[উজমা ফলক কাশ্মীরি কবি,প্রাবন্ধিক,গবেষক ও চলচ্চিত্রকার।তার জন্ম শ্রীনগরে।তার নির্দেশিত ছবি ‘Till then the roads carry her’,এ পর্যন্ত বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ফিল্মোৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে।গবেষনা,কবিতা,ফটোগ্রাফি ও ফিল্মমেকিং,সব ক্ষেত্রেই সমান অভিনিবিষ্ট উজমা মাস কমিউনিকেশনে এম.এ করেছেন এজেকে এমসিআরসি,জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া,নয়া দিল্লি থেকে।অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাশ্মীরি ও ভারতীয় পত্র-পত্রিকা ছাড়াও তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয় লন্ডনের ‘নিউ ইন্টারন্যাশনালিস্টে’।’Of Occupation and resistance’(Westland/Tranquebar,2013) সংকলনেও তার লেখা(Mausoleum of memory, portrait of resistance/স্মৃতির সৌধ ও প্রতিরোধের গতি-প্রতিকৃতি) স্থান পেয়েছে। উপস্থিত দীর্ঘ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ‘Cafe Dissensus’ ওয়েব পত্রিকায়। ] রেকর্ড করা পচাগলা স্টিরিওধ্বনি-- এক ধর্ষিতা নারীর ধর্ষণোত্তর জবানবন্দি ১ ঔপনিবেশিক নস্টালজিয়া : কাশ্মীরের নদী,উপত্যকা,দীঘি ও তার কমনীয় গাছপালার নারীরিক সন্দর্ভ ছিল কোনো অনন্যা নারীর নৈর্ব্যক্তিক সৌন্দর্যেরই মতন এবং অবশ্যই সব জাগতিক কামনার উর্দ্ধে,অবশ্যই সব জাগতিক বাসনার উর্দ্ধে। ২ কিন্তু এই বিলম্বিত মেডিকেল পরীক্ষা কিছুই প্রমাণ করে না। গ্রামের লোকজনদের মধ্যে এই ধরনের পরীক্ষা করলে এই ধরনের ফল সাধারণভাবেই পাওয়া যায়। হুমম্,একটা নিরেট ধাপ্পাবাজি এই ৪র্থ রাজপুতানা রাইফেলস। নিপুণভাবে সাজানো গোছানো স্তুপাকার মিথ্যে, আর্মির এই ৬৮তম ব্রিগেড। ৩ রেকর্ড করা পচাগলা স্টিরিওধ্বনি,যা সুযোগ পেলেই ধর্ষণ ধর্ষণ,এই একই বাজনা বারবার বাজাতে থাকে দর্শনের সাক্ষ্য,ধারাভাষ্য: আমি নিসারা।ঘরের ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিল। মদ্যপ সৈনিকদের উদ্যত থাবার সাথে লড়তে লড়তে আমরা সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করছিলাম। পচাগলা আমি আতিকা। সেদিন ছিল এক শীতল ও বিবর্ণ রাত। আমাদের বাড়ি লুট করে তারা মারতে আসে আমাকে। তারপর একে একে চড়াও হয় আমার ওপর। বারবার আমি রাজ বেগম। ঘরের সবকটা মদ্দা মিলে আমাকে ধর্ষণ করেছিল। অর্ধচেতন অবস্থায় আমি শুনতে পাচ্ছিলাম শুধু পুরুষের তারস্বর ও অট্টহাসি। স্টিরিওধ্বনি আমি শাহমল। চারসন্তানের মা। আমরা অঝোরে কাঁদছিলাম। সন্তানদের সামনেই আমার কাপড় টেনে খুলে তারা আমাকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দেয় ও বারবার বারবার বারবার ধর্ষণ করে। ধর্ষণ ধর্ষণ আমি জরিফা।তারা আমার গলা টিপে ধরে,পেটায়। তারপর তারা ধর্ষণ ধর্ষণ ধর্ষণ। ভীষণ যন্ত্রণায় শিউরে উঠে আমার চেরা দেহ। রেকর্ড করা বাজাতে থাকে আমি বাখতি বেগম। তখন রাতটা শুনশান,মৃতপ্রায়। হঠাৎ তারা লাথি মারে দরজায়।দরজা ভেঙ্গে বাড়ির পুরুষদের হিঁচড়ে বার করে তারা আমাদের ধর্ষণ করতে থাকে করতে থাকে করতে থাকে। একই বাজনা বারবার রেকর্ড করা পচাগলা স্টিরিওধ্বনি,যা সুযোগ পেলেই ধর্ষণ ধর্ষণ,এই একই বাজনা বারবার বাজাতে থাকে ৪ আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন অফিসারদের নির্দেশে তোমাদের ধর্ষণ করেছি। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন অফিসারদের নির্দেশে তোমাদের ধর্ষণ করেছি। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন অফিসারদের নির্দেশে তোমাদের ধর্ষণ করেছি। বেশ! এখন আমরা তোমাদের রক্ষা করব এখন,এখানে আমরা তোমাদের রক্ষার্থে আছি মনে রেখো আমরা অজেয়,আমরা নির্ভীক! ৫ আমি সাক্ষী। আমি সাক্ষ্য বহন করছি। নিজের অবিচলতম সাক্ষী আমি নিজেই। আমাদের দগদগে ক্ষতগুলো থেকে অবিরাম ক্ষরণ হতে থাকে। তথাপি তারা একদিন মুখ ফুটে কথা বলে উঠবে। প্রত্যেকটা ঘর মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের শরীর কত কত সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। আমরা ক্ষমা করছি না আমরা ভুলে যাবো না আবারও বলছি, আমরা কিছুতেই ভুলে যাবো না। ৬ আমার শরীর তোমার দলিল-দস্তাবেজকে খারিজ করে। আমার শরীরই আমার স্মৃতি। এবং স্মৃতিই একমাত্র হাতিয়ার। ৭ স্মৃতি বাস করে আমাদের নির্বিকার চাহনিতে,তাদের রক্তাক্ত কটাক্ষে, আমাদের দেহের অবাধ্যতায়, তাদের উর্দ্ধাঙ্গের সার্বভৌম ভারে,আমাদের ঠোঁটে জমা মৌন প্রার্থনায়,আমাদের স্বর্গ তোলপাড় করা চিৎকারে,তাদের মুখের ভকভকা মদের গন্ধে,আমাদের পায়ে,কদমের দৃঢ়তায়,তাদের বুটের শব্দে ও বন্দুকের নলে,আমাদের স্কার্ফের ভাজে,স্কার্টের ঘেরে,তাদের ধড়ে সজ্জিত পদক থেকে ঠিকরে বেরোনো আলোর স্বেচ্ছাচারিতায়,এই একচ্ছত্র অনুমোদনের রহস্যে। স্মৃতি একটি বিরল ঘর,যাকে বিদীর্ণ করে রণক্ষেত্রে পরিণত করা হয়েছে। বস্তুত,স্মৃতি একটি রণক্ষেত্রও। ৮ আবার সেই স্বপ্নের পুনরাবৃত্তি,স্বপ্নে আবার সেই পুরনো উল্লঙ্ঘন, অনিদ্রা,পিটিএসডি,লম্বা লাইন,প্রেসক্রিপশন,ঘুমের বড়ি, স্টেথোস্কোপের শীত প্রোবস্,পরীক্ষা-নিরীক্ষা,ডিএনএ টেস্ট,কোর্টের বিচার, নমুনা সংগ্রহ,সাক্ষাৎকার,টুকরো আওয়াজ,জুম,স্লো মোশন, আবার পুলিশের তত্ত্বাবধানে মেডিকেল পরীক্ষা মাতৃগর্ভে ভ্রুণের তেড়াবেঁকা হাত-পা ও অজস্র কুন্ঠিত প্রহরের ভার স্মৃতি এই সমকেন্দ্রীয় হিংস্রতার বৃত্তেই আবদ্ধ থাকে। ৯ স্মৃতি বিষয়ক একটি নোট: স্মৃতি আমাদের অঙ্গে প্রত্যঙ্গে ভূচিত্রে এবং এই আকাশ ও মাটিতে খোদিত। স্মৃতি আমাদের হারানো নখ দ্বারা নির্মিত। এবং আমাদের এই শরীর আমরা নির্মাণ করেছি নিজেদের সহস্র সত্তা জুড়ে জুড়ে; অবধারিতভাবে,তবে শরীরও কী আর,স্মৃতিই তো-- অত্যাচারিত,সহসা বিকল করে দেয়া,অনুমতিবিহীন,অস্বীকৃত,ধর্ষিত, হানা-তল্লাশি চালানো,নির্বিচারে কুপিয়ে ফেলা,অপমানিত-- তবু সংগ্রামে ও চির-বিরোধিতায় বদ্ধপরিকর। স্মৃতি নিগৃহীত হয় না,বরং স্মৃতিই সেই খরচ না হওয়া নারী, যে বিদ্রোহ করতে জানে। স্মৃতি হচ্ছে ভগিনীত্বও, যা আমাদের ঠাকুমাদের,মেয়েদের,মায়েদের,বোনেদের মধ্যে ঠাঁই পেয়েছে। আমাদের বাপ-ঠাকুর্দা,ছেলেরা,ভাইয়েরা-- তারা প্রত্যেকেই আজ ক্ষত অথবা একেকটি ক্ষতাকার স্মৃতি হয়ে গেছে। স্মৃতি হচ্ছে কুনন-পোশপোরা,রাম্বিয়ার ও চেনাব, দর্দপুর,হন্ডওয়ার,লোলাব,দোদা,উরি,শ্রীনগর, কিশ্তওয়ার,বুদগাঁও,গান্দেরবল,পুঁচ, নীলম-ঝিলম ও ‘মুবিনা’—প্রতীয়মান যা কিছু আছে,সব,স-ব। এইসব,এই সমস্ত ক্ষত মিলেই আমাদের স্মৃতি-- আমাদের স্বাধীন স্বশাসিত অঞ্চল, দেশ। সুতরাং স্মৃতিকে একটি দগদগে ক্ষত বলেই অভিহিত করা যায়। ...ফেব্রুয়ারি ২৩,ফেব্রুয়ারি ২৪,৩০শে মে,২৮শে অক্টোবর,৭ই নভেম্বর... স্মৃতি নিজেই নিজের অদম্য সাক্ষী।যা অনতিক্রম্য। স্মৃতি হল এক হেমন্তভর্তি হনন ও তার পরবর্তী রুখে দাঁড়ানোর শেষে আরেক শীতের আগমন,সেই শীতের বরাদ্দ অত্যাচার,ধর্ষণ ও রাতারাতি নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শেষে আরো আরো প্রত্যয় এবং তারপর আবার এক বসন্তব্যাপ্ত অবরোধ ও রুখে দাঁড়ানোর শেষে আরেক গ্রীষ্মের নাশকতা ও দৃঢ় প্রত্যয়,বিক্ষোভ,রুখে দেওয়া,আরো আরো। স্মৃতি হচ্ছে সময়ের বিপরীত মরুকল্পনা, তাদের রচিত ভূমিকার পাল্টা-ভূমিকা। আমাদের স্মৃতিই আমাদের সমগ্র ইতিহাস, যা কেউ চাইলেই সরিষা হবে না এবং শেষ পর্যন্ত স্মৃতি একটা ঘর, যতদিন না ঘরটা শুধু স্মৃতি হয়েই বেঁচে আছে। ১০ যদি আমাদের ক্ষতে কান পেতে তার তীব্র হাহাকার শুনতে না পারি, তবে কি আমরা সব ভুলে যাবো? আমরা কি একদিন আমাদের এই ভুলে যেতে থাকাকেও ভুলে যাবো? বাস্তবিক কোনো ঘরের অস্তিত্ব ছাড়া কোনোভাবেই কি নির্বাসিত হওয়া যায়? হারানোর বোধ কি সময়কে স্তিমিত করে দেয়? কবিতা কি এখনও সম্ভব? ১১ ইস্তাহার: আমি তোমাদের ঔপনিবেশিক সৌন্দর্যবোধের উদ্ভট প্রতীক বনে যাওয়াকে নাকচ করছি। আমাকে নির্যাতিত ধরে নিয়ে তোমাদের দয়া দেখাতে আসাকে নাকচ করছি। আমি একটি ঘায়েল মানস অথবা কোনো প্যাথলজিকাল নিদর্শন হিসেবে বেঁচে থাকাকে নাকচ করছি। আমি তোমাদের উদ্ধারিকরণ ও সশক্তিকরণের তাবৎ কারখানাসমূহকে নাকচ করছি। আমি তোমাদের ‘আমরা-তোমাদের-মত-প্রকাশের-স্বাধীনতা-দেবো’ ও ‘আমরা-তোমাকে-মুক্তি-দেবো’ মার্কা সদম্ভ ঘোষণাকে নাকচ করছি। আমি তোমাদের শান্তির পিচ্ছিল বার্তাকে নাকচ করছি। আমি তোমাদের গাদা গাদা স্বাবলম্বনকারী ভাষণ ও প্রেরণা-ট্রেরণার বাঁধা-বুলিগুলোকেও নাকচ করে দিচ্ছি। আমি নাকচ করছি তোমাদের জাদুঘরে সংগৃহীত ফসিল হয়ে থেকে যাওয়ার প্রস্তাবনাকে। আমি তোমাদের মনের মতন প্রতিবাদী কিংবা তোমাদের পাদটীকায় রূপান্তরিত হতে চাওয়াকে নাকচ করছি। আমার আতিথেয়তা তোমাদের ঔপনিবেশিক মননকে কোনোভাবে তৃপ্ত করবে, এমন ধারণাকেই সরাসরি নাকচ করে দিচ্ছি ও আমি তোমাদের স্রেফ মনোরঞ্জন করে যাবো,নাকচ করছি এই নাদান উপপাদ্যকেও। আমি নাকচ করছি হারানোর রিক্ততা ঠিক কী ও কতটা, তা তোমাদের স্পষ্ট করে বলে বোঝানোকে এবং আমি নাকচ করছি তোমাদের জানাতে যে আমরা কীভাবে নিজেদের স্বাধীনতাকে কল্পনা করি। আমার আপতকালীন দেশ,আমার এই স্মৃতির স্বশাসিত অঞ্চলে তোমাদের প্রবেশাধিকারকেই আমি আজ নাকচ করে দিচ্ছি। আমি নাকচ করছি আমার প্রত্যয়ের,আমার প্রতিরোধের সহজাত গঠনকে তোমাদের খুঁটিয়ে বিশ্লেষন করতে আসাকে। আমি নাকচ করছি আমার কল্পনাকে তোমাদের বারবার বিদীর্ণ করতে চাওয়াকে। আমি তোমাদের প্রত্যেকটি নিরীক্ষা ও সমীক্ষাও একইসাথে নাকচ করলাম। যেমন আমার ত্বকের ভেতরে তোমাদের পরিব্যাপ্তিকে আমি নাকচ করেছি। তোমাদের কাছে মুহূর্তের জন্য বোধগম্য হয়ে যাওয়াকেও আমি নাকচ করছি। আমি চিরকাল দুর্বোধ্য থাকব এবং নিজেদের পচাগলা স্টিরিওতে তোমরা বাজিয়ে যাবে শুধু, ‘কিন্তু কাশ্মীরিরা কি চায়,কিন্তু কাশ্মীরিরা কী চায়’ -- পুনরাবৃত্তিতে। ১২ বন্ধমুখ কিংবা মুখবন্ধ: আমি কোনো প্রতিবাদ-টাদ করতে আসি নি। আমি তোমাদের সমগ্র অস্তিত্বকেই অস্বীকার করছি। আফটারওয়ার্ড ১: কবিতাটির কেন্দ্রে রয়েছে কুনন-পোশপোরা ও ১৯৯১-এর একটি ভয়ানক শীতল রাত।২৩/২৪ ফেব্রুয়ারি,১৯৯১-এর সেই রাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট উত্তর কাশ্মীরের কূপওয়ারা জেলার কুনন ও পোশপোরা গ্রামদুটোতে সার্চ অপারেশনের নামে ঢুকে মেয়েদের-মায়েদের-মহিলাদের নির্বিচারে গণধর্ষণ করে।গ্রামদুটোকে ঘেরাও করে ঘরের পুরুষদের ঘর থেকে হিঁচড়ে বার করেএনে হাজতে পোরা হয়।তারপর চারদিন ধরে দুটো গ্রামের চতুর্দিকে ব্যারিকেড বহাল থাকে,যাতে সমস্ত রকম আইনি সাহায্য ও স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা যায়।বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও ধর্ষিতাদের বক্তব্য অনুযায়ী,তেরো থেকে আশি বছর বয়স্কা প্রায় শতাধিক নারী ধর্ষিতা হন এবং প্রায় সমসংখ্যক পুরুষদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালানো হয়।যদিও,ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তৈরি তদন্ত কমিটি,যার প্রতিনিধিত্ব করেন তৎকালীন প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি বি জি ভার্গিস,ঘটনার তিন মাস পরে তদন্ত করতে এসে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগই খারিজ করে দেয়। তাদের মতে, ‘এই বিলম্বিত মেডিকেল পরীক্ষা কিছুই প্রমাণ করে না ‘এবং ‘গ্রামের লোকজনদের মধ্যে এই ধরনের পরীক্ষা করলে এই ধরনের ফল সাধারণভাবেই পাওয়া যায়’।কমিটিটি মন্তব্য করে যে পুরো ঘটনাটিই ‘আগাগোড়া জাল,সাজানো,একটি ফোলানো-ফাঁপানো মিথ্যে’ ছাড়া আর কিছু নয়।আরো পরে,২০১৪ সালে,কুনন-পোশপোরা কেসের শুনানির সময় আর্মি কাউন্সেলের পক্ষ থেকে ধর্ষিতাদের যাবতীয় জবানবন্দিকে ‘বাঁধাধরা’ ও ‘একই গতের’,এইসব আখ্যা দেয়া হয়। পাশাপাশি জবানবন্দিগুলো সম্বন্ধে এও বলা হয়,যেন ‘রেকর্ড করা পচাগলা স্টিরিওধ্বনি,যা সুযোগ পেলেই ধর্ষণ ধর্ষণ,এই একই বাজনা বারবার বাজাতে থাকে’। এই কবিতাটির কিছু অংশ ধর্ষিতা ও নির্যাতিতা নারীদের সেই জবানবন্দিগুলোর ওপর ভিত্তি করে লেখা।তাছাড়া ভারতীয় সেনাবাহিনী ও ভারতরাষ্ট্র পরিচালিত অন্যান্য বিবিধ (রাষ্ট্র)যন্ত্রের বিভিন্ন সময়ে করা বয়ান,বয়ানবাজিও প্রত্যক্ষভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে।এখানে বলা বাহুল্য যে কাশ্মীরের আজাদিকে রুখে দিতে তৎপর ভারতরাষ্ট্র যৌন নিপীড়নকেই অন্যতম প্রধান অস্ত্র হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে।কুনন-পোশপোরার ঘটনাটি শুধু ভারত রাষ্ট্রের দখলদারিত্ব,তার দখলপদ্ধতিসমূহ কিংবা ঔপনিবেশিকতার একটি ধরনকেই বুঝতে সাহায্য করে না,বৃহৎভাবে তা কাশ্মীরি সংস্কৃতির বর্ণিল প্রাণকেন্দ্রটিকেও আমাদের সামনে তুলে ধরে—যে সংস্কৃতি এক চির-প্রতিরোধেরই অন্য নাম,গান।কুনন-পোশপোরার নারীরা আজও তাদের প্রাপ্য বিচার পায় নি। শুধু কুনন-পোশপোরাকে একটি সুদৃশ্য ভারতীয় কফিনে দাফন করে রাখা হয়েছে।শুধু কুনন-পোশপোরাকে কিছুতেই একটি সুদৃশ্য ভারতীয় কফিনে দাফন করে রাখা যাচ্ছে না। আফটারওয়ার্ড ২: কুনন-পোশপোরার সেই অজীর্ণ কালো রাত সম্বন্ধে আরো বিস্তারিতভাবে জানতে চাইলে ‘Do You Know Konan-Poshpora’/ আপনি কি কুনন-পোশপোরার ব্যাপারে জানেন?’(এসার বাতুল,ইফরাহ্ বাট,মোনাজা রাশিদ,নাতাশা রাথের ও সামরিনা মুশতাক, জুবান বুকস,২০১৬)-এই ভীষণ জরুরি বইটি পড়া যেতে পারে।
0 Comments
[For more from the artist check out- Websites: http://www.claudioparentela.net https://ilrattobavoso.altervista.org/ https://ibelieveinblackaliens.altervista.org/ https://claudioparentela.wixsite.com/mysite https://claudioparentela.wixsite.com/mysite http://parentelaclaudio.altervista.org/ http://www.myspace.com/claudioparentela https://twitter.com/cparentela https://www.instagram.com/claudioparentela62/ https://www.instagram.com/claudioparentela2/ http://claudioparentela.tumblr.com/ https://www.facebook.com/claudio.parentela.1 http://www.flickr.com/people/49533264@N05/ https://www.linkedin.com/in/claudioparentela/ https://www.talenthouse.com/claudioparentela Art Blogs: http://theextrafinger.blogspot.com http://foggygrizzly.blogspot.com http://cparentela.livejournal.com/ http://elvisinh.blogspot.com/ http://thethermostatandthegreendragoon.blogspot.com/ http://diabeticdew555.blogspot.com http://cosmiccrystalsdirtypigs.blogspot.com/ http://coward33sneeze15.blogspot.com/ http://variationsinnortherndegradations.blogspot.com/] My Taxi Is a Sleeper Cell I want to cancel my Uber ride The driver is a Mohd But my red-eye hop has left me no choice 1. Check number plate 2. Share trip status 3. Pray OYO OYO OYO JIO JIO JIO We are on the fastest route to sunrise Mohd is known for great conversation Taimur-Ghalib-Math -Azhar-Bachchan-Modi A plus B into square into bracket square karein toh? Cheeky Love Jihadi son of a gun 1 min to destination I ask him what he thinks of Kashmir The dawn is dark Silent I pay Mohd and tell him to steer clear of cows We, the Eel Pop WE, THE INFIDEL APE POO, having solemnly resolved to constitute +91 into a SOVEREIGN SO ITALICS LA SUCRE DEMO ARCTIC EPIC BLUR and to secure to all its citizens: ICE JUTS, social, economic and political; LIT BRYE of thought, expression, belief, faith and worship; LITE QUAY of status and of opportunity; and to promote among them all TYRANT FIRE assuring the dignity of the individual and the unity and integrity of the Nation; IN OUR CONSTITUENT ELM ABYSS this twenty-sixth day of Berm Oven, MCMXLIX, do HEREBY ADOPT, ENACT AND GIVE TO OURSELVES THIS OCTO TINNITUS. Welcome to FarmVille In the last few months I've become a millionaire This is so much more fun than playing solitaire My people don’t revolt, my animals never die And if I face a problem, there is Jio WiFi It mightn’t be all good, but I don't really mind My rivals are #useless, my followers are blind Down on the farm where the sky is always blue And we never kill the pigs and the cows never poo And everything's adorable and I know everyone And we can do anything under the Aryavarta sun Oh, it hasn't gotten old And I hope it never will Welcome to FarmVille No farmers, no bills
Researchers discovered non-native migrants with substantial friendships and family ties—as opposed to smaller networks— were least likely to. Depression was also found to provide link. And street-level contacts. Intervention doctrine left us instead of possessing distinctive sense of self by purpose, rather with near complete confusion as to who U.S. are and why are Rwanda, Syria, Serbia. American terror-attacks most domestic have left cuts across the social – residual pasts making claims on futures,” creating sense of irretrievability, of futures lost.” ~ The absurdity: They Don’t Kill You. Not a joke on the gag of crudity and administrative system’s remarkable inability manage commitment “ridiculous” act, which is not to say ridiculous goal degree to which They Kill You is ambivalent human intention matched by drive to resist nonhuman agency, intimating administrative principle nearly ever-present often, just. Reach beyond finally not impervious to meaningfully disrupt collection important unsettling. ~ Wright and boyfriend alarmed while they slept for what the historical might illuminate, jumped in Arkansas, strung up in Texas before the crazy blue skies of 1980. Archbishop Romero, President Carter in a letter of assistance to the hands of the people against the the people which repeatedly had been struggling to gain. Romero would be by the Salvadoran government, as many would be. And Jimmy on and on. ~ Hotel jail break mossy stone walls of Pul-e-Charkhi, former prison from 15th century—to hold voyeurs of dog copulation, dissidents and partisans—belie new incarnation hotel and hub of contemporary culture with corrections-esque staff uniforms, tours on offer—the public, center for constitutional rights—with vestiges of jail cells in lobby bars still on windows, à la Stanford PE. Permanent art collection inside glass-and-concrete galleries provocative pieces a full-scale reproduct by Salvador Lumumba of Côn Sơn prison, complete with stark, midcentury office décor, smoking lounges, interview rooms; prison in prison. Worn guide began tour padded cells tiger cages notorious Special Camp No. 3 blocks original cells—current hotel rooms—on display with heavy oak door and small, round ceiling window called “eye of God.” Needles. Of light leak in. Ceilings curved up like mihrab arches. Excitement of the building splenetic history sense that it could with ease return to previous strappado existence — a real that happens or threatens to. Also, s gallery endows particular scene of exhibition already performed: some labor, “the physical, raw certain logic as excavating representations, the constitution visible within the narrative given a specific site (such as Mazari Sharif, Sanford, Molenbeek) while adopting that site’s logic in and as its mode of representation [as logic of the ruin] as it has been defined. But if it aren’t your style, order a negroni and head outside to mingle with the crowds gathered beneath high boughs in ancient courtyard. ~ A powerful (stateless) abstraction, war cannot be “won,” in the conventional terminus. 2013, Obama address National Defense and how we can continue a perpetual wartime footing.” Then began Operation Inherent Resolve, which expect to last least three years of public liberty, perhaps because it will develop the germ of every other parent of debts and taxes, and armies, debts and taxes, bringing dominion. And on and on. [For this piece, the spellings and other unique syntactic constructions used by the author have been kept intact.] from the ether when i look into the ether and pull out marshmallow clouds i detach my rubber exterior and apply them to my syrupy middle i drizzle over canopies concealing bikini clad adonises flexing limp wrists emitting siren songs to passing strangers here where the parade rains the sidewalk ends and bleary eyed beautiful beasts run for cover here is where i break into a thousand pieces ready to hitch rides on the soles of indifferent shoes to render myself omnipotent resistance in asymmetry every time i see your rhombal head my irregular center is stimulated to produce baby decagons sprinting across lawns on hind legs reaching out for spheres with furry prickly fingers craving to be circles yet settling for serrated edges that poke and prod at the extremes of our conscious thoughts so we tear down our walls release the latch to scurry into those far reaches of the void until we come to the inevitable dead end which is simply an infinite stretch of absence we carved out inside our aortas to pump and pulse against the threat of erasure water on cement sometimes i dig into my vaults just to find more rust on spoiled pipes dingy orange brown water leaking onto freshly sprinklered cement and when I spray the residue of what escaped its spherical hiding place on the side of a brain suppressed beneath layers of sticky membrane i can see through the globular glass screen that encases these vaults the vivid impact of water on mundane cement and how clear waste pigments can be when fanned into a many tiered horizon through the soft force of a nautical tool well done if i pour your colors into this ceramic dish i can mix them with my hands feel the smoky puffing of their indignation rolling across my fingers would you be zebra striped and purple or just a ton of spirals in kaleidoscopic vividness i know which I secretly hope to find but perhaps i better let you choose your own shapeshifter cookiecutter so when the irons are cast and the oven finally on you’ll fill an even form and we’ll see at last how truly saturated you’ve always been is my subtext blaring enough for you to extract this image our arms extended i place a floppy polaroid into your clenched fist and bite down hard on your bottom lip my tongue extracting your dna while i lay my heavy handed hands all over your backside and look here comes a cloud with its own thought bubble and a torrent of complaints ready to douse us in every word we said we’d never say to each other but you were never real until i laid eyes on you i mean it that hot easter sunday i salsaed into your furry face and i placed my lashes my pupils my irises my expressive eyebrows on your shoulder the polyblend fibers from your lucky tee left me completely dehydrated and i will double down on that every time you challenge me so let’s extract our limbs and take back our lips and i will leave you here perched atop this thought bubble drifting over dolores and when you remember again how much you miss the weight of my heavy handed hands on your backside i’ll already be the sun zeus wears medusa hair to you he’s just another baby factory and we were all birthed from his loins can you imagine it yes he has two droopy tits to match the indifference of his lower lip and his stony eyed stare and yes we all turn to stone when he gazes in our direction but oh what a trip it was on the way here casting spells on some mountain in the desert with fires burning to announce our arrival to the gods who are the guardians of the void and they asked us to take a nap and kiss their palms upon waking for what is gratitude but blood from a wrist and what is waking but dreaming we’re all dead spiders on mars i almost threw up a little just thinking of the sinkhole mansized like a spider unable to lay eggs as if you liked your toast with milk but you’re allergic to nuts so i’ll have to ring out the tie dye shirt you left on my lawn and just hope for the best as if the best were here and we were on mars wishing we were on venus but that spacesuit fit like a glove so i guess we’ll have to go to Kmart and exchange it for a pair of rubber boots we can ice skate in so he can cover up his nipples in time to escape the watchful eyes of lobotomists and be called indecent inherent callous could it be the void is just this little rant some petulant guy made up one day when he was done contemplating the stars like there’s this inherent callousness underwriting all of this like god is a catty gay man who can’t get enough dusti bonge or springfield missouri just another excuse for a road trip to arrive at our cliche ages isn’t every story a coming of age story another red herring to follow to wonderland yet another furry leading us astray down piss scented alleyways and bargain bins at bloomingdale’s through fingerprint stained mirrors turning into twirling tunnels which is another way of saying we’ve been sucked back into the void facades of flesh i’m writing to tell you we’re all dead in the hands of the living palms open stigmata arms up Insert your token into the arcade machine by which i mean the arcane devices with which we will bind ourselves here to this post and exhale steam into the pulsing electric shocks of the animus we are the light that catches to illuminate the palm lines that were once dormant cracks in facades of flesh last call you could call it a void an absence so fullI it leaves you sausaging at the seams just ready to deflate like a hippopotamus call it a comeback come-on the size of sweaty jeans and greasy hair a lit match in his back pocket just ready to cum burst forth like atlantis an urchin in a tortoise shell like you never saw it coming you should call him in the morning tell him i’ve been thinking about bed stuy fish fry and all the bug stuff that keeps his border collie up at night ravenous just thinking of checkers if you’d only check in on him every once in a while like a good mother earth mother who prefers to live in the sea can you say carmel redonda rhododendron bushwhacked somehow into thinking all of this was 11:11 but we don’t have time for herbivores who wear tight dresses and smoke diesel fuels so we’ll just have to call it # Fall An avalanche of beautiful people in town. The town is filling with new love as I slowly lose mine. # In other times People had their rituals of the dead Now we have breakfast. Breakfast becomes a ritual. Grey mist river and fall grass Dried, cutaway- hours of poetry on interminable mornings I am starting to like the American poets’ way of saying things Louise Gluck just won the Nobel prize. All her books are on back order. She is very good- or is it just me That is now receptive to poetry. # Still ten minutes The house breeds its silence Like moss on abandoned wood A distant sound of shower water Here but not here. Far. Because time and space can both stretch To make ground for you and I And the I in you And the you in I. Do I translate the Bauls for you? O’ mirror! Town of mirrors! Saint of the Holy Cross! Will the world ever become a Baul’s world? Will you be able hear to hear the word? Still. Silence. Distilled. Brewed. The quality of the pure. Broken by doors- opening and closing. Faucet sounds. Filling of kettles. The making of food. The breaking of fasts. When shall I break my fast? # Perspective Lines and girdles Lines more girdles. Sitting one after the other. -then all that leading to your door. # The house is made of earth The house is made of salt. It is uncommon ground like a cemetery. No man can own this ground. It is two feet above ground. The house holds up with props and fences Phantoms from another world. Faeries dangle- Very carefully, the house lays down its tales In sticks and stones. Holds together A shattered glass vase in mid-air- Nothing shatters, Though we all see the shattered, cracked pieces. Very slowly dusk gathers, winter creeps in. It is an empty house. The people are in the veins Between planks. And then ghosts come out- Girdles bulge. There is clattering and banging of pots and pans. Running water. Dishwasher running Pots boiling An exhaust whirring. An egg-white seething slow. Sunlight through the kitchen window Catching dust And making humans, glow. ১. হারামিটার গলার আওয়াজ রোবটের মতো যদিও আমি অতীতে কখনও রোবট দেখিনি। হারামি আমি নিজে, ওদের চিনি সেকারণেই। আমার মতো প্রাণীরা নোনতা আটলান্টিকের ক্লিভেজে পঁচিশ মাইল দীর্ঘ জাল ফেলে রাখে। ধরা পড়ে টুনা। বাইচান্স হাঙর ট্র্যাপড হয়ে গেলে পাখনা কেটে রেখে বডি ছুঁড়ে দেয় জলে। হাঙরের পাখনা চুষলেই সমাজতন্ত্রী চীনের পুরুষেরা হারানো জওয়ানি ফিরে পায়। হাঙরের দাঁতের খাঁজে থাকে ছুপা মর্দানি। এগুলি আসলে মামুলি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিশিংয়ের গূঢ় তথ্য। কিন্তু হারামিটাকে সত্যি সত্যি বুঝতে গেলে জানতে হবে ঝাঁক ঝাঁক টুনা সম্পর্কে। ওর টেবিলে পাশ ফিরে শুয়ে থাকা মৃত টুনা রোজ বলে - ''সাবস্ক্রাইব করুন"। পর্দা নেই, আমাদের দুজনের চোখেই। ২. যীশুকে ওরা যখন চাবুক মারছে, রুখে দিল না কেউ। তাঁর রক্তমাখা পবিত্র লিনেন শ্রাউড কাঁচের বাক্সে রাখতেই, চার্চের কপাল যাকে বলে - বাসন্তী ভি রাজি, অঔর মৌসি ভি রাজি। অলৌকিক ক্রুশ যন্ত্রণা নয় আসলে। অপমান। এই দেখ, যে ইহুদীর বাচ্চাকে রাজা বলে ডাকিস, তাকে নিজেই মজদুরের মতো বইতে হচ্ছে নিজের ভবিতব্য। বলেনি মিডিয়া - ক্যালভেরি পাহাড়ের দিকে মজদুরের অপস্রিয়মাণ সারি; মরে গিয়ে ঈশ্বর হবে বলে ৩. চামড়ার ব্যাগ আমার নেই, তাই ত্বকের বিষয়ে জানা হয়নি তেমন ত্বক জানতে হলে আগে স্তর জানতে হয়। স্তর শিখব বলে পাথর কুড়োই প্রগলভা নদীখাত থেকে, যেখানে জলপিছু ট্যাক্স, খরস্রোত, মুখ দেখা যায় না সাদাটে ফেনার কারণে। হ্যাঁ, লাল রঙা পাথরও পেয়েছি। এভাবেই তোমার লিপবাম মনে পড়ে। অন্ধকার ঘরে জোরালো টর্চের ওপরে আঙ্গুল চেপে ধরলে যেমন গোলাপি লাল পেতাম ছোটবেলায়, কেমন স্পষ্ট হোতো শিরা। রিয়াইন্ড করলে দেখা যায় শহরের সস্তাদিকে বিশেষ যাওয়া হয় না বলে, ভুলতে বসেছি শিরা উপশিরার কথা। আন্দোলনের নেশা স্তিমিত হয়ে গেলে, এসো আত্মবিশ্বাসী ত্বক, আমাকে সবুজাভ নীল শিরা উপশিরা শেখাও ৪. রাজহাঁস উড়ছিল। নিচে ছিলাম আমি। ওপর থেকে কী একটা ছুঁড়ে দিল। লুফে নিলাম, দেখি, ফোনের রিচার্জ ভাউচার। এদিকে, আমার তো ফোনই নেই। একটা সিভিক পুলিশ দাঁড়িয়েছিল, ওকে বললাম, আমার ফোন নেই, কিন্তু রিচার্জ ভাউচার আছে। শুনে, উত্তর না দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। খেয়াল করলাম, মালটা ট্যারা, আমাকে দেখছে না, একটা মেয়ে রাস্তা পেরচ্ছে, সেদিকেই তাকিয়ে। মেয়েটাকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। মানে, মেয়েটার হাতে ধরা ফুলকপি দেখে অবাক হয়ে গেলাম। এই তুমুল গ্রীষ্মে ফুলকপি পেলো কোথায়। কোল্ড স্টোরেজের মাল, বলল সিভিক পুলিশটা। অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে। ফুলকপিটা কোল্ড স্টোরেজের, বলল আবার। এ শালা অন্তর্যামী নাকি, ভাবলাম। সঙ্গে সঙ্গে বলল, হ্যাঁ, পুলিশরা অন্তর্যামী হয়, সরকারের নতুন সার্কুলার এটা। বললাম, কিন্তু আপনি তো গোটা পুলিশ না, হাফ পুলিশ। উত্তর দিল না। আবার জিজ্ঞেস করলাম, উত্তর দিল না। অদ্ভুত ব্যাপার, মনে মনে ভাবলাম। ভাবা-মাত্র বলল, কেউ মুখে প্রশ্ন করলে উত্তর দেওয়ার নিয়ম নেই। শুধুমাত্র মনে মনে প্রশ্ন করলেই উত্তর পাবেন। আজ এক তারিখ, আজ থেকে এই নিয়ম চালু। একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালো ঘ্যাঁস করে ব্রেক দিয়ে। ঝাক্কাস দেখতে। মিনিবাসের মতো বড় প্রায়। দুটো লোক নামলো গাড়ি থেকে। নেমেই ফুটপাথে শুয়ে থাকা লোমশ কুত্তাটার দিকে মুখ করে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। আমি ছোটলোকদের সঙ্গে মানুষ হয়েছি, আমি 'কুকুর' বলি না। 'কুত্তা' বলি। এতে আরাম পাওয়া যায়। ওই লোক দুটো তিরিশ সেকেন্ড ওভাবে তাকিয়ে থাকার পরে, এগিয়ে গিয়ে কুত্তাটাকে কোলে তুলে গাড়ির পেছনের দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকিয়ে দিল। কী করতে চাইছে এরা, মনে মনেই ভাবলাম। সিভিক বলল, এরা কর্পোরেশনের লোক। রোজ বিকেলে কুকুরদের আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে যায়। এটা শুনে অবাক হতে গিয়ে হতে পারলাম না, শরীর অবশ হয়ে এলো। দেখলাম কর্পোরেশনের লোক দুটো স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ঝুপ করে পড়ে যাওয়ার আগেই ওরা এসে আমায় ধরে ফেলল, ধরে চ্যাংদোলা মতো করে গাড়িতে তুলে দরজা বন্ধ করে দিল। শরীর অবশ থাকলেও, মাথা কাজ করছিল। বুঝতে পারলাম গাড়ির ভেতরটা এয়ারকন্ডিশন্ড। ঘাড় ঘোরাতে পারছি না। চোখ ঘুরিয়ে দেখতে পেলাম, গাড়ির ভেতরে চারটে কুত্তা। চারটেই বিদেশী। গাড়িটা ছেড়ে দিল। মিনিট খানেক পরে শরীরের জোর ফিরে পেলাম। কী করব ভাবছি, তখনই, আমার পাশের কুত্তাটা বলল, হাই মেট। ভদ্রতারক্ষার খাতিরে বললাম, হেলো। ফার্স্ট টাইম? জিজ্ঞেস করলো। মাথা গরম হয়ে গেল ইংরেজি ঝাড়ছে দেখে। মাথা ঠান্ডা রেখে বললাম, কীসের ফার্স্ট টাইম? আইসক্রিম ট্যুরে ফার্স্ট টাইম? হুম। বললাম, কীই বা বলি আর! সুস্বাগতম। এবার খাঁটি বাংলায় বলল। বাংলা শুনে মনটা নরম হল একটু। জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা তো সবাই বিদেশী জাতের, রাস্তায় ঘুরছিলে কেন? বলল, এটাই ফ্যাশন এখন। নেড়িদের বাড়িতে পোষা হয়, আমরা রাস্তায় থাকি, ফ্রিলি মুভ করি। এই ভ্যানটা এয়ারকন্ডিশন্ড কেন? আমরা ভালো জাত, এসি ছাড়া পোষায় না। রাস্তায় তো এসি নেই, তাহলে? রাস্তায় থাকলে এসি লাগে না, গাড়ি আর বাড়িতে এসি মাস্ট। এইসব কনভার্সেশনের মধ্যেই গাড়িটা আরও দুই জায়গায় থামল। আরও দুটো কুত্তাকে গাড়িতে তোলা হল। বসে বসে রিচার্জ ভাউচারের কথা ভাবছিলাম। একটু পরেই আইসক্রিমের দোকান চলে এলো। একজন এসে আমাদের নামিয়ে দোকানে ঢোকাল। দোকানের এক স্টাফ, করপোরেশনের লোকের উদ্দেশ্য বলল, স্যর, একটা কুকুরকে মানুষের মতো দেখতে। করপোরেশনের লোকটা বলল, ওটা মানুষই। দোকানটা বরফকলের মতো দেখতে। হিম ঠান্ডা। দোকানের স্টাফ এসে সবকটা কুত্তার পছন্দসই আইসক্রিমের অর্ডার নিল। আমার কাছে আসতেই, বললাম, শোনো ভাই, আইসক্রিম খাব না, অন্য কথা আছে। আসছি, বলে চলে গেল। ফিরে এসে সবাইকে অর্ডারমাফিক আইসক্রিম দিয়ে আমার হাতেও একটা ধরিয়ে দিল। কালারটা অদ্ভুত। ফ্লেভারটা ধরতে পারলাম না। ছেলেটা নীরস মুখে বলল, বলুন এবার। বললাম, আমি একটা রিচার্জ ভাউচার পেয়েছি, একটা স্মার্ট ফোনের ব্যবস্থা করে দাও। বলল, ট্র্যাপে পড়ে গেছেন দেখছি। মানে? মানে, ওরা প্রথমে আপনাকে ফ্রি ভাউচার দেবে, তারপর ফোনও অফার করবে, আর যেই আপনি ফোনটা নেবেন ওমনি ফেঁসে যাবেন। ফেঁসে যাব! কীভাবে! ফোনটা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওরা আপনাকে এই আইসক্রিম পার্লারের কাজে লাগিয়ে দেবে। বেরোতে পারবেন না। আমিও ফোন নিয়ে ফেঁসে গেছি। এখানে সারাদিন থাকি, খুব ঠান্ডা। নিমুনিয়া হয়ে যাওয়ার চান্স আছে। ওটা নিউমোনিয়া, নিমুনিয়া নয়। আপনি কি মধ্যবিত্ত? কেন? ওই যে, সমস্যাতে ফোকাস না করে, ইংরেজি উচ্চারণের কথা ভাবছেন। যাক গে, আমার এখন ডিউটির সময়, চললাম, আপনি আইসক্রিমটা খেতে খেতে মন দিয়ে ভাবুন যেটা বললাম। চলে গেল ছেলেটা। নামটাও জানা হল না। হাতে আইসক্রিম এবং মাথায় নিউমোনিয়া আর স্মার্টফোনের দ্বন্দ্ব নিয়ে আমি কুত্তাগুলোর পাশে বসে থাকলাম। সালোমে এ সময় কুয়াশা তীক্ষ্ণ হয় না। পেলব হয় না। কেবল কোনো দূর সীমান্তে কুকুরের মৃত্যু হলে, তার গন্ধ আরো গাঢ় হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। পায়ের তলায় রাস্তা থাক, বা ফুটপাত, হাঁটতে হাঁটতে সেই ঘ্রাণ টের পাওয়া যায়। সেই ঘ্রাণকে অতিক্রম করার জন্য হাঁটার গতি বাড়িয়ে নেওয়া যায়, অথবা, একটু থেমে, সেই ঘ্রাণকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টাও করা চলে। এই শহরে আলোর সংখ্যা বেশি। কিন্তু কোনো আলো তীব্র নয়। এক অদ্ভুত আলোছায়ার সৃষ্টি হয় শীতকালীন সন্ধ্যা সাতটায়। গলিগুলো আরো মোহময় হয়ে ওঠে। যেন সেগুলোর মধ্যে ঢুকলে, খোলা নর্দমার গন্ধের মধ্যে, সান্ধ্য রান্নার শব্দের মধ্যে, একজন পরিচিত লোকের সঙ্গে দেখা হয়েই যাবে, আর তার সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে একমত হওয়া যাবে, ভিন্নমত হওয়া যাবে, সে অকারণে আপনাকে বাড়িতে ডাকতেও পারে এক কাপ চা খেয়ে যাওয়ার জন্য। এমনই সন্ধ্যা সাতটায় আপনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঈশুয়ার কথা ভাবতে পারেন। আপনি যিহূদার কথা ভাবতে পারেন। মাথার উপরে ক্রমেই সম্পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাওয়া চাঁদ আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে পারে কোনো সময় জীবনে আপনি জেরুজালেমের কথা ভেবেছেন কি? ভেবেছেন কি হেরোদের কথা? সালোমে সেই যে নাচতে নাচতে তার লম্পট বিপিতার কাছে চেয়ে নিয়েছিল ইজরায়েলীয় প্রফেটের কাটা মুণ্ডু, ওই চাঁদ কি যোহন দ্য ব্যাপ্তিস্তের সেই মুখের সঙ্গে কোথাও মিলে যায়? ঠিক এমন সময় আপনার চোখে পড়বে দুর্বল ল্যাম্পপোস্টের তলায় ক্ষুদ্র ও নির্জন এক হারমোনিয়াম দোকান, সেখানে হারমোনিয়াম তৈরি হয়, ভাঙাচোরাগুলোকে সারানো হয়। তার সামনে এক মলিন লাল নাইটি পরা উজ্জ্বল কিশোরী, গায়ে ম্লান লাল সোয়েটার, একটা ফোন নিয়ে চুপচাপ কথা বলছে সতর্ক চোখে। গায়ে হলদেটে আলো পড়েছে। ওর কাকার দোকান। তিনি ওকে একটু বসতে বলে রাতের খাবার কিনতে গেছেন। সবুজ ময়লা লুঙ্গি পরে। ফুলস্টপ শুধু একটা শ্রেষ্ঠ ফুলস্টপ পেতে চায় বলেই একেকটা সেনটেন্স নিজেকে থামিয়ে দ্যায় না, বিষ খায় না, সিলিং ফ্যানে ঝুলে পড়ার জন্য দড়ির খোঁজ করে না। একটা সেরা এবং চরম ফুলস্টপের খোঁজ। প্রত্যেকটা সেনটেন্সই অথচ জানে, যখন বলা ফুরিয়ে যাবে, ফুলস্টপটা ঠিকই বসে যাবে। সেটা সেমিকোলন হবে না, কমা হবে না। একটা চরম অপছন্দের ফুলস্টপ সেটা হতেই পারে। একটা ফুলস্টপকে বোঝার জন্যই একেকটা সেনটেন্স সন্ন্যাসী হয়ে যাওয়ার কথা ভাবে। “জ্যোতি বোসকে সামনে পেলে স্তালিন তাঁকে কী বলতেন?” “স্তালিনকে সামনে পেলে নেপোলিয়ান তাঁকে কী বলতেন?” “নেপোলিয়নকে সামনে পেলে শংকরাচার্য তাঁকে কী বলতেন?” “শংকরাচার্যকে সামনে পেলে সোরেন কিয়ের্কেগার্দ তাঁকে কী বলতেন?” “তুই কিয়ের্কেগার্দকে মনে করলি, অথচ দস্তয়েভস্কিকে মনে পড়ল না তোর?” “তুই দস্তয়েভস্কিকে মনে করলি, নিকোলাই গোগলকে মনে পড়ল না তোর?” “মনে করার সঙ্গে বলার কী সম্পর্ক?” “আচ্ছা! তবে এতদূরই থাক। স্টপ!” লোকটা একটা কুয়োর দেওয়ালে বসেছিল। একটু সামনের দিকে ঝুঁকে। জোরে হাওয়া দিচ্ছে। পড়ে যাওয়ার ভয় আছে। কুয়োটা খুব গভীর। খুব অন্ধকার। আর ঠান্ডা। একটু আগেই যে লোকগুলো ওর পরিচয় জানতে এসেছিল, তারা কিছুই বুঝতে পারেনি ওর কথা। লোকটা এখনও বসেই আছে, বসে থাকবেও আরো কিছুক্ষণ। আর একটু পরেই শিমুল গাছের ফাঁক দিয়ে ওর মুখে সকালের রোদ এসে পড়বে। কোন গাছের ফাঁক দিয়ে সে এসে পড়ছে, এতে সকালের রোদের কিছুই যায় আসে না। ১ চূড়ান্ত উপচারে ঝিমিয়ে পড়েছে মাঝারি এক জেব্রা ! হল ? তোমার শেষ হল ধুয়ো তোলা? তাহলে এবার শুরু করি? এই যে অমানিশা কাল, সে বাতাবী লেবুর রোঁয়া, - একা গন্ধে, মৌতাতে ম' ম', যেন প্রাচীন সুবাতাস কার ভারে ও প্রক্ষেপে গেছে ঝুলে। কিছুদিন আগেও সে ছিল দীর্ণ এক চোখের আরশিতে সামান্য মজলিশি, আলতো ইশারাতে নড়ে চড়ে বসা এক কাঠের পুতুল। আজকাল ধারাবাহিক উপন্যাস লিখবে বলে ভাবে, অথচ কাহিনীর আন্দাজ গেছে হারিয়ে বেপথু কলমের দায়ে। ২ অন্ধকারের সাথে রোজ উলঙ্গ নৃত্য করছি আমি। রাতের পর রাত... ভোরের পর ভোর... একমুঠো সকাল এলেই বরং হাঁপিয়ে উঠি। ৩ সমস্ত হাওয়ার কাছে নতজানু হয়ে বসে আছি। পিছনের পথের এতগুলি হাহাকার গায়ে মেখে অন্ধের মত কোথায় ছুটব আর ? আমার যে গান প্রেমের দিকে বাঁকে তার মত অশ্লীল উচ্চারণ সহ্য হয় না আর। পুরনো লোহার মত জং-ধরা ভোঁতা তার সহজলভ্যতা। কতগুলো খুনে শকুন উড়ে বেড়ায় আর গা বাঁচাতে বাঁচাতে উচ্ছিষ্টভোজী হয়ে উঠি আমিও কখন যেন! খুঁড়ে খুঁড়ে যদি দেখি স্বয়ম্ভূ শিকড়ের মত কিছু এখনও অবশিষ্ট আছে কিনা, শুধু চিনেবাদামের খোলার মত পলকা এক হাওয়া ধুঁকতে ধুঁকতে দূরছাই ধুয়ো ধরে। পালাতে পালাতে তিরিশটি বসন্ত, পালাতে পালাতে মড়াখেকোদের বমি গিলে গিলে এই হৃষ্টপুষ্ট নধর কান্তি আমি ! কাকে আর বাঁচাতে যাব ? কি দিয়ে, কি নিয়ে যাব ? সুর হারিয়ে গেছে সব ! শুধু শব্দহীন একরোখা চিৎকারে দমবন্ধ হয়ে আসছে ! এই উন্মাদ সময় ! এই মৃত্যুমিছিল, এই কারফিউ, এই মগজধোলাই এড়িয়ে কোথায় কোন গোলাপের উপত্যকায় পৌঁছব? কাকে শোনাব প্রেমের গান শ্মশানে শ্মশানে ? ৪ ঝড়ের নিজস্ব কোন গন্তব্য কখনো থাকে না, হাওয়ার স্বকীয় তর্জমা যেহেতু সে। তুমি কেউ নও তার কাছে, তার চোখ নয় তোমার ওপরে স্থির। এই যে ঝলসাচ্ছে তোমার লেন্স, তোমার আবেগ ক্ষণস্থায়ী, ভেব না কখনও তার কারণ তুমি। হাওয়ারা জানে ভেতরে ভেতরে প্রবল বিদ্রোহ ঘটে গেছে। ঘাসে ঘাসে সেই আগুনের গন্ধ লেগে আছে আর এখন প্রচণ্ড গতিতে ধেয়ে আসছে পরিচিত মানুষের মত, হঠাৎ একইসাথে দুঃখিত ও ধ্বংসকামী। ফলে ভাবনার কিছু নেই, এইসব কিছু আগেও ঘটে গেছে, আবার একবার ঘটবে নিখুঁত হিসেবে, ফারাক শুধু এখানেই যে তুমি এই সবে সত্যি সত্যি দেখতে শুরু করলে! ৫ এই যে দেখছ, এই শুধু আছে তোমার বিপরীত! তোমার মিষ্টি ভাললাগার না লাগার ঠিক উল্টো- সম্পূর্ণ খিদে! মাথা থেকে নাভি পর্যন্ত সমুজ্জ্বল। আর আছে বাক্য কিছু বানভাসি। কি দেবে তুমি আমায়, তোমার দেবার যোগ্যতাই নেই! যদি দয়া করে থাক, তবে ত্রাণসামগ্রী হটাও। চিরটা কাল শুধু ন্যাকাবোকা 'আমি তো আছি তোমারই পাশে'- হটাও। তোমার বিবেকের উদযাপনের শরিক নই আমি। তাকাও - দেখ - এই তো ত্রিকাল! - সৃষ্টি- স্থিতি-লয়! আমিই তো ছিলাম, আমিই তো আছি, খাদ্য যুগিয়েছি, নোংরা সাফ করেছি, তোমার বমি থেকে খাবার খুঁটে খুঁটে খাইয়েছি রাস্তার কুকুর-বেড়াল! মড়কে মরেছি, দাঙ্গাতেও! আমিই তো তোমার যুদ্ধবাজের সেনার আড়াল! আজকাল কবিতা লিখি, দুকলম পড়াশোনা করি। শেখাতে এসো না। আমি রান্নার উনুনে কড়াই চাপিয়ে শিখেছি ছন্দ ঘুঁটের থপথপে আওয়াজে জেনেছি তাল, নদীর স্রোতের কাছে শিখেছি সুরের চলাচল। সময়ে জন্মেছি, সময়ে ফিরে যাব, আদি ও অকৃত্রিম! ৬ লিখছি, কারণ প্রকৃত উন্মাদের এ ছাড়া আর কোনো দেশ নেই। ১. ভালোবাসা ছাড়া আমি মরে যাব-- বলার পর মনে হয় মিথ্যে বললাম হাত রাখি চোয়ালে ও চিবুকে পেঁয়াজ রসুন ও মাংসের ঘ্রাণ বাজারে এদের দর আরও বেড়ে গেছে বস্তির কোনো খবর রাখি না বলে বাংলা মদের দাম ওঠা নামা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই সন্ধ্যের পরে একই টিভি সিরিয়াল রক্ত পড়ছে বাসে, পাদানিতে মার্সিডিজগুলি কী নির্ঝঞ্ঝাট কারা যেন বনধ ডেকেছে কাল থুতনিতে চাপ চাপ রক্ত লাগে পুরনো শহরে একটি দিন, স্বপ্ন-- মুক্ত গ্রামাঞ্চল ২. তোমাকে গোলাপ দেব কেনা, দেব এই শহরের দূষিত বাতাস বহু কল কারখানা বন্ধ হওয়া শ্রমিকের ঘাম চুয়ে সূর্য নেমে আসছে পিচরাস্তায় তার উপর দাম্ভিক হেঁটে যাওয়া ভিখারিকে 'এখানে হবে না বাবা', সেও দেব যদি একমাত্র তুমি এইসব প্রত্যাখ্যান না করো, হাতে তুলে গ্লোব দেখার মতো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শপথ নাও পৃথিবীর ইতিহাস ৩. নির্বিবাদে কিছু লোক মরে গেলে, একথাই তো ভাবছ তোমরা? ভুল ভেবেছ তাহলে। মৃত্যুর আগে অবধি প্রতিটি নিশ্বাস হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। প্রতিটি ঝুলন্ত লাশের চোখ যদি লক্ষ করতে তুমি, বলতে বলতে থামি.. আমি শালা কে এলাম পরিবর্তন করে দিতে সব যাকে যা দেখার সেসব বহু আগে শিখে নিয়েছ বলে মানুষ সনাক্ত করার আগে, সনাক্ত করা হয় লাশ ৪. কবিতা লিখে কারুর পেট ভরে না ক্ষুধা কমে যায় এমন শুনেছি তবে সেটা সাময়িক, যেমন আমার সিগ্রেট পিপাসা আসে অন্তে, রাসুকাকা রিকশা চালায় প্রত্যেক সওয়ারী তোলার আগে টেনে নেয় বিড়ি-- যাত্রী অধৈর্য হলে থাকে চুপচাপ। মক্কায় যেই যায় সেই হয় রাজা মিছিল কাটিয়ে টেনে রিকশায় বসে বলে আবার বিড়ি ধরায়, চুপচাপ। ৫. আমার স্বপ্নে আসে ভ্রান্তিসমূহ। জীবনে না করা ভুল। সত্যি ভেবে চমকে উঠি মুহূর্তে। ওষুধ পাইনি একবেলা। গো অ্যাজ ইউ লাইক। স্নায়ুগুলি খেলায় মত্ত। টুঁটি টিপে নিংড়ে নেয় হৃদয়। ডাক্তার বলেন মস্তিষ্ক। কেবলই দুঃসংবাদ মৃত্যু আর আত্মহনন। বেতনহীন বাপের একমাত্র ছেলে প্রথম নেশা করে বমি উগরচ্ছে। যেন আমি। চাপ চাপ রক্ত। একটি ঘরে বন্দী মেয়ে।দুবেলা নির্যাতন। সেও আমি। পালানোর জানলাগুলো ধারালো অস্ত্রের মতো চকচক করে। খুনের পূর্বে আমি মাটিতে তাকাই। অই মুখ। তোমার কি দেবতার অনির্বচনীয়। এ-ই সুখ এই মর্মে এনেছিলি যদি, বিশ্বাস লুকলি কোথায় হতচ্ছাড়ি? এই খেলা, ভ্রম। ভাবি। কেন ভাবি? |