Agony Opera
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন
Search

বিলাস   সারং'এর  'দুই  জেনারেলের  গল্প'।।  হিয়া   মুখোপাধ্যায়

23/6/2019

6 Comments

 
Picture

​[
স্বাধীনতা উত্তর ভারতের অন্যতম আধুনিক লেখক বিলাস সারং-এর জন্ম ১৯৪২ সালে। জীবদ্দশায় তিনি অসংখ্য ছোট গল্প, কবিতা ও উপন্যাস লিখে গ্যাছেন। জন্মসূত্রে মারাঠী এই লেখক তাঁর মাতৃভাষা ও ইংরেজি-উভয় ভাষাতেই সমান সাবলীল ছিলেন। প্রকৃত প্রস্তাবে একজন উত্তর-ঔপনিবেশিক লেখক, বিলাস সারং-এর দ্বিভাষিকতা তাঁকে দিয়েছিল এক অনন্য আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গী যার শিকড় গভীরভাবে প্রোথিত ছিল মারাঠী সাহিত্যে। তাঁর লেখায় অসংখ্য পূর্বজদের মিশ্র প্রভাব লক্ষ্যণীয়। ৫০ ও ৬০ এর দশকের "মারাঠী নবকথা” আন্দোলনের লেখকদের থেকে তিনি পেয়েছিলেন তাঁর ছোটগল্প লেখার অনুপ্রেরণা যাতে মসৃণভাবে এসে মিশেছিল কাফকা, কামু, সার্ত্রে ও বেকেটের মত পশ্চিম ইউরোপীয় লেখকদের প্রভাব। ভারতীয় ও পাশ্চাত্য জীবনবোধের আপাত দ্বন্দ, যা তাঁর সমসাময়িক ভারতীয় লেখকদের আছন্ন করে রেখেছিল, তা অতিক্রম করে তিনি লিখেছেন প্রকৃত আন্তর্জাতিক সাহিত্য যা দেশ ও কালের গন্ডীতে বাঁধা অসম্ভব। উল্লেখযোগ্য মারাঠী গল্প সংগ্রহ 'সোলেদাদ' ও 'আতঙ্ক' যার স্বকৃত ইংরেজি অনুবাদ 'আ ফেয়ার ট্রি অফ দ্য ভয়েড' ও 'আ উওম্যান ইন কেজেস'এ সঙ্কলিত হয়েছে। তাঁর ইংরেজি উপন্যাস 'দ্য ডাইনোসর শিপ' ও মারাঠী উপন্যাস 'এনকিচ্চা রাজয়াত'ও পাঠককে সমানভাবে গ্রাস করে। ফরাসী ভাষাতেও তাঁর লেখা অনূদিত হয়েছে। ২০১৫ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।]


১
ডানদিকে ফিরে জেনারেল কোর্মা বিছানার পাশে অ্যালার্ম ঘড়িটার দিকে তাকালেন। অন্ধকারে মিনিটের কাঁটার হলদেটে আলো ফসফরাসের মত জ্বলজ্বল করছে। কাঁটাটা লম্বালম্বি দাঁড়িয়ে, য্যানো গার্ড-অফ-হনার অনুষ্ঠানের কোনো সৈনিকের হাতের খাড়া তলোয়ার। ঘন্টার কাঁটার পাত্তা নেই। যার মানে দাঁড়ায় ঘন্টার কাঁটা মিনিটের কাঁটার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে। অর্থাৎ কিনা এখন ঠিক মাঝরাত।  
কিন্তু সত্যিই কি তাই? ঘন্টার কাঁটাটা আবার বেমালুম হাপিস হয়ে যায় নি তো? লোকজন তো রাতবিরেতে হামেশাই হাপিস হয়ে যাচ্ছে, পরে আর কখনো তাদের দ্যাখা পাওয়া যায় না। ঘন্টার কাঁটাটারও ওই হাল হল নাকি?
কয়েক মুহূর্তের জন্য, জেনারেল কোর্মা উদ্বিগ্ন হলেন। আচ্ছা সত্যি সত্যিই যদি ঘন্টার কাঁটাটা উবে গিয়ে থাকে? শুধু শুধু একটা মিনিটের কাঁটা নিয়ে তখন তিনি করবেনটা কী? আর ঘন্টার কাঁটা ছাড়া কীভাবেই বা সেক্ষেত্রে জেনারেল কোর্মা তার সামরিক অভ্যুত্থানের সময়-নির্ঘন্ট স্থির করবেন?
জেনারেল কোর্মা এসব ভাবতে ভাবতেই ঘন্টার কাঁটা চুপিসাড়ে এগিয়ে মিনিটের কাঁটার বাঁদিক দিয়ে উঁকি দিলো। জেনারেল কোর্মা নিঃশব্দে হাততালি দিয়ে উঠলেন।
ঘন্টার কাঁটা দীর্ঘজীবী হোক! বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক!
জেনারেল কোর্মার মনে হল ওনার সামনেও ঠিক এই মিনিটের কাঁটার মতই একটা অবয়ব ঠায় দাঁড়িয়ে ওনাকে অদৃশ্য করে রেখেছে, যার নাম জেনারেল পোলাও। ঘড়ির ভিতরের মিনিটের কাঁটা তো কিছুক্ষণেই সরে যাবে, কিন্তু জেনারেল কোর্মার সামনের মিনিটের কাঁটাটির মধ্যে কোনো নড়ন-চড়নের লক্ষণ দ্যাখা যাচ্ছে না। কাঁটাটিকে উপরে ফেলে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে, আর কে না জানে ঘন্টার কাঁটাই হচ্ছে ঘড়ির আসল প্রভু।
ঘন্টার কাঁটা দীর্ঘজীবী হোক!
মিনিটের কাঁটা ধীরে ধীরে ঘড়ির অতলে তলিয়ে যায়। জেনারেল কোর্মা অধৈর্য হয়ে অপেক্ষা করেন কখন সেটা এক্কেবারে অধোবিন্দুতে গিয়ে পৌছবে, যাকে বলে জমির সাথে নাক ঘষা অবস্থায়। ও ব্যাটার ওখানেই থেমে যাওয়া উচিত, বরাবরের মত, জেনারেল কোর্মা ভাবলেন।
ঘন্টার কাঁটা দীর্ঘজীবী হোক!
জেনারেল কোর্মা অন্যদিকে পাশ ফিরে নিজের স্ত্রীর দিকে তাকালেন। দেখলেন ওপাশে তার বিশালবপু গিন্নী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওর ঢাউস শরীরের উপরিভাগে দুইখানা পেল্লায় স্তন য্যানো দুই দিকে উপচে পড়ছে। প্রতিটা নিঃশ্বাসের তালে তালে, স্তনদুটো এমনভাবে ফুলে উঠছে য্যানো ওরা যেকোনো মুহূর্তেই লাফিয়ে উঠে দৌড় লাগাবে। ওর ভুঁড়িখানা নিশ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সাথে উঠছে আর নামছে, নাভির গর্তখানাও ক্রমান্বয়ে প্রসারিত আর সংকুচিত হচ্ছে। জানলা দিয়ে আসা জ্যোৎস্নার আলোয় শুধু গলা থেকে পাছার অংশটুকুই দ্যাখা যাচ্ছে। মুন্ডু আর ঠ্যাঙ দুখানা অন্ধকারে ডুবে আছে। জেনারেল কোর্মার মনে হল চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ ওর স্ত্রীর শরীরেও এক আশ্চর্যরকমের হড়কা বান এনেছে।
জেনারেল কোর্মা জানতেন অন্তত আগামী ঘন্টাদুয়েকের মধ্যে ওনার ঘুম আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। উনি ধীরপায়ে খাট থেকে নেমে রান্নাঘরে গেলেন। তারপর আলো না জ্বালিয়েই ফ্রিজের কাছে এসে দাঁড়ালেন আর সামান্য হাতড়ে দরজা খুললেন। তারপর ফ্রিজ থেকে এক প্যাকেট চীনাবাদাম বের করে এক এক করে খেতে শুরু করলেন। ঠান্ডা চীনাবাদাম ওনার ভারী পছন্দ।  বৌ ওনাকে একসাথে বেশী চীনাবাদাম খেতে দেন না। জেনারেল কোর্মা মনে মনে স্থির করলেন একবার নিখুঁত ভাবে ওনার সামরিক অভ্যুত্থান সম্পন্ন হয়ে গেলেই যত ইচ্ছে চীনাবাদাম খাবেন। আরে, যখন তোমার স্বামীই দেশের প্রেসিডেন্ট, তখন কোন স্ত্রীর ঘাড়ে কটা মাথা যে তাকে হুকুম করে?
সামান্য আলোর জন্য জেনারেল কোর্মা ফ্রিজের দরজা হাল্কা ফাঁক করে রেখেছিলেন। ফ্রিজের মৃদু ঘরঘরের সাথে চীনাবাদাম চেবানোর কচরমচর মিশ খেয়ে যাচ্ছিলো। চিবোতে চিবোতে জেনারেল কোর্মা ফ্রিজের ভিতরে উঁকি মারলেন একবার। ভিতরে সে এক আলাদা জগত। শীতল, ভাবলেশহীন, ভিনগ্রহের মত। হঠাতই জেনারেল কোর্মার নিজেকে খুব একা বোধ হলো। সেনাবাহিনীর অন্যান্য অফিসার আর সৈনিকরা ওকে পুরোপুরি সমর্থন করবে তো?
ফ্রিজ থেকে জল খেয়ে জেনারেল কোর্মা শোওয়ার ঘরে ফিরে গেলেন। কিছুক্ষণ খাটের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে তারপর তিনি বারান্দার দরজা খুলে বাইরে গিয়ে দাঁড়ালেন।
উজ্জ্বল জ্যোৎস্নায় চারপাশ ভেসে যাচ্ছে। আকাশে মেঘের চিহ্নমাত্র নেই। অথচ মে মাস শেষ হতে চললো, সামনেই বর্ষাকাল, যেকোনো দিন বৃষ্টি নামলো বলে।
বর্ষা আসার আগেভাগেই সামরিক অভ্যুত্থানটা সেরে ফেলা দরকার। বিপ্লবটা গরমকালেই করা দরকার, যখন লোকের মাথা গরম হয়ে থাকে। পৃথিবীর যাবতীয় বিপ্লব গরমকালেই হয়ে এসেছে। একবার বৃষ্টি নেমে গেলে লোকজনের মাথাও ঠান্ডা হয়ে যায়, তখন আর বিপ্লবেরও বিশেষ সুযোগ থাকেনা। জেনারেল পোলাও ও তো চারবছর আগের এক গ্রীষ্মেই বিপ্লব ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন।
যে গ্রীষ্মে ক্ষমতায় আসে সে গ্রীষ্মতেই ক্ষমতাচ্যুত হয়।
একবার ক্ষমতায় চলে এলে, জেনারেল কোর্মা ঠিক করে রেখেছেন যে তিনি গ্রীষ্মকালকে নিষিদ্ধ করে দেবেন। গরমকালের আর কোনো অস্তিত্বই থাকবে না; কেউ আর ও বিষয়ে উচ্চারণ ও করবে না। ক্ষমতায় এলে এটিই হবে ওনার প্রথম ফরমান।
জেনারেল কোর্মা তার বাড়ীর কোর্টইয়ার্ডের দিকে নজর দিলেন। ওর চোখ গিয়ে পড়লো বাগানের ঠিক মাঝবরাবর সদ্য সদ্য খাড়া করা স্ট্যাচুটার ওপর-জেনারেল পোলাও এর স্ট্যাচু।
এমনিতে জেনারেল পোলাও আর জেনারেল কোর্মা একইসাথে মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে পাস করে বেরিয়েছিলেন, বহু বছর বেশ ঘনিষ্ট বন্ধুত্বও ছিল দুজনের। চার বছর আগে এক সামরিক উত্থানের মাধ্যমে জেনারেল কোর্মা ‘প্রেসিডেন্ট’ হয়েছিলেন। অথচ তা সত্ত্বেও জেনারেল কোর্মা ওকে ‘জেনারেল’ বলেই সম্বোধন করা চালু রেখেছিলেন। প্রেসিডেন্ট পোলাও ওকে বলেছিলেন ‘জেনারেল কোর্মা, আমি এখন প্রেসিডেন্ট। ফলে তোমারো এখন আমাকে ‘প্রেসিডেন্ট’ বলেই ডাকা উচিত।‘
‘কী করি বলো তো, জেনারেল-থুড়ি, প্রেসিডেন্ট পোলাও, অ্যাদ্দিনের অভ্যাস বদলাই কীভাবে।‘
‘চুক চুক’ মুচকি হেসে জবাব দিয়েছিলেন জেনারেল পোলাও।
‘ তুমি যদি এমন করিত্‌কর্মা না হতে তাহলে বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে তোমাকে এক্ষুনি আমি ফাঁসিতে ঝোলাতুম।‘
জেনারেল কোর্মা অবশ্য খুব কড়াভাবে ভেবে রেখেছিলেন, একবার প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলে সব্বার ওনাকে ‘প্রেসিডেন্ট কোর্মা’ বলেই সম্বোধন করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছুতো দ্যাখানো চলবে না, উঁহু, একেবারেই না।
বাগানে প্রেসিডেন্ট পোলাও এর স্ট্যাচু দেখতে দেখতে জেনারেল কোর্মার ভুরু কুঁচকে গ্যালো। গুচ্ছ জায়গায় প্রেসিডেন্ট পোলাও এর এই স্ট্যাচু দেখতে দেখতে উনি এমনিতেই হাঁফিয়ে উঠেছিলেন। আর এখন, হবি তো হ, ওনার নিজের কোর্টইয়ার্ডের মধ্যিখানেই একখানা স্ট্যাচু গজিয়ে উঠেছে।
বছর দুয়েক হল, প্রেসিডেন্ট পোলাও সর্বত্র নিজের স্ট্যাচু লাগানোর এক নিঃশব্দ প্রয়াস চালু করেছেন। রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে ওনার স্ট্যাচু। প্রতিটি সরকারী ইমারত, প্রতিটি স্কুল আর কলেজ, প্রতিটি হাসপাতাল আর স্টেডিয়াম, সর্বত্র ওনার স্ট্যাচু বিদ্যমান। এত কিছুতেও সন্তুষ্ট না হয়ে প্রেসিডেন্ট পোলাও সম্প্রতি এমন এক ফতোয়া জারি করেছেন যে দেশের সব মুরুব্বিদের নিজের নিজের বাড়ীতেও ওনার একটা করে স্ট্যাচু রাখা বাধ্যতামূলক। শহরের এক প্রান্তে একটা স্ট্যাচু-কারখাণা তৈরী হয়েছে, আর সেখান থেকে শয়ে শয়ে স্ট্যাচু বেরিয়ে গোটা শহর ছেয়ে ফেলেছে।
প্রত্যেকটা স্ট্যাচুই অবিকল একরকম দেখতে। একই ছাঁচের থেকে তৈরী সিমেন্টের সব স্ট্যাচু। মুখ, হাত, পোশাক, ফিতে সব এমনভাবে রঙ করা হয়েছিল যাতে দেখে অবিকল জ্যান্ত প্রেসিডেন্ট পোলাও বলে মনে হয়। শিল্পে বাস্তবধর্মিতা আবার একনায়কদের বিশেষ পছন্দ। প্রেসিডেন্ট পোলাও বিশ্বাস করতেন যে প্রতিটি দেশবাসীর এমনটা অনুভব হওয়া উচিত যে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট পোলাও তাদের প্রত্যেকটা গতিবিধির উপর নজর রাখছেন।
আকাশে একটা বোঁ বোঁ শব্দ পেয়ে জেনারেল কোর্মা নিজের বাঁদিকে তাকালেন। পশ্চিম থেকে পূব পানে একটা হেলিকপ্টার উড়ছে।
প্রেসিডেন্ট পোলাও এর নৈশ ছোটাছুটি চলছে। ইদানীং বেড়ে গ্যাছে বিষয়টা।
রাজধানীর আলাদা আলাদা ভাগে প্রেসিডেন্ট পোলাও এর ন-নখানা খাসমহল আছে। প্রত্যেক রাত উনি এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটা প্রাসাদে কাটান। কেউ জানেনা কোন রাতে উনি কোথায় থাকবেন। প্রেসিডেন্ট পোলাও এর ধারণা ছিল এইভাবে চোরাগোপ্তা আক্রমণের হাত থেকে বাঁচা যাবে ।
কিন্তু গুপ্তহত্যার ভয় ক্রমেই আরো জাঁকিয়ে বসছিলো, আর উনি একটা গোটা রাত কোনো এক জায়গায় কাটানোটা নিরাপদ বলে বোধ করছিলেন না। ফলতঃ, উনি মাঝরাতে জায়গা বদল করা শুরু করলেন। এ জিনিস বাড়তে বাড়তে শেষে এমন পর্যায়ে পৌছলো যে এক এক রাতে উনি তিন থেকে চারবার প্রাসাদ বদল করা শুরু করলেন। শেষটায় তো এমন দাঁড়িয়েছে যে এখন উনি কোনো একটা প্রাসাদে এক ঘন্টাও কাটান না। সারারাত ধরে উনি নয় খানা প্রাসাদ ক্রমান্বয়ে চক্কর কাটেন। ফলস্বরূপ, সারারাতে ওনার খুব সামান্যই ঘুম হয়।
আকাশের বুকে প্রেসিডেন্ট পোলাও এর হেলিকপ্টার ক্যামন ছোট্ট একটা পোকার মত দ্যাখাচ্ছে! জেনারেল কোর্মার ইচ্ছে হচ্ছিল কিং কং এর মত ওটাকে খপ করে মুঠোর মধ্যে ধরে পিষে ছুঁড়ে ফেলতে।
প্রেসিডেন্ট পোলাও এর বিষম অনিদ্রা দিগন্তের ওপারে অদৃশ্য হয়ে গ্যালো আর জেনারেল কোর্মার সম্ভাব্য বিষম অনিদ্রা বারান্দায় পায়চারি দিতে থাকলো। আর এই দুই অনিদ্রার মাঝামাঝি চাঁদ তার চিরায়ত গান গেয়ে চললো একমনে।

২
শহরের দক্ষিণপ্রান্তে ছিল এক প্রকাণ্ড বস্তি। কেউ কেউ দাবি করতো যে ওই বস্তি নাকি আয়তনে মূল শহরের চেয়েও ঢের বড়। দেশের বেশীরভাগ লোকই অবশ্য এ কথা বিশ্বাস করতে চাইতো না। অবশ্য ওটিই যে এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি এ বিষয়ে  কোনো দ্বিমত ছিল না।
ওই প্রকাণ্ড বস্তি গড়ে উঠেছিল জলাজমির ওপর ফলে সারাবছরই জায়গাটা কাদাটে হয়ে থাকতো। আর সেই কাদার পরত ছিল অত্যন্ত গভীর। যদি বাইরের লোক ওই বস্তি এলাকায় ঢুকে পড়তো কোনোভাবে, তাহলে অচিরেই সে সেই কাদায় তলিয়ে অদৃশ্য হয়ে যেত। ওই বস্তিতে থাকার বলতে একদল নিঃস্ব আর হাড়হাভাতে মানুষের দল যারা গ্রাম থেকে রাজধানীতে এসেছিলো। এরা এতটাই কৃশকায় আর হাল্কা ছিল যে কাদার ওপর চলাফেরা করে বেড়ালেও এরা ডুবতো না। বস্তির সরু আর আঁকাবাঁকা গলিগুলো বেয়ে এই কাঠের গুঁড়োর মত মানুষগুলো অনায়াসে ভেসে বেড়াতে পারতো। থাকার জন্য তারা যে ঝুপড়িগুলো বানিয়েছিলো সেগুলোও ছিল হাল্কা। আর সম্পত্তি বলতেও এদের প্রায় কিছুই ছিল না, ওই কয়েকটা অ্যালুমিনিয়ামের বাসন কোসন ছাড়া। এ সত্ত্বেও, যখন বর্ষা আসতো আর কাদা নরম হয়ে যেত, বেশ কিছু ঝুপড়ি কাদার তলায় ডুবে যেত। কখনো কখনো তো ঘুমন্ত মানুষ শুদ্ধু আস্তে আস্তে আস্ত ঝুপড়ি কাদায় তলিয়ে যেত। বস্তির কিছু কিছু বাসিন্দা, যারা শহরে কাজ পেয়েছিলো, যারা ভালো পয়সা কামাতো, ভালোমন্দ খেতে পেতো আর খেয়ে ওজন বাড়িয়ে ফেলতো, তারাও ফলস্বরূপ রাতে ঘুমের মধ্যে ঝুপড়ি সমেত কাদার নীচে অদৃশ্য হয়ে যেত। এভাবে জনসংখ্যা কমে আসলেও গড়ে বস্তির বাসিন্দার সংখ্যা একই থাকতো কারণ এদের জায়গায় আবার নতুন করে নিঃস্ব আর হাড়হাভাতে মানুষ গাঁ থেকে এসে উদয় হোতো।
রাজধানীর গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ভুলেও এই বস্তির ধারেকাছে ঘেঁষতেন না। এমনকী কাদায় ডুবে যাওয়ার ভয়ে পুলিশ অথবা সেনাবাহিনীর লোকজনও সচরাচর বস্তিতে ঢুকতোনা। নেহাত খুব দরকার পড়লে, হাতে বিশাল বিশাল গ্যাস বেলুন বেঁধে পুলিশ বস্তিতে পৌছত। বেলুন থাকার ফলে তারা কাদার উপর হাল্কাভাবে পা ফেলতে পারতো। কিন্তু মুশকিলটা হল, হাতে ওই ধামসা বেলুন ধরে থাকার দরুণ তারা আর স্বাভাবিক ভাবে নড়াচড়া করতে পারতোনা, ফলে তারা একপ্রকার অথর্বই হয়ে পড়তো। একবার তো বস্তির ছেলেপুলেরা বেলুন লক্ষ্য করে পাথরের টুকরো ছুঁড়েছিল আর এক পুলিশের হাতের বেলুনগুলো ফেটে গেছিলো। এরপরই সে চিৎকার করতে করতে কাদায় তলিয়ে  চিরতরে অদৃশ্য হয়ে যায়। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে শহরের চেয়ে বস্তিতেই স্বাধীনতা ছিল বেশী।
গোটা শহর নিজের স্ট্যাচু দিয়ে ভরিয়ে ফেলার পর প্রেসিডেন্ট পোলাও ওই একটা ব্যাপারেই অসন্তুষ্ট ছিলেন-ওই প্রকাণ্ড বস্তিতে ওনার একখানাও স্ট্যাচু নেই। স্ট্যাচু ডিপার্ট্মেন্ট ওই বস্তিতে প্রেসিডেন্টের একটা স্ট্যাচু বসানোর নানা প্রকারেণ চেষ্টা চালাচ্ছিলো, কিন্তু প্রত্যেকবারই তারা বিফল হয়ে ফিরছিলো। প্রথমে তারা চেষ্টা করছিলো পাথর আর সিমেন্টের বস্তা দিয়ে তৈরী একটা শক্তপোক্ত বেদীর উপর স্ট্যাচুটাকে বসানোর; কিন্তু কাদার স্তর এতটাই গভীর আর অদম্য ছিল যে বেদী টেদী সমেত স্ট্যাচু অচিরেই কাদায় তলিয়ে গেল। বস্তির অশিক্ষিত লোকগুলি দাবী করতো ওই কাদা নাকি এক্কেবারের পৃথিবীর কেন্দ্র অব্ধি গ্যাছে।
এরপর স্ট্যাচু ডিপার্টমেন্ট শয়ে শয়ে গ্যাস বেলুন বাঁধা অবস্থায় একটা স্ট্যাচু এরোপ্লেন থেকে বস্তির উপর ফেলার চেষ্টা করলো। বেলুনের জেরে স্ট্যাচুখানা কাদার স্তর হাল্কা স্পর্শ করে শূন্যে ঝুলে রইলো। আর যখন হাওয়ায় বেলুনগুলো দুলতো, সাথে সাথে স্ট্যাচুও দুলতো। হাতে অতগুলো বেলুন বাঁধা অবস্থায় স্ট্যাচুখানা এতটাই হাস্যকর দেখতে লাগতো যে বস্তির লোকেরা ওটাকে বেলুন আদমি বলে ডাকা শুরু করেছিলো। আর তারপর বস্তির বাচ্চারা একে একে দড়ি ছিঁড়ে বেলুনগুলি চুরি করা শুরু করলো। বেলুন সংখ্যা কমে আসার সাথে সাথে স্ট্যাচুও কাদায় আস্তে আস্তে ডুবতে শুরু করলো। অনতিকাল পরেই বেলুন আদমি কাদার তলায় পুরোপুরি উধাও হয়ে গেলেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট পোলাও জেদ ধরে রয়েছেন, বস্তিতে ওনার স্ট্যাচু চাই ই চাই। এমনিতেই ওই বস্তির ওপর ওনার নিয়ন্ত্রণ কম। নিদেনপক্ষে কটা স্ট্যাচু বসানো গেলেও একটু মানসিক শান্তি পাওয়া যেত। স্ট্যাচু ডিপার্ট্মেন্টের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রতি তিনি কড়া নির্দেশ পাঠালেন-হয় নিজেদের কাজে হাত লাগাও নইলে হাত কাটা পড়বে।
স্ট্যাচু ডিপার্ট্মেন্টের কর্মকর্তারা ভয়ে কাঠ হয়ে রইলেন। তারা বুঝেই উঠতে পারছিলেন না এই পরিস্থিতিতে তাদের ঠিক কী করণীয়। হাতে খানিক সময় পাওয়ার জন্য তারা উত্তর পাঠালেন ‘বর্ষা এলো বলে। বর্ষা চলাকালীন চেষ্টা চালিয়ে কোনো লাভ নেই। বৃষ্টি থামলেই একটা পরিকল্পনা পেশ করা হবে।‘
প্রেসিডেন্ট পোলাও রাজী হলেন।

৩
বর্ষার শুরুতেই জেনারেল কোর্মা সেনাবাহিনীর কিছু উচ্চপদস্থ পদাধিকারিকের সহায়তায় একটা সামরিক অভ্যুত্থান সম্পন্ন করে প্রেসিডেন্ট পোলাও কে গদিচ্যুত করলেন। এরপর জেনারেল কোর্মা হলেন প্রেসিডেন্ট কোর্মা।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টারে চেপে নিকটবর্তী প্রতিবেশী রাষ্ট্রে পালানোর তালে ছিলেন। কিন্তু রাজধানীর পশ্চিমপ্রান্তের পাহাড়ের পাদদেশে ওনার হেলিকপ্টারখানি গুলি করে নামানো হয়। সশব্দে মাটিতে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাতে আগুন ধরে যায়। প্রেসিডেন্ট পোলাও এর দেহাবশেষ অবশ্য কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায় না। সকলেই ধরে নেয়, লাশ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গ্যাছে।
ক্ষমতায় এসে প্রথমেই প্রেসিডেন্ট কোর্মা যে কাণ্ডটি করলেন সেটি হল রাজধানী থেকে প্রেসিডেন্ট পোলাও এর যাবতীয় স্ট্যাচু সরিয়ে ফেললেন। শয়ে  শয়ে স্ট্যাচু নামিয়ে অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে বেশ কয়েক হপ্তা লেগে গ্যালো। স্ট্যাচুগুলিকে ডাঁই করে ফেলে রাখা হল রাজধানীর পশ্চিমদিকের একটা পতিত জমিতে, যার খুব কাছেই প্রেসিডেন্ট পোলাও এর হেলিকপ্টার ভেঙ্গে পড়েছিলো।
স্ট্যাচু তো সরানো হল, কিন্তু স্ট্যাচুর বেদীগুলো রয়ে গ্যালো। প্রেসিডেন্ট কোর্মার পারিষদরা এসে বললো ‘মহামান্য প্রেসিডেন্ট, এবার ওই বেদীগুলোর উপর আমরা আপনার স্ট্যাচু বসাতে পারি।‘
প্রেসিডেন্ট কোর্মা বিরক্ত হয়ে বললেন ‘দূর দূর, সব জায়গায় নিজের স্ট্যাচু দ্যাখার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।‘
ফলে শহর জুড়ে খালি বেদীগুলো পড়েই রইলো। বিষয়টা বেশ দৃষ্টিকটু লাগতো। প্রেসিডেন্ট কোর্মার পারিষদরা আবার এসে তদবীর করলো ‘মহামান্য প্রেসিডেন্ট, আপনি যদি নিতান্তই নিজের স্ট্যাচু না চান, তাহলে নিদেনপক্ষে আমাদের ওই ফাঁকা বেদীগুলো নষ্ট করে ফেলতে দিন।‘
প্রেসিডেন্ট কোর্মা কিছুক্ষণ ভাবলেন, তারপর বললেন ‘নাহ, ওগুলো থাকুক। স্ট্যাচু তো আর নেই। কটা ফাঁকা বেদীর জন্য আর কার কী অসুবিধে হচ্ছে?’
পারিষদরা ভাবলো, মুখে যতই অনিচ্ছা প্রকাশ করুন না ক্যানো, মনে মনে হয়তো প্রেসিডেন্ট অদূর ভবিষ্যতে ‘জনগণের দাবী’তে ওই বেদীগুলোতে নিজের স্ট্যাচু বসানোর পরিকল্পনা করে রেখেছেন। তো বেদীগুলো রইলো। ফাঁকা বেদী দেখতে দেখতে লোকজনের বিরক্তি চরমে পৌছলো, কিন্তু এ বিষয়ে কারোরই কিচ্ছুটি করার ছিল না। আগে লোকে গোপনে প্রেসিডেন্ট পোলাও এর শাসনকালকে ‘স্ট্যাচুর শাসনকাল’ বলতো; এখন তারা প্রেসিডেন্ট কোর্মার শাসনকালকে ‘বেদীর শাসনকাল’ বলে ডাকা শুরু করলো।
ইতিমধ্যে বর্ষা শেষ হয়েছিল, শীতকালও দেখতে দেখতে কেটে গ্যালো, কিন্তু গ্রীষ্মের দ্যাখা পাওয়া গ্যালো না। কারণ, শীত ফুরোনোর আগেই প্রেসিডেন্ট কোর্মা ফরমান জারি করে গ্রীষ্মকালকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। আর গ্রীষ্ম যেহেতু নেই, কারো গ্রীষ্মের ছুটিও নেই। কিন্তু রাজধানীতে তাপমাত্রার পারদ বাড়তেই থাকলো। সব্বাই, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রী আর সরকারী কর্মচারীরা, গরমের ছুটিতে পাহাড়ে বেড়াতে যেতে না পেরে যারপরনাই বিরক্ত বোধ করছিল। জনগণের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছিলো। প্রেসিডেন্ট কোর্মার গোয়েন্দা দপ্তর মন্ত্রণা দিল, গ্রীষ্মকালকে নিষিদ্ধ করার কারণে পাবলিক ক্ষেপে গিয়ে আরেকটা বিপ্লব করে ফেলতে পারে।
প্রেসিডেন্ট কোর্মা নিজেও তার পাহাড়ের প্রাসাদখানিতে ছুটি কাটাতে উৎসুক ছিলেন। তিনি তড়িঘড়ি গ্রীষ্মকে পুনর্বহাল করার ফরমান জারি করলেন। এতে প্রেসিডেন্ট কোর্মা সহ সব্বাই খুশী হল। এরপর তিনি  ব্যাগপত্তর গুছিয়ে মার্সিডিজ গাড়ির কনভয় নিয়ে পাহাড়ের দিকে রওনা হলেন।

৪
প্রেসিডেন্ট কোর্মা এখন দিনের অনেকটা সময় রান্নাঘরে কাটান। ওনার জ্যোতিষী স্বামী অগ্নিমান্দ্য ওনাকে খাবারে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সাবধান করেছেন। তাই প্রেসিডেন্ট কোর্মা এখন নিজের রান্না নিজে করেন। ক্ষমতায় আসার পর ওর গিন্নি আয়তনে আরো বেড়েছেন ফলে তিনি আর বিশেষ কাজকর্ম করে উঠতে পারেন না। আর আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কাউকে প্রেসিডেন্ট কোর্মা বিশ্বাস করতেন না, ফলে নিজের রান্না নিজেই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। ওনার পরামর্শদাতারা অভিযোগ করছিলেন, প্রেসিডেন্ট কোর্মার আর রাষ্ট্রের কাজে মন দেওয়ার মত সময় নেই, কিন্তু প্রেসিডেন্ট কোর্মা নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল রইলেন।
পাহাড়ে থাকাকালীন, হিমালয়ের কোলে একটা ছোট্ট রাজ্যের প্রতিনিধি প্রেসিডেন্ট কোর্মার সাথে দ্যাখা করতে এসেছিলেন। প্রেসিডেন্ট কোর্মা তখন রুটি বেলছিলেন। (উনি আবার প্রচুর রুটি খেতেন, এক একবারে দশটা করে।)। প্রেসিডেন্ট কোর্মা হাতে বেলন নিয়ে বসার ঘরে ঢুকলেন। প্রতিনিধি মশাই, যার নিজের স্ত্রীও এমন বেলন হাতে মাঝেমধ্যে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসতেন এবং যার ফলাফল ওনার পক্ষে একেবারেই সুখকর হতো না, এ দৃশ্য দেখে ঘাবড়ে এমন চম্পট দিলেন যে আর কখনোই ওনার দ্যাখা পাওয়া গেল না।
প্রেসিডেন্ট কোর্মা মুচকি হেসে রান্নাঘরে ফেরত গেলেন। সব্জী কাটতে কাটতে উনি একবার জানলা দিয়ে বাইরে তাকালেন। কিন্তু বাইরে যা দেখলেন তাতে উনি চমকে উঠলেন। কাঁটাতারের বেড়ার বাইরের পাথুরে জমিতে দাঁড়িয়ে একটা লোক ওনাকে লক্ষ্য করছে। লোকটা আর কেউ নয়, স্বয়ং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পোলাও।
প্রথমটায় প্রেসিডেন্ট কোর্মা ভেবেছিলেন এ নিশ্চই প্রেসিডেন্ট পোলাও এর ভূত। কিন্তু পরক্ষণেই ওনার মনে পড়লো, প্রেসিডেন্ট পোলাও এর লাশ কখনো খুঁজে পাওয়া যায় নি। হয়তো দূর্ঘটনা থেকে কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে প্রেসিডেন্ট পোলাও কোথাও লুকিয়ে-টুকিয়ে  ছিলেন অ্যাদ্দিন। পোলাও বেঁচে আছে!
সব্জী কাটার ছুরিখানা শূন্যে উঁচিয়ে প্রেসিডেন্ট কোর্মা তৎক্ষণাৎ রান্নাঘর থেকে এক ছুটে বেরিয়ে জেনারেল পোলাও এর দিকে ধেয়ে গেলেন। জেনারেল পোলাও এ দৃশ্য দেখে উল্টোপানে ঘুরে দিলেন দৌড়। প্রেসিডেন্ট কোর্মা যতক্ষণে পাশ কাটিয়ে কাঁটা তারের বেড়া পেরোতে সক্ষম হলেন, ছুটন্ত লোকটা ততক্ষণে অনেকটা দূর পৌছে গ্যাছে।
জেনারেল পোলাও লম্বা লম্বা পা ফেলে পাহাড় থেকে নেমে পড়লেন। পাথর আর কাঁটাওয়ালা ঝোপগুলোকে অগ্রাহ্য করে প্রেসিডেন্ট কোর্মা তার পিছন পিছন ছুটলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই জেনারেল পোলাও সেই পতিত জমির কিনারায় এসে পৌছলেন যেখানে শয়ে শয়ে তার নিজেরই পরিত্যক্ত স্ট্যাচুগুলো ডাঁই করা ছিল। যতক্ষণে প্রেসিডেন্ট কোর্মা সেখানে এসে হাজির হলেন, জেনারেল পোলাও ততক্ষণে ওই স্ট্যাচুর জঙ্গলে উধাও হয়েছেন।
হাঁফাতে হাঁফাতে প্রেসিডেন্ট কোর্মা স্ট্যাচুর জঙ্গলের প্রান্তে এসে দাঁড়ালেন। স্ট্যাচুগুলকে অবিকল জেনারেল পোলাও এর আয়তনে গড়া হয়েছিল, আর রঙ ও ছিল হুবহু এক, ফলে আসল জেনারেল পোলাও কে ওই জঙ্গলের মধ্যে থেকে খুঁজে বের করা ছিল কার্যতঃ অসম্ভব।
‘জেনারেল পোলাও!’ প্রেসিডেন্ট কোর্মা সবজি কাটার ছুরিখানা মাথার উপর উঁচিয়ে চিৎকার করে উঠলেন ‘মরদের বাচ্চা হলে বেরিয়ে আয়! আমরা ডুয়েল লড়বো।‘
দুপুরের চড়চড়ে সূর্যের নীচে স্ট্যাচুর জঙ্গলের ওপর দিয়ে একটা হল্কা বয়ে গেল। আর তারপরই সেই জঙ্গল থেকে ভেসে এলো একটা অট্টহাসি : ‘হা! হা! হা!’
রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে প্রেসিডেন্ট কোর্মা এদিক ওদিক তাকালেন কিন্তু হাসির উৎস খুঁজে পেলেন না। শব্দটা আবার প্রতিধ্বনিত হল; ‘হা! হা! হা!’
রাগে অন্ধ হয়ে প্রেসিডেন্ট কোর্মা ওই স্ট্যাচুর জঙ্গলে ঢুকে পড়লেন তারপর যত্রতত্র স্ট্যাচুগুলোর গায়ে ছুরি মারতে শুরু করলেন। সিমেন্টে ধাক্কা খেতে খেতে ছুরির ফলা ভোঁতা হয়ে বেঁকে গ্যালো; কিন্তু উনি উন্মাদের মত স্ট্যাচুগুলোর গায়ে ছুরি মেরেই চললেন। অবশেষে সেনাবাহিনীর লোকজন ঘটনাস্থলে পৌছিয়ে প্রেসিডেন্টকে বুঝিয়েসুঝিয়ে ঠাণ্ডা করে ফেরত নিয়ে যায়। ডাক্তাররা ওনাকে বেশ কড়া ডোজের ট্রাংকুইলাইজার দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখেন।
পরদিন সকালবেলা, প্রেসিডেন্ট কোর্মা রাজধানীতে ফিরে যান। জেনারেল পোলাওকে নিয়ে এই ঘোরতর সমস্যাটার একটা চটজলদি ও ফলপ্রসূ সমাধান দরকার। স্ট্যাচুর ওই জঙ্গলে বোম মারা যেত বটে। কিন্তু লোকটা এ সত্ত্বেও যদি পালিয়ে যায়? আর তাছাড়া, প্রেসিডেন্ট কোর্মা জেনারেল পোলাও কে জ্যান্ত অবস্থায় ধরতে চাইছিলেন যাতে উনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে তার উপর অত্যাচার করতে পারেন।
আর তারপরই গোয়েন্দা দপ্তর ওনাকে সেই ভয়ানক খবরটা দিল-ওই পতিত জমির সবকটা স্ট্যাচু উঠে দাঁড়িয়েছে আর তারা মার্চ করতে করতে রাজধাণীর দিকেই আসছে। স্ট্যাচুগুলো হাঁটছিলো থপথপিয়ে, য্যানো তাদের লম্বা ঘুম থেকে এইভাবে উঠে পড়তে  যথেষ্ট কষ্ট  হয়েছে। এমনিতে কাক ও স্ট্যাচুদের একটা সহজাত সখ্যতা আছে; কাকেরা সাধারণত স্ট্যাচুর মাথায় বসতে পছন্দ করে। এদিকে স্ট্যাচুরা হঠাতই তাদের স্ট্যাচু-ধর্ম বিসর্জন দিয়েছে, ফলতঃ বিপদসঙ্কেত পেয়ে স্ট্যাচুর জঙ্গলে বসবাসকারী শয়ে শয়ে কাকেরা রাজধানীর দিকে উড়ে আসতে আরম্ভ করলো। রাজধানীর লোকজন হঠাৎ তাদের চারপাশে এই অকারণে উড়ে যাওয়া শয়ে শয়ে কাকের উপদ্রব দেখে চিন্তিত হল। কথায় আছে এরকম হঠাৎ করে কাকের উদয় হওয়ার মানে বাড়িতে কোনো কুটুম আসতে পারে। লোকে অবাক হয়ে ভাবার চেষ্টা করলো কোত্থেকে এই এত এত কুটুম তাদের সাথে দ্যাখা করতে আসতে পারে।
প্রেসিডেন্ট কোর্মা বুঝলেন নির্ঘাত জেনারেল পোলাও ওই হেঁটে আসা স্ট্যাচুগুলোর মধ্যে সশরীরে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। একটা বিশাল অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা স্ট্যাচুগুলোর উপর বোমা ফেলেও খুব একটা লাভ হবে না। এমনকী সিমেন্টের স্ট্যাচুর গায়ে বুলেট ছুঁড়েও ফল নেই। প্রেসিডেন্ট কোর্মা ভয়ানক চিন্তিত হলেন। এদিকে সেকেন্ডে সেকেন্ডে স্ট্যাচুরা এগিয়ে আসছে।
তারপর প্রেসিডেন্ট কোর্মা মৃদু হাসলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ হুকুম দিলেন শহরের সবকটা ফাঁকা বেদীকে তুলে এনে রাজধানীর প্রান্তে জড়ো করতে।
সেনাবাহিনী ও নগরবাসীদের প্রতিটি গাড়িকে যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করা হল আর বেদীগুলোকে রাখা হল শহরে ঢোকার ঠিক মুখে। ওয়াচ টাওয়ারের উপর থেকে স্বয়ং  প্রেসিডেন্ট কোর্মা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে গোটা সমতলের উপর নজর রাখলেন। তিনি অর্ডার দিয়েছেন স্ট্যাচু বাহিনীর উপর গুলি না চালাতে।  সৈনিকেরা হতভম্ব হয়ে রইলো।
এরপর সেই সুবিশাল স্ট্যাচু বাহিনী এসে উপস্থিত হল ঠিক সেই জায়গায় যেখানে বেদীগুলোকে রাখা হয়েছিল। ফাঁকা বেদীগুলোকে দেখে একে একে প্রত্যেকটা স্ট্যাচু যার যার জায়গায় উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। ঠিক য্যামনটা প্রেসিডেন্ট কোর্মা ভেবেছিলেন, ফাঁকা বেদীগুলো দেখতে পেয়েই স্ট্যাচুদের মধ্যে ফের তাদের স্ট্যাচু-ধর্ম জেগে উঠেছিল, আর তাদের ধর্ম অনুসারেই তারা একে একে স্বস্থানে ফেরত যাচ্ছিলো।
বিজয়ীর উল্লাসে প্রেসিডেন্ট কোর্মা এই গোটা ঘটনাটা লক্ষ্য করে চললেন। তিনি জানতেন তার উদ্দেশ্য তখনই সফল হবে যখন সবকটা স্ট্যাচু নিজের নিজের বেদীতে উঠে দাঁড়িয়ে পড়বে। শুধুমাত্র জেনারেল পোলাও-মানে সত্যিকারের জেনারেল পোলাও-একা দাঁড়িয়ে থাকবেন। আর তখন খুব সহজেই ওকে পাকড়াও করা যাবে।
সবকটা স্ট্যাচু শেষমেষ নিজের নিজের বেদীতে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। ফাঁকা মাঠে শুধু একজনই দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্ত সেনাবাহিনীর কর্ণধার অফিসার পিছন ফিরে চিৎকার করে উঠলেন, ‘মহামান্য প্রেসিডেন্ট, এটা তো শুধু একটা সিমেন্টের স্ট্যাচু!’
‘অ্যাঁ?’ প্রেসিডেন্ট কোর্মা হতভম্ব হয়ে গেলেন। পরমুহূর্তেই তিনি বুঝলেন যে আসল জেনারেল পোলাও-ও ফাঁকেতালে কোনো একটা বেদীতে উঠে পড়েছেন, ফলে শেষ স্ট্যাচুটা অসহায় ভাবে মাঠে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
‘শয়তান!’ প্রেসিডেন্ট কোর্মা বিড়বিড় করলেন। তারপর সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললেন: ‘সবকটা স্ট্যাচুকে গুলি করো!’
সেনারা গুলি করা শুরু করলো। সিমেন্টের স্ট্যাচুর গায়ে গুলি লেগে স্প্লিন্টার উড়তে থাকলো। আর স্ট্যাচুরা যখন দেখলো তাদের গুলি করা হচ্ছে তারাও বেদী থেকে লাফিয়ে নেমে তাদের পিস্তলগুলি বের করে চালানোর উপক্রম করলো। কিন্তু তাদের পিস্তলে কোনো গুলি ছিলো না। ফলে স্ট্যাচুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে আরম্ভ করলো। ছুটন্ত স্ট্যাচুদের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে জেনারেল পোলাও পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করলেন। পালাতে থাকা স্ট্যাচুদের ভিড়ে মিশে গিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচানোটা তার কাছে খুব একটা কঠিন নয় এখন। কিন্তু তার মনে ততক্ষণে একটা অন্য প্রশ্নের উদয় হয়েছে; উনি কি সত্যিই জেনারেল পোলাও, নাকি একটা স্ট্যাচু? উনি নিজে আর খুব একটা নিশ্চিত হতে পারছিলেন না, আর এই প্রশ্নটা ওনাকে কুরে কুরে খাচ্ছিলো। উনি নিজের গা ছুঁয়ে টিপেটুপে বোঝার চেষ্টা করলেন, কিন্তু সেই হেলিকপ্টারের দূর্ঘটনার পর থেকেই ওনার নিজের শরীরটা একেবারে  সিমেন্টের মত শক্ত হয়ে গ্যাছে। ওনার সন্দেহ গাঢ় হতে থাকলো যে উনিও বোধহয় একটা স্ট্যাচুই। মাঠ থেকে পালিয়ে গেলে ওনার এই সমস্যা মিটবে না। বরং এগিয়ে গিয়ে গুলি খেলেই একমাত্র এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। উনি যদি স্ট্যাচুই হন, তাহলে শুধুই স্প্লিন্টার উড়বে; আর উনি যদি আসল জেনারেল পোলাও হন, সেক্ষেত্রেও উনি একা মরতে চান না। উনি প্রেসিডেন্ট কোর্মাকে মেরে মরবেন।
জেনারেল পোলাও স্ট্যাচুদের ভিড় থেকে আলদা হয়ে ধীরপায়ে সামনে এগিয়ে গেলেন। ওয়াচ টাওয়ার থেকে এ দৃশ্য দেখে প্রেসিডেন্ট কোর্মা গুলি থামানোর নির্দেশ দিলেন। বন্দুকগুলো শান্ত হয়ে গ্যালো, আর স্ট্যাচুরাও তাই দেখে মাঝপথে দাঁড়িয়ে পড়লো। হঠাতই পরিবেশটা আশ্চর্যরকম ঠাণ্ডা আর থমথমে হয়ে উঠলো। আর ওই শান্ত পরিবেশে জেনারেল পোলাও এক পা এক পা করে এগিয়ে আসতে থাকলেন। ওয়াচ টাওয়ারের ঠিক তলায় এসে তিনি প্রেসিডেন্ট কোর্মার দিকে তাকালেন। জেনারেল কোর্মার স্থির অবয়বের পিছনে সারি সারি স্ট্যাচু, একই রকম নিথর, আর আঙ্গুলগুলো ট্রিগারে রাখা অবস্থায়, বন্দুকগুলো জেনারেল পোলাও এর দিকে তাক করে রেখে সৈনিকরাও ঠিক ততটাই নিশ্চল। এই এত এত মানুষ আর স্ট্যাচুর ভীড়েও জেনারেল পোলাও এর নিজেকে বড্ড একা বোধ হল। এটা সেই ধরণের একাকীত্ব যখন কেউ বুঝে উঠতে পারে না যে সে আসলে সে নিজেই-ই  নাকি অন্য কেউ।
‘প্রেসিডেন্ট কোর্মা, আ-আমি-আমি জেনারেল পোলাও!’ জেনারেল পোলাও চিৎকার করে বললেন। ওই মুহুর্তে এতটা আত্মবিশ্বাসের সাথে এইরকম দাবী করাটা ওনার কাছে রীতিমত হাস্যকর ঠেকলো।
‘হা! হা!’ টাওয়ারের উপর প্রেসিডেন্ট কোর্মা অট্টাহাসিতে ফেটে পড়লেন। ‘পোলাও, তুই কি আত্মসমর্পণ করবি?’
‘না, আমি আত্মসমর্পণ করবো না,’জেনারেল পোলাও উত্তর দিলেন।
‘না? সেক্ষেত্রে, জেনারেল পোলাও,আমি নিজে তোকে জাহান্নামে পাঠাবো,’ এই বলে প্রেসিডেন্ট কোর্মা নিজের পিস্তল বের করে সোজা গুলি চালালেন।
গুলিটা যে সোজা ওর হৃৎপিণ্ডে এসে বিঁধেছে, এবং উনি যে মরতে চলেছেন, এই বোধের সাথে সাথেই ওনার এই উপলব্ধিও হল যে তাহলে উনিই আসল জেনারেল পোলাও এবং এর ফলে এক অদ্ভুত পরিতৃপ্তিতে ওনার মন ভরে উঠলো। মাটিতে পড়তে পড়তেই জেনারেল পোলাও তার সর্বশক্তি দিয়ে নিজের পিস্তল উপরে তুলে গুলি চালালেন। বুলেটটা সটান গিয়ে বিঁধলো প্রেসিডেন্ট কোর্মার বুকে, আর উনি খুব আস্তে করে ওয়াচ টাওয়ার থেকে নীচে গিয়ে পড়লেন।

৫
দুই জেনারেলের মৃত্যুতে দেশে সাময়িক ভাবে নৈরাজ্য নেমে এলো। অন্য কোনো জেনারেলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার মত ক্ষমতা ছিলে না। পরিস্থিতি শেষটায় এতটাই খারাপ হয়ে দাঁড়ালো যে কিছু মানুষ তো খোলাখুলি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলতে শুরু করলো।
এই সময়টাতেই সেই প্রকাণ্ড বস্তির বাসিন্দারা তাদের প্রাকৃতিক বিবর্তনের চূড়ায় এসে পৌছলো। বছরের পর বছর, ওই বস্তির লোকগুলো ক্রমেই হাল্কা ও কৃশকায় হয়ে উঠছিল। আর এখন, তাদের শরীর থেকে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, মাংস আর চামড়া পুরোপুরি খসে পড়লো। পড়ে রইলো শুধু কঙ্কাল। বিনা মৃত্যুতেই এই মানুষগুলো কঙ্কাল হয়ে গিয়েছিলো, আর সে অবস্থাতেই তারা তাদের দৈনিক কাজকর্ম সারতো। একথা ঠিক যে তাদের আর বাচ্চা কাচ্চা হোতো না; কিন্তু যেহেতু তারা এমনিতেই কঙ্কাল হয়ে গিয়েছিল, তাদের আর নতুন করে মরারও প্রশ্ন ছিল না। ক্রমে এই জীবেদের একটা সম্পূর্ণ নতুন জাত হিসেবে লোকে চিনতে আরম্ভ করলো; এমনকী গুণমানের বিচারে এদের স্থান ব্রাহ্মণদের চাইতেও উঁচুতে ধরা হল, যেহেতু কঙ্কালেরা শুধুমাত্র দেখতেই ফর্সা নয়, এমনকী বিশুদ্ধতার নিরিখেও এরা অনন্য, আর কে না জানে জাত পাতের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতাই হচ্ছে আসল কথা।
দেশে এই নৈরাজ্যের পরস্থিতি দেখে, কঙ্কালেরা ঠিক করলো তারাই সরকার গড়বে। খুব একটা বাধার মুখেও তাদের পড়তে হল না, কারণ কঙ্কালের সাথে আর কেই বা যুদ্ধ করবে? তা তো ঢেউ এর সাথে যুদ্ধ করার শামিল।
যেহেতু কঙ্কালদের নিজেদের খুব একটা বিলাসবহুল জীবনযাপনের প্রয়োজন ছিল না, এমনকী খাবার-দাবারেরও প্রয়োজন ছিল না, তারা দেশে সাম্য আর ন্যায়-এর এক শাসন কায়েম করলো। আর কঙ্কালদের বিরুদ্ধে কেউ অভ্যুত্থান ঘটাবে এমন সম্ভাবনাও ছিল না। আর স্বামী অগ্নিমান্দ্য, যাকে কিনা জাতীয় জ্যোতিষী হিসেবে পুর্নবহাল করা হয়েছিল, ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, কঙ্কালদের এই সাম্রাজ্য চিরতরে স্থায়ী হবে।
 
 
 
 
 
 
 
6 Comments
রাতুল ঘোষ
23/6/2019 17:00:06

অসাধারণ গল্প। বহুদিন পরে এত ভালো গল্প পড়লাম।

Reply
Tapas
23/6/2019 17:59:33

Darun galpo darun anubad

Thanks hia

Reply
SOUMANA DASGUPTA
23/6/2019 21:38:14

চমৎকার অনুবাদ। গল্পটাও খুব ভালো

Reply
SOUMANA DASGUPTA
23/6/2019 21:39:43

চমৎকার অনুবাদ। গল্পটাও খুব ভালো

Reply
Shanu
24/6/2019 08:56:20

সাবলীল অনুবাদ। শব্দের ঘনঘটাহীন একটা জলের মতো অনুবাদ করেছেন।

Reply
Rimi Mutsuddi link
29/6/2019 23:00:14

ভীষণ ভাল লাগল

Reply



Leave a Reply.

    Archives

    August 2019
    June 2019
    April 2019
    February 2019
    December 2018
    October 2018
    August 2018

Proudly powered by Weebly
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন