Agony Opera
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন
Search

রুবি  বিষয়ক  দুটো  একটা  কথা  যা  আপনার  জানা  উচিত  নয়  ।।  উপাসনা

13/2/2021

0 Comments

 
Picture

মৃত্যুর সঠিক বয়স? শূন্য থেকে অনন্ত। 
তাই কাল রাতে রুবি মরে গেছে অসংখ্যবার। 

রুবির প্রথম মৃত্যুর খবর পেয়ে রেস্টুরেন্টে বসে ওয়েট্রেসকে খেঁকিয়েছি। পরের দু'বার ট্রেনে হিজড়েকে দেখে ঘুমনোর ভান করেছি আর ভিখিরির বাচ্চাকে খিস্তি মেরে চড় তুলেছি। হিজড়েকে খিস্তি দেওয়ার সাহস ছিল না। 

এই রুবি সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় এর ঘ্যানঘেনে উপন্যাসের রুবি নয়। এই রুবি কবিতায় লেখার রায় নয়। এমনকি এই রুবি ক্লাস সিক্সেই ক্যান্সারে মরে যাওয়া সহপাঠিনীও নয়। 

রুবির নাম রুবি হল কেন সেটা একটা প্রশ্ন। একাধিক মানুষের একই নাম হবে কেন? এ আবার কী কথা? এর কোনো যুক্তি নেই। রুবির নাম হতে পারত "খারাপ খবর"। কিন্তু সারাজীবন একটা মানুষের একই নাম থেকেই বা যাবে কেন? রুবির নাম "খারাপ খবর" থেকে "নিয়মনিষ্ঠা" হয়ে মরার সময় "রজনীগন্ধা" হয়ে যেতেই পারত। কিন্তু না। বার্থ সার্টিফিকেট বলছে রুবি,ডেথ সার্টিফিকেটও বলছে রুবি। অগত্যা রুবিকে আমাদের রুবি বলেই ডাকতে হবে। 

রুবির চতুর্থবার মৃত্যুর খবর দিতে নার্স সোজা চলে এলো বাড়িতে। সিনেমার মত। সাদা পোশাকে। 
রুবি নাকি চতুর্থবার মরার আগে বিড়বিড় করে বলেছিল "বেশ্যামাগী রুবি... চোর চোর চোর চোর... বেজন্মার বাচ্চা বেজন্মা রুবি... চোর চোর চোর চোর..." ইত্যাদি। আর কী কী বলেছিল নার্স ভালো শুনতে পায়নি। 
নার্স যখন এলো আমার তখনো হাত ধুয়ে চায়ের জল বসানো হয় নি। আমি বললাম "জানি, ভেতরে আসুন।" নার্স একটু অবাক হল যে আমি জানলাম কী করে। তারপরেই ওর নজরে পড়ল ডাক্তারের সাদা গাউন চেয়ারের ওপর পড়ে। ওর ঠোঁটের কোণে একটা মুচকি হাসি দেখা দিল। আমার দৃষ্টি এড়ায়নি বুঝে সামলে নিল। 
রুবির বিড়বিড় করে বলে যাওয়া কথাগুলোর পেছনের ঘটনাগুলোর খানিকটা বাথটাবে পড়ে থাকা ডাক্তারের বডিটা জানে। বাকিটা নার্সকে শোনাবো ঠিক করলাম। সিঙ্কে হাতটা ধুচ্ছি, নার্স দেখল হাতে লাল লাল তরল কিছু লেগে আছে, সিঙ্কে গড়িয়ে যাচ্ছে লাল জল। 
একটু সিঁটিয়ে গিয়ে বলল বাড়িতে ছোট বাচ্চা আর অসুস্থ শাশুড়িকে রেখে এসেছে। বড়জোর একটা "গল্প" শুনতে পারে, যদি নিতান্তই তা আমাকে "হেল্প" করে। "গল্প" শুনেই মাথা গরম হয়ে গেছিল, হেল্প শুনে হেসে ফেললাম। বেচারা!! আমাকে হেল্প করবে!
বললাম বসুন। বসল চুপচাপ কোলে ব্যাগ আঁকড়ে ধরে। যদি খুন হবারই ভয় থাকে ব্যাগ আঁকড়ে কী করবে কে জানে!! ব্যাগে আত্মরক্ষার সরঞ্জামও কিছু নেই তা আমার আগেই জানা আছে। 

যাকগে। রুবি আটবছর বয়সে একবার সূর্য পৃথিবী আর চাঁদ আঁকবে বলে একটাকা, পঞ্চাশ পয়সা আর পঁচিশ পয়সার কয়েন নিয়েছিল, না বলে। সেজন্য রুবি কমপক্ষে পঁচিশবার উঠতে বসতে খেতে শুতে শুনেছিল "চোর চোর চোর চোর, চোরের বাচ্চা চোর।" 

তারপরে রুবি অনেকবার চুরি করেছে। কেউ ধরতে পারে নি। কারণ চুরি করা ও করে ধরা না পড়া এমন কিছু কঠিন কাজ নয়। আশেপাশের মানুষজন মূলতঃ গাম্বাট প্রকৃতির এবং অমনোযোগী। কানের কাছে চেঁচিয়ে না বললে কিছু বুঝতে পারে না, চল্লিশবার বললেও পারে না, অথবা বিশ্বাস করে না। সত্যি বিশ্বাস করা কঠিন, তাই রুবি চুরির আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। 

নার্স উসখুস করছে।উঠে দাঁড়াল। বললাম আরেকটা ঘটনা, অন্তত আরেকটা ঘটনা আপনার শোনা দরকারী। কেন আমি রুবিকে খুনের পরামর্শও দিতাম। চোখ দিয়ে ইশারা করলাম বসতে। নার্সের নাম আইরিস, তাই সে সহজেই বুঝে গেল আমার শক্ত চোখের মণির আদেশ। 

রুবির গলায় সুর ছিল দেখে ছোটবেলাতেই রুবিকে গানের ক্লাসে ভর্তি করে দেওয়া হয়।বছর এগারোর রুবির একদিন রেওয়াজ করতে ইচ্ছে করছিল না। একটা বিস্ফারিত চোখ, কাঁপতে থাকা সবকটা পেশী, ঠোঁটের কোণে থুতু জমে ওঠা মুখ দাঁত কিড়মিড় করতে করতে রুবির গোল দিশেহারা মুখের সামনে এসে বলছিল "তা করবি কেন? বেশ্যাগিরি করবি, বেশ্যাগিরি। বাড়ি ফাঁকা পেলেই তো ওই মুদির দোকানের ছেলেকে ঘরে ঢোকাবি। বেশ্যামাগী।" 

একটা কথাও রুবি ঠিকঠাক উদ্ধার করতে পারে নি সেসময়। মুদির দোকানের ছেলেকে সে কেন বাড়িতে ঢোকাতে যাবে! আর ঢুকিয়ে করবেটাই বা কী? বেশ্যাগিরি যে কী তা না জানলেও, নিশ্চয়ই একটা ভয়ঙ্কর ভবিষ‍্যত তা আন্দাজ করে, সেসব এড়াতে, ঝুঁকি না নিয়ে, চোখের জল মুছে চুপচাপ রেওয়াজে বসেছিল। 

এসব কথা রুবি যখন আমাকে বলত, রাগে আমার গা জ্বলত,গলা টিপে দিতে ইচ্ছে করত রুবির। বলতাম "মেনে নিতিস এসব? কুত্তার বাচ্চাই বটে তুই।" রুবি করুণ চোখ তুলে বলত "কী করব? মানেই তো বুঝতাম না।আর চটি দিয়ে মারত। ছোট ছিলাম। কী করতাম? তবে যখন ভালো তখন তো ভালো থাকত। আর ভালোবাসে বলেই করত। আমার ভালোর জন্যই।"

আমি খ্যা খ্যা অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছিলাম। "ভালোবেসে? ভালোবাসা?! পেরেন্টিং? নাকি?!! ওওওলে বাবালে!"
রুবি আরও কাঁদতে থাকত, শেষে ওই বাড়িতেই ফেরত যেত "কর্তব্য" করতে। 

আমি রুবিকে সিধে করে তুলতেই পারতাম, কিন্তু রুবি আমার সঙ্গে থাকল না। ওই বাড়ির লোকেরা বলেছিল মেয়েতে মেয়েতে প্রেম সংসার করা নিষেধ। আমি যদিও পরে অনেকগুলো প্রেম করেছি। রুবি বিয়ে বাচ্চা করেছিল। 

নার্সের চোখ দেখলাম ছলছল করছে। বলল "ম্যাডাম আমি সবই বুঝতে পারছি,খুবই খারাপ লাগছে, কিন্তু ছ'টা দশের ট্রেনটা মিস করলে... বাড়িতে ছোট বাচ্চা বোঝেনই তো... খুব..."

আমি জোকারের স্টাইলে দরজা খুলে দিলাম। ""আসুন। সাবধানে।"
পুরুষ ডাক্তার "গল্প" শোনার গোটা সময়টা আমার বড় বড় বুকের দিকে তাকিয়ে ছিল।তাই বডি বাথটাবে। সিনেমার মতই।খুন বাথটাবে করা সুবিধেজনক। মহিলা নার্স তাকায়নি, তাই যেতে দিলাম। ভাবলাম যদি ডাক্তার মহিলা আর নার্স পুরুষ হত, তাহলেও কি ডাক্তার আমার বুকের দিকে তাকাত আর নার্স নয়? ব্যাপারটা পদ ও পেশানির্ভর, না লিঙ্গ?

যাকগে।এত জটিল কথা ভেবে লাভ নেই। একটু বাদেই রুবির খুনী আসবে। আহা রুবি হাসপাতালে রোগে ভুগে মারা গেছে বারবারই, জানি। কিন্তু আসলে রুবি খুনই হয়েছে। খুন তো আর একদিনে হয় না।
রুবির খুনী আসতে বাধ্য, এমন চিঠি দিয়েছি অনামে। সব সংলাপও ঠিক করে রাখা আছে। কলিং বেল বেশ কয়েকবার বাজালে তারপরে ধীরে সুস্থে গিয়ে দরজা খুলব। "কে আপনি? কী চান?" ই বলবে তা নিশ্চিত। ঘরে ঢুকতে বলব। ঢুকবেও। দরজা বন্ধ করে ড্রয়িং রুমের দিকে হাত দেখাব। দ্বিতীয়বার যখন জিজ্ঞেস করবে, "কে আপনি, ঠিক করে বলুন কী চান? রুবি কোথায় আমার রুবি কোথায়?"

"আমার রুবি!! আমার?!! হা হা হা হা!! আমার রুবি!!" তারপর শীতল চোখে তাকিয়ে বলব "আমি তোর যম।" বলে এক পা এক পা করে এগোতে থাকব। খুনী ভয় পেয়ে পিছোতে থাকবে, আত্মরক্ষার উপায় খুঁজবে।

এমন সময় রুবি হঠাৎ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসবে। খুনী হতভম্ব হয়ে যাবে। আমরা হেসে উঠব। রুবি বলবে "চা করেছি খাবে এসো।" আমি বলব "শুধু চা?"। রুবি বলবে "না না সঙ্গে কাবাবও করেছি। মাংসের।"
আমি মনে মনে ভাবব, যাক ডাক্তারের বডিটার একটা সদগতি হল। নষ্ট করা এমনিও আমার ভালো লাগে না। 

মৃত্যুর সঠিক বয়স শূন্য থেকে অনন্ত। মৃত্যুশোকও তাই।



0 Comments



Leave a Reply.

    Archives

    February 2021
    December 2020
    November 2020
    September 2020
    August 2019
    June 2019
    April 2019
    February 2019
    December 2018
    October 2018
    August 2018

Proudly powered by Weebly
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন