Agony Opera
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন
Search

পুতুল  ।।  চান্দ্রেয়ী দে

26/8/2018

0 Comments

 
Picture
১।
ভেতরে দালান কোঠা পাহাড় মন্দির
মন্দিরে ঘণ্টাধ্বনি মৃদুমন্দ
ঢং ঢং আনাগোনা, লোকচলাচল
স্বপ্ন, সৌভাগ্য, অতি বিষণ্ণতা আসে যায়।
হ্যাঁ এই মহলে আছে
সুখ-দুঃখ, ঘর-বাড়ি, ভাব-ভালোবাসা
যা যা কিছু মৌলিক, যৌগিক।
ঘটনার ঘণ্টাধ্বনি
মন্দির দুলিয়ে দেয় মৃদু,
এপাশ ওপাশ করার মতো।
আজব নগরে যেমন,
মুড়ি মিছরি এক দর
কাকে দিয়ে কাকে খাবে
সেখানে নিয়ম নাই। যেখানে,
আকাশে মেঘের ভার
আবহে বর্ষণ আর মাটিতে
থৈ থৈ ক’রে কাদা
কামকাদা।
হেঁটে গেলে পায়ে লাগে
দাগ, ছোপ, দেবে দেবে যাওয়া,
আর যদি উড়ে গেলে,
মেঘের অহেতু ভারে
চাপা পড়ে ঢাকা পড়ে যাবে।
তাই শুধু ভেসে থাকা
কাদা-নিরীক্ষণ
আবহে ডুবকি দিয়ে
ডুবে আছো, গভীর বর্ষণ।
আহা কি আনন্দবর্ষা
এ অতি বিষণ্ণ বর্ষা
স্বাদে আর বিষাদে পার্থক্য ভুলেছি।
এই এক ঘরের ভিতরে ঘর
সংসারে এই যে ছোট ছোট সংকীর্ণ সংসার,
তারও ভিতরে এক সংসার
আমাকে অসার করে রাখে,
আমাকে সারিয়ে তোলে,
ত্রিভুবনে জুড়ি মেলা ভার
এমন সংসার। যেখানে
কু ও সু পাখি
দাঁড়ে বসে ছোলা খায়
পালকে পালক লেগে
হাওয়া দেয়,
বিষণ্ণ আনন্দের হাওয়া
আলো আঁধারিতে
সু পাখি আর কু পাখি
ছিনিমিনি খেলে
এমন মজার খেলা ভুলে
পিঠ ফিরে,
ঘরের চৌকাঠে
দাঁড়িয়ে
বাইরে দেখি।
বাইরে কি আছে?

২।
এমন বর্ষাবাদলবাতাস
চারপাশে মাতাল সবাই
যার কাছে যতটুকু
দুলিয়ে দিয়েছে আমূল।
একবার চেয়ে দেখো
মুখ তুলে দেখো
কত ছোট
অণু পরমাণু নিয়ে বেঁচে আছি
মেতে আছি।
মেতে আছো নিচু নিচু ঘর আর বাড়ি আর পসরা সাজিয়ে
মেতে আছো মিছিমিছি জাঁক ও জমক নিয়ে
পুতুলের বিয়ে যেন আজ।
একবার চেয়ে দেখো
আকাশের দিকে দেখো
দেখো কত বিশাল বিচিত্র,
বিমুখ হয়েছে তাও অনায়াসে।
আর কত ছোটখাটো জমক চমক নিয়ে মেতে আছে মাতালের দল
অথচ এখন যদি, দৈনিক মদের মতো
ঘরবাড়িপসরা না থাকে
যদি এই পুতুলের বিয়ে দিয়ে
বালক বালিকা খোঁজে অমর বন্ধন
তাতে আর কিছু নয়
মাথার উপরে শুধু ঐ ঐ ভেঙে পড়ে।
ভেঙে পড়া আকাশের দিকে
মুখ তুলে চেয়ে দেখো
যেন এক বিরাট বিপুল শিশু
মানুষের চেয়ে বড়
পৃথিবীর চেয়ে বুড়ো শিশু
একমনে ঝুলন গড়েছে
আহারে ছবির মতো নধর নজারা এক
খেলছে এমন ক’রে
একমনে, একাসনে বসে।
মানুষের দিক থেকে
পুতুলের দিক থেকে
তার দিকে চোখ তুলে দেখো।

৩।
তোমার আগে যারা কল্পকাহিনী
যারা গল্প
যারা অল্পবিস্তর বানিয়ে গুছিয়ে
তারা আর বেঁচে নেই।
তারা সেই কাহিনীতে কাকে ডেকেছিল
তাকে যাকে চেনেনি কোনোদিন?
যা তুমি দেখোনি আর জানোনি
তা তুমি অনুভবে বেঁধে রাখো
অভিজ্ঞতা উৎকোচ দাও তাকে
তবে ঠোঁটে ভাষা আসে
তবে চোখে আসে জল।
তাই আর প্রতিদিন বানিয়ে বানিয়ে
প্রতিদিন ভেবে বুঝে গল্প লিখেছ,
অথচ এমন এক দুরূহ দিনের শেষে,
অবিশ্বাস্য যা সব ঘটে ও ঘটছে বলে
লিখতে বসেছ।
সেইভাবে অনুভব বেয়ে ওঠা লেখ
লেখ নিজে নিজে
ঘুম থেকে ওঠার গল্প
বড় হওয়া ছোট হওয়া নিয়ে।
যা তোমায় বানিয়েছে তাদের বানান লেখ
অর্থ ও সমার্থ লেখ
বিপরীত শব্দ লেখ
যেন
লিখতে লিখতে ভুলে গেছ
কি যেন লিখেছ আর কতটা রয়েছে বাকি সময়ের
যতকিছু অচেনা রয়েছে
এফোঁড় ওফোঁড় করে।
প্রতিদিন ভুলে যেতে যেতে
যা যা ভুলেছ তার সবটুকু লিখে ফেলো
যে বিদ্যা হারিয়ে যাচ্ছে
কলসিতে বালি দিয়ে জমিয়ে লুকিয়ে রাখো তাকে
আগে তাকে আঁকে বাঁকে অক্ষরে বেঁধে ফেল
নাতো সব আটঘাট বৃথা করে
একদিন মাঝনদে নৌকাডুবির পর
ভারি হয়ে চলে যাবে অতল কল্পলোকে
কল্পনা থেকে আর কত কত আড়াল নেবে গো?
নদী থেকে জল ঝেড়ে যেদিন উঠেছো নগ্ন হয়ে
পাড়ে ছাপ দিতে দিতে টপ টপ এগিয়েছো দরোজার দিকে
তোমার পায়ের ছাপ তোমার পিছনে এক নদী ক’রে গেছে
সেই নদী নিয়ে লেখো
নদীর জার্নাল
দিনলিপি
রোজ রোজ
জল ও নগ্নতার একই কাহিনী।

ত্রিশূল অক্ষর দিয়ে বেঁচে থাকা নিয়ে লেখো
লিখে রাখো
সত্য ঘটনা অবলম্বনে
জেনে রাখো
সত্য ঘটনার কোনো অবলম্বন লাগেনি কোনোদিন।

৪।
একদিন এক খনন শুরু হল।
মাটি বালি সরাতে সরাতে
কোদালের ঘায়ে ঘায়ে
পরতে পরতে সব খান খান করে দিয়ে
দেখে-শুনে-মেপে-শুঁকে
কি যেন বোঝা হচ্ছিল
মাথা থেকে মাথায়।
বোঝা বয়ে বয়ে ছোট বড় নিঃশ্বাস
দুফোঁটা ঘামের মতো পড়েছিল
হরোপ্পা ও মহেঞ্জোদারোয়।
মাটির নিচে ঐ সোনার সভ্যতা।
খুঁড়ে খুঁড়ে একদিন তেমনই হরোপ্পা পাবে,
অলি গলি সুচারু কারুকাজ
চমৎকার নিকাশী ব্যবস্থা
সুন্দর অলংকার সব, এমন অহংকারে তাকাবে তোমার দিকে
যেন যত প্রসাধন এতদিন এতকাল
সবই তার অক্ষম অনুকরণ।
মাটির ভিতরে এক মহেঞ্জোদারো
যেন তোমারই অপেক্ষা করে বসেছিল
আলো থেকে জ্ঞান থেকে কোলাহল থেকে দূরে
হরোপ্পা ও মহেঞ্জোদারো।
এখন খনন করো
এখনই খনন করে নিয়ে এসো অনুভবে
তোমার পায়ের নিচে তোমার সভ্যতা
তোমার বুকের উপর পাথরের মতো চেপে
তোমায় শিয়রে আছে অদৃশ্য হয়ে
সোনার সভ্যতা আছে
যেমন চিরদিন ছিল
তোমার সভ্যতা তুমি তারই মতো তয়ের করেছ
অথচ নকল সোনা নকল ভূষণ দিয়ে সাজিয়ে রেখেছ
যেন
হরোপ্পা মহেঞ্জোদারো ভুলেই গিয়েছ।

মনে মনে খোঁড়ো
তোমার হারিয়ে যাওয়া
হরোপ্পা মহেঞ্জোদারো।

৫।
পুকুরে ঢিল পড়ার শব্দ হল
ওঁয়া ওঁয়া
আর নড়ে উঠল সমস্ত জল
শিরশির করে কতশত তরঙ্গ ভেসে এল
থৈ থৈ হল কত, আর,
পুকুরের শান্ততা স্তব্ধতা থির নিয়ে
পুকুর ডুব দিল পুকুরের ভিতর।

আঁকাবাঁকা ছায়াপথ
গাছ, বাড়ি, মানুষের অবয়ব নিয়ে
ছায়ার ওপর ছায়া
পুকুরের দেহে মনে।

একটি পুকুর তার লক্ষ লক্ষ ঢেউ
অভিজ্ঞতার মতো
সারা গায়ে বলিরেখা
কেমন বিন্দু থেকে পাকদন্ডী বেয়ে বেয়ে
ছড়িয়ে পড়ছে পাড়ের দিকে।

পুকুরের পাড়ে বসে মজার মাল্লা এক
বসে বসে ঢিল ছোঁড়ে, হাসে,
দেখে,
তরঙ্গ ওঠে নামে
ছায়া পড়ে, বাড়ে, কমে
পুকুরের বুকের উপর দিন ও রাত্রি হয়
বছর বছর ধরে।

অথচ গভীরে
পুকুর একলা আছে
তার আর কেউ নেই
কিছু নেই
শুধু
পুকুরের ভিতরে সেই আসল পুকুর আছে
শান্ত স্তব্ধ থির
ঢিল ছুঁড়ে যাকে শুধু
নাড়িয়ে দিয়েছ আর

তরঙ্গ মায়ার খেলা
ছায়ায় ছায়ায় বাড়ে
মনে হয় ছড়িয়ে পড়াটাই সহজ সত্য।

অথচ এমন নয়।
আহ্বান কর যদি,
যদি শুধু ঢিল ছোঁড়া থেমে গিয়ে
পাথুরে ব্যাঙের লাফ থেমে গিয়ে
পুকুরের দিকে দেখো
অনাহুত প্রকৃত পুকুর লুকিয়ে থাকেনা।

দেখবে সুস্থির হয়ে
আকাশ বাতাস চাঁদ সবকিছু ছায়া ফ্যালে
তবুও পুকুর তার মায়া ফেলে
চলচ্চিত্রের মতো বদলে বদলে দেয় ফ্রেম
শেষরাতে ঐ মাঝি পাড় থেকে নেমে আসে
বুকজলে গলাজলে আর তারপরে
সমস্ত অস্তিত্ব নিয়ে ডুব দেয় মাঝের পুকুরে
সামান্য বুদবুদ শুধু কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে
অতলে তলিয়ে যায়, মিশে যায় পুকুরের জলে।
যে মাঝি ছুঁড়েছে ঢিল, সেই মাঝি, মিশে যায় পুকুরের জলে।
পুকুর পুকুর শুধু পুকুর ব্যতীত আর কিছুই থাকেনা।

৬।
এখনও জানিনা কেউ আছে কিনা
কোনো ঘরে বসে
আকাশ কুসুম ভাবে
ভাবে ভালো মন্দ নিয়ে
জীবনসঙ্গী নিয়ে।

সহজ সঙ্গী হবে
বায়ু চলাচল হবে
আষ্টেপৃষ্ঠে থেকে।
কলকল জল হবে রুখাসুখা সিদ্ধান্ত পাহাড়ে
জীবন তৈরি হবে
ভরাগাঙে স্বপ্নের ভাঙা ভারা
আহা কি সাধারণ!

হাতে হাতে গাছ হবে,
তরঙ্গ শিকড়ে শিকড়ে
মুখোমুখি নিশ্চল
করে রেখে দেবে।
নয়নে অন্ধকার
অন্ধকারে চাঁদের মতো এক ও উজ্জ্বল
অবয়ব,
কার চোখে কার অবয়ব
আর কারো পানে নয়, শুধু তার পানে চাওয়া
হাতে হাতে সুখ-দুঃখ-দৃষ্টিবিনিময়।

আছে এক মহীরুহ,
তার চারিপাশে আছে পঞ্চ উপাদান
স্বপ্ন, প্রেম ও সত্য
জীবন মরণ
ক্ষিতি অপ তেজ
মরুৎ ও ব্যোম
তাহার শিকড়ে আছে অনুভব রস,
পাতায় পাতায় তার যাতায়াত
ফুল ফল পাখিদের
মায়া মায়া খেলা।
মাটিকে জড়িয়ে ধরে
আছে এক মহীরুহ
আহা কি সাধারণ!

৭।
সেই দেশে যাবো।
শুধু অণু পরমাণু
গাঢ় দৃঢ় রং নিয়ে
সুতো দিয়ে বাঁধা আর কাঁপা কাঁপা ছায়াপথে
অণিমা লঘিমা আদি আটজন সাথে ক’রে
শুনেছি সেখানে হয় অবিরাম চলাচল।
শুনেছি। দেখিনি কখনো।
তবু সেই দেশ টানে
যেভাবে গর্ভ টানে
জন্মের অতি পরে।
কোলাহলে খান খান হতে হতে
যেভাবে স্তব্ধতা,
সেইভাবে টানে ঐ দেশ
যেখানে যাওয়ার আগে
যাবতীয় জ্ঞান-শূন‍্য হয়ে,
শুধু শূণ্য স্পর্শ করা।
ছুঁয়ে থাকা,
কিছু নেই ছুঁয়ে বসে থাকা।
আপাদমস্তক ঘুরে ঠিকানার দিশ নেই
শুধু ভাবি আলো হবে
সুন্দরী বিশুদ্ধ আলো
শুনেছি এমন হয়। দেখিনি কখনো।
আমার কপালে কোনো আলো নেই
তবু সেই দেশ টানে
যেখানে কপাল চিরে
প্রেমের প্রগাঢ় রস
বুকে এসে টুপটুপ জমে।
যখনই দেখেছি
শুধু ফাঁকা কথা কাঁচা প্রেম রক্তমাংসে চুর
প্রেমিকের চলে যাওয়া
পিঠ ফিরে মুখ বুজে চোখ সরে সরে যাওয়া
আর একই
বৃত্ত বৃত্ত হয়ে ছটফট ঘুরে ফিরে আসে,
তখনই আমাকে টানে আমার সে চিরদেশ
আমাকে টানে হাজার বছর ও নয়ানজুলি
আমাকে টানছে, যেন,
লাখ লাখ ছুঁচ
ফুটে আছে রাজার শরীরে
রাখাল বন্ধু এসে সুতো দিয়ে টেনে নেবে বলে।
অথবা সেই সুতাশঙ্খ,
স্বপনচারিণী ঘুমে
আর তার শ্বাসে প্রশ্বাসে
ভিতর বাহির করে সুতাশঙ্খ সাপ
ঘুম থেকে টেনে আনে গভীর গভীরতর ঘুমে,
সেই টান।
সেই টান অনুভবি
সেই টান নিয়ে ভাবি,
ভরাডুবি নৌকা যেভাবে
নদী কোলে ক’রে থাকে
অথচ নদী তো অনেক, অনিমেষ।
তবু ডুবে যাওয়া নাও
তাকে কোলে ক’রে রাখে,
সেভাবে আমায় নাও।
শুধু জুড়ে আছে তেজ
এত তেজ
জ্বলে গেল
তবু প্রবেশিলা কেন
(অগ্নি)পরীক্ষা দিতে,
যত ছিল জলরেণু, বাষ্প হয়েছে সীতা
আছে শুধু আগুন আচরণ
আর যত বিস্ফোরণ
গরম গরম লাভা বাইরে বেরিয়ে আসে।
ভিতরে গুমরে মরে
নরম মনের মেয়ে
ছোট মেয়ে
বড় মেয়ে
উথালপাথাল মেয়ে
শান্ত ও বোবা-কালা মেয়ে যার
শব্দে শব্দে আগুন
আর নিঃশব্দে, চোখে চোখে প্রশ্নের টান
জল আছে?
জল দাও। শীতলতা দাও।

তাই সেই দেশে যাবো
যেখানে জলের কাছে
আগুনের মাথা বাঁধা আছে।

৮।
জীবন জীবন খেলছে দুটো পুতুল।
এই খেলায় আজব সুবিধা পাচ্ছে দুজনে
বিনোদন হচ্ছে অথচ দায়ভার বলে কিছু থাকছে না
কেননা এ এক খেলা
যেখানে নিয়ম মেনে সবকিছু করা হয় গড়া হয়
ছোট ছোট ঘরবাড়ি দালান আঙন নিয়ে সোনার সংসার
দিন আনা দিন খাওয়া
রাত এলে তাকে খাওয়া
হাঁড়িকুড়ি পুকুর আসবাব
আকাশের নীচে নীচে বাড়ি পাড়া দোকান পসরা
এই নিয়ে খেলা
এ এক আজব সুবিধা কেননা
খেলা ভেঙে চলে যাওয়া সোজা
বলা যায় অনায়াসে
এই নয় ঐ নয় অন্য খেলা
অন্য কোনো খেল।

দুজন পুতুলে মিলে জীবন জীবন খেলে খেলাঘরে বসে
এ এক আজব ঘর
দরোজা রয়েছে শুধু
দেওয়াল-চৌকাঠ-বেড়া কিছু নেই
বন্ধন নেই শুধু
চারিদিকে বড় বড় সহস্র দরোজ়া
মুক্তি মুক্তি শুধু
বেরিয়ে পড়ার তাড়া
খেতে শুতে আদর আদানে
শুধু মনে করে নেওয়া
যেকোনো দরজা দিয়ে চলে যেতে পারি
মুক্ত মুক্ত আমি
দায় থেকে দয়া থেকে অনুভবমূল থেকে
চিরমুক্তির এই ঘর।
এ এক আজব ঘর
কেননা সুবিধা বড়
কেননা এখানে
জীবন জীবন খেলে ক্লান্ত পুতুলের তরে
আরো এক জীবন পাওয়া যায়।
খেলনা জীবন।
তাকে নিয়ে খেলো যত খুশি।
খেলনা জীবন এক
তার কোনো প্রাণ নেই, মান অভিমান নেই,
শুধু লোভ, আর মোহ,
কাম ক্রোধ মদ ও মাৎসর্য্য।
আকাশ ছুঁই ছুঁই করে
বহুতলা খেলনা আবাসন
অশন বসন প্রসাধন নিয়ে
নকল হাটে ও বাজারে
বিক্রিবাটা বিপুল বিনোদন
টাকাফুল টাকাগাছ
পথঘাট জুড়ে বিনিময় প্রথা
এ বড় আজব খেলনা
ভুলিয়ে রাখো ও থাকো
খেলাঘরে কৃত্রিম উল্লাস
উৎসব ও আনন্দ ফোয়ারা
পাথরের আনন্দ ফোয়ারা
তার নিচে কোটি কোটি পুতুলের বাস।

খেলনার দাস হয়ে
অবিনাশ আর মায়া
নগণ্য পুতুল দুজনে
জীবন জীবন খেলে।
এ এক আজব খেলা।    

৯।
জলে ঝড়ে দাঁড়িয়ে
হাওয়ার মেঠাই বেচে
আর হাওয়া প্রবল উড়িয়ে দেয় আমার ভেতরে এক
আনন্দ ডঙ্কার
কোথা থেকে নেমে এসে
চিটিপিটি বিদ্যুতের মতো
খেলা করে রসালো বুকের ভিতর
শুনতা নেহি ধুন কি খবর
আর মৃদুমন্দ এই বর্ষানি থেকে
চড়ে চড়ে যেতে হবে দূরে
বাজারের চারদিকে পাহাড়
পাহাড়ের চারদিকে আরেক বাজার
বসেছে যেখানে
কতকাল ধরে বসে আছে।
মাটি নিয়ে জল নিয়ে
বিকিকিনি
আগুন আবহ আকাশের পসরা সাজিয়ে
ব্যবসায়ী বসে আছে
তীর্থযাত্রীর আশায়
তীরথ গেয়া তো কেয়া হুয়া
তার চেয়ে চোখ ভরে দেখো
কাল শুখা পাথর যেখানে
লক্ষ ঝরনা এখন নেমেছে।
পাহাড়ের চারদিকে আজব বাজার এক।
বেশি লোক খবর রাখেনা।
আকাশের মতো নীল, বাতাসের মতো ফুরফুরে চাদরে ঢাকা
রহস্য বাজার এক।
আর এক বাজার ফোঁটা ফোঁটা রস ঢং ঢং ধ্বনি
বাহার শুনে তো কেয়া হুয়া
আনন্দ বাইরে থেকে এসে
পা ধুয়ে ভিতরে বসেছে
হাওয়াইমেঠাইওলা হাওয়া করে তাকে।
আনন্দ ছোট ছেলের মতো সিঁড়ি দিয়ে ছাতে আর সিঁড়ি দিয়ে ঘাটে
ওঠে আর নামে
নামে আর ওঠে
সদরে উঠোনে খিড়কিদুয়ারে
ছুটে ছুটে খেলে
আনন্দ ছোট ছেলে

১০।
মাটিতে পড়ে আছে রামধনু
বালক ডিঙিয়ে যাচ্ছে অলক্ষ্যে
আর আকাশে জলের পর জল
আকাশে মানস সরোবর।
সরোবরে চান ক’রে
সকালে কাজল বালিকা
বসেছে পাহাড়ের চূড়ে
গতকাল মনে ক’রে
কান্নায় ভেঙে পড়েছে
ঝর্ণার মতো।
এই ঝর্ণা যাচ্ছে কোথায়?
যেখানে তোমার ইচ্ছে
চলে যেতে পারো
তুমি তোমার একমাত্র মালিক
একথা অযথা
ঝর্ণা সেদিকে যায়
চড়াই উৎরাই যেভাবে
ধীরে ধীরে দূর নিচু মাটির দিকেই যায়।
রুখা শুখা মাটি ছিল
ভেবেছিল এইভাবে
জৈবিক পদার্থে জীবন কেটে যাবে
বাঁধন কেটে যাবে।
অথচ ঝর্ণা তার নিজের নিয়মে
গড়িয়ে গিয়েছিল,
কাজলের চোখ থেকে
রামধনু বালকের দিকে। তার কাছে খবর ছিলনা।
সে বালক মাটি কামড়ে
পড়েছিল রুখা সুখা
ভেবেছিল পচে গলে এইভাবে কেটে যাবে জীবের জীবন
অনেক বছর লাগে
অনেক সময় লাগে
ঝর্ণার নেমে নেমে আসা
বহুকাল বহুদিন প’রে
মাটি পাবে গোর পাবে কবরে শান্তি পাবে
কাজলঝর্ণা
ওদিকে রামধনু বালক, মিছে রামধনু ফেলে
পা ধুয়ে
উঠে আসে
সাত পাকে বাঁধা পাড়ে।
বাঁধনহীনতা নদী
বুকে রামধনু চোখে জল নিয়ে
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখিবে
এই মাটি পাহাড় ঝর্ণা যতো
বাঁধা পড়ে আছে।
বাঁধনহীনতা নদী থেকে
পা ধুয়ে বালক বালিকা
পাড়ে উঠে বেঁধে নেবে ঘর।

১১।
ফুলগুলি একদিকে ঝুঁকে পড়ে আছে
ধরে আছে, ঝরে যাচ্ছে না
অথচ কি যেন দেখছে মাটির উপর ঝুঁকে।
মাটিতে তাকিয়ে দেখো
পা দিয়ে তাকাও
দেখো এক ব্রহ্মান্ড নিয়ে
হেঁটে চলে বেড়াচ্ছো অজান্তে
আর ঝাড়াহাতপা ভাব
যেন
আকাশ থেকে পড়েছি সকলে
আর যেখানে পড়ে আছি
সেখানেই থেকে যাব চিরকাল
যেন এই শুরু আর এই শেষ
এই খেলা
একমাত্র খেলা নিয়ে ভুলে বসে থাকা ছাড়া
আর কোনো কাজ নেই
পথে পথে গাছে গাছে
খেলনা ঝুলিয়ে রাখা
খেলনা ছড়িয়ে রাখা
পৃথিবীর ছেলেপিলে
মা ভুলে খেলা খেলা খেলে
আর কত?
বেলা হল
নাও খাও
মায়ের পাশটিতে শুয়ে
এবার বিশ্রাম নাও
এবার স্বপ্ন দেখো।
কি এমন করছি,
দেখছি,
যা কিছু খেলা নয়
সেই সব ভুলে আছি
হেঁটেছি মাইল মাইল
অথচ মাটির দিকে ঝুঁকেও দেখিনি
হেঁটেছি হাজার বছর
হাওয়া চিরে
জলবায়ু চিরে
অথচ এমনভাবে
যেন চারপাশে কিছু নেই
হাওয়া বলে কিছু নেই
হাতে পায়ে সারা গায়ে এত জোড়া চোখ তবু
একজোড়া খুলে রেখে বাকি সব গান্ধারী করেছ
কুদরতি বিকিকিনি ছেড়ে
খেলনার বিনিময়ে খেলনা কিনছো
সকালে বিকেলে রাতে
অষ্টপ্রহরে শুধু খেলনার কথা ভাবো
কিভাবে আরো আরো খেলনা
বাড়ি খেলনা গাড়ি খেলনা দোকান বাজার খেলনা
যা আছে বিনু টিকু পিণ্টুর কাছে
আমাকেও এনে দাও
আমিও সবার মতো খেলায় এগোতে চাই।
অথচ এখনও
মাটি সরে যায়নি পায়ের তলা থেকে
বুকের হাপর থেকে শ্বাসের আগুন এখনো নেভেনি
জল আছে, ফল আছে
আকাশে আলোক আছে
সালোকসংশ্লেষ বেঁচে আছে জ্যান্ত পাতায়
রঙিন খেলনা ছাড়া
আরো এত কিছু আছে।
আবালবৃদ্ধবনিতা অথচ
শিশু হয়ে মেতে আছে
অনর্থ খেলায়।
তুমি কোথা থেকে এলে
কোথা থেকে কোথায় এসেছ
এইসব রাশভারি একঘেয়ে কথা
চোখ দিয়ে দেখো
হাজার হাজার চোখ
মেলে দেখো
বড় মাঠে এই এক মেলা।
খেলনার মেলা
আশ্চর্য প্রচন্ড মেলা
তবু শুধু মেলা এক
চলো মেলা দেখে ঘরে ফিরি
রাত হল।
ভাত নিয়ে বসে আছে মা।  

​

0 Comments



Leave a Reply.

    Archives

    December 2020
    November 2020
    September 2020
    August 2019
    June 2019
    April 2019
    February 2019
    December 2018
    October 2018
    August 2018

Proudly powered by Weebly
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন