Agony Opera
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন
Search

আত্মিক ও অপবিত্র   :  অনুবাদে সেসিল রাজেন্দ্র ।।  হিয়া   মুখোপাধ্যায়

25/9/2020

1 Comment

 
Picture


মালয়েশিয় কবি সেসিল রাজেন্দ্র জন্মেছিলেন মালয়েশিয়ার পেনাং প্রদেশে। তাঁর ছোটবেলার অধিকাংশ সময়টাই কাটে তানজুং তোকোং নামের জেলেদের এক ছোট্ট নামে। তার নিজের জবানীতে, এগারো বছর বয়েসে রবীন্দ্রনাথ আর ওমর খৈয়ামের কবিতা পড়ার পরই বদলে যায় সেসিলের জীবন। পেশায় আইনজীবী হলেও, সেসিল একাধিকবার জানিয়েছেন তিনি 'পোয়েট বাই কমপালশন।' তাঁর কবিতা অনেকক্ষেত্রেই সোজাসাপ্টা প্রতিরোধের কবিতা। সমকালীন বিশ্ব পরিস্থিতি, উত্তর ঔপনিবেশিক জীবন থেকে শুরু করে পরিবেশ সচেতনতা...নিজের বাইশেরও বেশি প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থে তিনি প্রতিনিয়ত স্পষ্ট ভাষায় বলে গ্যাছেন এক শ্রেণী সচেতন রাজনীতির কথা। ফলস্বরূপ, বিতর্ক আর শাষক শ্রেণীর কোপদৃষ্টিও সহ্য করেছেন একাধিকবার। তাঁর স্বদেশের সাহিত্যিক মহল ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মাতব্বররা একাধিকার তাঁর কবিতাকে 'অশ্লীল', 'রাষ্ট্রদ্রোহী' অথবা 'অ্যান্টি ন্যাশনাল' আখ্যা দিয়েছে। গুপ্তচর বিভাগের নজরবন্দী ছিলেন দীর্ঘদিন। এমনকি সরকার একসময় তাঁর পাসপোর্টও বাজেয়াপ্ত করে।  তবে তাঁর কবিতা একটানা থেকে গ্যাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। জার্মান, ফ্রেঞ্চ, জাপানী, সোয়াহিলি ও তামিল সহ পঞ্চাশেরও বেশি ভাষায় তাঁর কবিতা অনূদিত হয়েছে। তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে টাইমস, এশিয়া উইক, পোয়েট্রি ইন্টারন্যাশনাল কিংবা ইউনিসেফের মুখপত্রের মত একাধিক বিখ্যাত আন্তর্জাতিক পত্রিকায়। ২০০৫ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হন।
বাংলায় তাঁর অনুবাদ খুব সম্ভবত এই প্রথম। 

শিল্পতত্ত্ব


আসুন ভদ্রমহোদয়গণ আমরা কবিতাকে
এই বর্বরগুলোর হাত থেকে বাঁচাই..
যারা কবিতাকে রাস্তায় নামিয়ে এনেছে
যারা কবিতাকে পতাকা অথবা স্লোগান
অথবা মগজধোলাই-যন্ত্রের মত ব্যবহার করেছে

আসুন ভদ্রমহোদয়গণ, আমরা রাজনীতি, 
মতবাদ, সংগঠন...এইসব খুচরো বেনিয়াবৃত্তি 
আর মোটা দাগের সব প্রচারকৌশল 
ছেঁটে ফেলে কবিতাকে ফের 
ঝাঁ চকচকে বানিয়ে ফেলি। 

আসুন ভদ্রমহোদয়গণ, কবিতাকে 
আমরা ফের পৌছে দিই
সেই শুদ্ধ শিল্পের স্বর্গে
আসুন কবিতাকে আমরা উদ্ধার করে
তার মুখে গুঁজে দিই নিসর্গ শোভা

আজ্ঞে হ্যাঁ ভদ্রমহোদয়গণ, সময় এসেছে 
কবিতাকে তার আভিজাত্য ফিরিয়ে দেওয়ার
সময় এসেছে সংস্কৃতির গর্ভগৃহে
জ্বলন্ত বিগ্রহের মত, যথাযথ সম্মানের সাথে
কবিতাকে স্থাপন করার। 

তবে সমস্যা একটাই...
যখন বিষে ঝলসে যাওয়া
পৃথিবীর শেষতম গাছ থেকে
শেষতম পাতাটা টুপ করে খসে পড়বে 
তেতে ওঠা মাটিতে 
আর শেষতম ফড়িঙ, লেঙচে লেঙচে 
উধাও হবে দিগন্তের দিকে, 
আর শেষতম পিপীলিকাভুক 
সমুদ্রের দিকে এগোবে, 
দোটানায়, অসহায়ভাবে
আর শেষতম সুরেলা পাখি
ছাই-ঢাকা ডাল থেকে 
বেমালুম ঝরে পড়বে

আর শেষতম সৈনিক সুরঙ্গের মধ্যে
কেঁপে উঠবে শেষবারের মত
আর শেষ তেলের স্তর
গুঁড়ি মেরে এগোবে 
আমাদের শেষতম 
সৈকতটাও গিলে নিতে
তখন খাবি খেতে থাকা মাছেদের
'শিল্পতত্ত্ব' ঠিক কে বোঝাবে?



একটি ব্যতিক্রমী মৃত্যু 


আমার ঘরে বউ আছে
আছে এক ছেলে, মেয়ে, 

ভাই-বোন, দাদা-দিদি
আর আছে যৌথ পরিবার 

কিন্তু ভালোবাসা বলতে
যদি শুধু এটুকুই বুঝি 
তাহলে আমাকে জ্যান্ত কেটে
কুকুরগুলোকে খাইয়ে দাও তোমরা। 
বহু আগেই আমি মরে গেছি।  

আমার বাগানে 
খ্যাপামোয় ভর করে 
বেড়ে ওঠে গুচ্ছ গুচ্ছ পেঁপে
আর তরমুজ
আর বোগেনভিলিয়া 

কিন্তু শুধুমাত্র ওরাই 
যদি আমায় ভাবায় 
তাহলে আমাকে জ্যান্ত কেটে
কুকুরগুলোকে খাইয়ে দাও তোমরা। 
বহু আগেই আমি মরে গেছি।  

কবিতা আমাকে 
অদ্ভুত টানে
আর টানে ছন্দ, সুর...
পাইন গাছের জঙ্গল,
সমুদ্রের অশান্ত ঢেউ 

কিন্তু চাওয়া বলতে 
যদি শুধু এটুকুই বুঝি 
তাহলে আমাকে জ্যান্ত কেটে
কুকুরগুলোকে খাইয়ে দাও তোমরা। 
বহু আগেই আমি মরে গেছি।  

আমার চাকরিতে 
মাইনে ভালোই, 
একটা ভর্তি পেট, 
একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, 
মাথার ওপর একটা ছাদ। 

বাদবাকিদের জন্য  
যদি এর চেয়ে এক কণাও কম দাবি করি
তাহলে আমাকে জ্যান্ত কেটে
কুকুরগুলোকে খাইয়ে দাও তোমরা। 
কারণ বহু বহু বহু আগেই আমি মরে গেছি।

'প্রকৃত' কবিদের প্রতি নির্দেশসমূহ 
​

(১ কোটি সত্তর লক্ষ মৃত শিশু; শুধুই অস্বস্তিকর একটা ভাবনা নয়, বরং ভয়ানক বাস্তব। গতবছর যখন প্রায় গোটা পৃথিবী ক্রমবর্ধিত মুদ্রাস্ফীতি প্রভৃতি নিয়ে মাথার চুল ছিঁড়ছিল, সেই সময়ে এই গ্রহে ঠিক ততজন শিশু মারা যায়: দিনে ৪০০০০ জন, ঘন্টায় ১৬৬৬ জন, মিনিটে ২৭ জন, প্রতি ২.২ সেকেন্ডে একজন।)

যথেষ্ট হয়েছে সেই সব জঘন্য ক্লিশে
সেইতো এক দাঙ্গা, রক্তপাত, দুর্ভিক্ষ 
আর সস্তা গড়পড়তা ঘটনাক্রম। 
আগামীর জন্য বরং লিখে রাখো
চিরন্তন সত্য আর সুন্দরের কথা:
লেখো প্রেম, যৌনতা, একাকীত্ব
লেখো সারল্যের মৃত্যু
লেখো মিষ্টি এই মুহূর্তদের গল্প 

লেখো কীভাবে প্রেয়সী দ্রুতপায়ে 
বাগানের দরজা খোলা রেখেই
তাকে ছেড়ে গিয়েছিল;
লেখো ঠাকুর্দার পায়ের নখ উপড়ে
উঠে আসা যন্ত্রণার কথা।
লেখো দূরদেশের কোনো এক লেখকের 
ব্যক্তিগত আর সৃজনশীল উদ্বেগ....

মৃত্যুর কথাও লিখতে পারো 
(যদি নিতান্তই, বাধ্যত লিখতেই চাও), 
তবে তা নিজস্ব পরিসরেই 
আর যথাযথ অনুপাত বুঝে। 
যেমন এক আধজন মাসি-পিসি
অথবা দূরসম্পর্কের এক মামা...
তবে কিছুতেই একটা আস্ত দেশ
আর তার জনসংখ্যার মরে যাওয়া লিখো না। 

বরং মিষ্টি মুহূর্তগুলোতে মন দাও;
যেমন প্রেম, যৌনতা, একাকীত্ব
সারল্যের মৃত্যু....
কিন্তু কিছুতেই কঙ্কালসার শিশুদের দিকে নয়! 

আর কেউ যদি চিৎকার করে ওঠে
প্রতি বছর এক কোটি সত্তর লক্ষ শিশু অপুষ্টিতে মরছে 
(অর্থাৎ প্রতি দু সেকেন্ডে গড়ে দুজন)
জানাও সে সমস্যায় অন্য কেউ মাথা ঘামাক 

কারণ তোমাকে ভাবতে হবে মিষ্টি মুহূর্তদের কথা, 
যথা প্রেম, যৌনতা, একাকীত্ব প্রভৃতি
তখন রক্তপাত আর মৃতপ্রায় শিশুদের মত 
গা ঘিনঘিনে ক্লিশেদের 
সযত্নে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।



রুবাইয়াৎ ও রেডিয়েশন 

আর হ্যাঁ, আমিও 
প্রতিবাদ আর প্রতিরোধে ক্লান্ত 
এই উন্মত্ত পৃথিবী ছেড়ে
যদি খৈয়মের মতই 
নিরালায় পালাতে পারতাম
সাথে এক টুকরো রুটি
এক পাঁইট মদ 
এক বই কবিতা 
আর একদম পাগলী একটা মেয়ে

কিন্তু ওমার, এই
পারমাণবিক আশঙ্কার ছায়ায় 
আজ আর কোথাও কোনো স্বর্গ নেই।
রুটির গুঁড়োগুলো 
তেজষ্ক্রিয় টুকরো হয়ে খসে গ্যাছে, 
সব মদ এখন বিষাক্ত
আর আমার প্রেমিকা, 
রক্তাল্পতায় ভোগা একটা হাড্ডিসার দেহ, 
ছাইয়ের স্তূপে দাঁড়িয়ে 
আর গান নয়, 
শুধুই চিৎকার করছে।


​আমার বার্তা 

আর এখন তুমি জানতে চাইছো
আমার অন্তর্নিহিত বার্তার কথা
আর আমি নবোকভের ভাষায় বলছি-
আমি কবি 
ডাকহরকরা নই
বিলি করার মত কোনো বার্তা নেই আমার। 

কিন্তু আমি চাই আমার কবিতা
কাঁপতে কাঁপতে 
ঔদাসিন্যের এই শক্ত বর্মে
ফাটল ধরাক।
আমি চাই ওরা রুপোলি আঠায় জুড়ে থাকা
অলস চোখের পাতাগুলোকে 
সটান খুলে দিক।

আমি চাই অক্ষরগুলো 
ব্যালে নাচতে নাচতে ধরা দিক
লাস্যময়ীদের যৌন স্বপ্নে 
আমি চাই স্বরবর্ণগুলো 
বাতিল মানুষের ঘুমের গভীরে
ভেসে ভেসে উঠুক 

আমি চাই আমার ব্যঞ্জনবর্ণরা 
দৃষ্টিহীনেদের চোখের পর্দায় 
ছুঁড়ে দিক রঙিন আর জ্যান্ত সব দৃশ্য
আমি চাই পঙক্তিগুলো
দশ হাজার ম্যান্ডোলিন হয়ে ফেটে পড়ুক
বধীরের কানের পর্দায় 

আমি চাই এমন ছন্দ 
যা পাইন, ওক আর শাল শেগুনের 
অতলান্তিক ঘুমের
ভিত নড়িয়ে দেবে
শিকড় উপড়ে তারা 
নিজেদের নিক্ষেপ করবে
দুনিয়ার বুলডোজার আর ইলেকট্রিক কুড়ুলের শরীরে
আর উদ্ধত পায়ে এগোবে 
জঙ্গলের ঠিকাদারদের গুঁড়ো করে দিতে। 

আমি চাই এমন সব স্তবক 
যা মেরু ভাল্লুক আর বাঘেদের 
থাবায় গুঁজে দেবে
এক একটা আস্ত স্টেনগান 
আর প্রত্যেকটা সীল, তিমি আর শুশুকের
পাখনার নিচে লুকিয়ে রাখবে হারপুন
আর স্বপ্রজাতির প্রতিটা হত্যাকাণ্ডকে
ওরা সশস্ত্র প্রতিরোধ করবে 

আমি চাই প্রতিটা ছেদ-যতি চিহ্ন....
দাঁড়ি, কমা আর সেমিকোলন 
ভাত, গম, জোয়ার, বাজরা আর
বার্লির দানা হয়ে ঝরে পড়বে বুভুক্ষুর মুখে, 
আর চাই রুপকগুলো রুপ নেবে 
গৃহহীনের মাথা গোঁজার মত ছাদে 

আমি চাই অনুপ্রাস অনায়াসে
হাসির রেখা হয়ে জ্বলে উঠুক 
অসুস্থ, অসহায় আর ভয়ানক একা 
ওই মানুষগুলোর ঠোঁটে
আর দুনিয়ার তাবত মজদুর আর কৃষকের
যুদ্ধবিধ্বস্ত, হা-ক্লান্ত শিরায় 
অ্যাড্রিনালিন হয়ে ছুটুক

আর হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি চাই
আমার কবিতা বইয়ের পাতা থেকে
লাফিয়ে নামুক আর 
প্রচ্ছদ ছিঁড়ে ফেলে কুচকাওয়াজ করে
এগিয়ে যাক আধা জাগ্রত মানুষের সমুদ্রে
আর সব বিশেষ্য, বিশেষণ, অব্যয় 
কার্য, কারক, সন্ধি সমাস....
নিজের শরীর থেকে খুলে রেখে বলুক 

'এই আমার আঘাত, আমার ক্ষত; 
এই আবার ছেঁড়াখোড়া উদর, 
এই..এইখানে আমি জরাজীর্ণ আর ক্ষুধার্ত;
আর ওইখানে ওরা আমায় মেরে রক্তাক্ত করেছিল;
আর এই ইলেকট্রিক ক্রুশকাঠে আমি মরে গিয়েছিলাম, 
ভাই আমার, বোন আমার, আমি এসেছি!'

1 Comment
দীপব্রত
4/10/2020 22:35:49

এঁর আরো লেখা পড়তে চাই। কিভাবে পাবো?

Reply



Leave a Reply.

    Archives

    April 2021
    February 2021
    December 2020
    November 2020
    September 2020
    August 2019
    June 2019
    April 2019
    February 2019
    December 2018
    October 2018
    August 2018

Proudly powered by Weebly
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন