Agony Opera
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন
Search

উমবের্তো   ইকোর  "উর-ফ‍্যাসিজ্ম" ।।   জাগরী   বন্দ্যোপাধ্যায়

9/4/2019

0 Comments

 
Picture
[উমবের্তো ইকো (৫ জানুয়ারী ১৯৩২ - ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৬) একাধারে একজন ইতালীয় ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক, দার্শনিক এবং অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৮০ সালে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস "দ্য নেম অফ দ্য রোজ" একটি ঐতিহাসিক রহস্যোপন্যাস যা বাইবেলের বিশ্লেষণ, মধ্যযুগীয় গবেষণা, এবং সাহিত্য তত্ত্বের সাথে কথাসাহিত্যে সেমিওটিক্স মিশ্রিত করে। পরবর্তীকালে প্রকাশিত তাঁর অন্যান্য উপন্যাসগুলির মধ্যে "ফুকো'স পেন্ডুলাম" এবং "দি আইল্যান্ড অফ দি ডে বিফোর" অন্যতম। ২০১০ সালে প্রকাশিত তাঁর উপন্যাস "দ্য প্রাগ সেমেট্রি" ইতালির বেস্টসেলার তালিকায় শীর্ষে ছিল।

এছাড়াও ইকো অসংখ্য একাডেমিক গ্রন্থ, শিশুসাহিত্য এবং প্রবন্ধ লিখেছেন। ইকো এর কথাসাহিত্য সারা বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর উপন্যাসগুলিতে সূক্ষ্ম, বহুভাষিক সাহিত্য ও ইতিহাসের রেফারেন্স উল্লেখযোগ্য । ইকো এর কাজ ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি ও সমস্ত সাহিত্যকর্মের আন্তঃসংযোগকে চিত্রিত করে। ইকোর নিজের কথায় তিনি জেমস জয়েস এবং জর্জ লুইস বোর্গেস দ্বারা সর্বাধিক প্রভাবিত।

২০০৫ সালে রজার এঞ্জেলের সাথে যুগ্মভাবে ইকোকে কেনিয়ন রিভিউ অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করা হয়।]




আমার দৃঢ় বিশ্বাস, চিরায়ত ফ‍্যাসিজ্ম বা যাকে আমি বলি উর-ফ‍্যাসিজ্ম, তাকে সবসময়েই কিছু নির্দিষ্ট প্রকৃতিলক্ষণ দিয়ে চিহ্নিত করা যায়। অবশ্যই এই লক্ষণগুলির সবগুলোই যে একটি ব্যবস্থার মধ্যে সচল পাবেন তা নাও হতে পারে, কারণ এদের অনেকগুলোই বেশ পরস্পর বিরোধী, আবার ভিন্ন ভিন্ন ধরনের স্বৈরাচার বা ধর্মতন্ত্রের মধ্যেও এদের দেখা পাওয়া যায়। তবে বলা ভাল যে এদের যে কোন একটার উপস্থিতিই যথেষ্ট, ফ‍্যাসিবাদ স্বচ্ছন্দে সেটির চারপাশে ঘনীভূত হয়ে উঠতে সক্ষম।

১। ফ‍্যাসিবাদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হিসাবেই আমি বলব ঐতিহ্য পূজার প্রবণতার কথা। অবশ্য এর জন্য কেবলমাত্র ফ‍্যাসিস্তদের দায়ী করা ঠিক নয়। এর আগেও বহুবার এর দেখা মিলেছে। ফ্রান্সে বিল্পব পরবর্তী সময়ে ক্যাথলিক প্রতিবিপ্লবই বলুন কিম্বা হেলেনিক পিরিয়ডে যুক্তিবাদের বিপক্ষে প্রথাপন্থীদের প্রতিক্রিয়াই বলুন। বলা বাহুল্য এই পন্থার জন্মদাতা কিন্তু ঐ গ্রীকরাই। পরবর্তীকাল জুড়ে ভূমধ্যসাগর সংলগ্ন অধিত্যকার ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষেরা (এদের সবারই দেবদেবীরা লতায় পাতায় রোমান দেবকুলের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন) স্বপ্ন দেখে গেছেন মানব সভ‍্যতার উষালগ্নে সেই এক প্রথম, প্রধান পবিত্র প্রকাশের, যা কেবল তাঁদেরই উত্তরাধিকার। সে উত্তরাধিকার যা কিনা চাপা পড়েছিল বিস্মৃত প্রাচীন ভাষাগুলির মধ্যে, হিয়েরোগ্লিফিক, বা কেল্টিক জাদু অক্ষর কিম্বা এশিয়ার প্রত‍্যন্ত অঞ্চলে লুকিয়ে থাকা লিপির মধ্যে।

এই নতুন সর্বগ্রাসী ঐতিহ্যপূজাদের প্রথম দর্শনে সমন্বয়বাদী বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আদতে যে কোন আদর্শ সমন্বয়বাদ যেভাবে বিরোধী ভাবনাকেও সসম্মানে স্থান দেয় ঠিক তেমনটি এরা নয়। যেহেতু সব ঐতিহ্য বার্তার মধ্যেই অন্তত এক চিলতে জ্ঞান এর কথা থাকে, তাই সেগুলিকে সমভাবে ধরলেই হল, পরস্পর বিরোধিতাও রইল না আর যদিবা ক্ষেত্রবিশেষে কিছুতেই প্রাচীন জ্ঞানোদ্ভাসগুলির মধ্যের স্ববিরোধিতা এড়ানো যাচ্ছে না, তখন বলে দিলেই হল যে “সব বাণীই কার্যত সান্ধ্য ভাষায় রচিত পরোক্ষ রূপক” কিনা, কাজে কাজেই সকল প্রাচীন মৌলিক প্রকাশগুলির মধ্যে এক সতত সঞ্চরমান অনড় অবিরোধ উপস্থিত।
ফলটা কি হয় তাতে, শিক্ষার অগ্রগতিটি আটকে যায়। কারণ ওই যে সর্বৈব এবং সার্বজনীন সারসত্যটি তো লক্ষ বছর আগে থাকতে ঘোষিত হয়েই রয়েছে! ওইটিরই রকমফেরে রহস্যের পাঠোদ্ধার করে চলো না!
যেকোন ভৌগোলিক ও কাল সীমারেখার মধ্যেকার বড় বড় প্রথাপন্থীদের যদি খুঁজে পেতে চান, তাহলে একটিবার যে সময়কার ফাসিবাদী পাঠক্রমটি বা তার প্রতিবেদকদের দেখলেই কাজ হয়ে যাবে। নাৎসিদের আধ্যাত্মিকরহস্যময় জ্ঞানাবলী পুষ্ট হয়েছে প্রথাপন্থা দ্বারা, সমন্বয়বাদ দ্বারা এমনকি যাদুবিদ্যা দ্বারাও। সাম্প্রতিক ইতালির দক্ষিণপন্থী জুলিয়াস ইভোলার তত্ত্বের বেশ কিছু প্রভাবশালী অংশ তৈরী হয়েছে হোলি গ্রেইল আর যিওন প্রাজ্ঞদের শিষ্টাচার বিধির একটা অপরাসায়নিক মিলনে। পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের পূত স্বচ্ছতা আর বলশালী জার্মান সাম্রাজ্যের দৃঢ় বলিষ্ঠতার মেলবন্ধন। আবার দেখুন ইতালির বর্তমান দক্ষিণপন্থা তাদের উদারনৈতিকতা দেখানোর কি উপায় বার করেছে ! তারা সিলেবাসে জুড়েছে দ্য মেইস্ত্রো, গুয়েনঁ , এমনকি গ্রামসি ও ... সেই পুরাতন সমন্বয়বাদ । সেই , সর্বপন্থা কে এক সমতলে নামিয়ে অথবা উঠিয়ে সমান করে দেখানোর এক জলজ্যান্ত উদাহরণ।
আমেরিকায় এই নতুন যুগের যে কোন বইয়ের দোকানে যান। আপনি একই তাকে পাবেন সন্ত আগুস্টাস (আমার মতে যাঁকে কোনভাবেই অন্তত ফ‍্যাসিবাদী বলা যায় না) ,আর তেনার পাশেই পাবেন প্রাচীন রহস্যবাদে মোড়া জাদুবিদ্যা সংক্রান্ত প্রহসন নাটিকার পকেট সংস্করণ। যেন সবই সমান! আলাদা আলাদা তাকে থাকলে এই দুটি পুস্তক এর একটিও কিন্তু ফ‍্যাসিস্ত নয়। তবে এরা যখন পাশাপাশি এক তাকে? সমগুরুত্বে? সমউচ্চতায় অবস্থান করছে? তখন? তখন এই সমীকরণটাকেই আমি বলি চিরায়ত বা উর-ফ‍্যাসিবাদ ।

২। প্রথাপন্থার একটি চিরকালীন আধুনিকতা বিরোধী অবস্থান রয়েছে । নাৎসি ও ফ‍্যাসিবাদ উভয়েই প্রযুক্তির ভারি ভক্ত, অথচ হিসাবমত ঐতিহ্যপন্থীরা সাধারণত এই প্রযুক্তিবাদের বিরোধিতাই করে থাকেন কারন প্রযুক্তি “সেই চির কালীন পরম আধ্যাত্মিক সত্যের বিরোধী“ তাই প্রথম চোটে নাৎসিদের মনে হয় ভারী প্রযুক্তিপরায়ন আধুনিক বিদ্যাবাদী। কিন্তু তাদের আধুনিক বিদ্যার প্রয়োজনটি আসলে সেই পুরাতন ভূমি ও রক্ত নীতির হিমশৈলের চূড়াটুকু মাত্র। আসলে যে তারা আধুনিক দর্শন ও প্রকৃত যুক্তিবাদ বাতিল করেছে তা বুঝতে প্রাথমিক দর্শনে অসুবিধা হবে কারন তারা পুঁজিবাদী বিলাসী জীবনযাপনের যথেষ্ট নিন্দা করেন। কিন্তু সেই নিন্দার সীমা নির্ধারিত। ১৭৮৯ বা ১৭৭৬ এর স্পিরিটকে প্রত্যাখ্যাত হতে দেখলে এদের ভারি চিন্তা হয়, তখন এনারা পুঁজিবাদের বিরোধী। অথচ এনলাইটেনমেন্ট, যুক্তিবাদের যুগ এইসব এদের কাছে আধুনিকতার অপকম্মের শুরু। এদিক থেকে দেখলে কিন্তু উর-ফ‍্যাসিবাদ একেবারেই যুক্তিহীনতায় আচ্ছন্ন।

৩। এনাদের যুক্তিহীনতার আরেকটি মহান নিদর্শন হল কর্মায় কর্মম অর্থাৎ কিনা কেবল কাজের জন্যই কাজ করে চলার এক মহান আদর্শ ও নীতি । কর্ম আপনার মধ্যে আপনিই প্রস্ফুটিত পুস্পের ন্যায় সুন্দর, তাহার আগা মাথা কার্যকারণ বিচার করা নিষ্প্রয়োজন । অতএব চিন্তা ভাবনা করে দেখাটেখা ওসব হীনবল ক্ষীণবীর্যদের লক্ষণ। (ক্লৈব্যং মা স্ম গমঃ পার্থ! বেশ গীতা গীতা গন্ধ আছে না?) ধী, মনোজগত বা বৌদ্ধিক বিষয়ের উপর এক ধরনের অবিশ্বাস চির–ফ‍্যাসিবাদের বড় লক্ষণ। এর উদাহরণ প্রচুর, সেই গ্যোরিং এর সদম্ভ বক্তব্য মনে করুন “যখ‌ন‌ই কৃষ্টিচর্চার কথা শুনি আমার হাতটা আপসেই নিজের বন্দুকে চলে যায়“ থেকে সুরু করে হালের “অধঃপতিত ইন্টেলেকচুয়াল”, “পান্ডিত্যাভিমানী”, “ক্ষয়িষ্ণু টুলো বিদ্বান”, “বিশ্ব বিদ্যালয় গুলি “লাল” উইপোকার বাসা” ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যদি । মোদ্দা কথা , খেয়াল করলেই দেখবেন আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষিত ফ‍্যাসিস্ত বিদ্বজনদের প্রধান কাজটিই হল আধুনিক কৃষ্টি ও উদারনৈতিক ভাবধারা সম্পন্ন মানুষদের ক্রমাগত অনৈতিক ও জাতীয়তাবাদ তথা জাতির শত্রু আখ্যা দিয়ে আক্রমণ করে যাওয়া ।

৪। পৃথিবীর কোন ফ‍্যাসিবাদী শক্তি যারা বিভিন্ন জ্ঞান ও বিভিন্ন যুক্তির সমস্ত পার্থক্য, ভিন্ন অবস্থানকে র‍্যাঁদা চালিয়ে এক মাপের করে দিতে চায়, খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে করা যায় যে তাদের মতের অন্যথা কোন মত তারা সহ্য করবে না, হয় সেই সমভাবের র‍্যাঁদা চালিয়ে সব জ্ঞাক্ষেত্র সমতল করে দেবে, আর তা না করা গেলে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেবে।আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের প্রধান লক্ষণই হল মতপার্থক্য ও অসম্মতি কে সাদর আহ্বান জানানো, কারণ তাদের পারস্পরিক তুলনা ও বিচার দ্বারাই সামগ্রিক জ্ঞানের অগ্রগতি হয়। তাই সঙ্গত ভাবেই মতপার্থক্য বা অসম্মতি উর-ফ‍্যাসিবাদের কাছে এক বিশাল দ্রোহ, এক বিরাট বিশ্বাসঘাতকতা।

৫। আবার এরই পাশাপাশি দেখুন অসম্মতি কিন্তু বৈচিত্রের প্রমাণও বটে । উর-ফ‍্যাসিবাদ ফের অন্য আরেকটি নেতিবাচক দিক দিয়ে এই বৈচিত্রকে কাজে লাগায় ,  সমাজের বৃহত্তর শ্রেনীর কাছে এই পৃথক মানুষদেরকে জুজু হিসেবে খাড়া করে বৃহত্তর শ্রেণীর সহমত আদায় করে। “ওরা আমাদের চেয়ে আলাদা / ওরা অন্যরকম” মানুষের এ ভয় চিরন্তন। এই ভয় কে কাটিয়ে দেওয়ার স্থানে ফ‍্যাসিস্তরা আরো বেশী করে প্রচার করে পৃথকত্বের, প্রচার করে কাল্পনিক আগন্তুক অভিবাসীদের কাল্পনিক আগ্রাসনের, আর সমাজের বৃহত্তর অংশের কাছে আবেদন করে চলে এ আশু বিপদ থেকে দেশ ও দেশীয় প্রথা কে রক্ষা করার দায়িত্ব সম্পর্কে । এদিক দিয়ে ভাবলে ফ‍্যাসিজ্ম অবশ্যই বর্ণ বাদী, বৈষম্যবাদী ।

৬ । চিরায়ত ফ‍্যাসিবাদ গুটি বাঁধে একক অথবা সম্মিলিত হতাশা থেকে। এই জন্যই ফ‍্যাসিবাদীদের বিশেষ বৈশিষ্ট‍্য হল এরা এদের প্রাথমিক আবেদনটাই জানায় হতাশ ও সদা মনঃক্ষু্ণ্ণ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাছে, যে শ্রেণী সর্বদা ভুগছে আর্থিক অনটনে অথবা আচ্ছন্ন হয়ে আছে রাজনৈতিক ক্ষমতাহীনতাজনিত তুচ্ছতার বোধে, উপরি সদাই তটস্থ হয়ে আছে ছোটলোকদের বাড়বাড়ন্তর ভয়ে। ইদানিং যত বেশি করে আগেকার প্রলেতারীয়রা দস্তুরমত গুছিয়েগাছিয়ে পাতি বুর্জোয়া হয়ে বসেছেন আর যত বেশি করে তাঁরা বিরাট এক সংখ্যার তথাকথিত লুম্পেনদের বিন্দুমাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতার বৃত্তে ঢুকতে দিতে নারাজ হচ্ছেন, ততই বেশি করে ফ‍্যাসিবাদ অদুর ভবিষ‍্যতে তার নিজের জায়গা গুছিয়ে নিচ্ছে। অচিরেই এই নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী হবেন সেই উর ফ‍্যাসিবাদের নতুন সমর্থক।

৭। যে সব মানুষ কোন নিজস্ব পরিচিতির অভাবে ভোগেন উর-ফ‍্যাসিবাদ তাকে তার প্রধান পরিচিতিটি দান করে, সবচেয়ে সহজলভ্যটি – জাতীয় পরিচিতি। বলে, “তুমি অবশ্যই বিশিষ্ট কারণ তুমি অমুক দেশে জন্মেছো”; এই হল জাতীয়তাবাদের শুরু। আবার এর পাশাপাশি প্রধান কাজ হয়ে দাড়াঁয় একটি জুতসই শত্রুপক্ষ খুঁজে বার করা, কারণ দেশের শত্রু বই দেশের পরিচয় আর কেই বা নির্মাণ করে?  কেবল লঙ্ঘিত হবার দ্বারাই প্রতিষ্ঠা পেতে থাকে দেশের সীমানা তথা দেশ। সেইজন্যই উর ফ‍্যাসিবাদীরা সর্বদা নিজেদের মনস্তত্বের শিকড়ে এক নিরবচ্ছিন্ন সন্ধান জারি রাখে। তার শত্রুর প্রয়োজন, সীমা লঙ্ঘনকারীর প্রয়োজন, ভীষণ দরকার দেশদ্রোহীর, নিয়ত দরকার একটা না একটা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের -- সম্ভব হলে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করার। কারন সমর্থকদের অনুভব করাতে হবে যে তারা সদা আক্রান্ত ও বিপদগ্রস্ত আর এই ভয়ের পিছু পিছু সহজ সমাধান হিসেবে আসবে জাতিগত ঘৃণা, বিদেশিদের প্রতি অহেতুক ভয় ক্রমে তা হয়ে উঠবে আক্রমণাত্মক। মনে রাখতে হবে বিদেশি শত্রুর সাথে সাথে কিন্তু দেশের ভিতরেও একটা শত্রু বজায় রাখা খুব দরকারি। বিশ্ব ইতিহাসে ইহুদিরা এই জাতিঘৃণা বা জেনোফোবিয়ার সহজ টার্গেট হয়ে গেছেন কারন তাঁরা যে কোন দেশের ভিতরে ও বাইরে এক‌ই সঙ্গে উপস্থিত। এই দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র অবসেশনের একটা ভালো নিদর্শন হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে প্যাট রবার্টসন এর নিউ ওয়রল্ড অর্ডার, তবে কেরমে কেরমেই আরো আসিতেছে ।

৮। ফ‍্যাসিবাদের সমর্থকরা সদাই তাদের শত্রুদের জমজমাট ধনসম্পদ বা অগাধ ক্ষমতার জন্য কেবলি অপমানিত বোধ করতে থাকবেন। এক অন্যায় ভাবে বঞ্চিত হবার বোধ তাদের চেপে ধরবে। মনে আছে, ছোট বেলায় আমায় শেখানো হয়েছিল যে ইংরেজরা হামেহাল অন্তত ৫ কোর্স খাওয়া ধোওয়া করে, আর সেখেনে আমরা ইতালিয়ানরা? আমরা গরীব হতে পারি কিন্তু মার্জিত, ভদ্র, অত ৫ কোর্সের আহিঙ্কে আমাদের নেইকো! আবার ধরুন যেমন ইহুদিদের গোপন ভ্রাতৃসঙ্ঘ আছে তারা অবশ্যই অতি গোপনে পরস্পরকে সাহায‍্য করে এইসব নানা রটনা। আবার সেই সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত এক ধারনাও প্রোথিত থাকতে হবে সমর্থকদের মনে, যে চাইলেই তারা এইসব দেশবিরোধী বিলাসী ভাঁড়দের জব্দ করে দিতে পারবে। অর্থ কি দাঁড়ালো? “উহারা আমাদের চেয়ে ধনী ও শক্তিশালী হইতে পারে বটে কিন্তু সময়ে আমরাই শ্রেষ্ঠ” ঠিক এভাবেই আত্মাহংকার ও গর্বের ফোকাসটি কাল্পনিক শত্রুর উপরে থেকে থেকে কখন লাল আর কখন নীল আলো ফেলতে থাকে ফলত ফ‍্যাসিস্ত গভর্নমেন্টের একটি ধারাবাহিক লক্ষণ হল লম্বা যুদ্ধগুলি হেরে যাওয়া কারণ স্থির ভাবে এরা শত্রুর ক্ষমতা নির্দিষ্ট করে গণনা করতে অক্ষম হয়।
(অনুবাদকের অক্ষম টিপ্পুনি: পাকিস্তান আমাদের কত্তো খেতি করে দিচ্ছে খালি খালি , আবার কাশ্মীর ও কেড়ে নিচ্ছে র‍্যা! আর সেই আমরাই কিনা ঘরমে ঘুস্কে মারেঙ্গে! চেনা চেনা ঠেকছে সুধী?)

৯। চিরায়ত ফ্যাসিবাদের ক্ষেত্রে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম নয়, বরঞ্চ সংগ্রামই বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলতঃ শান্তির প্রস্তাব আনা সেক্ষেত্রে শত্রুর সাথে গা মাখামাখি করারই সামিল। এটা বাঞ্ছনীয় নয়, যেহেতু বেঁচে থাকা আদতে একটা চিরন্তন যুদ্ধ। অথচ এই ভাবনা থেকেই উদ্ভূত হয় এক ধরণের 'আর্মাগেডন কমপ্লেক্স'। যেহেতু শত্রুদের পরাজিত করাটাই লক্ষ্য, অতএব নিশ্চিতভাবে একটা চূড়ান্ত যুদ্ধের প্রয়োজন, যার পরেই এই আন্দোলন গোটা পৃথিবীর দখল নেবে। কিন্তু এইধরণের 'চূড়ান্ত সমাধান' এর আনুষঙ্গিকেই উঠে আসে যুদ্ধ পরবর্তী এক শান্তির যুগের ধারণা, অর্থাৎ স্বর্ণযুগ, যা কিনা সেই চিরন্তন যুদ্ধের নীতির স্ববিরোধী। কোনো ফ্যাসিস্ত নেতৃত্বই আজ অবধি এই সমস্যার সমাধান করে উঠতে সক্ষম হন নি।
 

১০। অভিজাতপ্রাধান‍্য এদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য, অবশ্য যদ্দুর অব্দি সেই আভিজাত্য মুলত উচ্চবংশ/উচ্চবর্ণ এবং সামরিক ক্ষমতার খেতাব ধরে। আর এই জন্মগরিমাধারী এবং সামরিক অভিজাতরা মানবিক দৌর্বল্য একেবারে বরদাস্ত করেন না। উর ফ‍্যাসিস্ত রা একধরনের পপুলার এলিটিজ্‌ম প্রচার করে যার ধাপগুলি খানিকটে এইরকম
এই দেশের প্রতিটি নাগরিক এই ভুবনের শ্রেষ্ঠ মানুষদের একজন। কারন? তারা এই দেশের নাগরিক।
অতঃপর আমাগো পাটটির মেম্বররা হলেন সেই ভুবনের শ্রেষ্ঠ মানুষদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতর। কারন? কারন তারা আমাদের পাটটির মেম্বর/সাপোরটার ।
দেশের প্রতিটি নাগরিক ইচ্ছা করলেই এই শ্রেষ্ঠত্তের সোয়াদ নিতে পারেন। কিভাবে? আমাদের পার্টিতে যোগদান করে।
কিন্তু সঙ্গত প্রশ্ন হল সবাই পাত্রিসিয়ান হয়ে গেলে প্লিবিয়ান কে রইবে? জনগণ নইলে ক্ষমতা তন্ত্র চলবে কি করে? কার্যত তারা ক্ষমতাহীন বলেই কিনা তাদের নেতা লাগে? তারা বাক্যহীন বলেই না তাদের মুখপাত্র লাগে! তারা যদি কেবল পার্টি মেম্বরশিপের দ্বারা নিজেদেরকে ক্ষমতাবান ভাবতে শুরু করে তবে তো মুস্কিল! সুতরাং তৈরি করা হল র‍্যাঙ্ক। প্রতিটি কর্মী যেন কিছু লোকের কাছে ক্ষমতাহীনতার গ্লানি ও কিছু লোকের সামনে ক্ষমতার গরিমা নিয়ে বেঁচে থাকতে বাধ্য হয়। ফ‍্যাসিবাদী পার্টি গভীর ভাবে সামরিক কেতার স্তরবিভাজন মেনে চলে। অর্থাৎ একই কর্মীর ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন দুই স্তরই থাকবে । দেখা যাচ্ছে হাইয়ারারকি আর অর্ডারের প্রয়োজন ফ‍্যাসিবাদীদের সবচেয়ে বেশি। এভাবেই তারা মাস এলিটিজ্‌ম এর রাস্তা তৈরী করে ।

১১। এই সামরিকস্তর-সুলভ ব্যাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি মানুষ বা কর্মীর কাছে অন্তত একটি শিক্ষা অতি সহজলভ্য, তা হল বীরত্বের শিক্ষা। সমস্ত পৌরাণিক গাথা গল্পে দেখা যায় বীর নায়ক হচ্ছেন একজন অনন্য মানুষ, যিনি অনুকরনীয় অবশ্যই কিন্তু সেইসঙ্গে এক ব্যতিক্রমী ও বিরল ব্যক্তি বটেন।  উর ফ‍্যাসিস্তদের কাছে বীরত্ব কেবল অনুকরনীয়ই নয় তা এক অবশ্য কর্তব্য। মৃত্যুর সঙ্গে এই বীর ধর্মের দারুণ যোগাযোগ। “ভিভা লা মুএরতে” বা মৃত্যু দীর্ঘজীবী হোক স্লোগানটি কোন ঘটনাচক্রে বা অবস্থাবশে তৈরি করেননি ফ্যালাঞ্জিস্টরা। সাধারণ সমাজে মানুষ বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে শেখেন যে সবার উচিত সম্মানের সঙ্গে সাহসের সঙ্গে মরণকে গ্রহণ করা কারন সে এক সত্য কিন্তু বড় কদাকার এক সত্য, আবার আস্তিকরা মরণকে সেই পরম করুনাময়ের সঙ্গে মিলিত হবার জন্য এক পথ বলে বিশ্বাস করেন, অবশ্য অতিক্রম্য এক পথ কিন্তু যন্ত্রনাময় পথ। এসকলের এক বিপ্রতীপ কোণে দাঁড়িয়ে চির ফ‍্যাসিস্তরা কেবল‌ই এক গর্বময় বীরগতি প্রাপ্ত করার কামনা করে যেতে থাকেন। তাঁরা অস্থির হয়ে এক বীরত্ব ব্যাঞ্জক মরন যাঞ্চা করে চলেন, ক্রমে সেটিকেই জীবনের উদ্দেশ্য বানিয়ে ফেলেন। বীরগতি প্রাপ্ত হবার জন্য এরাঁ এতই অধৈর্য যে প্রায়শই অন্যান্য মানুষজনদের ঠেলে দেন সেই গ্লোরিয়াস ডেথ এর মুখে।

১২। আবার ভেবে দেখলে দেখবেন এই ক্রমাগত যুদ্ধ-যুদ্ধ ও বীরগতির খেলা কি কঠিন! ব্যায়সাধ্য আর ক্লান্তিকরও তো বটে! তাই উর ফ‍্যাসিস্তরা ক্ষমতার প্রদর্শনের ক্ষেত্রটিকে সরিয়ে নিয়ে আসেন লিঙ্গভেদের রাজনীতির ক্ষেত্রে। এখানে ক্ষমতার অনুশীলনটি সহজ। কল্পিত শত্রুর উপর বীরত্ব এই মাঠে এসে রূপান্তরিত হয় মাচিস্মো বা পৌরুষ প্রদর্শনে। যা এক সঙ্গে আক্রমণ করে নারীদের আর ব্যতিক্রমী যৌনতা বিশিষ্ট মানুষদের। সতীত্বর সংজ্ঞা থেকে শুরু করে সমকামী নিপীড়ন অব্দি চলতে থাকে এই প্রদর্শন। এইবার ধরুন  যৌনতা, তা যৌনতাও কিন্তু খুব সহজলভ্য খেলা নয়, তাই চির ফাসিস্তরা অবশেষে হাতে নেন অস্ত্র -- পুংযৌনতার আর জননেন্দ্রিয়ের অভ্যস্ত প্রতীক।

১৩। উর ফাসিজ্ম একটা বাছাই করা ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা অর্জনের উপর দাঁড়িয়ে থাকে, বলতে পারেন গুণগত ভাবে জনমোহিনী কিছু কর্মসূচি ও প্রচারের উপর। গণতন্ত্রে প্রতি একক নাগরিকের কিছু রাজনৈতিক ক্ষমতা অবস্যই থাকে কিন্তু সামগ্রিক ভাবে তিনি হয়ে দাঁড়ান সামগ্রিক সমর্থক সমষ্টির একটি অংশমাত্র। কারন বৃৃহত্তর ক্ষেত্রে গ্রহণীয় হয় কেবল সংখ্যাগত গরিষ্ঠতা। ফ‍্যাসিস্তদের কাছেও নাগরিকদের কোন একক উপযোগিতা নাই, তার কোন‌ও অধিকারও নাই, সে কেবল একটি বৃৃহৎ একজাতীয় শিলাপিন্ডের খন্ডমাত্র যা কেবল প্রতিফলিত করবে “সমগ্র”র ইচ্ছা ও অনুভুতি। কিন্তু বিষয়টি সোজা নয়, সত্যই কি জনগণ নামে সমগ্রতার প্রতিটি একক এর ইচ্ছা-আশা-ধ্যান-ধারণা এক হতে পারে? এখানেই লীডার আর ডেলিগেশনদের কাজ, তাঁরাই হয়ে বসেন এই সমগ্রতার মুখপাত্র যেখানে বিরোধী স্বরগুলিকে নির্বাচনপূর্বক ছাঁকাই করে বাদ দেওয়া হয়। এইটি হল সিলেক্টিভ পপুলিজ্‌ম। এর উদাহরণ খুঁজতে আজকের দিনে আমাদের  রোমের পিয়াজ্জিয়া ভেনেজিয়া কিম্বা ন্যুরেমবারগ স্টেডিয়াম অব্দি যেতে হবে না। কেবল টিভি বা ইন্টারনেট দেখুন, কিভাবে মুষ্টিমেয় বাছাই করা মানুষজনের আবেগ বা যুক্তিকে সমষ্টির আবেগ-যুক্তি-প্রতিরোধ অথবা সমর্থন হিসাবে চালানো হচ্ছে! বিরোধী কন্ঠ প্রতিফলিত হবে না কোনভাবেই , এটি চিরায়ত ফ‍্যাসিবাদের বিশেষ লক্ষণ।
এইটির উপর দাঁড়িয়েই তারা পচাগলা সাংবিধানিক ব্যবস্থা ও পার্লামেন্টারিকে আক্রমন করে। একটি একমাত্রিক গুণসম্পন্ন জনমোহিনী প্রচারের দরুন মনে হয় প্রাথমিক ভাবে তারাই বুঝি সত্য ও বিচারের স্বপক্ষে। মনে করুন ইতালির পার্লামেন্টে মুসোলিনির বিখ্যাত বক্তব্য “এই ম্যাড়ম্যাড়ে আর বিষন্ন জায়গাটিকে আমি আমার সৈন্য দলের মাথার উপর অন্তত একটা ছাউনি হিসেবে ব্যাবহার করতে পারতাম“ এই করুণ বক্তব্যর ফলে তিনি খুব জলদি সেনাদলের জন্য উন্নত মানে ব্যারাক ইত্যাদি পেলেন বটে তবে পইলা চান্সেই তিনি কিন্তু গোটা পার্লামেন্টটাই উচ্ছেদ করে দিলেন।

১৪।  উর ফ‍্যাসিবাদ এক বিশেষ ভাষায় কথা বলে, নিউস্পিক বা বাংলায় বলতে গেলে খবরব বলা যেতে পারে । এই নিউস্পিক কথাটির আবিষ্কর্তা অবশ্যই অরওয়েল । তাঁর ১৯৮৪ উপন্যাসে ব্রিটিশ বা ইংগসক এর নিজস্ব বিশিষ্ট ভাষা ছিল এই নিউস্পিক । উর ফ‍্যাসিজম অনেক ক্ষেত্রেই স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে মিলে যায়। সমস্ত নাৎসি বা ফ‍্যাসিস্ত শাসন কালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যপুস্তকের ভাষায় দেখা যে করুণ রকমের রিক্ত শব্দ ভান্ডার সেই সঙ্গে শিশুসুলভ সরল গোছের পদবিন্যাস। এর দ্বারা ক্রমশই জটিল ও সমালোচনামুলক যুক্তি তর্কর ইন্সট্রুমেন্টটির উপর থেকে ছাত্র তথা ভবিষ্যৎ নাগরিকদের দখল লোপ পেতে থাকে। কিন্তু এ ছাড়াও অন্যান্য অনেক ধরনের খবরব হতে পারে যা নিয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হতে পারে, যেমন কিনা জনপ্রিয় টক শো গুলিতে যে ধরনের শব্দভান্ডার ব্যবহার হয়।

১৯৪৩ সালের ২৭ জুলাই, সকালবেলায় আমাকে বলা হল যে রেডিওতে খবর হয়েছে মুসোলিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন ও ফ‍্যাসিস্ত সরকারের পতন ঘটেছে। আমার মা যখন আমাকে  একটি সংবাদপত্র কিনবার জন্য দোকানে পাঠালেন, আমি দেখলাম নিউজ স্ট‍্যান্ড এ অনেক রকমের নিউজ টাইটেল রয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা হল খবরের কাগজ গুলিতে চোখ বুলিয়ে আমি দেখলাম প্রতিটি কাগজ ভিন্ন ভাবে রিপোর্ট করেছে খবরটি। আমি অন্ধের মত কোন‌ও একটা তুলে নিয়েছিলাম যেটার পয়লা পাতাতেই আমি ৫/৬ টা রাজনৈতিক দল এর নাম পেলাম। তার মধ্যে যদ্দুর মনে পড়ে
ডেমক্রাজিয়া ক্রিসচিয়ানা, দ্য কমিউনিস্ট পার্টি, দ্য সোসালিস্ট পার্টি, দ্য পারতিতো দ’আজিওনে, আর দ্য লিবেরাল পার্টির নাম ছিল।
তখন‌ও পর্যন্ত আমি জানতাম পৃথিবীর সব দেশেই একটা করে রাজনৈতিক দল থাকে, তারাই শাসন ক্ষমতায় থাকে আর আমার ইতালিতে সেরকমই আছে পারতিতো নাজিওনেল ফাসিস্তা । সেদিন , আমি হঠাত ই আবিস্কার করলাম আমার এদেশেই একি সময়ে একাধিক রাজনৈতিক দল রয়েছে! আমি মোটামুটি বুদ্ধিমান ছিলুম ফলে ধাঁ করে বুঝে গেলুম যে এত গুলো দল তো রাতারাতি গজিয়ে উঠতে পারেনা! এরা নিশ্চয়ই আগেও ছিলো... বরাবরই ছিলো। শুধু, লুকিয়ে ছিলো...আত্মগোপন করে ছিলো।
এখন‌ও মনে আছে, একেবারে প্রথম পাতাতেই জ্বল জ্বল করছে একনায়কতন্ত্রের পতন ও স্বাধীনতা ফিরে পাবার উৎসবের ঘোষনা ... বাক স্বাধীনতা, প্রিন্ট মিডিয়ার স্বাধীনতা, ইচ্ছামত রাজনৈতিক দলে যোগদানের স্বাধীনতা  ফিরে পাবার উৎসব...। স্বাধীনতা, একনায়কতন্ত্র, মুক্তি ... জীবনে প্রথমবার এইসব শব্দ জানলাম আমি! সত্যি বলতে কি এইসব অচেনা নতুন শব্দের শক্তিতে আমার যেন নবজন্ম হল! আমি প্রথমবার জন্ম নিলাম স্বাধীন ইউরোপের একজন স্বাধীন নাগরিক হিসেবে!

এই জন্যই, এই জন্যই আমাদের সর্বদা সজাগ থাকতে হবে, আমরা ঐ শব্দগুলোর অর্থ ফের ভুলে না যাই। চির ফ‍্যাসিবাদ কিন্তু সর্বদা আমাদের চারপাশে পাক খাচ্ছে, ছদ্মবেশে, সাধারন পোশাকে। আজ যদি দুম করে কেউ বলে বসে যে “ভাই আমি আউশভিতস ক্যাম্নটা আবার খুলবো“ কিম্বা বলে বসে যে “আমার ভারি ইচ্ছে করে দেখতে ইতালিয়ান স্কোয়ার এ ব্ল্যাক শার্টরা কুচকাওয়াজ করছে সেই পুরান সোনার দিন গুলির মত“ তাহলে আমাদের কাজ টা অনেক সহজ হত। কিন্তু জীবন তো এতো সহজ নয়, প্রতিবার ফ‍্যাসিজ্‌ম ফিরে আসবে নতুন নতুন ছদ্মবেশে, ভীষণ সরল ও পবিত্র ছদ্মবেশে। আমাদের কর্তব্য একটাই, ফ‍্যাসিবাদের এইসব নতুন নতুন খোলসগুলো ছিঁড়ে তাদের উন্মুক্ত করে দেওয়া, সজাগ থাকা সর্বদা, পৃথিবীর যে কোন‌ও প্রান্তে, যে কোন‌ও সময়ে সজাগ থাকুন।

[অনুবাদকের নিবেদন: এটি ভাবানুবাদ হিসাবে দেখলেই ভাল হয়। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি মনে করি যে কোন অনুবাদই ভাবানুবাদ হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়, তবু ভিন্নমত থাকতেই পারে। ষে কারণেই বলে দেওয়া ভাল যে শ্রীযুক্ত উমবের্তো ইকোর লেখায় তিনি যে সকল কোটেশন ব্যবহার করেছেন আমি সেগুলির আক্ষরিক অনুবাদই রেখেছি, অথবা ফ‍্যাসিবাদের লক্ষণগুলির উচিত উদাহরণগুলি আমার নিজের দেশে বর্তমানে ভুরি ভুরি থাকা সত্বেও আমি উল্লেখ করতে পারিনি (হাত নিশপিশ কচ্ছিল মশয়), কেবল লেখকের উদাহরণগুলিই কেবলমাত্র উল্লেখ করেছি। এতো আত্মনিয়ন্ত্রণ দেখিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। কারণ মূল রচনার শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের একটি বাণী লেখক ব্যবহার করেছেন ফ‍্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতার উদাহরণমূলক উৎসাহ হিসাবে। আমি অনুবাদকের স্বাধীনতার সম্পুর্ন অপব্যবহার করে সেইটুকু বাদ দিয়েছি। এ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত যুক্তি অনড়, তবে সে আলোচনা অন্যত্র হতে পারে। আর শ্রীযুক্ত প্রেসিডেন্টের উক্তিটিও নেহাত সহজেই পাবেন আগ্রহী পাঠক এদিক ওদিক। তাই চাপ নিলাম না। ধন্যবাদ।]
0 Comments



Leave a Reply.

    Archives

    February 2021
    December 2020
    November 2020
    September 2020
    August 2019
    June 2019
    April 2019
    February 2019
    December 2018
    October 2018
    August 2018

Proudly powered by Weebly
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন