Agony Opera
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন
Search

আচ্ছে   দিন  কোয়াট্রেট ।। হিয়া   মুখোপাধ্যায়

11/4/2019

1 Comment

 
Picture

সমকাল এসো...
এই ডিস্টোপিয়াগন্ধী বিকেলে শুধু তোমারই জন্য টাঙিয়েছি এই রুহ-শামিয়ানা। পাঁজরের খাঁজ থেকে বল্গাহীন ভাবে তুলে আনছি জহর ও যৌথ যন্ত্রণালিপি।
সমকাল এসো...
আমাদের কাহিনী নেই। কৃষ্টি নেই। কাব্যপ্রতিভাও। শুধু এই নির্বাক স্থিতাবস্থায় শ্বাসরোধী চিৎকার আছে। অশ্রুত। অব্যক্ত। অসাংবিধানিক। তাকে কি শিল্প বলা চলে?
সমকাল এসো....
যা আমি লিখছি তা আমার হয়ে আমার পূর্বজদের প্রেত লিখে দিচ্ছে। যা আমি লিখছি তা আমার হয়ে আমার অনাগত সন্তানেরা লিখে দিচ্ছে। ইতিহাসের ছিলায় টানটান ফলার মত আমি লিখে রাখতে চাইছি যুক্তিগ্রাহ্যতার কথা। লিখে রাখছি সমব্যথা, সহমর্মিতা ও নিদারুণ অথর্বতা জনিত স্নায়বিক অপরাধবোধ। মার খেতে খেতে মরে যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ইতস্তত শব্দ উগড়ে দিচ্ছি প্রানপণ। কবিতা নয়...কবিতা নয়...আসলে রাজনীতি লিখছি আমি। নদীমাতৃক এই সভ্যতার মাটি খুঁড়ে জ্বলন্ত অঙ্গারের মত আমি তুলে আনছি আমার লাঞ্ছিত মাতৃজঠর... ছিন্নভিন্ন যোনি।
তুলে আনছি ইশক ও ইনতিফাদা....রক্তের চ্যাটচ্যাটে দাগের মত আমার  স্বদেশ...আমার ভারতবর্ষ।
সমকাল এসো...ডুব দাও।


১.
পরিযায়ী পালকের মত উড়ে এসেছো এই মাটিতে এই হারেম ও হাহাকারের দেশে এখন স্বাতী নিদ্রিত আর সূর্য নিজেরই ছাই মেখে  অস্তে গ্যাছে দেওয়ালে দেওয়ালে যারা উদ্ধত ধর্মচিহ্ন এঁকে রাখছে তারা বস্তুত তোমার কেউ নয় সময় ও সুযোগ পেলে তারা তোমার দুই পা ফাঁক করে সাবোটাজ করে নেবে স্বাধীনতার সবরকম বিপজ্জনক বোধ শান্ত হও রজনী ধিমে ত্রিশূলের ডগার মত স্নিগ্ধ হও ইট ওয়াজ ওনলি ডার্টি পলিটিকস ইট ওয়াজ ওনলি আ সিলি গেম এই কোহলগন্ধী সন্ধ্যে অচিরেই তোমার কন্ঠনালী চিরে উপড়ে আনতে পারে সাবেক প্রশ্নচিহ্নসমূহ জায়নামাজ ও নতমুখ সন্ধ্যারতির উপমহাদেশ এখন মৃত তার পরিবর্তে আস্তে আস্তে জন্ম নিচ্ছে বিরাট হিন্দু সভ্যতা আহিস্তা পা ফেলো সাবধানে এই ধুম্রগন্ধী বিকেলের আস্ফালনসমূহের মধ্যে কোথাও তোমার মাতৃভাষা নেই মনে রেখো স্বাতী নিদ্রিত পরিবর্তে দিগন্তব্যাপী ফুটে উঠছে যুগপুরুষের ছাপান্ন ইঞ্চির ছাতি কে ও কাহারা প্রতিটি দেওয়ালে দেওয়ালে পরিচয়জ্ঞাপক চিহ্ন এঁকে রাখছে দরজা থেকে দরজায় পাচার হয়ে যাচ্ছে শান্তিমঙ্গল মুর্দাফরাসের ফর্দ ভারী হচ্ছে লাশগুলো কেঁপে উঠছে লাশগুলো ফুলে ফেঁপে অভিমানে ঢোল হয়ে উঠছে কিঁউকি রাম লাল্লা হাম আয়েঙ্গে অউর মন্দির ওয়াহি বানায়েঙ্গে মৃদু তবসুমে তুমি এই নয়া ফতোয়াকে উদ্‌যাপন করো সমস্ত শরীর ও মনন দিয়ে যেহেতু মসৃণভাবে তুমি সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছো রাষ্ট্র রাজাধিরাজ রাষ্ট্র আমাদের মাই বাপ কোনো মাই কা লাল তার বিরূদ্ধে প্রশ্ন তুলতে পারে না আমাদের বাঁধা তমসুকে আমরা দাসখত লিখে দিয়েছি হাসো খেলো আবীর ও আশনাই চমকিয়ে খিলখিল করে ওঠো মনে রাখো দ্য ভিলেজ ইজ আউট আর লিঞ্চিং মবের ভীড়ে কদাপি তুমি কোনো মানুষ দেখতে পাবে না শুধু মাড়ি ও ছররার মত সারিবদ্ধ দাঁত শুধু হাইল আওয়ার লিডার ও তদসহ ক্রমিক উল্লাসধ্বনি রিমেম্বার রিমেম্বার দ্য সিক্সথ অফ ডিসেম্বর রিমেম্বার টু থাউজ্যান্ড অ্যান্ড টু আর অবনত হও অবনত হও অবনত হও এই যৌথ দোজখ আমরা সমবেত ভাবে অর্জন করেছি ও শেষমুহূর্ত পর্যন্ত আমরা একে রক্ষা করবো ইতিহাসের কবরে কি টিউলিপ ফুটেছে প্রিয়তমা ইতনা অউকাত কাঁহা যে আমরা ইতিহাসের সর্বগ্রাসী জুনুনকে স্পর্শ করবো শুধু প্রশ্নাতীত ভাবে টিকে যেতে পারি আমরা বিদ্যুৎ ও বিষাদে টিঁকে যেতে পারি জলপাই ও গেরুয়া ও গণিকার মত গাঢ় লালে চোখ বুজে উচ্চারণ করে যেতে পারি আইন ফোল্‌ক আইন রাইখ আইন ফ্যুহ্‌রার যতক্ষণ না তা রক্তে ও কোষসমষ্টিতে দ্রবীভূত হচ্ছে ইতিহাসের কবরে ইতস্তত ইনকিলাবের মত কেউ আজো বিলাপের স্বরে গাইছে নাথো নসলো কে বাটওয়ারে ঝুট কাহায়ে তেরে দ্বারে আর পরিযায়ী পালকের মত আমরা সম্মতিক্রমে সেই স্বর অগ্রাহ্য করছি আর পরিযায়ী পালকের মত আমরা সম্মতিক্রমে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি কেননা এই হারেম ও হাহাকারের দেশে স্বাতী নিদ্রিত আর সূর্য নিজেরই ছাই মেখে অস্তে গ্যাছে

২.
ঝিলম ঝিলম তুমি কোথা হইতে আসিয়াছো
উত্তরে রুখসার হিস্‌ হিস্‌ হেসে ওঠে উত্তরে পশমিনা রোদে ভেসে যায় একপাটি রক্তাক্ত দস্তানা আজ তবে গাঢ় হোক মৌষলপর্বের রাত এমন রাতের জন্য নির্বিচারে খুন হওয়া যায় এমন রাতের জন্য নেবুলাস পোলারয়েডে জ্বল জ্বল করে জেগে থাকা যায় অস্বস্তিজনক উপগ্রহের মত আরো এক সহস্রকাল ঝিলম ঝিলম এই রক্তস্নাত উপত্যকা থেকে বহু দূরে এই ইন্সার্জেন্সি কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির চিরাবর্তিত আলেখ্যর বিপ্রতীপে আমাদের নির্লিপ্তি ঘন হয়ে এসেছে বাইরে তুমুল বরফ বাইরে তুমুল কার্ফিউ আর অনির্দিষ্ট কালের জন্য সে অন্ধকারের মাশুক হারিয়ে গ্যাছে রুখসারের ইবাদতে আমাদের শীতঘুম মিশ খেয়ে যায় ইট হ্যাপেনস ওনলি ইন ইন্ডিয়া ঝিলম ঝিলম দ্যাখো এই দীগন্তবিস্তৃত চরাচরব্যাপী ভূখন্ড মুখ হাঁ করছে জিভ নড়ে উঠছে টাকরায়  কিলবিল করে উঠছে যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত ইউ আর আইদার উইথ আস অর উইথ দেম বরখুরদার রুখসারের ইনসমনিয়ার মানচিত্রে কাঁটাতার গজিয়ে উঠছে গজিয়ে উঠছে অক্ষৌহিণী চেকপোস্ট আর অসহ্য পোলারয়েড বুকে চেপে দ্যাট ড্যামড বিচ একের পর এক পরমকরুণাময় ইন্টারোগেশন সেন্টার পেরিয়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই রুখসারের হিজাবে রোদ্দুরের ছিটে এসে লাগে দগদগে ঘায়ের মত আমরা লালন করে চলি মেষপালকের স্বর্গোদ্যান টুরিস্ট বাসের মত ঘুরপাক খেতে খেতে আমরা গায়েগতরে বেড়ে উঠি তোকে আমরা কী দিই নি রে হারামজাদী জিভ টেনে ছিঁড়ে নিতে হয় কাফেরের ঝিলম ঝিলম ওয়াই আর ইউ সো ফাকিং সাইলেন্ট শুধু আর্মি বুটের শব্দ শুধু ফিসফিস অসহায় নাশকতা শুধু বুলেটিনে বুলেটিনে বিধ্বস্ত বেপর্দা ওয়াদি আরেকটি কাস্টডিয়াল মৃত্যু অথবা নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষনা আরেকটি চিড় খাওয়ার শব্দ আর ট্যুর ম্যানেজার বিগলিত হেসে এগিয়ে দেয় ধূমায়িত কাওয়া ট্যুর ম্যানেজার বিগতজন্মে রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন নিশ্চিতভাবে ফট্ফ‌ট্‌ আমাদের শাটারগুলো নড়তে থাকে অতর্কিতে রুখসারের বেগুনাহ্‌ দুই চোখ সুর্মা দেওয়া টানাটানা দুই রাষ্ট্রদ্রোহী চোখ পোয়াতি মরালের মত তিরতির কাঁপতে থাকে তুখোর এক্সোটিকা আমাদের শিরার ভিতরে দপদপ করে ওঠে অকস্মাৎ মনে পড়ে আমাদের আগস্ট ছিল অকস্মাৎ বোধ হয় ইউ আর আইদার উইথ আস অর ইউথ দেম বলো বলো বলো ভালো আছো বোল রেন্ডি ভারতমাতা কী জয় বোল শালি হামিন অস্তো হামিন অস্তো হামিন অস্তো আর ঝিলম ঝিলম তুমি বরাবরের মত নির্বিবাদী আওয়াতের মত বহতী এক তওয়াইফ্‌ মাত্র তুমি আগ্রাসী মাগীর মত সবটুকু গ্রহণ করেছো রক্ত লাশ এমনকী অভিশপ্ত সেই পোলারয়েড আর রুখসার দ্য ব্লেসেড রুখসার দ্য বিস্ট ফুটিফাটা ঠোঁটে কী বলে উঠতে চায় ওর কষ বেয়ে গড়িয়ে আসা রক্ত দেশদ্রোহী ওর বেয়নেটে উপড়ে নেওয়া চোখ নিশ্চিত দেশদ্রোহী আমাদের ভাঁড়ে ভাঁড়ে কাওয়া মৃদু হয়ে আসে জোজিলা পাস পেরিয়ে উত্তেজক টুরিস্ট বাস ঘুরে যায় আরো আরো উত্তরের দিকে আমাদের মা কে মনে পড়ে ধর্মবোধ মনে পড়ে সার্বভৌমত্ব মনে পড়ে বেঁহুশ রুখসারের দেহ পিষে দিতে দিতে কার জানি জানাজা বেরোয় আর পতাকা পতপত ওড়ে আর পতাকা পতপত ওড়ে

৩.
ক্রন্দসী আয়াতের মত দিকচক্রবাল অভিভূত করে জেগে ওঠে অ্যাঙ্করধ্বনি এসো এসো সুসময় এসো অস্ফুট হিপনোটিজম আমার করোটিগুলো তোমরা ঘষেমেজে চকচকে করে দাও ওগো দৈব তার্কিক ওগো স্নিগ্ধ টেলিভিশন গেস্টাপো এসো এসো আমার রক্তে হিল্লোল তোলো মতিস্থির করে আমার অস্থিগুলোকে শান্ত করে আনো বলো বলো দ্য নেশন ওয়ান্টস টু নো ঠিক ততটুকু যতটুকু প্রশ্নাধিকার তোমরা অবিসংবাদিত ভাবে আমাদের করুণা করছো ঠিক যতটুকু পায়ের নীচে দাঁড়ানোর মাটি তোমরা অবিসংবাদিত ভাবে আমাদের করুণা করছো আমাদের অস্তিত্বের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে ছড়িয়ে পড়ুক গৈরিক ইনডক্ট্রিনেশন আমরা হাসি খেলি হাততালি দিতে দিতে উত্তেজিত হিসি করে ফেলি নমো নমো নমো শিষ দিতে দিতে তোমাদের স্প্রিং গুলো স্ক্রীন থেকে ছিটকে এসে সটান গেঁথে যাক আমাদের গ্রে ম্যাটারে আওয়ার লেডি অফ জাস্টিস শাহেনশাহ্‌-এ-হিন্দুস্তান আমরা বিনা প্রশ্নে তোমার সবটুক বিশ্বাস করবো আমরা বিনা উচ্চারণে তোমার সবটুকু বিশ্বাস করবো প্রেমিকের মত প্রাইম টাইমে তুমি আমার মাথার মধ্যে জেগে উঠে দিকনির্দেশ করো বলো কোনটা আমার দেশ কোনটা আমার ধর্ম কোন দেশদ্রোহীর কোঁচরে রাখা আছে কতটুকু নিষিদ্ধ মাংসের টুকরো স্বাধীন এ ভূখন্ডে প্রেমভাবে কতটুকু শ্বাস নেওয়া জায়েজ ওয়াই ইজ জেএনইউ সাইলেন্ট টুনাইট প্রশ্ন করো জনপ্রজাতান্ত্রিক মাই ফুট ব্রেকিং নিউজের ছিটছিটে রক্তে আমার স্ক্রীন ভেসে যাক আমার নেশা বাড়ুক দ্য নেশন সিরিয়াসলি ওয়ান্টস টু নো হাউ মেনি টাইমস ক্যান আ ম্যান টার্ন হিজ হেড অ্যান্ড প্রিটেন্ড দ্যাট হি জাস্ট ডাজন্ট সি চোপ্‌ বেতমিজ ক্যানোনা সিয়াচেনে জওয়ানরা মরছে ওহ অরগ্যাসমিক নিউজ রিল আমাকে সুতোয় টাঙিয়ে তুমি শূন্যে দোলাও আর কানের ভিতর লুলাবাই এর মত ফিসফিস করে যাও বিকজ আই সেড সো আমি ঘুমিয়ে পড়ছি আমি হাল্কা হয়ে যাচ্ছি হ্যালো হ্যালো অ্যাঙ্কর আপনি শুনতে পাচ্ছেন আমি সর্বান্ত সমর্পণে প্রস্তুত আমার আর কিচ্ছুতে কিছু এসে যায় না দীর্ঘায়িত এই গ্লিচে আমি ভেসে যাচ্ছি ভেসে যাচ্ছি ভেসে যাচ্ছি আমি বুঝতে পারছি এই নিষ্পাপ ঘুমই আদতে আচ্ছে দিন আর দ্য নেশন ওয়ান্টস টু নো দ্য স্টোরি ফ্রম দ্য ফ্রন্ট হা হা হা সিলি বয় হাউ অ্যাবাউট ফাক নেশন অ্যান্ড ফাক ইউ সূত্রোকে মুতাবিক দ্য নেশন হ্যাজ ডায়েড টুনাইট

