in the bed sheets, strung from the not-so-ivory towers into the moat below. All of this can’t be real. I desire corn flake-baked chicken and sliding boards with wax paper dungarees for super slides into the next generation. They are dying out, too, before they have a chance to hatch from their eggs. I can help them translate their disfigured language but they don’t know how to listen. My mother anchors me from careless abandon, reminding me that genetics is the uncontrollable widget in the machine of lost dreams. “Carry on,” she says from her grave. “Live out your days until you know it’s time to close your eyes and pass on what’s left to the weak and unappointed.” # Waiting at PDX for a Dot-Matrix Printer to Access Me a Seat There are things that are burned forever into that portion of my brain that handles personal history. Like the printer that broke at the American Airlines service center. Such an ancient reptile. It was all that did we had back then. I could have missed my flight and been unable to show up at work for a second day in less than a month. There were phone calls and irate people, cursing the reps who were doing the best they could, stuck between a rock and dinosaur. I tasted salt water and lemon meringue pie. My hands smelled of salted caramel. My palms itched. I had to sit down to process a dream about swimming to my destination. The woman sitting in front of me was unraveling a sandwich with grilled onions, and the odor was becoming stuck in my clothes. She spilled her soda and chipped ice bounced off of the floor, up into my left eye. The agent called my name. “I’m sorry to tell you that you have been placed on another flight in Concourse D,” she said, handing me a limp card- board ticket with smudged ink. “I can’t read this,” I said. “How will the next agent be able to read it?” She pointed to her left like a weather vane. “It’s all in the bar code,” she said. “Hurry or you’ll miss your flight. Have a nice day.” # Iconography This and that superimposed upon beyond below in front of you with no heart felt me up so good. (Smiley face) Patton and FDR; Stalin and Hitler; Mozart and Babe Ruth; Elton John and Liza Manelli; Ruth Bader Ginsburg and Einstein; Caesar Chavez and Mickey Mouse; the Lone Ranger; John F. Kennedy and Mister Rogers; Julia Child and F. Scott Fitzgerald; Larry Flint and John Wayne. And all those hypocrites on Mt. Rushmore. We wait for status proceedings to bestow glory and fame upon ourselves, praying that our children make better than us; that Having It All is the gold standard; that a mortgage we can’t really afford is the panacea for our poor mental health; that a baseball bat crack on the skull is a close substitute for what that brings. (Say Amen, brothers and sisters.) Personalized license plates fill in the gaps like MuscleMan and 8UP; Gotitall and that silly fish thing. Baby on Board and My Child is an Honor Student. I Sell Avon; Applejack and LSU. (I’m smelling dead rats in your trunk.) The dollar bill frames itself for misconduct and doesn’t count anyway because it lacks zeros. We are the modern Romans, eating the lead in our aquifers, and telling our families to fend for themselves as we head to the casino for just one more pull at the $1 slots. প্রাগ ভ্রমণকালে দেখি হলুদ জড়ানো নারীদের। যারা তখনো ডিমের ওপর তা দিয়ে সন্তান উৎপাদন করত। তাদের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলাম হলুদ, ছড়িয়ে দিয়েছি প্রাগের রাস্তায়। এই রাস্তাতেই নেমে এসেছিল স্ট্যালিনের পুত্রদল। তারা ভ্লতভার তীর ধরে টগবগ করে চলে যেত৷ প্রাগের বাতাস আরো ভারি হয়ে উঠত। * এটা সত্যি যে, কুন্দেরা পড়তে পড়তে আমি প্রাগকে ভালোবেসেছি। শুরুতে প্রাগকে আমার নারী বলে ভ্রম হতো। অনেক রাত আমি প্রাগের হাত ধরে বসে থেকেছি। পরে প্রেমিকার নামও দিয়েছি প্রাগ। যদিও সে জানত না প্রাগ তার অল্টার ইগো। আমিও কি জানতাম! * প্রাগ থেকে খুব কাছে যে গ্রাম একদিন আমরা হাঁটতে হাঁটতে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমি ও প্রাগ। একজন প্রাগের হাত ধরে প্রাগের ভেতর দিয়ে যখন সে গ্রামে পৌঁছাই তখন ঈষৎ সন্ধ্যা। তারা যদিও শুনেনি প্রাগের গল্প, প্রথম প্রাগের হাত ধরার অনুভূতির কথা। আমি একেবারে গোড়া থেকে শুরু করি, তারা মুগ্ধ হয়ে শুনে সেসব। প্রাগের ভেতর প্রাগের হেঁটে আসার গল্প। * বৃষ্টি ছিল সেদিন। লুকিং গ্লাসে আমি দৃশ্যগুলো দেখে নিয়েছি। ঘোড়া নেই, তবে রয়ে গেছে টগবগ শব্দগুলো। আমি কুড়িয়ে নিয়ে ফিরে আসি ঘরে। ছুঁড়ে দেই বিস্মৃতির দিকে। যেখানে পুত্রগণ ঘুমিয়ে পড়েছে গল্প শুরুর আগেই। আমার প্রাগ ভ্রমণের গল্প। গাছের একটা পাতা ভেঙে যাচ্ছে যা খুব কাছ থেকে দেখছি, এই দৃশ্যকে তাপ দিয়ে যাচ্ছে একটা বহুতল ধ্বসা শব্দ । একটা ভাস্কর্য অনেক যুগ পর আরমোরা ভাঙছে । রোদে পোড়া কাগজের শব্দ । এসব কিছুর পর গর্তে ঢুকে যাচ্ছে চোখ । গর্তের গায়ে মাল্টিপল রিং - তোমাদের দেখে মনে পড়বে পেহেলা পিয়ার । তোমরা ওর ভেতর ঢুকে যাচ্ছো । কোনো রিঙেই ল্যান্ড করতে করতেও, পারছো না । তোমাদের চোখ মুখ বাষ্প-এর মতন ভ্যাবাচ্যাঁকা খেয়ে যাচ্ছে । আহা ! উদাসীন হয়ে যাচ্ছো তোমরা । প্যারালাল আরো গর্তগুলো থেকে, তোমাদের টাটা করছেন , আরো কিছু আলপিন । চমকে যেতে যেতে তুমিও সহজ হয়ে যাবে । আর ধীর রেখার মতন টাটা দেওয়ার হাত ওঠাবে । তোমারও মনে পড়ছে টেবিলের সমুদ্রবার্নিশের ওপর, মা একবার সাপের খোলস রাখতে রাখতে বলেছিলেন , " হাতে পরে নাও, হাআআআতে পরে, হাআআআআআআআতে পরে নাও, তুমি... " অন্ধকার নড়াচড়া করে অন্ধকার নড়াচড়া করে অন্ধকার নড়াচড়া করে অন্ধকার নড়াচড়া করে তৃতীয় ক্রিমিনালকে ইঁদুরের উপমায় ধরি । অন্ধকার । সে ছবির ভিতরে আটকে । মাঝেমাঝে আলো । কেউ ছুঁড়ে দিচ্ছে । ঈষৎ অন্ধকার । মাঝেমাঝে আলো । অন্ধ । নিয়ে নিচ্ছে কেউ । কার ? মুখে । অন্ধকার । মুখ থ্যাঁতলে যাচ্ছে । ইঁদুর চুমু খাচ্ছে বুড়ো আঙুলের ডগায় । চিৎকাররররর । দেয়াল অনেক সরে গেলো । বারটেন্ডার তার দাঁতের বন্ধুরতা নিয়ে দুর্গম হয়ে যাচ্ছেন । রাউন্ড টেবিল । স্বপ্ন । ঢেউ - এর মতন অনন্ত চেয়ার । স্বপ্ন । লাইটঅফ । লাইটঅন । স্বপ্ন । সরে যাচ্ছে দূরে । মূর্খ কাঁটা জাতীয় উদ্ভিদের মতন আমার রহস্যময় লোম নিয়ে আমি বসে থাকলাম । বৃদ্ধার হিসির মতন সাফ হবো কবে ? নোওয়ান : তুমি কি ওদের রুটি দিতে চাও ? তৃতীয় ক্রিমিনাল : হ্যাঁ । নোওয়ান : তুমি কি ওদের রুটি দিতে চাও ? তৃতীয় ক্রিমিনাল : হ্যাঁ ? তৃতীয় ক্রিমিনাল … কর্ণগহবরের মতন ভুলভালাইয়া । লটারির টিকিটের মতন থেকেও, না-থাকার মতন । না-থেকেও, থাকার মতন । তার ধরন সকলকেই উত্তেজিত করে । তার নাম করে অন্ধকারে কয়েকটা হাতির দাঁত ঝড়ে পড়ে । ধীরে। সানাই, সানাই বাজে একটানা । ভৈরবী … তোমরা পতিত হচ্ছো । তোমরা পতিত হচ্ছো আর নেপথ্যে কাগজের ভাঙ্গচুর তলোয়ার খেলার মতন । পড়নিন্দার রঙ কোবাল্ট ব্লু । ভুলে যাওয়াগুলো ফ্রান গ্রিন । স্যাড মাইরি কোবাল্ট ব্লু । বিলাসী ফ্রান গ্রিন । গুনে,গুনে নিচ্ছো । থলথলে দুদুর মতন কয়েকটা গোধূলি । গুনে, গুনে নিচ্ছো । হাত পা । পায়ের পাতা হাতের তালু দশটা আঙুল দশটা আঙুল । জিভ আউট । জিভ ইন । নাকের দুটো ফুটো তুমি সাঁতার পালিয়ে বল খেলতে যেতে ট্রেনের পিছু নিতে নিতে ট্রেনের পিঠে নিষ্ঠুর ক্রস । বিছানা চাদর ডিফিকাল্ট । ডিফিকাল্ট । ফোনের ওপারের মানুষ তোমার আত্মা নয় । ফুট পাল্টাতে পাল্টাতে তোমার খিস্তি পাল্টায় । কাঠে যেন কাঠ ফাটলো । কাঠে যেন কাঠ ফাটলো । মনেটের স্ক্রিমারের ভিতর থেকে অন্ধকার বের করে ভাতে মেখে খেতে চেয়েছো আজীবন, তুমি গিটারের পেটে বিদ্যুৎ এর মতন চলাচল করতে চেয়েছো, পায়খানার পান তোমার মনে হয়েছিলো খোদিত বাটাফ্লাই । যাদের নাম ধরে ডাকলে,তারা সাড়া নিলো ? কাঠে যেন কাঠ ফাটলো । কাঠে যেন কাঠ ফাটলো । সাড়া নিলো ? ১ গর্দভের ভিড়ে,কারা যেন ফেলে আসে সূর্যের নমুনা তিতির থেকে দূরে সাময়িক হল যে সর্বগ্রাহী পঞ্জিকা তার সম্ভাবনা আমাদের দিকে হাত বাড়ায় হে সংক্রান্তি ভেজানো রমণীর আঁচল তোমার কলমকারি থেকে ঝরেছে মাসুলিপত্তনমের হাওয়া কিন্তু কুটিরের মাটিতে, যারা ফেলে এসেছিল কালির নিটোল রঙ নির্মাণ কি তাদের অনিকেত করেছিল কোনোদিন? ২ বায়ুর প্রচার,তোমাদের ভূগোলে বসে আছে দ্রাক্ষা গুণের পশু... তামাম শব্দের তুলনায় বিকেল হলে সমুদ্রতট থেকে ফিরে যায় যোগীনির কৈশোর অথচ গান ভেঙে ছড়িয়ে গেছে যে মহাপ্রস্থান বালির জিজীবিষায় আমি দেখেছি তাদের, যেখানে খেজুর আর জাহাজের সম্পর্কে তুর্গোনিসেরা বেচে ফেরে কাফনের বিভ্রম! ৩ আয়নার শখে আয়না দেখে না কেউ এই নিঃসঙ্গ বেতফলের দেশে ঈর্ষা বলতে ছেয়ে গ্যাছে গপনিক মতিভ্রম... দূর দেশের ট্রেনে যেমন ঢুকে যায় দু'চারটে কাল্পনিক ইঁদুর সেখানে মানুষও হয়েছে মৃগয়াপ্রিয়! স্তবকের পেটে চেয়ে দেখেছে রক্তাক্ত তুলোর বিষাদ তবু বাদামী তীর্থের রাস্তায় হেঁটে যায় অকাল বৈধব্যের শফেদ রেণু যার কাছে, বরোজে আগুন লেগে যাওয়া মানে- জীবিতের প্রবণতা অথবা প্রাণবন্ত রেত ৪ আলোর বেলায়, প্রোথিত পায়ের নিচে থাকে মৃত মহিষ তবু বেলা গড়ালে আতর বাড়ে, বালিকার স্বাস্থ্যে ভেঙে যায় জলমাটিমানুষের শ্বাস আমরা দেখেছি চতুরতার ভিড়ে, জড়িয়ে যাওয়া চুড়ির প্রস্তাব! স্থির না হওয়ার কথা নিয়ে হেঁটে গেল বাধ্যত আর্যাবর্তের শোভা শিরিন থেকে ক্ষয় হয় মানবকালীন চর্বির মাহাত্ম্য এ নদীমাতৃক দেশের ফসল! হাওয়া দাও,স্নায়ুর অন্ত্যযমকে... আর বনভূমি ছেড়ে বেরিয়ে আসুক অবয়য় ভেজানো চাবুকের বাগান ৫ স্নায়ুদৌর্বল্য দেখা দিলে ঘুমিয়ে যেতে বলে বোন অথচ আরণ্যকের মাঝে পড়ে থাকে আমাদের অসুখ একটা তিতিবিরক্ত মাখা হলে, যেসব অভীপ্সা ভেঙে যায় করতোয়া জলে,তাদের চোখ ভুলে গেছে কি কেউ? আমি বুঝতে পারি না প্রশ্নের পাশাপাশি উত্তর রাখলে কেন চিহ্ন উড়ে যায়, মানুষের সরল ভাবাবেগের মতন! উবু হয়ে দেখি ভবিতব্যের আঁকা লঙ্গরখানা যেখানে অনুকার শব্দের মতো অপ্রয়োজনীয় নয় কেউ ৬ খেতির আগে জুড়ে যাচ্ছে বাড়ির শব্দ তবু সমাজবাদের যে সমস্ত বিলাস ছিঁড়ে খেল মনগড়া ইতিহাসের পেখমে তার কোনো ভূমিকা নেই পিচ্ছিল হতে গিয়ে দেখলাম,কিছুই হল না বনের ছায়া মরে গেল ছোট ঘাসের মাত্রা শিশিরে একটা উচ্চারণ হয়, আলেয়ার নখে আর জঙধরা তলোয়ার থেকে বেরিয়ে আসে মায়াজীবের পান্থশালা ৭ মাছ আঁকতে আঁকতে হারিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের ফেনা তবু কেন সব সম্পর্ক এমন হয় না, যা টিকে যায় মথেদের চলাফেরায় প্রখর হল সামান্য নতজানুর দেশ এ মানব! বিস্ময় বলতে দেখেছো, গত সন্ধ্যার আকাশে ভেসে আসা রামায়ণের কথন। বাতাস ফাঁকা হয় এখানে কুমারী পেতলের মীমাংসায় আমরা কেন বুঝে নিতে পারিনি, তেমন করে খণ্ডচিত্রের কাঁটায় বিষণ্নতার দাগ পায়নি কোনো স্বর্ণমৃগ এযাবৎ ৮ মায়াফল। পিঠের মুদ্রায় ক্ষয়ে গেছে অপরিসীম কাতরতা আমরা দেখিনি ব্যাঙের পদচারণার বেলায় স্বপ্নের তণ্ডুল থেকে ছড়ানো আলোর প্রবেশ এ মায়াবী তীর্থযাত্রীর দল! তোমাদের নৌকোয় অসংখ্য চন্দনের প্রলেপ,ভারী করেছে ভক্তির তর্জমা আমরা হারিয়ে যাই... স্বল্পস্থায়ী স্নানাগারের পোশাক নিক্ষেপে যেখানে ভিজে কাপড়ের পূণ্যে প্রসাদ ডিঙচ্ছে কেউ ৯ কৃষ্ণপক্ষের কালে আমি বেচে দিয়েছি ভূমিরূপের অসম দস্তানা প্রক্ষালণ হতে চিরতরে মুছে গেল যাঁদের নাভিশ্বাস তারা শত্রুর মুখে পড়েছে বারবার মুরগীর খাদ্যদানা ছড়িয়ে থাকতে দেখি না আজকাল মাঠের কিনারে মরে যাওয়া ঘাস তবু উজবুক হয় কেন? দালাল বলে যারা সমাজে বদনাম হল- তাঁদের খিদে আজকাল মুরগির থেকে বেশি নয় দিনের বেলার বাড়ি রাতে এই বাসাটাতে আমরা থাকি না এটা শুধু দিনের বেলার বাড়ি খাবার টেবিলে ভরা খাবারের বেশিভাগ দেশী ছোটোমাছ, শুকনা কড়কড়ে ভাত পাতলা বেতের ছাল সদৃশ মসৃণ প্লাস্টিকের ফিতাগুলা তুমি ছোটকালে দেখতে পেতে ওরা চকবাজারের মোড় থেকে উড়ে উড়ে আসত সেই ফিতা দিয়ে তৈরি কিছু আরাম কেদারা মতো চেয়ারের মতো যারা টেবিলের দিকে পিছ ফিরে ফিরে টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে ডুবে আছে ওরা ফলে টেবিলে আমরা যত কথা বলি না কেন সেগুলি কারো কাছে যাবে না আমরা বসার ঘরের রুম - সেখানেও কথাবার্তা সেরে নিতে পারি এই বসার রুমটা হলো জুতা খুলবার রুম কিন্তু এত আলো আসে পুরা বাড়িটার পশ্চিমের দিক বরাবর টানা বারান্দা মতন আছে টানা জানালা ফলত গরম ভীষণ । পুরা গরমের কালে উজ্জ্বল রোদের মধ্যে জুতা খুলে নিতে নিতে চলো অতীতের কথা বলি আমরা, কেমন আছো ও সামান্য হ্যান্ডশেক শেষে ভাত খাই শুকনা কড়কড়া টিভি দেখি রাতে এই বাড়িতে থাকি না ঠিক কোথায় আসলে থাকি সেটাও জানি না ফুলের রঙিন রেণুগুলি আমাকে সজোরে জাঁতা দিয়ে ফুলের রঙিন রেণুগুলা আমাকে সজোরে জাঁতা দিয়ে গাড়ির বনেটে ফুলের রঙিন রেণুগুলি দুপুরবেলাতে ওরা কক্সবাজারে বেড়াতে গেছে খুব গাছের কষের সাদা দগদগে রোদে যেই সৈকত শহর ভাসতে থাকে প্রায় প্রায় একটা বাতাসের প্রবাহের মধ্যে থাকে আর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিদের কিছু একটা ঘটনা আছে বলে শুনছিলাম ধরো প্রতিটা জনেকে মনে হয় জ্ঞানকেন্দ্র ওরা সানগ্লাস পরা ওরা দুপুরবেলাতে অত্যধিক কড়া করে ভাজা মাছ খায় সবুজ প্লাস্টিকে ঢাকা হালকা টেবিলে অসংখ্য বিয়েবাড়ি আরও কিছু আছে হয়ত ফুলের রেণু ঘটিত বছরের নির্দিষ্ট সময় মোটামুটি বাঙময় পৃথিবীর সমস্ত মিটিঙগুলা হাঁসফাঁস করা চলচ্চিত্র হলে তুমি জোর দিয়ে গাড়ির বনেটে চেপে রাখা ফুলের রঙিন রেণুগুলি তুমি রূপালি জরুরী ফরটি ফাইভে তুমি যখন বেড়াতে গিয়েছ সাফারি স্যুটের ছাই সুতাতে চমকে গিয়েছ দুই পারেতে আনত গাছ ভিতরে মাটির বাড়ি সেখান থেকে উঠে আসে চরম আধুনিকা তারা সবাই দাঁত কামড়ে নড়াল বাড়ির ভিত তুমি তখন সবুজ তুমি কলাপাতা রঙ ডাটসান অথবা একটা মেরুন-বরণ আশি দশকের গাড়ি শিয়াল সবাই । গাড়ির ভিতর পান সুপারির ঘ্রাণ তুমি হয়েছ চটুল তুমি মেঘনা পাড়ের বণিক কেমন ধূসর সরোদ এবং পুরান বাংলা গান তখন তুমি শুয়োর তুমি গোঁয়ার যেন এক নানারকমের কনস্ট্রাকশনে বললে কাটি সাঁতার চলো সেই আহবানে ডুবে মরিছে বিদেশ দেশের বান্ধব সেই বাতাসে ছুটে মরছে চৌকা রসিক যত চশমা বেণীতে ব্যান্ড বেঁধেছে কিশোরী ব্যান্ডটা গোলাপি বেণীর গায়ে তোমার ঝলক রূপালি জরুরী ঘুমের থেকে উঠে অনেক রোদের মধ্যে যাব আমরা ঘুমের থেকে উঠে অনেক রোদের মধ্যে যাব আমাদের চোখগুলা পাখি আর মুঠির ভিতরে অর্বাচীন ধাতব ফুলের ডাঁটা আমাদের রোগীরা সবাই বালিশের ওয়ারের উপরে নকশা আমাদের ঘুম থেকে ওঠাগুলা চোয়াল উঠানো খালি চোখের ভিতরে চকচকে তৃষ্ণা উচাটনতা একটা মলিন একতারার মতো বাজতে থাকে একঘেয়ে কিন্তু সুন্দর ফুলগুলি চেহারা চেহারা তোমার চেহারা আর আমার মুখের বাদামী মার্বেল মতো ঘোড়াগাড়ি গোল টেবিলটা খুব করে কড়া রোদে চোবানো নীরবতা হয়ে গাড়ি, বাস, ট্যাক্সির সারাদিনের অত্যাচারের পরে উঠতে থাকা ভাপ *** আমাকে পেপার দাও পেপারের অত্যধিক রোয়া উঠা গায়ে গায়ে দাও বাদামী কালির শুষে নেওয়া যা আছে সমস্ত কালি করা মুখ জিভ কাটা সকালেকে কেটে কেটে নয় ভাগ করলে সবচেয়ে কড়া ডোজ-টা আমি নিব পাঞ্জাবীর খোলা বোতামটা আমি নিব খুব করে মানুষের ঘ্রাণ মানে বাঁধানো বাইরের চত্বরেতে তরে তরে করমচা লাল করে ফোটা হলুদের পোঁচে টানা শাড়ির মাড়ের ঘ্রাণ নিব। টানা ছাদের উপরে পুরা মহাকাশ থোকে থোকে নীল হয়ে ফুটে আছে পিঁপড়ার ঢিবি হয়ে বইয়ের ভিতরে নাইটিংগেল পাখি তোমার চশমা ও পান সিরামিকের পিরিচে সোনালি বর্ডার *** ইটের উপরে কাঠ। কাঠের উপরে মাইক্রোফোন পুরাটা দিনের মধ্যে সাজানো সকাল শন শন লম্বা গাছ বহে, বহে পাটা ও শিল যাবতীয় রান্নাঘরে এই কথা শুনে বস্তির ছেলেটা মাথা কুটে মরে ওর আক্ষেপ ছিল যে সেই ব্রিজ কেন তখনও হলো না ম্যাক্সির টানা ক্রিজের গায়ে কালো দোলনা চল দুলি আর দুধ খাই পঞ্চাশ ও একশ টাকা লিটার পুরাটা দিন পুরা বছরগুলা কাঁপতে থাকা ল্যাম্পপোস্টের তার আমাকে মর্মাহত মাটির ফাটা ফাটা খরা-কালীন দগ্ধ তামা ও ব্রোঞ্জ দাও মোটামুটি একশো বা দুইশ বছরে একটা করে ফেলতে পারি পাও ভালো চোস্ত জামা পরা বিকালের মেয়েগুলি ভালো চোস্ত জামা পরা বিকালের মেয়েগুলি একটা জীবিকা অর্জনের চেষ্টা করতেছে আর কিছু না ইংরেজিতে বলা যেতে পারে দে আর ট্রায়িং টু আর্ন এ লিভিং তবে আমি বাংলাতেই মুড়ি খাওয়া দেখি একটা প্লাস্টিকের গোল বাক্সে ভরা ভাতের বদলে মোটা মানুষটা দুপুরের ইদ্দিশ ভাষাতে দেখি তোমার মস্তক-চূর্ণ ছোপ ছোপ লেগে থাকে আধা ব্যস্ত গলিতে প্রচণ্ড বিকালের ছোপ গড়াগড়ি যায় মোটামুটি আড়াই হাজার বছর আগেকার ওল্ড টেস্টামেন্টে পুরা আধুনিক কবিতার দুই একটা লাইনের লাবণ্য মুখের দুইপাশ দিয়ে গড়ায়ে পড়ার সময় জীবিকা বসে আছে তৃতীয় তলায় আমি তার সাথে কথা বলতে যাব কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘড়িঘরের দিক থেকে ভেসে আসা বসন্তের ছোবল মারা হাওয়া বুকের মধ্যে নিকষ কালো গর্ত করে দিয়ে ডাঙ্গার উলটোদিকে পালে ধাক্কা মারতেই তাড়াহুড়ো করে পাল নামানোর তোড়জোড় শুরু হল। বসন্তকালের হাওয়ার মধ্যে কিছু একটা কালো ভেল্কি আছে - মন বড়ো হুহু করে ওঠে। দুরে ঢিপি ঢিপি কালো অন্ধকার মাখা নিস্তব্ধ জঙ্গল, নৌকায় কোনরকম সুর-তালের সঙ্গত ছাড়াই উচ্ছ্বসিত নাচের পদধ্বনি, নিঃশ্বাসের হুশহাশ, আনন্দ-মাখা অর্ধোচ্চারিত শব্দ। রোশন মিঞ্জ-কে এক-পেগ কড়া করে বানানো ওল্ডমঙ্ক হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম 'তোমাদের গ্রামে সব্বাই নাচতে পারে? মানে কোনও নির্দিষ্ট ঘরানার নাচ?' প্রবল বৃষ্টিতে আমার ঘরের বারান্দায় আটকে পরা জনৈক সুইগি-ডেলিভারিম্যান সপাটে উত্তর দিলো, 'না স্যার, আমাদের কি আর অত লেখাপড়া, মাস্টারমশাই ওসব আছে? যা মন চায়, তাই নাচি। সাপের লড়া দেখে নাচ পায়, কিম্বা এইরকম বৃষ্টিতে নদীর পাড় ভেঙ্গে পরছে সেই দেখে নাচ পায়। একবার তো পাথরপাড়া ছাড়িয়ে আমার মামার গ্রামে তিনি এলেন...' 'তিনি মানে?' 'বাগ গো স্যার।' 'বাঘ?!' 'হ্যাঁ গো। সেই বাগ দেখে আমার ঠাকুমা এমন নাচলো বাগও পালিয়ে গেলেন। তারপর খুব ঘটা করে পুজো হল।' প্রবল বৃষ্টিতে দিকনির্ধারণ করা সমুদ্রের দেবতারও অসাধ্য। মেঘ আর তাঁর বৈরিতার জন্যেই তো এত বৃষ্টি। নৌকার ক্যাপ্টেন, ছিটকে আসা কাদা মুছে তিনি বললেন জঙ্গলের বাইরেই তাঁবু লাগাতে। ইলশেগুঁড়িতে আগুন জালানো বড়ো দায়। দক্ষিণ-পূর্বের হিন্দু-রাজা তাদের তাড়িয়েছে রাজধানী থেকে। সদ্য পবিত্র রাজধানী বানিয়েছেন রাজা জঙ্গল কেটে, বাঘ তাড়িয়ে। তিনি, তাঁর পূর্বপুরুষ দের মতই বিরাট মন্দির নির্মাণে নিয়োজিত হয়েছেন যা পরবর্তীকালে প্রকৃতির কোলে হারিয়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ফরাসী কলোনাইজারদের কাছে আঙ্করভাট হয়ে থেকে যাবে। নৌ-সফরকারীদের বাং-মাছের মত শরীর, কালো আবলুশ-কাঠের মত রঙ, অজানা ভাষা আর প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়ার অপার্থিব ক্ষমতা তাঁর সনাতন হিন্দু ধর্মের আচার-অনুচার, শত্রুমিত্রের সংজ্ঞায় আসছিল না। যখন লড়াই হয় আমাদের নজরের বাইরে তখন দেবতারাও বুঝতে পারেন না কোন পক্ষে থাকা উচিত। তাই হয়ত সুন্দরবনের বসতি গড়ার দিনে নৌ-সফরকারীদের দেশ ছেড়ে আসার অসহনীয় দুঃখ এবং রাগ দিয়েও বাঘ-কুমিরের হাত থেকে চিরকালের জন্যে রক্ষা করলেন। বা হয়ত এই মানুষগুলো নিজের সুরক্ষা আর দিনযাপনের জন্যে প্রকৃতির সাথে হাজার হাজার বছর ধরে মানিয়ে নিয়ে, নিজের ওজরমত তাকে নিয়ন্ত্রণও করতে পারত। কারণ জঙ্গল তো তাঁদের নিজেদের-ই। তারাও জঙ্গলের-ই। কাদাখোঁচা কিম্বা মিষ্টি জলের কুমির আর তাদের কোন তফাত নেই। মেটে ইঁদুর সুনামি, ভূমিকম্পের গন্ধ পায়, তারাও পায়। সভ্যতা শুধু কর্ম-সংস্থান করেনি তাদের মহাজনের খেতে। তারা গন্ধ শুঁকে মিথ্যেবাদীও চিনে নেয় এখন। পরের কয়েকদিন ধরে ওরা বসতি বানালো সুন্দরবনে। দুর দিয়ে বাদাবনের দিকে মেছোনৌকা যেত, তারা জলের দরে চিংড়ি-কাঁকড়া বেচে আসত। যে চিতি-কাঁকড়ারা গহন বর্ষার দিনে ডিম পারতে আসত বালির খাঁজে তাঁদের কানে কানে ফিসফিস করে দু-কান কথা বলত এরা। জালবন্দী কাঁকড়াগুলি নিস্তব্ধ হয়ে দেখত কোটি কোটি চারা সার বেঁধে কাদার উপর দিয়ে নোনাজলে ভেসে যাচ্ছে নতুন জীবনচক্রের উদ্দেশ্যে। জোছনা কুড়ে খাচ্ছে বালির উপর পদচিহ্ন। পরের বর্ষায় তারা আবার ফিরে আসবে। আর ছিল গুয়ামৌরী। তাদের গ্রামে এই গুয়ামৌরী আগে হতোনা। সমুদ্রের দেবতা নাকি তাঁর স্ত্রীর শরীরের মেছো গন্ধ সহ্য করতে পারতেন না। তিনি সর্বদাই বিমর্ষ, তাই এই অঞ্চলের উপকূল ঘিরে রইত ঘন মেঘের আড়ালে। প্রতিদিন সূর্য ডোবার আগে অঝরে বৃষ্টি হত। তখন জঙ্গলের দেবী তাঁকে এই গুয়ামৌরী এনে দেন, তাঁদের প্রাসাদের বেডরুমে ঘিয়ের সাথে জালানোর জন্যে। অন্তর্বাসে রাখার জন্য। পরে এই গুয়া মৌরীর আশ্চর্য গন্ধের কথা জানাজানি হওয়ায় দেবতার পৃষ্ঠপোষকেরা টা ব্যাবহারের সুযোগ পায়। তখন রাজপ্রাসাদের এক বাবুর্চি খানিকটা গুয়া মৌরী চুরি করে রাখে যাতে পরে স্মাগল করতে পারে। ঘটনাচক্রে একদিন মাতাল অবস্থায় রান্না করতে করতে ভুলবশত খানিকটা গুয়া মৌরী মাংসের সুরুয়ার মধ্যে পড়ে যায়। অজানা মিষ্টি গন্ধে ছোটবেলার স্মৃতি মনে পরে বাবুর্চির। হঠাৎ শীতের কুয়াশা নেমে আসে, তার মাঝে ভোরের সূর্য ওঠার নরম ওম চারদিকে ছড়িয়ে পরে। সারা রাত ধরে ফসল কাটার ক্লান্তির সাথে গরম গরম খাবার আর বিশ্রামের কথা মনে পরল। ম ম করছে তখন সদ্য কাটা ধান আর মাংসের সুরুয়ার গন্ধ। উঠানের কোনায় গুড় জ্বাল দেওয়া হচ্ছে। চালের রুটি বানানো হচ্ছে। সদ্য কাটা মাছের টুকরো লাফাচ্ছে কুয়োর ধারে। ভীষণ আরামে ঘুম এসে গ্যালো তার। গুয়া মৌরী খাবারে দেওয়ার রেওয়াজ তখন থেকেই। রাজার তদবিরে উত্তর-পূর্বের আগ্নেয়গিরির দিকের জঙ্গলে অভিযান করা হল। প্রাণ গ্যাল কতো লোকের, কিন্তু শেষ পর্যন্ত খুঁজে আনা হল গুয়ামৌরীর চারা। প্রচণ্ড গোপনীয়তার সাথে চাষ করা হল সেই চারা। শীতের শুরুতে ফসলের বন্যা হয়ে গেল। সমুদ্রের ওপারের বেদুইনরা বহর নিয়ে এলো, সোনা-মাণিক্য দিয়ে কিনে নিয়ে গেল গুয়ামৌরী। সেই দেবতাদের দুর্লভ গুয়ামৌরী তারা নৌকা করে এনেছিল তাদের নতুন বাসস্থানে। নতুন মাটি-জলে গুয়ামৌরীর আচার আচরণ গেল বদলে। লোকে বলল, গুয়ামৌরী বিষ! এর স্বাদে-গন্ধে মানুষ পাগল হয়ে যায়। গুয়া মৌরীর প্রভাবে মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়ল নাচের রোগ। ছেলে-বুড়ো-মেয়ে-ঝি দরজা খুলে রাস্তায় নেমে পরল নাচতে নাচতে। বসন্তের আলোয় হিজাব ছিঁড়ে দলে দলে মেয়েরা নাচতে নাচতে ঢুকে পরল পুকুরপাড়ের মসজিদে। যাদের মন্দিরে ঢোকা মানা তাদের নাচের চোটে কেঁপে উঠল দালানকোঠা, নাটমন্দির। জমিদারের কোতোয়ালি জমে উঠল গরীব অপরাধীদের নাচে। জঙ্গল নেচে উঠল কাঠুরিয়া, মৌলীদের সাথে। লাটসাহেবের কর্মচারীদের বাংলো ভয়ে কেঁপে উঠল নেটিভের আনহোলি নাচে। নীল আর পোস্তর খেত নেচে উঠল। বন্দর নেচে উঠল। রোদ্দুর নেচে উঠল, রাতের ঝিঁঝিঁর ডাকও নেচে উঠল। যতক্ষণ ক্লান্তি নেই ততক্ষণ নাচ। সুইগি-ডেলিভারিম্যানের বক্তব্য অনুযায়ী গুয়ামৌরী থেকে ছড়িয়ে পরা নাচের মহামারীর কারণে সরকারের দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপের যথেষ্ট অসুবিধা হয়, তাই পুলিস-প্যারামিলিটারি পাঠিয়ে সমস্ত গুয়ামৌরীর ফসল জ্বালিয়ে উজাড় করে দেওয়া হলো। কিন্তু নাচের রোগ এখন কিছু লোকের সারেনি। বরং বংশপরম্পরায় রোগ বয়ে এসেছে তারা। যখন তখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। একলব্য-কে
এই যে পুরনো আগুন চারিদিকে নাচ, স্বরধ্বনিগুলি; এদেরও কি মরে যেতে আছে! নদীর সুঘ্রাণ জল উপচানো আকাশের ছায়া ফেরে অই সুরে সুরে হাজার যুগের পার ওড়ে লাল জায়মান ছাই জাদুকলিজার এহেন রাতের কোলে শুয়ে দেখি দুজনাতে হাসিখেকো আলোর চেতনা ধাপকাটা চাঁদের আবাদে ছবি তোলে অজ্ঞান নিথর চোখের হে ভাস্কর শিরোমণি, আবেগ তস্কর দায় এ যুদ্ধ যুঝতে হবে হিমচেতনায় প্ররোচনা জুমছাই এখন আর ওড়েনা সেভাবে দখিনায় কালচে হয়না আমাদের করতল সমস্ত টংঘর উলটো হয়ে ঢুকে পড়ছে লাজে রাঙা টিলার জঠরে ঘরোয়া অস্ত্রের বুঝি শেষ হয়ে এল দিন... এক চোখ হারানো শিশুটিকে একটা স্নাইপার উপহার দেয়া বড় প্রয়োজন আজ আমাদের মৈথুন-মন্থনে উঠে আসা বড় প্রয়োজন সাতচল্লিশ ছাপ্পান্ন আর অসংখ্য আদমখোর মাইনের মাদী চারা চল' ছাড়ি, এইবার ছাড়ি বিক্রমগড়ের বাড়িভাড়া সাহস নিয়ে কথা নাই বা হল সামনে বা পিছনে নয় পর্দার বিরুদ্ধে নগ্ন হতে চাই সাবিত্রীকে চেনো? চিত্রনাট্যটা একবার আগে পড়তে চাই, একা একা আমি তো আঁতকে আঁতকে উঠি ঘুমোতে পারিনা নিজের কাফন তুলে দেখি আহা নাকছাবি, ভ্রুতরাই সাহস নিয়ে কথা নাই বা হল আপামর নগ্ন, পর্দা আপাত উপদ্রুত... প্রতিটি শরীর; আমার গোধূলিরও এই ভাব সে আমার পরিচিত, প্রিয় ইনশাকে ঝোরা দিয়ে লাশ বয়ে যায় না চেয়ে রয় সারারাত যেন মহাকাশ হিমানীর সন্তর্পণে শোণিত সুরেলা রাখে তার স্বাধীনতা সিলি সিলি বয় নিকষ নিমীলিত উপত্যকায় দিকে দিকে কোজাগর ভাবী শহীদেরা শততারে কোটি কোটি জোনাই ছড়ায় ' জীবনে প্রথম জাহাজডুবির পর এখনো আমার চোখ নির্বিকার ও সাদা ; সিল্কমিশ্রিত রমণীরা অন্তরীপ শেষ ধাপে নেমে যায় । আমার কোন প্রত্যাশা নেই । সম্পূর্ণ স্বাধীন । আমি ওদের লাল কার্ডিগানের দিকে তাকিয়ে থাকি ।' - কন্যাকুমারী ১ / প্রদীপ চৌধুরী জানুয়ারি ৩ , ১৮৮৯ একটি ঝোড়ো দিনে নিৎসে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন ইতালির তুরিন শহরের রাস্তায় । হাঁটতে থাকেন পোস্টঅফিসের দিকে কিছু চিঠি আনবেন বলে। পথে দেখতে পান এক সহিস তার সাঁজোয়াগাড়ির সাথে বাঁধা ঘোড়াটিকে তুমুল বেত্রাঘাত করছে । এই দৃশ্য দেখামাত্র এক অমোঘ টানে নিৎসে দৌড়ে গিয়ে প্রাণীটির গলা জড়িয়ে ধরেন এবং চাবুক খেতে থাকেন । নিৎসের দুচোখ জলে ভরে ওঠে । শোনা যায় আহত এবং দুঃখিত নিৎসের উদ্ধার করেন তার ইতালীয় গৃহকর্ত্রী । যারা পরবর্তী সময়ে নিজেদের পরিবার তথা ফিনো পরিবারের দিনলিপিতে জানাবেন নিৎসে এই ঘটনার পর থেকেই অদ্ভুত আচরণ শুরু করেন । তিনি পিয়ানো বাজিয়ে টানা একঘন্টা সুরতালবিহীন গান গাইতেন । নেচে উঠতেন ঘরময় জামাকাপড় ছাড়াই এবং সবচেয়ে মজার যেটা আধমোড়া নোটগুলিকে ফেলে দিতেন আবর্জনার বাক্সে । তুরিনের ঘোড়া নিৎসের শিরা উপশিরায় উন্মাদনা সিম্ফনি বাজাতে সক্ষম হয়েছিল । এখন আমরা নিৎসে মহাশয়কে কিছুক্ষণ উহ্য রেখে কথা বলব । অনুসন্ধান একটি ইভেন্ট যা চক্ষু ও অস্তিত্ব জিইয়ে রাখে । থিওরির দিক থেকে আমাদের মত সুখী আত্মার দাঁত নিয়ে কোনও সমস্যা নেই । ঈশ্বরের মৃত্যু থেকে উনি আমার সাথে কথা বলছেন । প্রত্যেকটি চেকিং পয়েন্টে হয় তুমি নিজের কাঁধে ভর দিচ্ছ নচেৎ ঈশ্বরের । পপকর্ন সহযোগে উপভোগ করছি মবলিঞ্চিং ও ভূমিপূজন । কমরেডস , আমার তো মনে হচ্ছে কারওর ফিরে না তাকানোই ভাল । অথচ ত্রুটির অন্ত নেই সিমপ্যাথিরও । নায়কোচিত কবচকুন্ডল খসে যায় । ক্যাটেগরিক্যালি স্বীকার করছি কাঁচা কথা আমরা বলতে চাইছিনা । পুলিশের ব্যপারটাও একই – সামাজিকতার শিকার । দুর্বোধ্যতা , নিজেই নিজের ক্রাইম মনে হয় এবং যখন সেটাকেই এড়িয়ে চলি ওটার সাথেই আরো ঘনিষ্ঠ হই , সমষ্টিতে । অথচ এই লাভমেকিং বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আমার মগজ যে কোন সময় খুনখারাবির দিকে ঘুরে যেতে পারে এবং দুঃখের ভিতরে ডুবতে ডুবতে ব্লার হয়ে গিয়ে দুঃখকেই প্রত্যাখান করছি । তারপরেই মজে যাচ্ছি প্লেস্কুলের নাচানাচিতে । কিছুই যে নেই তাই ঈশ্বরের উপস্থিতি জানিয়ে যাচ্ছে । মেয়েটির গায়ে আঁটোসাঁটো সোয়েটার । লজিক্যালি যদি অনির্দিষ্ট যে কোন কিছুই অশুভ ডাইনির মুখোশ লাগিয়ে ঘুরছে । আমি যখন দাঁত কেলিয়ে হাসছিনা বুঝবে আমি লাফটার উইট এসবকে কিছুক্ষণের জন্য কান ধরে ক্লাসের বাইরে বার করে দিয়েছি । ব্রহ্মান্ড বেশ নম্র বলেই জানি ; আমার সরল জোকগুলো তা বারবার প্রমাণ করে । ভগবান খচে গেলে মাইরি হেব্বি হাসি পায় । অ্যাকশন দৃশ্য মানেই পুরুষমানুষ কোথায় উড়ে যাচ্ছে কোথায় কে জানে । যুদ্ধের কিছু আগেও স্বপ্নে আমায় আটকে রাখতো আলোর ব্যারিকেড । এবং প্রথমত ও বিশেষত আমি নিজেকে দেখেই হাসি প্রদীপ চৌধুরীর ' আমি জানি জেমিনী সার্কাস ' কবিতাটি পড়া যাক : ' তুমি সহবাস চেয়েছিলে , আমি সহমরণের কেউ নই , এ শহরেরও আমি জননী নই , একই জামিমে আমি ডেকে আনি উন্মাদ , নেংটো , রাগে অন্ধ জারজ সন্তান ও পিতা ; দুজনেই সুষুম্নাগ্রন্থির বকুলে ঢেকে দেয় নাভিকুন্ড জরায়ু আমার। সন্তান ও পিতার আমি কেউ নই , খেলা হয়ে গেলে ওরা একই বোতল থেকে ডেটল ছিটিয়ে দেয় একে অপরের নালী পরিষ্কার করে ; পিতা ও সন্তান পরস্পর কাঁধে হাত রাখে , লাইটপোস্ট দূরে ফেলে নেমে যায় ফুটপাথ থেকে অন্ধকারে শ্মশান - পিয়ানো, আমি শববাহকের মুখে বেজে ওঠি সহমরণের আমি কেউ নাই আমি জানি জেমিনী সার্কাস । ' নিজেকেই ঈশ্বর ভাবতে শেখা এনাফ এন্টারটেনমেন্ট দ্যায় । এই থেরাপি যৎসামান্য কমেডি জানে । বেজে ওঠে ধাতুময় ধ্যান । সে নিরালম্ব বায়ুভূত , আত্মসমর্পণ করে । ডেকে আনি বস্তুবাদ । বস্তুর বরাদ্দ । উজ্জ্বল ওজনবিহীন আগুনের টুকরো । কনজিউমার ছেঁটে ফ্যালে নিজেকেই । নিজেরই মাথায় বন্দুক ঠেকায় । নিজের আইডেন্টিটি কার্ড সমেত আরো বেশি ফাঁকা ও ফাঁপা হতে থাকে । বস্তুটিকেই বাতিল করে দিচ্ছো । আমার চিন্তার মার্জিনে একটা হোপলেস লোক চেঁচাচ্ছে । আর আমার হাতের ভিতরে মৃত পৃথিবী পুরোনো মোমবাতির মত দ্প করে নিভে গেলো । আমি এই পৃথিবীর মৃত্যুধ্বনি । আমাকেও ফুরিয়ে যেতে হবে । কোনও ভুতুড়ে সিনেমার মত যা নিশ্চিত ভাবেই বি গ্রেড ওই পুরানা মন্দির গোছের সেইরকম একটা ভয় এইসব লাইফ এবং ডেথ সংক্রান্ত গ্যাঁজানোর পর আসে । অথচ নিয়ত ডিপ্রেশন, মৃত্যুর ভয় - টয় থেকে নয় , কোনও এক গ্রামপতনের শব্দ এক ধংব্বসাত্মক শব্দরাশি যা জাহাজের বরফকাটা চাকার মত রোজ ঘুরছে , ঘুরেই চলেছে । এই নৈরাজ্যের ভিতরেও কারা যেন ডিভাইন কথাবার্তা খুঁজছে । আর খোলাখুলিই বলি রিলিজিয়ন, হ্যাঁ ওই দেদার দেবতা প্রোডিউস করে যাওয়া মেশিনটাকেই বলছি একটা এমন অত্যাচার পদ্ধতি প্রায় ট্র্যাজিক একরকমের প্লেজার নিতে নিতে মানুষের বাচ্চারা ভুলেই গিয়েছে সেই ভাষাটাকে খুঁজে আনো যা দিয়ে একেকটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি একাধিক অর্কিড ও অনন্ত স্মাইলি । অন্ধ এবং সিফিলিস আক্রান্ত বাবাকে দূরে রেখে ১৯১৫ তে জর্জ বাতাই কিঞ্চিৎ ক্যাথলিকতার দিকে ঝুঁকেছিলেন। সেই বছর তেইশের বাতাইকে হাত ধরে উদ্ধার করেছিল নিৎসের লেখালেখি । প্রশ্ন যদিও থামেনা । চাবুক কেন কাঁদে ? কেন জনতার মধ্যে ওঠে ঘোড়ার আর্তনাদ? কেন নিৎসে যার ঠোঁটকাটা বচন; হারিয়ে ফেলে বাকচৈতন্য ? প্রশ্ন থামেনা । চলতে থাকে । |