৪.
নুর-এ-খুদা নুর-এ খুদা আমাদের সন্ততিরা য্যানো বেঁচে বর্তে থাকে আমাদের সন্ততিরা য্যানো প্রেমে ও শস্যে বড় হয়ে ওঠে আহা ওদের ভাতের থালায় উঠে আসুক মণ্ড মণ্ড স্নেহ আর ওদের ঘুম হোক স্বপ্ন হোক নিয়মগিরি থেকে উঠে আসুক আশমানী কেন্দারার ঘুমপাড়ানি স্বর ওদের দেয়ালায় খেলুক অরণ্যের অধিকার নুর-এ-খুদা নুর-এ-খুদা ওরা টলোমলো পায়ে উজ্জ্বল মুক্তির মত মিছিলে পৌছোক বিদর্ভ থেকে খাম্মাম অব্দি হেঁটে চলা মিছিলের ফুটিফাটা পা আর থ্যাঁতলানো মাংসপিণ্ডকে ওরা মা বলে চিনুক তেলেঙ্গানায় ওরা নির্ভুলভাবে চিনে নিক কে শত্রু লাঙল আর কাস্তেকে ওরা বাবা বলে চিহ্নিত করুক কার্পাস ক্ষেতের বুকে ওরা জিভের লবণ দিয়ে মুছে দিক বিগতজন্মের প্রতিটি আত্মহত্যার দুর্বিষহ স্মৃতি নুর-এ-খুদা নুর-এ খুদা ওরা টলটলে শুশ্রুষা হয়ে নেমে আসুক সিলিকোসিস আক্রান্ত খাদান শ্রমিকের কালচে হয়ে আসা কলিজায় ওদের হাসি ও হুররার কম্পন  স্ফুলিঙ্গের মত সারিয়ে তুলুক জাদুগোড়ার তেজষ্ক্রিয় মাটি দারিদ্ররেখা ও অভুক্তির এ দেশে বৃষ্টি নামুক বৃষ্টি নামুক বৃষ্টি নামুক নুর-এ-খুদা খাক হয়ে যাওয়া অরণ্য ফের সবুজ হোক রেড করিডোর জুড়ে বেজে উঠুক ধামসা মাদল কুনাম ও পোসপোরার একপক্ষকাল ধরে জেগে থাকা অনিদ্রাগ্রস্ত চোখগুলোয় শান্তি আসুক নুর-এ-খুদা নুর-এ-খুদা আমাদের সন্ততিরা বড় হোক বড় হোক আশিকি আর এহতেজাজ ওদের লালন করুক মাজার-এ-গালিব আর যন্তর মন্তরের দখল নিয়ে ওরা সারা রাত নাচুক উন্মাদের মত হাওয়ায় তখন বেঝিঝক বেতমিজ আস্কারা হাওয়ায় তখন সারে জাঁহাকে মজদুরো উঠো কে ওয়াক্ত আয়া ইন্ডিয়া গেটে তখন রুখোসুখো মানুষের তুমুল জুলুস আর লাল কেল্লায় উড়ছে লাল পতাকা তামাম হিন্দুস্তান তখন ফেটে পড়ছে মুক্তির উৎসবে নুর-এ-খুদা নুর-এ-খুদা আমাদের অক্ষমতার বিপরীতে আমাদের সন্ততিরা ঝলমল করে উঠুক আমাদের অক্ষমতার বিপরীতে আমাদের সন্ততিরা হুল্লোড় করে উঠুক আমাদের অক্ষমতার বিপরীতে আমাদের সন্ততিরা শেষপর্যন্ত শেষপর্যন্ত আজাদী পাক
​​
1 Comment

What   I   Write   When   I   Write   About   the   Revolution  :  A   Red   Erotica  ||   An   Agony   Opera   Teamwork

11/4/2019

2 Comments

 
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
2 Comments

উমবের্তো   ইকোর  "উর-ফ‍্যাসিজ্ম" ।।   জাগরী   বন্দ্যোপাধ্যায়

9/4/2019

0 Comments

 
Picture
[উমবের্তো ইকো (৫ জানুয়ারী ১৯৩২ - ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৬) একাধারে একজন ইতালীয় ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক, দার্শনিক এবং অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৮০ সালে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস "দ্য নেম অফ দ্য রোজ" একটি ঐতিহাসিক রহস্যোপন্যাস যা বাইবেলের বিশ্লেষণ, মধ্যযুগীয় গবেষণা, এবং সাহিত্য তত্ত্বের সাথে কথাসাহিত্যে সেমিওটিক্স মিশ্রিত করে। পরবর্তীকালে প্রকাশিত তাঁর অন্যান্য উপন্যাসগুলির মধ্যে "ফুকো'স পেন্ডুলাম" এবং "দি আইল্যান্ড অফ দি ডে বিফোর" অন্যতম। ২০১০ সালে প্রকাশিত তাঁর উপন্যাস "দ্য প্রাগ সেমেট্রি" ইতালির বেস্টসেলার তালিকায় শীর্ষে ছিল।

এছাড়াও ইকো অসংখ্য একাডেমিক গ্রন্থ, শিশুসাহিত্য এবং প্রবন্ধ লিখেছেন। ইকো এর কথাসাহিত্য সারা বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর উপন্যাসগুলিতে সূক্ষ্ম, বহুভাষিক সাহিত্য ও ইতিহাসের রেফারেন্স উল্লেখযোগ্য । ইকো এর কাজ ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি ও সমস্ত সাহিত্যকর্মের আন্তঃসংযোগকে চিত্রিত করে। ইকোর নিজের কথায় তিনি জেমস জয়েস এবং জর্জ লুইস বোর্গেস দ্বারা সর্বাধিক প্রভাবিত।

২০০৫ সালে রজার এঞ্জেলের সাথে যুগ্মভাবে ইকোকে কেনিয়ন রিভিউ অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করা হয়।]




আমার দৃঢ় বিশ্বাস, চিরায়ত ফ‍্যাসিজ্ম বা যাকে আমি বলি উর-ফ‍্যাসিজ্ম, তাকে সবসময়েই কিছু নির্দিষ্ট প্রকৃতিলক্ষণ দিয়ে চিহ্নিত করা যায়। অবশ্যই এই লক্ষণগুলির সবগুলোই যে একটি ব্যবস্থার মধ্যে সচল পাবেন তা নাও হতে পারে, কারণ এদের অনেকগুলোই বেশ পরস্পর বিরোধী, আবার ভিন্ন ভিন্ন ধরনের স্বৈরাচার বা ধর্মতন্ত্রের মধ্যেও এদের দেখা পাওয়া যায়। তবে বলা ভাল যে এদের যে কোন একটার উপস্থিতিই যথেষ্ট, ফ‍্যাসিবাদ স্বচ্ছন্দে সেটির চারপাশে ঘনীভূত হয়ে উঠতে সক্ষম।

১। ফ‍্যাসিবাদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হিসাবেই আমি বলব ঐতিহ্য পূজার প্রবণতার কথা। অবশ্য এর জন্য কেবলমাত্র ফ‍্যাসিস্তদের দায়ী করা ঠিক নয়। এর আগেও বহুবার এর দেখা মিলেছে। ফ্রান্সে বিল্পব পরবর্তী সময়ে ক্যাথলিক প্রতিবিপ্লবই বলুন কিম্বা হেলেনিক পিরিয়ডে যুক্তিবাদের বিপক্ষে প্রথাপন্থীদের প্রতিক্রিয়াই বলুন। বলা বাহুল্য এই পন্থার জন্মদাতা কিন্তু ঐ গ্রীকরাই। পরবর্তীকাল জুড়ে ভূমধ্যসাগর সংলগ্ন অধিত্যকার ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষেরা (এদের সবারই দেবদেবীরা লতায় পাতায় রোমান দেবকুলের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন) স্বপ্ন দেখে গেছেন মানব সভ‍্যতার উষালগ্নে সেই এক প্রথম, প্রধান পবিত্র প্রকাশের, যা কেবল তাঁদেরই উত্তরাধিকার। সে উত্তরাধিকার যা কিনা চাপা পড়েছিল বিস্মৃত প্রাচীন ভাষাগুলির মধ্যে, হিয়েরোগ্লিফিক, বা কেল্টিক জাদু অক্ষর কিম্বা এশিয়ার প্রত‍্যন্ত অঞ্চলে লুকিয়ে থাকা লিপির মধ্যে।

এই নতুন সর্বগ্রাসী ঐতিহ্যপূজাদের প্রথম দর্শনে সমন্বয়বাদী বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আদতে যে কোন আদর্শ সমন্বয়বাদ যেভাবে বিরোধী ভাবনাকেও সসম্মানে স্থান দেয় ঠিক তেমনটি এরা নয়। যেহেতু সব ঐতিহ্য বার্তার মধ্যেই অন্তত এক চিলতে জ্ঞান এর কথা থাকে, তাই সেগুলিকে সমভাবে ধরলেই হল, পরস্পর বিরোধিতাও রইল না আর যদিবা ক্ষেত্রবিশেষে কিছুতেই প্রাচীন জ্ঞানোদ্ভাসগুলির মধ্যের স্ববিরোধিতা এড়ানো যাচ্ছে না, তখন বলে দিলেই হল যে “সব বাণীই কার্যত সান্ধ্য ভাষায় রচিত পরোক্ষ রূপক” কিনা, কাজে কাজেই সকল প্রাচীন মৌলিক প্রকাশগুলির মধ্যে এক সতত সঞ্চরমান অনড় অবিরোধ উপস্থিত।
ফলটা কি হয় তাতে, শিক্ষার অগ্রগতিটি আটকে যায়। কারণ ওই যে সর্বৈব এবং সার্বজনীন সারসত্যটি তো লক্ষ বছর আগে থাকতে ঘোষিত হয়েই রয়েছে! ওইটিরই রকমফেরে রহস্যের পাঠোদ্ধার করে চলো না!
যেকোন ভৌগোলিক ও কাল সীমারেখার মধ্যেকার বড় বড় প্রথাপন্থীদের যদি খুঁজে পেতে চান, তাহলে একটিবার যে সময়কার ফাসিবাদী পাঠক্রমটি বা তার প্রতিবেদকদের দেখলেই কাজ হয়ে যাবে। নাৎসিদের আধ্যাত্মিকরহস্যময় জ্ঞানাবলী পুষ্ট হয়েছে প্রথাপন্থা দ্বারা, সমন্বয়বাদ দ্বারা এমনকি যাদুবিদ্যা দ্বারাও। সাম্প্রতিক ইতালির দক্ষিণপন্থী জুলিয়াস ইভোলার তত্ত্বের বেশ কিছু প্রভাবশালী অংশ তৈরী হয়েছে হোলি গ্রেইল আর যিওন প্রাজ্ঞদের শিষ্টাচার বিধির একটা অপরাসায়নিক মিলনে। পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের পূত স্বচ্ছতা আর বলশালী জার্মান সাম্রাজ্যের দৃঢ় বলিষ্ঠতার মেলবন্ধন। আবার দেখুন ইতালির বর্তমান দক্ষিণপন্থা তাদের উদারনৈতিকতা দেখানোর কি উপায় বার করেছে ! তারা সিলেবাসে জুড়েছে দ্য মেইস্ত্রো, গুয়েনঁ , এমনকি গ্রামসি ও ... সেই পুরাতন সমন্বয়বাদ । সেই , সর্বপন্থা কে এক সমতলে নামিয়ে অথবা উঠিয়ে সমান করে দেখানোর এক জলজ্যান্ত উদাহরণ।
আমেরিকায় এই নতুন যুগের যে কোন বইয়ের দোকানে যান। আপনি একই তাকে পাবেন সন্ত আগুস্টাস (আমার মতে যাঁকে কোনভাবেই অন্তত ফ‍্যাসিবাদী বলা যায় না) ,আর তেনার পাশেই পাবেন প্রাচীন রহস্যবাদে মোড়া জাদুবিদ্যা সংক্রান্ত প্রহসন নাটিকার পকেট সংস্করণ। যেন সবই সমান! আলাদা আলাদা তাকে থাকলে এই দুটি পুস্তক এর একটিও কিন্তু ফ‍্যাসিস্ত নয়। তবে এরা যখন পাশাপাশি এক তাকে? সমগুরুত্বে? সমউচ্চতায় অবস্থান করছে? তখন? তখন এই সমীকরণটাকেই আমি বলি চিরায়ত বা উর-ফ‍্যাসিবাদ ।

২। প্রথাপন্থার একটি চিরকালীন আধুনিকতা বিরোধী অবস্থান রয়েছে । নাৎসি ও ফ‍্যাসিবাদ উভয়েই প্রযুক্তির ভারি ভক্ত, অথচ হিসাবমত ঐতিহ্যপন্থীরা সাধারণত এই প্রযুক্তিবাদের বিরোধিতাই করে থাকেন কারন প্রযুক্তি “সেই চির কালীন পরম আধ্যাত্মিক সত্যের বিরোধী“ তাই প্রথম চোটে নাৎসিদের মনে হয় ভারী প্রযুক্তিপরায়ন আধুনিক বিদ্যাবাদী। কিন্তু তাদের আধুনিক বিদ্যার প্রয়োজনটি আসলে সেই পুরাতন ভূমি ও রক্ত নীতির হিমশৈলের চূড়াটুকু মাত্র। আসলে যে তারা আধুনিক দর্শন ও প্রকৃত যুক্তিবাদ বাতিল করেছে তা বুঝতে প্রাথমিক দর্শনে অসুবিধা হবে কারন তারা পুঁজিবাদী বিলাসী জীবনযাপনের যথেষ্ট নিন্দা করেন। কিন্তু সেই নিন্দার সীমা নির্ধারিত। ১৭৮৯ বা ১৭৭৬ এর স্পিরিটকে প্রত্যাখ্যাত হতে দেখলে এদের ভারি চিন্তা হয়, তখন এনারা পুঁজিবাদের বিরোধী। অথচ এনলাইটেনমেন্ট, যুক্তিবাদের যুগ এইসব এদের কাছে আধুনিকতার অপকম্মের শুরু। এদিক থেকে দেখলে কিন্তু উর-ফ‍্যাসিবাদ একেবারেই যুক্তিহীনতায় আচ্ছন্ন।

৩। এনাদের যুক্তিহীনতার আরেকটি মহান নিদর্শন হল কর্মায় কর্মম অর্থাৎ কিনা কেবল কাজের জন্যই কাজ করে চলার এক মহান আদর্শ ও নীতি । কর্ম আপনার মধ্যে আপনিই প্রস্ফুটিত পুস্পের ন্যায় সুন্দর, তাহার আগা মাথা কার্যকারণ বিচার করা নিষ্প্রয়োজন । অতএব চিন্তা ভাবনা করে দেখাটেখা ওসব হীনবল ক্ষীণবীর্যদের লক্ষণ। (ক্লৈব্যং মা স্ম গমঃ পার্থ! বেশ গীতা গীতা গন্ধ আছে না?) ধী, মনোজগত বা বৌদ্ধিক বিষয়ের উপর এক ধরনের অবিশ্বাস চির–ফ‍্যাসিবাদের বড় লক্ষণ। এর উদাহরণ প্রচুর, সেই গ্যোরিং এর সদম্ভ বক্তব্য মনে করুন “যখ‌ন‌ই কৃষ্টিচর্চার কথা শুনি আমার হাতটা আপসেই নিজের বন্দুকে চলে যায়“ থেকে সুরু করে হালের “অধঃপতিত ইন্টেলেকচুয়াল”, “পান্ডিত্যাভিমানী”, “ক্ষয়িষ্ণু টুলো বিদ্বান”, “বিশ্ব বিদ্যালয় গুলি “লাল” উইপোকার বাসা” ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যদি । মোদ্দা কথা , খেয়াল করলেই দেখবেন আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষিত ফ‍্যাসিস্ত বিদ্বজনদের প্রধান কাজটিই হল আধুনিক কৃষ্টি ও উদারনৈতিক ভাবধারা সম্পন্ন মানুষদের ক্রমাগত অনৈতিক ও জাতীয়তাবাদ তথা জাতির শত্রু আখ্যা দিয়ে আক্রমণ করে যাওয়া ।

৪। পৃথিবীর কোন ফ‍্যাসিবাদী শক্তি যারা বিভিন্ন জ্ঞান ও বিভিন্ন যুক্তির সমস্ত পার্থক্য, ভিন্ন অবস্থানকে র‍্যাঁদা চালিয়ে এক মাপের করে দিতে চায়, খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে করা যায় যে তাদের মতের অন্যথা কোন মত তারা সহ্য করবে না, হয় সেই সমভাবের র‍্যাঁদা চালিয়ে সব জ্ঞাক্ষেত্র সমতল করে দেবে, আর তা না করা গেলে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেবে।আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের প্রধান লক্ষণই হল মতপার্থক্য ও অসম্মতি কে সাদর আহ্বান জানানো, কারণ তাদের পারস্পরিক তুলনা ও বিচার দ্বারাই সামগ্রিক জ্ঞানের অগ্রগতি হয়। তাই সঙ্গত ভাবেই মতপার্থক্য বা অসম্মতি উর-ফ‍্যাসিবাদের কাছে এক বিশাল দ্রোহ, এক বিরাট বিশ্বাসঘাতকতা।

৫। আবার এরই পাশাপাশি দেখুন অসম্মতি কিন্তু বৈচিত্রের প্রমাণও বটে । উর-ফ‍্যাসিবাদ ফের অন্য আরেকটি নেতিবাচক দিক দিয়ে এই বৈচিত্রকে কাজে লাগায় ,  সমাজের বৃহত্তর শ্রেনীর কাছে এই পৃথক মানুষদেরকে জুজু হিসেবে খাড়া করে বৃহত্তর শ্রেণীর সহমত আদায় করে। “ওরা আমাদের চেয়ে আলাদা / ওরা অন্যরকম” মানুষের এ ভয় চিরন্তন। এই ভয় কে কাটিয়ে দেওয়ার স্থানে ফ‍্যাসিস্তরা আরো বেশী করে প্রচার করে পৃথকত্বের, প্রচার করে কাল্পনিক আগন্তুক অভিবাসীদের কাল্পনিক আগ্রাসনের, আর সমাজের বৃহত্তর অংশের কাছে আবেদন করে চলে এ আশু বিপদ থেকে দেশ ও দেশীয় প্রথা কে রক্ষা করার দায়িত্ব সম্পর্কে । এদিক দিয়ে ভাবলে ফ‍্যাসিজ্ম অবশ্যই বর্ণ বাদী, বৈষম্যবাদী ।

৬ । চিরায়ত ফ‍্যাসিবাদ গুটি বাঁধে একক অথবা সম্মিলিত হতাশা থেকে। এই জন্যই ফ‍্যাসিবাদীদের বিশেষ বৈশিষ্ট‍্য হল এরা এদের প্রাথমিক আবেদনটাই জানায় হতাশ ও সদা মনঃক্ষু্ণ্ণ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাছে, যে শ্রেণী সর্বদা ভুগছে আর্থিক অনটনে অথবা আচ্ছন্ন হয়ে আছে রাজনৈতিক ক্ষমতাহীনতাজনিত তুচ্ছতার বোধে, উপরি সদাই তটস্থ হয়ে আছে ছোটলোকদের বাড়বাড়ন্তর ভয়ে। ইদানিং যত বেশি করে আগেকার প্রলেতারীয়রা দস্তুরমত গুছিয়েগাছিয়ে পাতি বুর্জোয়া হয়ে বসেছেন আর যত বেশি করে তাঁরা বিরাট এক সংখ্যার তথাকথিত লুম্পেনদের বিন্দুমাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতার বৃত্তে ঢুকতে দিতে নারাজ হচ্ছেন, ততই বেশি করে ফ‍্যাসিবাদ অদুর ভবিষ‍্যতে তার নিজের জায়গা গুছিয়ে নিচ্ছে। অচিরেই এই নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী হবেন সেই উর ফ‍্যাসিবাদের নতুন সমর্থক।

৭। যে সব মানুষ কোন নিজস্ব পরিচিতির অভাবে ভোগেন উর-ফ‍্যাসিবাদ তাকে তার প্রধান পরিচিতিটি দান করে, সবচেয়ে সহজলভ্যটি – জাতীয় পরিচিতি। বলে, “তুমি অবশ্যই বিশিষ্ট কারণ তুমি অমুক দেশে জন্মেছো”; এই হল জাতীয়তাবাদের শুরু। আবার এর পাশাপাশি প্রধান কাজ হয়ে দাড়াঁয় একটি জুতসই শত্রুপক্ষ খুঁজে বার করা, কারণ দেশের শত্রু বই দেশের পরিচয় আর কেই বা নির্মাণ করে?  কেবল লঙ্ঘিত হবার দ্বারাই প্রতিষ্ঠা পেতে থাকে দেশের সীমানা তথা দেশ। সেইজন্যই উর ফ‍্যাসিবাদীরা সর্বদা নিজেদের মনস্তত্বের শিকড়ে এক নিরবচ্ছিন্ন সন্ধান জারি রাখে। তার শত্রুর প্রয়োজন, সীমা লঙ্ঘনকারীর প্রয়োজন, ভীষণ দরকার দেশদ্রোহীর, নিয়ত দরকার একটা না একটা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের -- সম্ভব হলে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করার। কারন সমর্থকদের অনুভব করাতে হবে যে তারা সদা আক্রান্ত ও বিপদগ্রস্ত আর এই ভয়ের পিছু পিছু সহজ সমাধান হিসেবে আসবে জাতিগত ঘৃণা, বিদেশিদের প্রতি অহেতুক ভয় ক্রমে তা হয়ে উঠবে আক্রমণাত্মক। মনে রাখতে হবে বিদেশি শত্রুর সাথে সাথে কিন্তু দেশের ভিতরেও একটা শত্রু বজায় রাখা খুব দরকারি। বিশ্ব ইতিহাসে ইহুদিরা এই জাতিঘৃণা বা জেনোফোবিয়ার সহজ টার্গেট হয়ে গেছেন কারন তাঁরা যে কোন দেশের ভিতরে ও বাইরে এক‌ই সঙ্গে উপস্থিত। এই দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র অবসেশনের একটা ভালো নিদর্শন হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে প্যাট রবার্টসন এর নিউ ওয়রল্ড অর্ডার, তবে কেরমে কেরমেই আরো আসিতেছে ।

৮। ফ‍্যাসিবাদের সমর্থকরা সদাই তাদের শত্রুদের জমজমাট ধনসম্পদ বা অগাধ ক্ষমতার জন্য কেবলি অপমানিত বোধ করতে থাকবেন। এক অন্যায় ভাবে বঞ্চিত হবার বোধ তাদের চেপে ধরবে। মনে আছে, ছোট বেলায় আমায় শেখানো হয়েছিল যে ইংরেজরা হামেহাল অন্তত ৫ কোর্স খাওয়া ধোওয়া করে, আর সেখেনে আমরা ইতালিয়ানরা? আমরা গরীব হতে পারি কিন্তু মার্জিত, ভদ্র, অত ৫ কোর্সের আহিঙ্কে আমাদের নেইকো! আবার ধরুন যেমন ইহুদিদের গোপন ভ্রাতৃসঙ্ঘ আছে তারা অবশ্যই অতি গোপনে পরস্পরকে সাহায‍্য করে এইসব নানা রটনা। আবার সেই সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত এক ধারনাও প্রোথিত থাকতে হবে সমর্থকদের মনে, যে চাইলেই তারা এইসব দেশবিরোধী বিলাসী ভাঁড়দের জব্দ করে দিতে পারবে। অর্থ কি দাঁড়ালো? “উহারা আমাদের চেয়ে ধনী ও শক্তিশালী হইতে পারে বটে কিন্তু সময়ে আমরাই শ্রেষ্ঠ” ঠিক এভাবেই আত্মাহংকার ও গর্বের ফোকাসটি কাল্পনিক শত্রুর উপরে থেকে থেকে কখন লাল আর কখন নীল আলো ফেলতে থাকে ফলত ফ‍্যাসিস্ত গভর্নমেন্টের একটি ধারাবাহিক লক্ষণ হল লম্বা যুদ্ধগুলি হেরে যাওয়া কারণ স্থির ভাবে এরা শত্রুর ক্ষমতা নির্দিষ্ট করে গণনা করতে অক্ষম হয়।
(অনুবাদকের অক্ষম টিপ্পুনি: পাকিস্তান আমাদের কত্তো খেতি করে দিচ্ছে খালি খালি , আবার কাশ্মীর ও কেড়ে নিচ্ছে র‍্যা! আর সেই আমরাই কিনা ঘরমে ঘুস্কে মারেঙ্গে! চেনা চেনা ঠেকছে সুধী?)

৯। চিরায়ত ফ্যাসিবাদের ক্ষেত্রে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম নয়, বরঞ্চ সংগ্রামই বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলতঃ শান্তির প্রস্তাব আনা সেক্ষেত্রে শত্রুর সাথে গা মাখামাখি করারই সামিল। এটা বাঞ্ছনীয় নয়, যেহেতু বেঁচে থাকা আদতে একটা চিরন্তন যুদ্ধ। অথচ এই ভাবনা থেকেই উদ্ভূত হয় এক ধরণের 'আর্মাগেডন কমপ্লেক্স'। যেহেতু শত্রুদের পরাজিত করাটাই লক্ষ্য, অতএব নিশ্চিতভাবে একটা চূড়ান্ত যুদ্ধের প্রয়োজন, যার পরেই এই আন্দোলন গোটা পৃথিবীর দখল নেবে। কিন্তু এইধরণের 'চূড়ান্ত সমাধান' এর আনুষঙ্গিকেই উঠে আসে যুদ্ধ পরবর্তী এক শান্তির যুগের ধারণা, অর্থাৎ স্বর্ণযুগ, যা কিনা সেই চিরন্তন যুদ্ধের নীতির স্ববিরোধী। কোনো ফ্যাসিস্ত নেতৃত্বই আজ অবধি এই সমস্যার সমাধান করে উঠতে সক্ষম হন নি।
 

১০। অভিজাতপ্রাধান‍্য এদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য, অবশ্য যদ্দুর অব্দি সেই আভিজাত্য মুলত উচ্চবংশ/উচ্চবর্ণ এবং সামরিক ক্ষমতার খেতাব ধরে। আর এই জন্মগরিমাধারী এবং সামরিক অভিজাতরা মানবিক দৌর্বল্য একেবারে বরদাস্ত করেন না। উর ফ‍্যাসিস্ত রা একধরনের পপুলার এলিটিজ্‌ম প্রচার করে যার ধাপগুলি খানিকটে এইরকম
এই দেশের প্রতিটি নাগরিক এই ভুবনের শ্রেষ্ঠ মানুষদের একজন। কারন? তারা এই দেশের নাগরিক।
অতঃপর আমাগো পাটটির মেম্বররা হলেন সেই ভুবনের শ্রেষ্ঠ মানুষদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতর। কারন? কারন তারা আমাদের পাটটির মেম্বর/সাপোরটার ।
দেশের প্রতিটি নাগরিক ইচ্ছা করলেই এই শ্রেষ্ঠত্তের সোয়াদ নিতে পারেন। কিভাবে? আমাদের পার্টিতে যোগদান করে।
কিন্তু সঙ্গত প্রশ্ন হল সবাই পাত্রিসিয়ান হয়ে গেলে প্লিবিয়ান কে রইবে? জনগণ নইলে ক্ষমতা তন্ত্র চলবে কি করে? কার্যত তারা ক্ষমতাহীন বলেই কিনা তাদের নেতা লাগে? তারা বাক্যহীন বলেই না তাদের মুখপাত্র লাগে! তারা যদি কেবল পার্টি মেম্বরশিপের দ্বারা নিজেদেরকে ক্ষমতাবান ভাবতে শুরু করে তবে তো মুস্কিল! সুতরাং তৈরি করা হল র‍্যাঙ্ক। প্রতিটি কর্মী যেন কিছু লোকের কাছে ক্ষমতাহীনতার গ্লানি ও কিছু লোকের সামনে ক্ষমতার গরিমা নিয়ে বেঁচে থাকতে বাধ্য হয়। ফ‍্যাসিবাদী পার্টি গভীর ভাবে সামরিক কেতার স্তরবিভাজন মেনে চলে। অর্থাৎ একই কর্মীর ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন দুই স্তরই থাকবে । দেখা যাচ্ছে হাইয়ারারকি আর অর্ডারের প্রয়োজন ফ‍্যাসিবাদীদের সবচেয়ে বেশি। এভাবেই তারা মাস এলিটিজ্‌ম এর রাস্তা তৈরী করে ।

১১। এই সামরিকস্তর-সুলভ ব্যাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি মানুষ বা কর্মীর কাছে অন্তত একটি শিক্ষা অতি সহজলভ্য, তা হল বীরত্বের শিক্ষা। সমস্ত পৌরাণিক গাথা গল্পে দেখা যায় বীর নায়ক হচ্ছেন একজন অনন্য মানুষ, যিনি অনুকরনীয় অবশ্যই কিন্তু সেইসঙ্গে এক ব্যতিক্রমী ও বিরল ব্যক্তি বটেন।  উর ফ‍্যাসিস্তদের কাছে বীরত্ব কেবল অনুকরনীয়ই নয় তা এক অবশ্য কর্তব্য। মৃত্যুর সঙ্গে এই বীর ধর্মের দারুণ যোগাযোগ। “ভিভা লা মুএরতে” বা মৃত্যু দীর্ঘজীবী হোক স্লোগানটি কোন ঘটনাচক্রে বা অবস্থাবশে তৈরি করেননি ফ্যালাঞ্জিস্টরা। সাধারণ সমাজে মানুষ বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে শেখেন যে সবার উচিত সম্মানের সঙ্গে সাহসের সঙ্গে মরণকে গ্রহণ করা কারন সে এক সত্য কিন্তু বড় কদাকার এক সত্য, আবার আস্তিকরা মরণকে সেই পরম করুনাময়ের সঙ্গে মিলিত হবার জন্য এক পথ বলে বিশ্বাস করেন, অবশ্য অতিক্রম্য এক পথ কিন্তু যন্ত্রনাময় পথ। এসকলের এক বিপ্রতীপ কোণে দাঁড়িয়ে চির ফ‍্যাসিস্তরা কেবল‌ই এক গর্বময় বীরগতি প্রাপ্ত করার কামনা করে যেতে থাকেন। তাঁরা অস্থির হয়ে এক বীরত্ব ব্যাঞ্জক মরন যাঞ্চা করে চলেন, ক্রমে সেটিকেই জীবনের উদ্দেশ্য বানিয়ে ফেলেন। বীরগতি প্রাপ্ত হবার জন্য এরাঁ এতই অধৈর্য যে প্রায়শই অন্যান্য মানুষজনদের ঠেলে দেন সেই গ্লোরিয়াস ডেথ এর মুখে।

১২। আবার ভেবে দেখলে দেখবেন এই ক্রমাগত যুদ্ধ-যুদ্ধ ও বীরগতির খেলা কি কঠিন! ব্যায়সাধ্য আর ক্লান্তিকরও তো বটে! তাই উর ফ‍্যাসিস্তরা ক্ষমতার প্রদর্শনের ক্ষেত্রটিকে সরিয়ে নিয়ে আসেন লিঙ্গভেদের রাজনীতির ক্ষেত্রে। এখানে ক্ষমতার অনুশীলনটি সহজ। কল্পিত শত্রুর উপর বীরত্ব এই মাঠে এসে রূপান্তরিত হয় মাচিস্মো বা পৌরুষ প্রদর্শনে। যা এক সঙ্গে আক্রমণ করে নারীদের আর ব্যতিক্রমী যৌনতা বিশিষ্ট মানুষদের। সতীত্বর সংজ্ঞা থেকে শুরু করে সমকামী নিপীড়ন অব্দি চলতে থাকে এই প্রদর্শন। এইবার ধরুন  যৌনতা, তা যৌনতাও কিন্তু খুব সহজলভ্য খেলা নয়, তাই চির ফাসিস্তরা অবশেষে হাতে নেন অস্ত্র -- পুংযৌনতার আর জননেন্দ্রিয়ের অভ্যস্ত প্রতীক।

১৩। উর ফাসিজ্ম একটা বাছাই করা ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা অর্জনের উপর দাঁড়িয়ে থাকে, বলতে পারেন গুণগত ভাবে জনমোহিনী কিছু কর্মসূচি ও প্রচারের উপর। গণতন্ত্রে প্রতি একক নাগরিকের কিছু রাজনৈতিক ক্ষমতা অবস্যই থাকে কিন্তু সামগ্রিক ভাবে তিনি হয়ে দাঁড়ান সামগ্রিক সমর্থক সমষ্টির একটি অংশমাত্র। কারন বৃৃহত্তর ক্ষেত্রে গ্রহণীয় হয় কেবল সংখ্যাগত গরিষ্ঠতা। ফ‍্যাসিস্তদের কাছেও নাগরিকদের কোন একক উপযোগিতা নাই, তার কোন‌ও অধিকারও নাই, সে কেবল একটি বৃৃহৎ একজাতীয় শিলাপিন্ডের খন্ডমাত্র যা কেবল প্রতিফলিত করবে “সমগ্র”র ইচ্ছা ও অনুভুতি। কিন্তু বিষয়টি সোজা নয়, সত্যই কি জনগণ নামে সমগ্রতার প্রতিটি একক এর ইচ্ছা-আশা-ধ্যান-ধারণা এক হতে পারে? এখানেই লীডার আর ডেলিগেশনদের কাজ, তাঁরাই হয়ে বসেন এই সমগ্রতার মুখপাত্র যেখানে বিরোধী স্বরগুলিকে নির্বাচনপূর্বক ছাঁকাই করে বাদ দেওয়া হয়। এইটি হল সিলেক্টিভ পপুলিজ্‌ম। এর উদাহরণ খুঁজতে আজকের দিনে আমাদের  রোমের পিয়াজ্জিয়া ভেনেজিয়া কিম্বা ন্যুরেমবারগ স্টেডিয়াম অব্দি যেতে হবে না। কেবল টিভি বা ইন্টারনেট দেখুন, কিভাবে মুষ্টিমেয় বাছাই করা মানুষজনের আবেগ বা যুক্তিকে সমষ্টির আবেগ-যুক্তি-প্রতিরোধ অথবা সমর্থন হিসাবে চালানো হচ্ছে! বিরোধী কন্ঠ প্রতিফলিত হবে না কোনভাবেই , এটি চিরায়ত ফ‍্যাসিবাদের বিশেষ লক্ষণ।
এইটির উপর দাঁড়িয়েই তারা পচাগলা সাংবিধানিক ব্যবস্থা ও পার্লামেন্টারিকে আক্রমন করে। একটি একমাত্রিক গুণসম্পন্ন জনমোহিনী প্রচারের দরুন মনে হয় প্রাথমিক ভাবে তারাই বুঝি সত্য ও বিচারের স্বপক্ষে। মনে করুন ইতালির পার্লামেন্টে মুসোলিনির বিখ্যাত বক্তব্য “এই ম্যাড়ম্যাড়ে আর বিষন্ন জায়গাটিকে আমি আমার সৈন্য দলের মাথার উপর অন্তত একটা ছাউনি হিসেবে ব্যাবহার করতে পারতাম“ এই করুণ বক্তব্যর ফলে তিনি খুব জলদি সেনাদলের জন্য উন্নত মানে ব্যারাক ইত্যাদি পেলেন বটে তবে পইলা চান্সেই তিনি কিন্তু গোটা পার্লামেন্টটাই উচ্ছেদ করে দিলেন।

১৪।  উর ফ‍্যাসিবাদ এক বিশেষ ভাষায় কথা বলে, নিউস্পিক বা বাংলায় বলতে গেলে খবরব বলা যেতে পারে । এই নিউস্পিক কথাটির আবিষ্কর্তা অবশ্যই অরওয়েল । তাঁর ১৯৮৪ উপন্যাসে ব্রিটিশ বা ইংগসক এর নিজস্ব বিশিষ্ট ভাষা ছিল এই নিউস্পিক । উর ফ‍্যাসিজম অনেক ক্ষেত্রেই স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে মিলে যায়। সমস্ত নাৎসি বা ফ‍্যাসিস্ত শাসন কালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যপুস্তকের ভাষায় দেখা যে করুণ রকমের রিক্ত শব্দ ভান্ডার সেই সঙ্গে শিশুসুলভ সরল গোছের পদবিন্যাস। এর দ্বারা ক্রমশই জটিল ও সমালোচনামুলক যুক্তি তর্কর ইন্সট্রুমেন্টটির উপর থেকে ছাত্র তথা ভবিষ্যৎ নাগরিকদের দখল লোপ পেতে থাকে। কিন্তু এ ছাড়াও অন্যান্য অনেক ধরনের খবরব হতে পারে যা নিয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হতে পারে, যেমন কিনা জনপ্রিয় টক শো গুলিতে যে ধরনের শব্দভান্ডার ব্যবহার হয়।

১৯৪৩ সালের ২৭ জুলাই, সকালবেলায় আমাকে বলা হল যে রেডিওতে খবর হয়েছে মুসোলিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন ও ফ‍্যাসিস্ত সরকারের পতন ঘটেছে। আমার মা যখন আমাকে  একটি সংবাদপত্র কিনবার জন্য দোকানে পাঠালেন, আমি দেখলাম নিউজ স্ট‍্যান্ড এ অনেক রকমের নিউজ টাইটেল রয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা হল খবরের কাগজ গুলিতে চোখ বুলিয়ে আমি দেখলাম প্রতিটি কাগজ ভিন্ন ভাবে রিপোর্ট করেছে খবরটি। আমি অন্ধের মত কোন‌ও একটা তুলে নিয়েছিলাম যেটার পয়লা পাতাতেই আমি ৫/৬ টা রাজনৈতিক দল এর নাম পেলাম। তার মধ্যে যদ্দুর মনে পড়ে
ডেমক্রাজিয়া ক্রিসচিয়ানা, দ্য কমিউনিস্ট পার্টি, দ্য সোসালিস্ট পার্টি, দ্য পারতিতো দ’আজিওনে, আর দ্য লিবেরাল পার্টির নাম ছিল।
তখন‌ও পর্যন্ত আমি জানতাম পৃথিবীর সব দেশেই একটা করে রাজনৈতিক দল থাকে, তারাই শাসন ক্ষমতায় থাকে আর আমার ইতালিতে সেরকমই আছে পারতিতো নাজিওনেল ফাসিস্তা । সেদিন , আমি হঠাত ই আবিস্কার করলাম আমার এদেশেই একি সময়ে একাধিক রাজনৈতিক দল রয়েছে! আমি মোটামুটি বুদ্ধিমান ছিলুম ফলে ধাঁ করে বুঝে গেলুম যে এত গুলো দল তো রাতারাতি গজিয়ে উঠতে পারেনা! এরা নিশ্চয়ই আগেও ছিলো... বরাবরই ছিলো। শুধু, লুকিয়ে ছিলো...আত্মগোপন করে ছিলো।
এখন‌ও মনে আছে, একেবারে প্রথম পাতাতেই জ্বল জ্বল করছে একনায়কতন্ত্রের পতন ও স্বাধীনতা ফিরে পাবার উৎসবের ঘোষনা ... বাক স্বাধীনতা, প্রিন্ট মিডিয়ার স্বাধীনতা, ইচ্ছামত রাজনৈতিক দলে যোগদানের স্বাধীনতা  ফিরে পাবার উৎসব...। স্বাধীনতা, একনায়কতন্ত্র, মুক্তি ... জীবনে প্রথমবার এইসব শব্দ জানলাম আমি! সত্যি বলতে কি এইসব অচেনা নতুন শব্দের শক্তিতে আমার যেন নবজন্ম হল! আমি প্রথমবার জন্ম নিলাম স্বাধীন ইউরোপের একজন স্বাধীন নাগরিক হিসেবে!

এই জন্যই, এই জন্যই আমাদের সর্বদা সজাগ থাকতে হবে, আমরা ঐ শব্দগুলোর অর্থ ফের ভুলে না যাই। চির ফ‍্যাসিবাদ কিন্তু সর্বদা আমাদের চারপাশে পাক খাচ্ছে, ছদ্মবেশে, সাধারন পোশাকে। আজ যদি দুম করে কেউ বলে বসে যে “ভাই আমি আউশভিতস ক্যাম্নটা আবার খুলবো“ কিম্বা বলে বসে যে “আমার ভারি ইচ্ছে করে দেখতে ইতালিয়ান স্কোয়ার এ ব্ল্যাক শার্টরা কুচকাওয়াজ করছে সেই পুরান সোনার দিন গুলির মত“ তাহলে আমাদের কাজ টা অনেক সহজ হত। কিন্তু জীবন তো এতো সহজ নয়, প্রতিবার ফ‍্যাসিজ্‌ম ফিরে আসবে নতুন নতুন ছদ্মবেশে, ভীষণ সরল ও পবিত্র ছদ্মবেশে। আমাদের কর্তব্য একটাই, ফ‍্যাসিবাদের এইসব নতুন নতুন খোলসগুলো ছিঁড়ে তাদের উন্মুক্ত করে দেওয়া, সজাগ থাকা সর্বদা, পৃথিবীর যে কোন‌ও প্রান্তে, যে কোন‌ও সময়ে সজাগ থাকুন।

[অনুবাদকের নিবেদন: এটি ভাবানুবাদ হিসাবে দেখলেই ভাল হয়। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি মনে করি যে কোন অনুবাদই ভাবানুবাদ হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়, তবু ভিন্নমত থাকতেই পারে। ষে কারণেই বলে দেওয়া ভাল যে শ্রীযুক্ত উমবের্তো ইকোর লেখায় তিনি যে সকল কোটেশন ব্যবহার করেছেন আমি সেগুলির আক্ষরিক অনুবাদই রেখেছি, অথবা ফ‍্যাসিবাদের লক্ষণগুলির উচিত উদাহরণগুলি আমার নিজের দেশে বর্তমানে ভুরি ভুরি থাকা সত্বেও আমি উল্লেখ করতে পারিনি (হাত নিশপিশ কচ্ছিল মশয়), কেবল লেখকের উদাহরণগুলিই কেবলমাত্র উল্লেখ করেছি। এতো আত্মনিয়ন্ত্রণ দেখিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। কারণ মূল রচনার শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের একটি বাণী লেখক ব্যবহার করেছেন ফ‍্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতার উদাহরণমূলক উৎসাহ হিসাবে। আমি অনুবাদকের স্বাধীনতার সম্পুর্ন অপব্যবহার করে সেইটুকু বাদ দিয়েছি। এ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত যুক্তি অনড়, তবে সে আলোচনা অন্যত্র হতে পারে। আর শ্রীযুক্ত প্রেসিডেন্টের উক্তিটিও নেহাত সহজেই পাবেন আগ্রহী পাঠক এদিক ওদিক। তাই চাপ নিলাম না। ধন্যবাদ।]
0 Comments

গ্রেগরি   করসোর   "বিয়ে"।।   রমিত দে

7/4/2019

0 Comments

 
Picture
(বিট প্রজন্মের তরুণতম কবি গ্রেগরি করসোর জন্ম ১৯৩০ সালে নিউ ইউর্ক শহরে। তাঁর কবিতা দৃশ্যগল্প, সোজাসাপ্টা বক্তব্য, বিচিত্র শব্দচয়ন, হাস্যরস এবং সর্বোপরি বিদ্রোহী ভাবমূর্তির জন্য সুপরিচিত। বিট প্রজন্মের 'ব্যাড বয়' হিসেবে খ্যাত করসোর প্রিয় বন্ধু ও শিক্ষক ছিলেন প্রবাদপ্রতিম কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ। গিন্সবার্গ, করসো, জ্যাক কেরুয়াক এবং উইলিয়াম বারোজের সেই গোষ্ঠীই পঞ্চাশের দশকে বিট প্রজন্ম হিসেবে সাহিত্যের জগতে ঝড় তোলে। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ-'দ্য ভেস্টাল লেডি অন ব্র‍্যাটল' এবং 'দ্য মিউটেশন অফ দ্য স্পিরিট।' 
'ম্যারেজ' খুব সম্ভবত করসোর সর্বাপেক্ষা স্বকীয় কবিতা। ১১১ পংক্তির এই দীর্ঘ কবিতায় কোনো ধারাবাহিক ন্যারেটিভ নেই, বরং এক দীর্ঘ ঘ্যানঘ্যানে স্বগতোক্তির মত এর চলন। করসোর নিজের বয়ানেই পংক্তিগুলো 'জাস্ট ফ্লো লাইক আ মিউজিকাল থিং উইদিন মি।')



আপনারাই বলুন না, এবার কি তবে বিয়েটা সেরে ফেলা উচিত?
           বারবার প্রশ্ন না করে ভাল ছেলে হয়ে যাই – এটাই চাইছেন?
চাইছেন পশমের পোষাক আর গোল টুপিটা পরে পাশের বাড়ির মেয়েটাকে
                                                        তাক লাগিয়ে দিই?
আমি বলব ওকে সিনেমায় না নিয়ে গিয়ে কোনও একটা কবরস্থানে নিয়ে যাও
পুঁজিপাটার অনেক দূরে প্রথমে গল্প হোক সেই নেকড়েমানুষকে নিয়ে,
এরপর কুয়াশার মত দাঁতওয়ালা নিষিদ্ধ শিঙার শব্দ
                       ‘ঘাড় বেঁকে ওর আত্মায়  ঢুকে গেলে’
ওকে চাও,
চুমু খাও
আর  তারপর ও চলে যাক অনেকদূর
                            অনেকদূর মানে অনেককককককককক দূর
দেখা শেষ হলে যেখানে একটি মিলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য আমি দেখতে পাচ্ছি
রাগহীন অভিমানহীন হারিয়ে যাওয়ার আগে শুনতে পাচ্ছি শরীরহীন সেই স্বর
             ‘অনুভব করো’...
‘যাওয়াটুকুকে অনুভব করো’..
যার জন্য অপেক্ষায়, আমি কখনও মানতে পারিনা উলঙ্গ শবের মত
দুহাতে জড়াব তাকে।
বরং ভাঙা সমাধিতে ঠেস দিয়ে দাঁড়াক
আকাশ ঝুঁকে পড়ুক মুখে
আর গোটা রাত্রি জুড়ে ভাঙা নক্ষত্ররা চেয়ে বসুক ওকে...
 
অথচ এ ভাবনাটাও তো আসছে!
যখন ও আমাকে ওর বাবা মায়ের সাথে পরিচয় করাতে যাবে
মানে, যখন কনুই দিয়ে নিজেকে গুঁতিয়ে শিরদাঁড়াটা সোজা করব
আর প্রথম বার চিরুনি দেব চুলে 
আর যখন চামড়ার ওপর দিয়ে প্রথমবারের মত
                                        ঝুলিয়ে নেব নিষ্প্রভ একটা সাদা টাই
 
তখন কি দু হাঁটু মুড়ে দু কদম পিছিয়ে পুটকি মেরে বসে পড়া উচিত
ওদের ওই পাখির মত সোফাতে !
তখন কি একবারের জন্যও বলা উচিত নয়- ‘বাথরুমটা কোথায়?’
কিছুতেই বুঝিনা আমাকে ছাড়া কিভাবে আর আমাকে ভাবতে পারি
না হয় ফ্লাস গর্ডন সাবানের গন্ধটা মনে মনে ভেবে নেব
কিন্তু, তাতেও কি...
একটা  কমবয়েসী ছোকরার কাছে পুরো ব্যাপারটা কি ভয়াবহ
সেটাই ভাবার চেষ্টা করছি।                                                                            
এইখানে মেয়ের বাবা-মা আর এইখানে ছেলেটি     মুখোমুখি
না, কেউই পুরোপুরি অসহ্য নয়
আবার কেন্দ্রীয় ভারসাম্যের মত মাঝের নীরবতার কোনো শব্দ নেই জেনেও
দুপক্ষই ঝুঁকে পড়েছে পুরোপুরি দুপক্ষের সামনে
আর মেয়ের পরিবার ভেবেই যাচ্ছে চেনা নেই জানা নেই
                                  অথচ ও আমাদের মেরিকে চায়...
তারপর চা আসবে
তারপর বাড়ির তৈরী কুকিজ
তারপর সেই অমোঘ প্রশ্নটি - কি করো তুমি?
 
বলে দেব ওদের কে? বলে দেওয়ার পর আমাকে পছন্দ করবে?
বলবে, ঠিক আছে বিয়ে করে নাও?
একটা মেয়ে হারিয়ে একটা ছেলে তো পেলাম !
আর ঠিক তখনই কি আমার বলা উচিত - ‘বাথরুমটা কোথায়?’
 
আর বিয়ে! উফ! চারদিকে সাজুগুজু করা মেয়ের বাড়ির লোকজন
আর আমার সেই ধর্মহীন ক্ষুধার্ত কুকুরের মত গোঁফ দাড়িওলা কয়েকটা বন্ধু
যাদের কাছে ওই খাবার টেবিলটা ছাড়া কোনকিছুই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
 
আর ওই পুরোহিত! তাকিয়ে রয়েছে এমন যেন
                       আমি আমার লিঙ্গ নিয়ে খেলা করছিলাম লুকিয়ে
এইমাত্র ধরে ফেলেছে।
একটি নিঁখুত আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে
একটি জীবাণুশূন্য বাতাসের ভেতর দাঁড়িয়ে
ও আমাকে জিজ্ঞেস করবে, ‘তুমি কি মেয়েটিকে আইনত স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে চাও?’
আর আমি?
একটি নিঁখুত আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে
একটি জীবাণুশূন্য বাতাসের ভেতর দাঁড়িয়ে
ভাঙা ডানা নিয়ে
তখনও আমতা আমতা করব
 
তারপর চুমু খাব কনেকে,মানে আমার সদ্য বিবাহ সম্পন্না বউটিকে
পাশ থেকে কাঁধ ঝাঁকিয়ে দেবে কেউ, এগিয়ে দেবে লাল কারনেশন
কেউ আবার কিচ্ছুটি না দিয়েও বুঝিয়ে দেবে
                 এসবই দাবার ছকের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা নিছক দুর্ঘটনা।
ওরা বলবে - ‘ এখন থেকে ও শুধুই তোমার’- হা হা হা
ওদের চোখের দিকে তাকালে তখন একটাই দৃশ্য
      - একটা রগরগে অশ্লীল ফুলসজ্জা-     যা ঘটতে চলেছে...
 
তারপর!
সেই একই গল্প।
                রান্নাবান্নাজুতোটুতোটুপিফুপিবরবউবন্ধুবান্ধবফুলচকোলেট
প্রান্তর পথ রক্ষ যক্ষ ভোজ্য ভাষা – ওদের সব এক।
শয়ে শয়ে ওরা ঢুকে পড়বে একই বাসরে
ঢুকে পড়বে গরম কোনও হোটেলে- যেখানে তৃষ্ণার বিপরীতে জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে
তীব্র কোনও আলো।
আজ রাতে ওরা সবাই একই কাজ করবে
একই? হ্যাঁ-একই কাজ !
হোটেলের অবিচলিত ক্লার্কটা জানে এরপর কি হতে চলেছে
লিফটম্যান জানে এরপর কি হতে চলেছে
লবির জম্বিটাও জানে
এমনকি চোখ পিটপিট করতে থাকা বেল-বয় টাও...
ওই একটাই কাজ।
সব্বাই জানে!
সব্বাই?
 
দুঃখিত, জানা জিনিস আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারিনা
কিচ্ছুটি করব না। শুধু সারারাত জেগে থাকব !
স্বাভাবিক বাতাসে অস্বাভাবিক স্থির ওই ক্লার্কটার চোখে চোখ রেখে !
চেঁচাব। অপার্থিব এক চিৎকার।
              পরবর্তী অন্ধকারের কাছে হারতে চায়না এমন এক চিৎকার!
 
আমি এই নিয়ম মানিনা!
আমি এই নিয়ম মানিনা!
 
এ নিয়ম আমার কাছে অবিশ্বাসী, অভিশাপগ্রস্ত।
এ বাসর ,ফুলসজ্জা, সাদা বরফের মত এই সহবাস-
                                    তার প্রতিটা দাগসুদ্ধ আমি তাকে অবজ্ঞা করি !
সে মূহুর্তে আমি দৌড়তে থাকব,
বেঁচে থাকার প্রমাণ  দিতে না পেরে তোবড়ানো ধাতুকলিজা নিয়ে দৌড়ব।
ওই গরম হোটেলের নরম করিডোর ধরে দৌড়ব
দৌড়ব “পরমায়ুহীন বিদ্রোহী”র মত “ বাঁচার ওষুধ” চেয়ে
দৌড়তে দৌড়তে সোজ্জা চলে আসব নায়াগ্রার কাছে।
সেই আমার শেষ আসা। সারাজীবনের আসা।
ওখানেই প্রপাতের নিচে পিছলের মত থমথমে একটা অন্ধকার গুহায়
                                                বসে থাকব আমি।
চুপটি করে।
আমি, মানে, ফুলসজ্জার বাসর থেকে পালানো একটা পাগল
সে মূহুর্তে যে কিনা শব্দহীন পাথর ঠুকে ঠুকে
                      বিয়ে নামক একটা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে চাইছে।
অথবা ধরা যাক কষিয়ে একটা লাথি মারতে চাইছে
                      মিথ্যে মিলনের ভিত্তিপ্রস্তরটুকুতে
শেষবারের মতন।
 
কিংবা হলুদ মত্তজল আর মুখোশ থেকে
ঘুমন্ত সমাজ আর পারাপারহীন স্রোত থেকে পালিয়ে আসা
অস্ফুট চিৎকারে গুটিয়ে নেওয়া ঐ খর্বকায় শরীরটাকে সাধুও ভাবতে পার।
বিবাহ নামের বিদ্রুপে      বিচ্ছেদচরিত হাতে নিয়ে
                                             বসে থাকা এক সাধু।
 
কিন্তু সত্যিই ভাল ছেলেদের মত
                   এবার আমার বিয়েটা করে নেওয়া উচিত!
সাংঘাতিক কিছু তো নয়, একজন ভাল বর একজন ভাল বাবা - মানে যেমন সবাই হয় আর কি!
বাড়ি ফিরব নতুন ফুল কিনে, আগুনের পাশে এসে বসব, বউ তখনও রান্নাঘরে
ওর ভেতর ঢুকে পড়তে চাইব সমুদ্রের অস্ফুট ধ্বনির মতো
ও আমার কাছে বাচ্চা চাইবে
আর পুরো ব্যাপারটা মদ মাংস স্বপ্নের উদ্ভাসে ছায়াঘন হয়ে উঠবে
যখন ও মুখের সামনে এগিয়ে দেবে লাল হয়ে ওঠা বিফের টুকরোগুলো
দুঃখও যে পাবেনা তা নয়, দু একটা বাসি ফুলের মত সেসব দুঃখ
                          উঠে আসব দাদুর ছেড়ে যাওয়া দোলনা থেকে
তারপর গান শোনাবো। মরে ছাই হয়ে আসা আলো। ঠান্ডা। শক্ত। ওরই ভেতর এগিয়ে আসবে দুজোড়া চোখ আর একজোড়া হাসির শব্দ...
উফ, ভগবান ! কত কিছু করার আছে আমার একজন ভাল বর হয়ে!
 
না , না, এত ভেবে লাভ নেই। বিয়েটা আমার করে নেওয়াই উচিত!
কত কিছু করার আছে!
যেমন ধরুন মিঃ জোন্সের বাড়িতে গভীর রাতে লুকিয়ে চুরিয়ে ঢুকে পড়ে
ওর পুরো গলফ ক্লাবটাকে বিশ শতকের নরওয়ের বই দিয়ে ঢেকে দেওয়া।
যেমন ধরুন লন মোয়ারের ওপরে র‍্যাঁবোর ছবিটাকে ঝোলানো।
কিম্বা টানু-টুয়ার স্ট্যাম্প দিয়ে সাজিয়ে দেওয়া পুরো বেড়াটাকে।
আবার ধরুন কম্যুউনিটি কালেকশনে মিসেস কাইন্ডহেড এলেই ওনাকে জড়িয়ে ধরে
জানতে চাইব-
আকাশে আজ আলো নয়,অপবিত্র আত্মাদের অনুরোধ শুনতে পাচ্ছেন কিনা!
আর ভোটের জন্য মেয়রের আবির্ভাবে প্রথম প্রশ্নটাই হবে, কবে আপনি নির্বিচারে তিমি শিকার বন্ধ করতে ঠিকঠাক একটা পদক্ষেপ নেবেন!
দুধের বোতল নিতে এলে গোয়ালাকে আমি চিরকূটে লিখে দেব- পেঙ্গুইনের গুঁড়ো চাই। পেঙ্গুইনের গুঁড়ো। বেশি নয়, একমুঠো হলেও পেঙ্গুইনের গুঁড়োই চাই...
 
আর হ্যাঁ, যদি আমি বিয়ে করি, আর  জায়গাটা কানেক্টিকাট হয় ,আর বরফ পড়ে, আর সময়টা এমন যখন ওজন বাড়িয়ে সদ্য বাচ্চা বিয়োনো আমার বউ , আর আমি জেগে আছি, নিজেকে বহন করে, রাতে ঘুম নেই, অতীত আমার পেছনে আর আমি মাথা দিয়ে আছি জানলায়, বৃষ্টি আর আলো নিয়ে তখনও দ্বিধান্বিত এমন একটা জানলায়...                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                             
মনে হবে সহজের মধ্যেও সারারাত ধরে কাঁপতে থাকা একজন একা
মনে হবে বাড়িয়ে দেওয়া স্মৃতি,আর ছোটো ছোটো দীর্ঘশ্বাসে ধুয়ে দেওয়া হচ্ছে
তার দাঁড়াবার জায়গা।
একজন নেতিমানব।
প্রায় মানুষের মত একজন একা...
দায়িত্ব বোঝে অথচ আটতে পারেনা কালো পৃথিবীর কালো দড়িতে
হাসি সে জানে, অথচ জীবনে ফেরার ভৌতিক হাওয়া
                                   বারবার ঘুম পাড়িয়ে দেয় তাকে  
 
এসো, এভাবেই বিশ্বাস করি পিতৃত্বের শুরুটা।
একটা রাবারের চুষিকাঠির সাথে এল একটা বাচ্চা
আর সাথে এক ব্যাগ ভাঙা বাখের রেকর্ডের ঝনঝনানি
ওর ঝুলন্ত বিছানায় নজরে আসবে পিয়েরো ডেলা ফ্রান্সেসকার ছবিগুলো
ওর লালাপোষে গ্রীক বর্ণমালার কোনো একটা প্রকল্পের অংশ
আর ওর খেলার জায়গাটা যেন পাহাড়ের উপর, খোলা আকাশের নিচে
যেন আথেনাকে উৎসর্গীকৃত পার্থেনন...
 
 
উঁহু, আমার সন্দেহ আছে!
এমন একটা বাবা হতে পারব বলে আমার এতটুকু বিশ্বাস নেই।
 
এখানে বরফ নেই ,বড় কোনো জানলা নেই
নেই নির্সগের নির্দেশ, কেবল মেঘলিপ্ত নিউইয়র্ক সিটি।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে জান্তব একটা গন্ধ আর
গন্ধ থেকে চুঁইয়ে আসা ইঁদুর আর আরশোলার মজার শব্দ।
এখানে মহৎ অন্ধকারে টুকরোগুলোকে এক এক করে কুড়িয়ে নিচ্ছে অন্ধ রাষ্ট্র
ভোর থেকে তার সাত সাতটা উড়ান
ভোর থেকে তার বাচ্চারা নাকের পোঁটা মুছে ঘুরে বেড়ায় ব্যাটম্যানের খোঁজে
আর প্রতিবেশিদের দাঁত নেই, শুকনো চুল, মোহগ্রস্ত প্রাচীন ডাইনির মত
সবাই টিভি দেখতে চায়
ভাড়া চায় সবাই
ভাড়া চায় মালিক
মুদির দোকান,
ব্লু ক্রস,
ইলেকট্রিক অফিস,
নাইট অফ কলম্বাস
ভাড়া-
ভাড়া-
ভাড়া-
ভরের সাথে গাদাগাদি করে ভরে দেওয়া হয়েছে অদৃশ্য ন্যাংটো এক ভাড়া
এখানে একটু পিঠ পেতে শোবে!- হবে না
স্তব্ধ হয়ে বসে থাকবে! – হবে না
স্বপ্ন দেখবে তুষারপাতের, একটা জিরানিয়াম গাছের!
নিদেনপক্ষে একটা ভুতুড়ে পার্কিংয়ের!- হবে না
.
না, না, অসম্ভব। বিয়ে আমার করা উচিত নয়। কোনওদিনও না।
 
কিন্তু ভাবা যাক- খুব সুন্দরী একটি মেয়ের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে, প্রকৃত অর্থে সুন্দরী, লম্বা, কালো ভদ্রস্থ পোশাক পরিহিতা আর হাতে কালো দস্তানা-এক হাতে সিগার হোল্ডার আর অন্য হাতে পানীয়-বরফ ভাসছে সামান্য ওপরে আর আমরা পেন্টহাউসের অনেক ওপরের তলার একটা ঘরে অনেক বড় একটা জানলার সামনে যেখান থেকে পুরো নিউ ইয়র্ক শহরটাকে দেখা যায় এমনকি আকাশ পরিষ্কার থাকলে আরও বহুদূর দেখা যেতে পারে...
না। ভাবতে পারছি না। কিছুতেই না। কষ্টকল্পনা করেও না।
এত সুন্দর একটা খাঁচার স্বপ্ন আমার পক্ষে ভাবা সম্ভব নয়।
 
কিন্তু ভালবাসার কি হল?
ভুলে গেছি।
এমনটা নয় যে ভালবাসতে পারিনা।
এটা অনেকটা এমন যে ভালবাসাটাকে আমার আজকাল জুতো পরার মত মনে হয়-
মোজার ওপর কিছু একটা চাপিয়ে নেওয়ার মত অস্বস্তিকর।
আমার মায়ের মত কোনও মেয়েকে কখনই বিয়ে করতে চাইনি আমি।
আর ইনগ্রিড বার্গম্যান তো বরাবরের মতই ধরাছোঁওয়ার বাইরে।
আর হয়ত অন্য কোনো মেয়ে থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু তারা ইতিমধ্যেই বিবাহিত
আর আমি ছেলেদের পছন্দ করিনা।
আর
আর...
কিন্তু কাউকে না কাউকে তো একটা হতেই হবে !
বিয়েটাকে মেনে নেয়নি যারা।
নাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ায়- যখন ৬০ বছরের বুড়ো আর বিয়ে করিনি,
একা একটা সাজানো ঘরে থাকি, থাকি মানে জাঙ্গিয়া ভরতি হিসির দাগ নিয়ে
 তখন অন্যেরা সবাই বিবাহিত
   আমি ছাড়া পুরো পৃথিবী বিবাহিত !
 
এত কিছুর পরেও মনে হয় যদি কোথাও একটা মেয়ে থাকে,
যেমন আমি আছি,
মানে, আমার মত,
          তাহলে বিয়েটাও হয়ে যাবে।
যেমন নরম নিঃসঙ্গ গয়নাগুলো নিয়ে শ্বেতসারসের মত সে অপেক্ষা করছে
                                        তার ইজিপ্সিয়ান প্রেমিকের জন্য
তেমনই তো আমার প্রতীক্ষা-
   
    জীবনের স্নানে অজীবনের ছোট্ট জাহাজটিকে ভাসানোর প্রতীক্ষা...                                 
       ২০০০ বছরের মীমাংসাহীন প্রতীক্ষা...
 


0 Comments

নবীনা   দাসের   কবিতা ।। নির্নিমেষ   ভট্টাচার্য

7/4/2019

2 Comments

 
Picture
[কবি নবীনা দাসের জন্ম ও বেড়ে ওঠা গৌহাটিতে। নবীনা ২০১৭ সালে সাহাপেডিয়া-ইউনেস্কো ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১২ সালে তিনি ছিলেন স্টার্লিং বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্লস ওয়ালেস ক্রিয়েটিভ রাইটিং অ্যালমনাই এবং ২০১৬ সালে কমনওয়েলথ রাইটার্স অর্গানাইজেশনের ফিচার কোরেসপন্ডেন্ট। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ- ‘ইনটু দ্য মাইগ্রেন্ট সিটি’( ২০১৩) এবং ‘ব্লু ভেসেল’(২০১২)। প্রথম উপন্যাস ‘ফুটপ্রিন্টস ইন দ্য বাজরা’(২০১০) এবং প্রথম ছোটগল্পের সংকলন ‘দ্য হাউজ অফ টোয়াইনিং রোজেস’(২০১৪)। নবীনার কবিতা ক্রোয়েশিয়ান, ফরাসী, বাংলা, মালয়ালম এবং ঊর্দুতে অনূদিত হয়েছে। প্রসঙ্গত নবীনার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘সংস্কারনামা’ ওপেন ম্যাগাজিনের নিরিখে ২০১৮ সালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে আলোচিত হয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থে উঠে এসেছে দেশের সমসাময়িক রাজনীতি এবং তৎসহ কবির নিজের প্রতিবাদী অবস্থান। অনূদিত কবিতা চারটিও ‘সংস্কারনামা’ বইএরই অংশ।]


সবাই যখন একটা নাম চেয়েছিলো/ When Everyone Asked for a Name
 
১৬ বছর বয়সে খুন হওয়া জুনায়েদ এবং তার হত্যার পরে জ্বলে ওঠা ‘নট ইন মাই নেম’ আন্দোলনকে উৎসর্গ করে
 
রেলওয়ে স্টেশনে একটা সাধারণ গ্রীষ্মের দিন
ঘুম আর জেগে থাকার ঠিক মাঝামাঝি একটা সময়
আকাশ জুড়ে দলা দলা ভাতের মত সাধারণ আকারের মেঘ
মৃদু হাওয়া, যা কিনা গ্রীষ্মের তথাকথিত লাবণ্য
ট্রেনের আনুষঙ্গিক এই ভালোবাসা এক অন্তহীন গল্পের মত
কিন্তু মুখে রক্তের ভালোবাসার দাগ অসাধারণ ও বীভৎস--
আর লোকগুলো জিজ্ঞাসা করেঃ তোমার নাম কি জুনায়েদ?
 
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজি’উন্
 
আমি খবরে দেখছি এই নির্জীব আধ-শহুরে রেল কামরা
আমি তাকিয়ে আছি ঘাতকের চোখ নিয়ে, উগ্রবাদীর নাক নিয়ে
আমি তাদের মতই সেই এক সস্তা সিগারেট টানছি
আর আমি সেই দশাসই লোকগুলোর মতোই বেপরোয়া উগ্রতায় মত্ত
আর এক মুহূর্তে রেললাইনের সব দুর্গন্ধ ছাপিয়ে যায় মানুষের স্বেদ্গন্ধ--
আর আম্মা প্রশ্ন করেঃ জুনায়েদ কোথায়?
 
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজি’উন্
 
 প্রতিদিনের মত ঢিমেতালে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত
যা সরে সরে যায় মুখ, অবয়ব আর ময়লা টুপির উপর দিয়ে
যা কিশোরের ঈষৎ ছোপ ছোপ চিবুকের উপর টোকা মেরে যায়
স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে অদৃশ্য শিশু-নারী-বৃদ্ধের স্থানুবৎ ক্যানভাস--
অথচ কেউ প্রশ্ন তোলেনাঃ এই কি জুনায়েদ?
 
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজি’উন্
 
সবকিছু মেঘের মত দলা পাকানো, ভাঙ্গা কোলার বোতল
চলন্ত জানলা থেকে ছুঁড়ে ফেলা ভাঙ্গা মাটির চায়ের ভাঁড়
দখিনা হাওয়া মেখে নেওয়া একটা রক্তাক্ত সিটের কোণা
আর বিলাপের মত জেগে ওঠা মারু বেহাগ--
কেউ কি জিজ্ঞাসা করেছিলোঃ তুমিই কি জুনায়েদ?
 
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজি’উন্
 
লোহার চাকার শব্দ আর পুদিনার গন্ধ মিশে যাচ্ছিলো বাতাসে
প্রাচীন পাথরগুলির গায়ের শ্যাওলা ছুঁয়ে ফেলছিল মশলা আর থুতু
আর তারপরই জিভে নোনা স্বাদ, দাঁত বেয়ে ধীরে ধীরে ঘামের চুঁইয়ে পড়া
হৃদপিণ্ডের ঠিক ভেতরে। আর তারপর সব থেমে যায়। শুধু একটা কর্কশ খুলিফাটা শব্দ ।
আর আমরা সবাই তাকিয়ে আছি জুনায়েদের দিকে।
 
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজি’উন্
 
(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজি’উন: আমরা আল্লার অংশ, তাঁর কাছেই আমরা ফিরে যাবো)
 

অস্তিত্বের কারণসমূহ/Reasons for Existing
 
শুধুমাত্র বৃষ্টি আসে বলেই
এমন নয় যে আমাদের কান্না থেমে যায়
 
শুধুমাত্র সূর্য ডোবে তাই
এমন নয় যে আমাদের রক্ত শোধিত হয়ে যায়
 
দরজায় দরজায় ঢ্যারা কাটা
কেউ একটা নিখোঁজ
আলিবাবার গল্পের মত
আমরা খুঁজে চলেছি কোথায়
তার শেষতম অভিব্যক্তি ভেজা ছাপ রেখে গ্যাছে
 
শুধু একটা দরজা আছে বলেই
এমন নয় যে সে স্বেচ্ছায় চলে গেছে
তার পায়ের চিহ্ন পাওয়া যায়নি
টেবিলের উপর একটা কলম রাখা
যেখানে ‘ভালো আছি’ লেখা শেষ কাগজটা
আনমনা হাওয়ায় উড়ছে
 
                                                                        শুধুমাত্র রাত্রি আছে বলেই
                                                                        এমন নয় যে অন্ধকার দিনের কাছে যায়
 
সন্ধ্যের ব্যস্ততায়
গঙ্গা ধাবায় চায়ের কাপে টুংটাং
আধপোড়া সিগারেটের প্রান্ত জ্বলে ওঠে
নিঃশেষ হয়ে ছুঁড়ে ফেলার আগে
বর্ডার আর ব্যান্ড নিয়ে ছাত্রদের  আড্ডা জমে ওঠে
যুগলেরা পরস্পরকে ছুঁতে চায় ভোর হওয়ার আগে
শুধু গোধূলিতে হারিয়ে গ্যাছে একটা মাত্র নাম
 
বিস্মৃতি আছে বলেই
এমন নয় যে স্মৃতি ঝরা পাতার কাছে যেতে পারেনা
আম্মা ফিসফিস করে ওঠেঃ ‘নাজীব, মেরা বেটা’
তার নামে শূন্যে মুঠো তোলে বন্ধু
চারটে দেওয়াল মনে রাখে তার ছায়া
জুতো, বইয়ের তাক আর ঘড়ির টিকটিক শব্দ--
একা একটা ক্যালেন্ডার পাহারা দেয় একটা হারিয়ে যাওয়া নাম



দেশদ্রোহের সামগান/ Hymn of the anti-national
 
আমার প্রেমিকেরা সব দেশদ্রোহীর দল
চোখ তাদের পাথর বসানো তামা
নোনা জিভ আরাবল্লীর শ্রেনী
আমার উদ্দেশ্যে গাওয়া
প্রত্যেক প্রেমের গানের সাথে
রামের পিছনে ধাওয়া করে যায় জয়
ঈর্ষায় মরে শ্রী--
এই কোলাহলে জেগে থাকে আরো কতো...
কারণ, ‘আচ্ছে দিন’ কি শুধু
সুবিধেভোগীর জন্য আসে?
একটা জাতিবিরুদ্ধ দিন কি
আমাদের এনে দিতে পারে
অনন্ত বসন্ত?
 
আমার পোষ্যরাও এখন দেশদ্রোহী
তাদের জল্পনায় উঠে আসে ব্যক্তিগত অধিকার
আর তারা মন্ত্রণা করে কীভাবে এই
মানবতাহীন মানুষগুলোকে সরিয়ে
ওরা হেডলাইনে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে বেড়াবে
বিতর্ক ওঠে সপ্তম সুরে-
যেদেশে ঈদের পাঁঠার জন্য সবাই হা হুতাশ করে
সেদেশে মনে হয়না কেউ জানে
রোহিঙ্গারা কারা
 
আমার কলমও এখন পুরোদস্তুর দেশদ্রোহী
বিদ্রোহী কালির রেখা বেয়ে শোকগাথা লিখে যায়
ভীষণ রাগে স্লোগান তোলে
আর ভালোবাসার সময় এলে
কলম স্নিগ্ধ আইভি কিম্বা রোদ্দুর হয়ে ওঠে।
আমার কলম সরকারী নোটিসের নির্দেশ মানেনা
দুরন্ত আঙ্গুলগুলো নিশপিশ করে উঠে
ছোঁয় মোবাইলের আশ্চর্য প্রদীপ
 আর লিখে ফ্যালে ‘বিপ্লব’
 
আর তারপরই হঠাত শব্দটা হয়ে যায় ‘প্রেম’
--আরেকটা রাষ্ট্র-বিরোধী ‘সেভ’।



সীমান্তকৃত/ Em-bordered
 
বিষাদ আর আমি দুই প্রেমিক
 
আমাদের মিলন ভিন্ন দুই যুগের যুক্তির মতন
আমাদের মিলন ইতিহাসের ফজর আর গোধুলির মতন
 
আমাদের পূর্ব-নারীদের ইতিহাস আমাদের বালিশের গায়ে কাশিদা করা
 
বিষাদ যাত্রা করেছিলো খাম্মাম থেকে ওয়ারাঙ্গুলে/ লাহোর থেকে
লুধিয়ানায়/ সুনামগঞ্জ থেকে সুয়ালকুচিতে। কেউ ছিলো না ট্রেনে।
ইতিহাস ছিলো এমন এক মহাকাশযান যেখানে মানুষের আনাগোনা
শুরু হয়নি। সময় ছিলো মধ্যরাতের পরিণাম/ কিম্বা দুপুরের।
ঘড়ি ছুটে চলত সারাক্ষণ। মৃত্যু সাঁতরে বেড়ায় যে অন্ধকারে
তার গা ঘেঁষে বিষাদ পেরিয়ে গিয়েছিলো আমাদের প্রদেশের সীমানা /
এই তো কদিন আগে। একটা ঘূর্ণাবর্ত এলো। মৃত্যু রয়ে গেলো/ মরল বিষাদ।
সঙ্গে নিয়ে গেলো শত শত প্রাণ। ছিন্নভিন্ন দেহ/ আমাদের মহাকাশযানে।
তাদের শরীরের প্রত্যেকটা ক্ষতচিহ্নের নাম সীমান্ত। আমি বিষাদের জন্য কেঁদেছিলাম।
 
আর তারপর সীমান্ত-রক্ষীরা য়ামাদের বলেছিলো
কুমকুম ফুটেছে
যেখানে
 
/রক্ত/
/ঝরে/
/পড়েছিলো/


2 Comments

অযথা   চিঠি   বিলি   না   করে পোস্টাপিসটা   খুলে  যাচ্ছে সামহন্তা   ফুলে।।   তনুজ   সরকার

7/4/2019

1 Comment

 
Picture
(আমাদের কবি,বিনোদ কুমার শুক্ল’কে)


১

 
আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে
তিন তিনজন অশরীরী অনন্তকাল ধরে 
লিফটে করে নীচে নেমে আসছেন
 
ওপরে চলে যাচ্ছেন 
 
তাদের দেখে পরিচিতের হাত-নাড়া নাড়ছি 
অনন্তকাল ধরে
 
আর তারা নীচে নামতে না নামতেই
ওপরে চলে যাচ্ছেন
 
 
 
 
২
 
সিঁড়ি থেকে কয়েকটা পা
গলা অবধি উঠে আসছে
 
বাড়িতে কেউ নেই
 
যার ছিমছাম আতঙ্কেও অরুচি আছে।
 
৩
 
কোনো
৫:৩২ 
 
উভয়
তৎপরতা
 
ঘটাকাশমীর
পটাকাশমীরে
 
বরফের ছাল উঠে 
 
উঠে যায়
 
ঠোঁটের
 
 
 
৪
 
যুদ্ধে যাদের পাঠানো হয়,সহসাই তারা ঘরে ফিরে আসতে পারে
যাদের কাছে যুদ্ধ পাঠানো হয়,যুদ্ধে তাদের জীবিকা পাল্টে যায়।
 
 
 
 
৫
 
স্বপ্নে দেখা ঘরের মজা হল
স্বপ্নে দেখা ঘরে আমারই মতন হুবহু একজন 
দীর্ঘ সময় ধরে পায়ে মোজা পরে যায়
 
অথচ কি বিরক্তিতে,কি ঘুমে 
অযথাই আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসে না।


​

৬
 
‘যাচ্ছে’ ক্রিয়াপদটির 
শূন্যতার দিকে 
ফেরা যায় না
 
‘একরকম মরে যাচ্ছি’কে তো 
তাও চারটে ডালভাত,
শুকনো রুটি খাইয়ে পাঠালে 
 
‘যাচ্ছে’ ধ্বনিস্ব যাওয়া; রাস্তায় মার খেতে
খেতে মরে যাচ্ছে ছেলেটা,ফাট করে 
তার চপ্পল ছিঁড়ে গেল
 
এক মিনিটের নীরবতা 
ছেলেটির প্রেমিকার জন্য
 
অন্যদিকে,‘যাচ্ছি’
 
বলতে কি
 
পাখপাখালি,
ছাদ পেটানোর গান চারদিকে
 
 
৭
 
মুখ গড়িয়ে নামছে রক্ত
 
তার থেকে ছলকে 
 
বেড়ালটির অনর্গল শরীরে
পড়বে কিছুটা
 
কিছুটা না পড়লে
তো বোঝাই যাচ্ছে না
 
সাদা পাপোষটা আদৌ
ভেসে যাচ্ছে কিনা!
 
 
৮
 
টিভিতে যুদ্ধ দেখার ফাঁকে 
 
অর্বাচীন,হেসে উঠছো তো?
 
 
 
৯
 
যদি এভাবে লিখি
 
যু ক্তা ক্ষ র
 
মাটিতে লাঙ্গল চালান
কৃশকায় জাদুকর
 
তার যুদ্ধে মরসুম কটা?
 
আকাশে কটা শার্পশুটার?
 
 
 
১০
 
আমার একটা মুসলিম চরিত্র চাই,শ্রীনিবাস
আমার একটা হিন্দু চরিত্র চাই,শ্রীহোসেন
 
 
 
 
১১
 
কোবিদ,শব্দে পারঙ্গম
 
আলুচাষ করো দেখি--
ধান,ডাল,গম?
 
 
১২
 
আল্লাহ্ হু।
আল্লাহ্ গত হলেন।
 
আল্লাহ্ ছিলেন কৃষক
কালী ছিলেন কৃষি
 
এই যোগসূত্রে চাঁদ ছিলেন নিশি।
 
 
১৩
 
যুদ্ধের ঠিক পরে পরেই তিনি এলেন।
 
অর্থাৎ পরবর্তী যুদ্ধের আগেই আমরা তাকে পেলাম।
 
অর্থাৎ অন্তর্বর্তী যুদ্ধে তিনি আমাদের মধ্যে নেই।
 
 
 
১৩
 
(অর্ক দেব-কে)
 
লাল 
একটা রঙ লাল
 
আর লোলচর্ম বললে
তুমি দ্রুত এসে
 
বলো 
বকলম:
 
লাল দেদ্!
 
কী,কাশ্মীরি
শাল?
 
একটু কমে হবে?
 
ঘরোয়া প্রয়োজন
 
খেপে খেপে।
 
 
১৪
 
এই কবিতাগুলো সহজ
 
এরা আশিকের থান
 
এরা গালিবের তালুতে
বসা মূক মৌমাছি 
 
 
১৫
 
রামপ্রসাদ সেন এভাবে রিক্সাচালকও হতে পারে
যেমন রোজ তুকারাম ডাব্বা পৌঁছে দেয় ঘরে ঘরে।
 
 
 
 
১৬ 
 
আমার লিভারটা সত্যিই 
খুব সাবধানে 
আমার কলিজার চেয়ে
দ্বিগুণ বড় হয়ে গেছে
 
এটা একটা দারুণ ঘটনা
 
মাতাল ও উন্মাদ শরণার্থীদের
 
আগরতলার রাস্তা 
কখনই প্রতিরোধ করে নি।
 
 
১৭
 
উত্তরপূর্ব কোণে কিছুই
অধিক নেই
 
সাপের খোলস থেকে
চা-পাতার শিসে
 
পাহাড়ি মোড়ক পায়ে
শিশুরা করছে খেলা
প্রমাণিত রাবারের বনে
 
এখানে একটু থামি
 
বোধহয় শিশুরা অধিক থাকে
বীতশোক বীতশোক খেলায়?
 
রাবারের 
         নলই  
              গোটা  
                    বন্দুকের উৎস,অবিরাম
 
বলছ
 
গ্রহণ করতে শিখি 
 
উৎস ছেড়ে ছায়াপথ 
ধরে যখন কাঁপছে তিরতির 
সংক্ষিপ্ত শিশুদের রাবার মাখানো পা
 
 
১৮
 
এই কবিতায় একটা ট্রাক অথবা লরি 
এগিয়ে আসছে জোরে 
আর আলো শব্দটির পয়েন্টসাইজ 
পরিকল্পিত বাড়ানো কমানোর মধ্য দিয়ে
এটা বলতে চাইছি যে 
আলো তাকে ছেড়ে চলে গেছে
 
 
১৯
 
অবিরল
মানুষ ফেরত আসে
 
ঘড়ির বৃত্ত ছেড়ে
পুরনো ঠিকানায়
 
তবে চামচে,
কিস্তিতে
 
প্রয়োজনে,দ্বিধায়।
 
 
 
২০
 
জঙ্গলে বেড়াতে গেলে
এমন বৃষ্টির দিনে কোনো
 
বৃষ্টির দিনে কোনো
জঙ্গলে বেড়াতে গেলে
দুর্বল এমনই চাপে পায়ের
 
পতাকা টপকালো ব্যাঙ!
 
ঘচর ঘোচর করা 
পতাকা টপকে গেল ব্যাঙ!
 
ঘাসের ছিটকিনি খুলে বসে আছো?
এখনও ঘাসের ছিটকিনি বসে আছো খুলে?
 
 
২১ 
 
গাছ ডাল নুয়াইয়া থাকে
বন্ধু ঘাড় নুয়াইয়া থাকে
 
থাক
 
আপনেরা ভালো
আপনেরা বসেন
 
 
২২
 
অসংখ্য গাড়ি মোড় থেকে মোড়ে
মেয়েদের নিয়ে ঘুরছে
 
তারা যুদ্ধ জিতেছে
 
মেয়েদের গায়ে তফশিলি তফশিলি গন্ধ 
মেয়েদের গায়ের তফশিলি গন্ধ কাটাতে
 
কিছুক্ষণ পর পর না হয়
জানালা খুলে দেবে তারা
 
 
২৩
 
স্বভাবকে উপলক্ষ্য করেই
 
বিরোধিতা করছি
 
বেশি বিরোধিতা করলে ভয় হয় 
বেশি বিরোধিতা করে ফেলছি না তো
 
আবার!
 
২৪
 
মোড়ের হলুদ ল্যাম্পটাকে তো
এখান থেকেই দেখা যায়
পোকামাকড় জমিয়ে রাখা 
এই শেষ বাতি,
 
বিরতি
 
তাকে কেন্দ্র ধরে এগিয়ে গেলে 
মসজিদটা পড়বে বাঁদিকে
 
মসজিদটা ছেলিম চাচার স্বর
 
জবাবি প্রার্থনায় 
যাকে মন্দির বলাতে ভ্রম হয়
 
মন্দির-মসজিদ সমান পরিধির।
 
২৫
 
ছাইচাপা শ্বাস লিখে চলেছি
 
মাটি ঘষটানো বারুদ 
সংকলন করতে করতে
 
কোথাও কোনো বইয়ের মেটিরিয়াল 
জড়ো হয়ে যাচ্ছে না তো অথর,
 
অর্ধনারীশ্বর?
 
 
২৬
 
পাশ ফিরে শোও
 
ইতস্তত ভাগ করে নিই
সাড়ে তিন হাত কাদা
 
মায়ের কঠিন শাল
 
 
২৭
 
কবি কি করবে বলো
 
সমতলের রুখাশুখা খেয়ে 
ইতিহাসের তমোগুণ 
নিজের ওপর আরোপ করা ছাড়া?
 
কবি কি করবে
 
যদি না একটা অজ্ঞাতবাস
গ্রামের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে 
 
কয়েকটা হাত হয় দৃশ্যমান 
প্রাচীন দেবদেবীর
 
কবি কী করবে নতুন অসুখ দিয়ে?
 
 
২৮
 
ঈশ্বর মাকালফলেন
খুব জরুরি ব্যবহারের জন্য
আমাকে দিয়েছেন
একটা লিঙ্গ,ঢোল ও ক্যানেস্তারা
 
আমি তাকে নির্ভুল বুঝিয়ে এসেছি  
বিনিময়ের ধর্ম
 
 
৩০
 
পিয়ানৌকা।
দিদি পিয়ানো কিনেছে
 
প্রথম দফার
বাজানো শেষ হলে
 
ভাসল জনগণমন 
 
দ্বিতীয় দফার জন্য
অধিনায়ক শব্দটি তোলা রইল।
 
 
 
 
 
৩১
 
লোহার গেটের এদিকে মতবাদ
 
গেটের দিকে মুখ করে
ঘোড়াটি তার সহিসকে নিয়ে 
নির্ভেজাল দাঁড়ানো
 
ণণণণণণণণণণণণণণণণণণণ
                                     
লোহার গেটের এদিকে চওড়া রাস্তায় 
ঘাসের পদ্ধতি
 
মানে অন্যান্যবাদ
মানে,ভিন্ন মতও
 
সহিস দাঁড়িয়ে ঘাস খায়
মানে,বসেও নিশ্চিত তার কিছু হয়ে গেছে খাওয়া
মানে গেটের এদিকটাতে,আর কি,
পর্যাপ্ত ঘাসই রয়েছে
 
শুধু এই দৃশ্যে ঘোড়াটি 
পর্যাপ্ত ঘাস না খাওয়ার চর্চা করে যাবে
 
মানে অপেক্ষবাদ,
মানে ভিন্ন মতও 
 
যে,পরবর্তী অপেক্ষার আগে
চলন্ত ঘাসে এই সতেজ অপেক্ষা নড়াচড়া করে
 
করবে নড়াচড়া 
 
প্রতিবারে এক,এভাবে বারবার
 
আর কি,অপেক্ষার ফ্যালাসি হচ্ছে 
অপেক্ষা বোঝাতে ঘোড়া সহিসকে ছেড়ে 
যে কোনো দুজনকে ঢুকিয়ে দিতে পারি এই দৃশ্যে
 
অপেক্ষাকে,তবে,বলা যেতে পারে অপেক্ষা যোগ দুই 
কিংবা সাধারণ কোনো বিয়োগদৃশ্য ভাবো
 
ণণণণণণণণণণণ
 
তাছাড়া,আর কি,জ্ঞান একটা লোহার গেট
 
ণণণণণণ
 
তার গোপন সাম্রাজ্য
টলছে।
 
 
৩২
 
 
আরো আরব শতায়ু হও,
আলাওল পূর্ণিমার চাঁন্দ।
 
৩৩
 
ভ্রাতৃহত্যাকালে
 
তোমাদের অন্ত্রে
প্রবেশ করবে সেই অন্ত্রপ্রনার
 
অবিশ্বাসীদের নিঃশর্তে
ক্ষমা করবেন তিনি
 
এই বলে মহাকাব্যের 
রচয়িতা তার সরকারি কোয়ার্টারে
 
খন্ডে খন্ডে বিলীন হয়ে যান।
 
আমরা তখন থেকে ক্ষমা চাওয়ার
ভয়ে নিঃশর্ত ঘুরে বেড়াচ্ছি 
 
সিঁড়িহীন চারতলা বাড়িটির
 
মোচড়ে,হোঁচটে।
 
 
 
৩৪
 
মন্দিরের রহস্য ফাঁস করার পর
তারা এগিয়ে যেতে থাকে 
মসজিদের দিকে 
 
অবশিষ্ট রহস্য ফাঁস হতেই
 
মানচিত্রের
 
পুরুষাঙ্গে ভোর হবে।
 
 
 
৩৫
 
মৃৎ,আলিফ,তুষার,পার্জন্য
কী কী নামে তোমায় ডাকি?
 
আমিও বদলে যাই নামে
যখন তোমায় ডাকি।

1 Comment

The   War   Report  ||  James   Bell

4/4/2019

1 Comment

 
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
Picture
(For more from the poet visit-
medium.com/@jrbml.public
​
www.youtube.com/channel/UCEBbylt9Rax3nOP_hyPnMPA
patreon.com/prolekultfilms)


1 Comment

Beyond   the   Barbed   Wire: Three  translations  ||  Huzaifa   Pandit

4/4/2019

0 Comments

 
Picture

Don’t execute these voices
Ahmed Faraz

You impale every infidel heart
armed with spears of your doctrine.


Why wave daggers in our face?
Except love, we preach no doctrine.

Let songs flow through this city
Permit us to call home this city.

We feed fresh colour to flowers
We guard the sweet scent of flowers.

Whose blood do you intend to spill?
We preach love, nor goad to kill.

What will you enjoy of this city:
When words
get hunted into extinction?
When the lyre
is slain as an abomination.
When poems
migrate from persecution?
When melody
is executed by poison?
When a famine
Devours all conversation.
When nothing remains
Save ruins and destruction?

Who will you stone
then?
You will recoil
in horror
When the mirror serves
You
your own reflection.


(Ahmed Faraz (Urdu: احمد فراز‬‎, born Syed Ahmed Shah (Urdu: سید احمد شاہ‬‎) on 12 January 1931in Kohat, died 25 August 2008) was a Pakistani Urdu poet. He was widely known as one of the best modern Urdu poets of the last century. Faraz was his pen name, (in Urdu takhalus تخلص). He died in Islamabad on 25 August 2008. He was awarded Sitara-i-Imtiaz, Hilal-e-Imtiaz and posthumously the Hilal-e-Pakistan by the Government of Pakistan.)


Letter to the Leader
Habeeb Jalib

I assured him:
These teeming millions
are models of rank ignorance
Their conscience lies
in deep deep slumber!
The last stammering ray of hope
was devoured by night-black darkness.
The rumour is true:
reports of their demise
are confirmed as true.
Such impudence-
infested with life.
Only you possess
their remedy.

I assured him:
You inherit the radiance
of the compassionate Lord.
Wisdom incarnate,
Knowledge personified
The nation stands firm
behind you
Our deliverance lies
with you.
You are the dawn
of the promised day
The vast dark
of the dreadful night
Threatens us after you!
This handful that dares to speak
are mere conspirators
bent on mischief.
Lock their tongues
Strangle their throats!
People are caged
At their own cost
in your peaceful regime.
He is an ideal citizen:
head always bowed
At your merciful door.
Forgive his faults!
He is deserving of your mercy.


I advised him:
China is a dear neighbour
A good neighbour is a friend.
May our loyal lives
Be sacrificed on her.
But, be warned:
Don’t be tempted by her autocracy.
It’d make a strange bedfellow
For our Democracy.
Praise it from distance!
Don’t even dream of intimacy.
Surely, these billion simpletons
Called the masses
Can never be worthy
of the coveted throne.
You, only you are the definite reality
These fools are a stupid fantasy.
We pray everyday
To our million gods:
May you stay the President
Till the moon weeps in the sky

Till the sun seethes in the sky. 

- to Mohamad Akhlaq (dadri)

(
Habib Jalib (Urdu: حبیب جالب) was a Pakistani revolutionary poet, left-wing activist and politician who opposed martial law, authoritarianism and state oppression. Pakistani poet Faiz Ahmed Faiz paid tributes to him by saying that he was truly the poet of the masses. He employed a unique sing song style of recitation that combined with his easy earthly idiom granted him massive abiding popularity. The band Laal has rendered several poems of his to critical acclaim.)



Margin
Fehmida Riaz


Has it struck you
When you wax eloquent
about your honour and dignity
and the dizzy supremacy of your
eastern ethics,
from which lofty position
you observe a wretched foreign culture, far inferior
when you note in golden letters your
noble story, the fine, refined traits of your customs
leave a margin in black
where lie pasted modest eastern-women
never ever exposed to the eyes
of the spying sky.
There lie registered
the autobiographies of their modesty
that continue to be written till date
such tales as demand the ransom
of pity and compassion
this is the margin of your culture,
your glorious civilization
that has concealed itself from everyone
till now.
Now tell me just this:
How will you deny
ignore this?


(Fahmida Riaz died on November 21. She will be remembered for her bravery – for her outspokenness as a feminist and public intellectual – and for being a great poet. She wrote for and about ordinary people and their plight, which is why she will be remembered alongside that other great Pakistani poet, Faiz Ahmed Faiz.)

0 Comments

Poems   of   Outrage   in   the   Trump   Era  ||   Cheryl   Caesar

4/4/2019

0 Comments

 
Picture
A short history of mirror

I
Mirror. Hear how the word
echoes itself and fades away.

II
Six thousand years ago, obsidian,
or black volcanic glass, was polished
to yield reflections of human faces,
in what is now Turkey. The ancient Egyptians,
the Greeks and Romans, burnished copper
and bronze. Precious metals that melt and harden,
and the strange artifacts of Ararat.

III
Narcisssus, though, preferred

his pool of infinite depth
and endless refractions. He leaned
forward, reaching for that one perfect
and unattainable image, fell in and drowned.

IV
Glass mirrors appeared

in the third century A.D., in Gaul,
Germania and Asia. And glass gave us
that most interesting mirror, the window
with darkness beyond, which offers
our faces with new shadows, mysterious
and important.

V
Amidst the Victorians, wise little Alice

went through the looking-glass only to find
that grownups are all mad on the other side,
wandering foolishly around
the tidy chessboard of her mind.

VI
In the 1960s, the Man of La Mancha (not Cervantes’ Don)
was destroyed by mirrors, flashing light
in his eyes, showing him his feeble body
and demented face.

VII
Now we have selfies and Photoshop instead.

The new Quixote, Don of Orange, trims his pudge
and lengthens his fingers. Look at me! he boasts,
the way I really am! But are they looking? He flips
through channels, seeking that elusive image
that keeps receding, even on Fox and Friends. He reaches.
Now he’s leaning, leaning…



Press Conference in the Rose Garden

“She’s shocked I picked her.” Sniggers. “She’s in shock.”
“No, Mr. President. I’m not. Thank you.”
“I know that you’re not thinking. Never do.”
He smirks and turns his torso to his claque

Awaiting the applause for this new schlock.
I’m rubber! says the President. You’re glue!
I’m the elite! Your favorite! The new-
Style presidential! Listen to me mock!

Beelzebub! When will our exile end?
When do the grownups come to save us? What
Will bring back Piggy and the conch? We’re stuck

On some demented playground, and pretend
To see a clothèd emperor, and not
A gibbering madman, naked in the muck.



The SOTU slant

Tell all the truth but tell it slant --
  • Emily Dickinson

Nancy Pelosi leans into the clapback,
head tilting, lips firming to an off-center smirk.
Joshua, the bullied Trump boy, dozes off,
head lolling sideways.
AOC slumps, arms folded, and gets called a sullen teen.

All enacting with their bodies
a country out of kilter.
All of them, human spirit-levels.

Like that scene in “East of Eden,” where Elia Kazan
tilts the camera back and forth
as Adam forces Cal to read the Bible.
Dutch angle, as they call it.

Soon we will take the set back, put it straight.
Till then, we are the camera.




Wheels and Walls: A Villanelle for the Shutdown


The wheels in his head go round and round.
His tiny hands make circles in the air,
And the walls come tumbling down.

Three weeks the government has been shut down.
An empty threat, and only meant to scare.
But the wheels of consequence go round and round.

The mouth is moving, but we mute the sound.
He rants and raves, but we no longer care.
The dead white eyes go round and round.

Behind the orange greasepaint, the sad clown
Peers from beneath a shell of lacquered hair.
As the walls of privilege come tumbling down.

The ship of his mind has run aground.
Each time he shuts his eyes, he visions there
The final wall where traitors are gunned down,

And handcuffs, while he thought to wear a crown.
His dying words will be, “It isn’t fair!”
The wheels in his head go round and round
And the walls come tumbling down.





The State of Emergency Speech: A Trio of Triolets


Emergency Triolet no. 1: The Wall

“We don’t need the military. ‘Cause we would have a wall.” tRump in the Rose Garden, 2.15.19

We don’t need the military.
‘Cause we would have a wall.
Wipe out the Spangled Fritillary.
We don’t need the military.
Leave animals no sanctuary.
Just build it big and tall.
We don’t need the military.
‘Cause we would have a wall.



Emergency Triolet no. 2: Trade with China

“It’s going extremely well. Who knows what that means […]” – tRump, 2.15.19

It’s going extremely well.
Who knows what that means.
The farmers can go to hell.
It’s going extremely well.
Say, doesn’t my hair look swell?
Soy’s just a bag of beans.
It’s going extremely well.
Who knows what that means.




Emergency Triolet no. 3: Angel Moms and Dads

“I said, ‘That’s too bad, it’s too bad, it’s so sad.’ Stand up just a second. Show how beautiful your girl was. Thank you.”
  • tRump uses bereaved parent as ten-second prop, 2.15.19.

That’s too bad, too bad, so sad.
Killed by folks who shouldn’t be here.
Stand up, Mom. Show photo, Dad.
That’s too bad, too bad, so sad.
But you showed up and I’m so glad.
Even though you don’t have to be here.
That’s too bad, too bad, so sad.
Killed by folks who shouldn’t be here.


​














0 Comments

ম্যাড   মঙ্ক ।।  শুভ   আঢ্য

4/4/2019

0 Comments

 
Picture
৩৫
দুর্বোধ্যতা এক ভাষা যা শিল্পীদের থাকে 
অথচ আমি সাধারণ মানুষ, আমার দুর্বল ভাষা -
যা দিয়ে তোমাদের সাথে সংযোগ করতে চাওয়া,
তাকে তোমরা বর্জন করেছিলে, তা দুর্বোধ্য নয় যদিও
 
এখন ওই পাখীগুলোর ভেতর তাকালে দেখতে পাই
তোমাদের বাড়ি আলোয় ভরে যাচ্ছে, ওই বরফের তলায়
উষ্মা নিয়ে মাছগুলো ঘুরছে বর্শার কাছাকাছি, আমি
শিল্পী নই যে এ নিয়ে কোনো দৃশ্য রচনা করবো, শুধু
তাদের দেখা ছাড়া কিছুই করণীয় নেই, তারা তাদের
অতীতের সাথে সংযোগ করতে চায় না, অথচ তোমরা
যার ভাষা বোঝো না, তার সঙ্গেই সঙ্গম করতে চাও
বিন্যাস আলগা রেখে ধরে ফেলতে চাও পাখীগুলো
আর ধাঁচের ভেতর এনে ফেলতে চাও দুর্বোধ্যতাকেও
 
আমি শিল্পী না, এই মুহুর্তে আমার ভেতর পাখীগুলো
মুষড়ে পড়ল, নিভে গেল আলো, অথচ দেখো
আমি ব্রাদার গ্রিগরি, তাদের হাতে হাত রেখে দেখাতে
পারলাম না অন্ধকারগুলো, তাদের অতীতও বলতে
পারলাম না, ওরা জানতেও চাইল না, নিগূঢ় ওরাই

 
৩৬
এই খাঁচা তোমার, এই পরিত্যক্ত বরফ তোমার
তুমি এখানে আমাকে বসাও, তোমার গেল
যে দিন, তার ভেতর দেখো পাহাড়ের ধারে অলক্ষ্যে
আমি গ্রিগরি বেড়ে উঠছি বোগেনভেলিয়া হয়ে
 
আর তোমারই টোম্যাটো ভাসমান, তার ওপর কিঞ্চিৎ
কার্পাস ছোঁয়া, দু'টো বোতাম, খোলা খোলা প্রায় যে দিন
গেল তোমার পরিত্যক্ত সেখানে একা আমি, কেন
 
তোমার এই খাঁচার ভেতর দিন, দুপুর, অন্ধকার
কেন আমাকেই দেখাবে আলেকজান্দ্রিয়া? যখন
সেটাও সঠিকভাবে দেখে ফেললে চান্দ্রমাসব্যাপী আমি
অসুস্থ থাকবো নিজের ভেতর... কেন? হে ঈশ্বর ওই
পরিত্যাজ্য পথে আমায় শুতে দাও, এ উন্মাদ গ্রিগরিকে
দাও এক সরাইখানা, শুধু গেল তার যে দিন প্রায়, দু'টো
টোম্যাটো আভা-সমান কার্পাসের মধ্যে গেঁথে দাও



৩৭
সে এক দেরাজ ভর্তি করে মায়া জমায়
এক মায়া পরে, তার পর আরেক মায়া
চাপায়, যেন রেমব্র‍্যান্ট, আমাকে প্রাচীরগাত্র ভাবে সে
আর রঙ চাপায়, তার চাপানউতোরে আমার অতীত
 
চোখের সামনে এক দেরাজ মায়া উপুড় করে দেয়
তার বিগতযৌবন, শোক, পাথরবাটি ওই বড় যার ভেতর
বরফঠাণ্ডা জলে সে শুয়ে পড়ে, এক মায়া খায়,
ঠোকরায় অন্য মায়া গাপ্পির মতো, সেই সব ছবি
আমানত তার, আমাকে সে আধারিত স্বীকার্য ভাবে
 
ওহ্‌, সেই মায়া, তার ভুল চলন, তার এক মায়ার পর
পরের মায়ার আলোয় চোখ আমার ধাঁধিয়ে ওঠে
আমিও প্রাচীরগাত্র হয়ে উঠি, হে রেমব্র‍্যান্ট একরঙা
ছবি, সে দু'পরতে আমাতে চাপায়, আমি কালো হয়ে উঠি
 

৩৮
তারা ভাষা, তাদের শব্দের জল, খিদের কুচি
আমি চিনি না, আমার তো কেবল খাঁড়ির ভেতর
গুঁজে মরে পুরোনো স্বর, যা ফেলে গেছে গলা তাদের
অথচ জমে আছে সেই শব্দের জল আমার মধ্যেও, বড়
অস্থির খিদে, খুব যেন গোটা কোডাক্স গিগাস লিখে
ক্লান্ত গ্রিগরি ঈশ্বরের সামনে ঝিমিয়ে পড়েছে এখন
 
তারা জল, সরযূ গাছে গাছে ফোটে, বরফের তলায়
গলা তাদের, তীক্ষ্ণ কাচে চেরা নলি, কণ্ঠ তারা আমাকে
দিয়ে যায় অসাবধানে - যেন আমি প্রাচীনতাকে ডেকে
তুলবো, অপমানকে খাঁড়ির ভেতর থেকে
তুলে বসাবো আসবাবের ভেতর... খিদে চিনি না আমি
শব্দ আমার ভেতরেও হয় ফাঁপা... স্মৃতির, অপমানের
এবং পুরোনো খাঁড়ির ভেতর থেকে চিৎকারকরেওঠে

​
0 Comments
<<Previous

    Archives

    February 2021
    December 2020
    November 2020
    September 2020
    August 2019
    June 2019
    April 2019
    February 2019
    December 2018
    October 2018
    August 2018

Proudly powered by Weebly
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন