Agony Opera
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন
Search

রোজনামচা-এ-রুবাইয়াৎ  ।।   অনির্বাণ  বসু

18/8/2019

0 Comments

 
Picture

[আমার এক ভাই তার উচ্চশিক্ষার কারণে বেশ কিছুদিন জার্মানির সারব্রুকেন শহরে ছিল। সেখানকার পড়াশোনা শেষ হলে গবেষণার কারণে সে সুইডেনের লন্দ্ শহরে পাড়ি জমায়। তখন মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তির জেরে ইউরোপের বহু দেশই উদ্বাস্তু-সমস্যায় নাজেহাল। সুইডীয় প্রশাসনও সেই উদ্বাস্তুস্রোতকে ঠেকাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবুও কীভাবে কে জানে, কয়েকজন ঢুকে পড়ে দেশের ভিতর। সুইডেনে ঢুকে পড়ে কেউ মারা যায় সেনাবাহিনীর গুলিতে, কেউ বন্দি হয়, কেউ-বা কোনোক্রমে ঘাড় গুঁজে পড়ে থাকে একপাশে—যতদিন-না মৃত্যু আসে। আমার ভাই যে-ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা করছিল, তার পিছনের রাস্তায়, ফুটপাথে, একটা ভিখিরি বসতে শুরু করেছিল সেইসময়। ভাই একদিন সিগারেট খাবে বলে ক্যাম্পাসের পিছনের রাস্তায় যাওয়া মাত্রই ভিখিরিটি তার কাছে খাওয়ানোর অনুরোধ করে। ভাই চলে আসছিল কিন্তু সে তার ছেঁড়া জ্যাকেটের ভিতর থেকে একতাড়া কাগজ তুলে দেয় তার হাতে। বলে : তার কাছে এই ক'টি টাকাই আছে। সব সিরিয়ান পাউন্ড। ক্রোন (সুইডীয় মুদ্রা) তার কাছে একদমই নেই। ভাই হাতে নিয়ে দেখেছিল, কাগজগুলিতে আরবি হরফে কীসব লেখা। কী ভেবে কাগজগুলো নিয়ে নিজের ব্যাগে ভরে ভিখিরিটিকে একটি স্যান্ডউইচ এনে খাইয়েছিল ও। এর পরেরদিন সকালে স্থানীয় পুলিশের গুলিতে উদ্বাস্তু ভিখিরিটা মারা যায়। আমার ভাই তার এক আরবি-জানা বন্ধুকে দিয়ে পরে কাগজগুলোর পাঠোদ্ধার করে আমাকে পাঠিয়েছিল। সঙ্গে ছিল একটা চিরকুট : 'হলোকাস্ট নিয়ে আমরা এখনো সেই সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারেই পড়ে আছি। তোমাকে একটা ডাইরি, মানে কাইন্ড অফ্, পাঠালাম। পড়ে দেখো।'
     গতকাল অনেক রাতে আমি লেখাটা পড়ে শেষ করেছি। ওদের ওখানে তখন রাত সাড়ে ন'টা। ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলি। এটাকে জনসাধারণের সামনে আনার কথাও বলি। ও রাজি হওয়াতে আপনাদের হাতে তুলে দিলাম। সম্পূর্ণ কৃতিত্বই আমার ভাইয়ের প্রাপ্য; আমি শুধু তল্পিবাহকের কাজটুকু করলাম। ধন্যবাদ।
]

মঙ্গলবার
দু'পায়ের ফাঁকে অসহ্য যন্ত্রণা। কোমরেও। থাইয়ের কাছে একটা চ্যাটচেটে ভাব। বোধহয়, রক্ত। পিছনে ওইভাবে রুল গুঁজলে রক্ত তো বেরোবেই। উফফ্, কী প্রচণ্ড ব্যথা।
     আজ কি মঙ্গলবার? কে জানে! কখন যে এখানে দিন যায়, রাত হয়—কে বলবে! যে-ঘরটাতে গাদাগাদি করে আমরা আটাশ জন থাকি, সেখানে তো বাইরে থেকে আলো আসে না। যখন কাউকে দরকার পড়ে এদের, দরজা খোলে। তারপর কাজ মিটে গেলে তাকে ফেলে দিয়ে যায় যখন, তখন দরজার ফাঁক দিয়ে আলো ঢোকে, অথবা ঢোকেও না অনেকসময়। দরজা খুললে যদি আলো দেখা না-যায়, বুঝি, তখন রাত। যৌনতার তো আর কোনো বাঁধাধরা সময় হয় না। খাওয়ার দেয় দরজার নিচে-লাগানো কাঠের তক্তাটা সরিয়ে। পালতা কানা-উঁচু থালা মেঝেতে বিচ্ছিরি আওয়াজ তুলে ঢুকে আসে ঘরে।
     এখানে কেউ আমাদের নাম ধরে ডাকে না। আমাদের জন্য নম্বর বরাদ্দ। আমি একুশ নম্বর। আব্বাজান কত শখ করে আমার নাম রেখেছিল রুবাইয়াৎ। আমার মুখে তাকালেই আব্বা নাকি চারপাশে কবিতাগুচ্ছ ভেসে বেড়াতে দেখত। তাই অমন নাম রেখেছিল আমার। এখানে কেউ আমাকে ওই নামে ডাকে না। যখন ডাক আসে, দরজায় এসে বন্দুকধারী গলা চড়িয়ে বলে, একুশ নম্বর! আমার নাম রুবাইয়াৎ! তোমরা শুনতে পাচ্ছ? শুনতে পাচ্ছ তোমরা? আমি একুশ নম্বর নই! আমি রুবাইয়াৎ!

শুক্রবার
সকালে গোসলের পর মুছে সাফসুতরো হওয়ার জন্য গাদা-গাদা রদ্দি কাগজ দেয় আমাদের। আমি সেই কাগজগুলো জমিয়ে রাখি আর যে-চাদরটা গায়ে দিই, ওর একটা অংশ ছিঁড়ে নিয়েছি, ওতেই মোছার কাজ সারি। এই কাগজগুলোর একটা সুবিধে আছে। নখ দিয়ে আঁচড়ালে সেই দাগখানা রয়ে যায়। আমি নখ দিয়ে লিখি। লেখা হলে পর মাটিতে ঘষে নিই। মাটির ময়লা লেগে গেলে তখন পড়তে অসুবিধে হয় না।
     আজ শুক্রবার কিনা, আমি জানি না। শেষ যেদিন লিখেছিলাম, তারপর মোটে পাঁচবার খেতে দিয়েছে। তাতেই মনে হয়েছে, আজ শুক্রবার। গতকাল ঘরে আরও চারজন নতুন মেয়ে এসেছে। আর উনিশ নম্বরকে এরই মধ্যে কোনো-একটা সময় ডাক দিয়ে নিয়ে গেছে ওরা। মনে আছে, উনিশ কিছুতেই যেতে চাইছিল না। চিৎকার করে কাঁদছিল। ওরা মুখের মধ্যে ওই নোংরা কাগজগুলো গুঁজে চুপ করিয়েছিল ওকে। কপাল আর কানের মাঝখানের রগ ফুলে উঠেছিল ওর। ঠিকরে বেরোতে-চাওয়া চোখের কোল জুড়ে জল। মুখে গোঁ-গোঁ আওয়াজ। আমাদের যখন বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন আমরা এক ফালি কাপড় পাই পরার জন্য। অন্য সময় তো কিছু না-পরে থাকা। তবু আমি বাইরে যেতে চাই না। ওই কাপড়ে লজ্জা যত-না ঢাকে, উপচে পড়ে ঢের। সম্পূর্ণ উলঙ্গ থাকায় লজ্জা থাকলেও তা চোখে লাগে না; কিন্তু সামান্য কাপড়ে নিজের এই পরিচিত শরীরটাই কেমন যেন অশ্লীল হয়ে ওঠে।

বুধবার
গত ক'দিন কিছু লিখতে পারিনি। ডানহাতের নখে খুব ব্যথা। তিনটে আঙুল থেকে রক্ত ঝরতে-ঝরতে কখন থেমেছে ক্লান্তিতে, জানি না। নখগুলির চারপাশে রক্তের দাগ; শুকিয়ে কালচে হয়ে গেছে। জিভে ছোঁয়ালে নোনতা লাগে। ট্যালট্যালে, বিস্বাদ স্যুপ দিয়েছিল খানিক আগে। এক চুমুক করে স্যুপ খাচ্ছিলাম আর নখের ডগা চাটছিলাম। বেশ-একটা অন্যরকম স্বাদ। বাড়িতে খাবারে নুন একটু বেশি হলে কী চিৎকার-চেঁচামেচিই না করতাম আম্মিকে। এখানের কোনো খাবারেই নুন থাকে না। কিন্তু কাকে বলব? কে শুনবে? চোদ্দো নম্বর একবার একটু নুন চেয়েছিল। বন্দুকের বাঁট পড়েছিল মুখের উপর। তিন-তিনখানা দাঁত মাড়ি থেকে উপড়ে গলগল রক্ত। নুন চেয়েছিল চোদ্দো নম্বর, ওরা নুন দিল। কালচে লাল নুন। এমনিতে নুনের মতো অত নোনতা নয়, তবু স্বাদু।
     আম্মির উপর চেঁচাতাম বলে কি আল্লাহ্ আমায় শাস্তি দিচ্ছে? আমাদের ছোট্ট চিলতে ঘরটায় যখন আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ওরা, ওদের কেউ-কেউ তখন অবশ্য আল্লাহ্-র মহিমা প্রকাশ করছিল। কিন্তু সে ক'জনই-বা! তবে কি আল্লাহ্ আমাদের প্রত্যেকের নয়? কিন্তু আব্বু তো ছোটোবেলায় যখন কোরান পড়ত আর ধরে-ধরে মানে বুঝিয়ে দিত আমায়, তাতে তো কখনো এমন শুনিনি। ওরা আসার আগে অবধি তো জানতাম যে, ইসলাম হিংসাকে ঘেন্না করে। তবে ওরা এত নিষ্ঠুর কেন? কেন ওরা আমাদের মতো নয়? ওরা সব ক'টা এক-একটা জ্যান্ত পিশাচ; নরখাদক।

শুক্রবার 
[বারের উল্লেখ এখানে বেশ-কয়েকটি পাওয়া গেছে। মূল পাণ্ডুলিপিতে প্রথমে ছিল বৃহস্পতি, তারপর শনি। দুই ক্ষেত্রেই তার উপর দিয়ে আঁচড়ের দাগ দেখে বোঝা যায় : সঠিক দিনটি নির্ধারণে সমস্যা হওয়ায় বারবার বারের উল্লেখ এভাবে কেটে দেওয়া হয়েছে।—অনুবাদক]

গতকাল পর্যন্ত এই ছোট্ট কুঠুরিটায় আমরা মোট বত্রিশ জন মেয়ে ছিলাম। এখন সংখ্যাটা একত্রিশ। কাল রাতে আমাদের ঘরের বাইরে এনেছিল ওরা। কতদিন পর একটু আকাশ দেখেছিলাম। চাঁদ মেঘে ঢাকা পড়েছিল, যদিও উদ্ভাস একটা ছিলই। আমি তাকিয়েছিলাম সেই দিকেই। হঠাৎই এক চিৎকারে সামনের দিকে চাইতেই দেখি, চোদ্দো নম্বরকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় পিছমোড়া করে এনে দাঁড় করাল ওরা। চোদ্দো নম্বর বারবার ভুল স্বীকার করছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম না, কী ভুল ও করল। তখনই তার হাঁটুর পিছনে দু'দিকে থেকে দু'জন বন্দুকের কুঁদো দিয়ে মারে। হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে চোদ্দো নম্বর। ওদের সম্মিলিত কথাবার্তা থেকে বুঝতে পারি, চোদ্দো নম্বর পালানোর চেষ্টা করেছিল। 
     তারপর শুরু হল পাথর ছোঁড়া। ওদের প্রত্যেকের লক্ষ্যবিন্দু চোদ্দো নম্বর। প্রতিটি পাথরের আঘাতের সঙ্গে তারস্বরে আর্তনাদ; প্রাণভিক্ষা। চোদ্দো নম্বরের সারা শরীর থেকে চুইয়ে নামছিল রক্ত। খোলা চুলে তাকে এলোকেশী রণরঙ্গিণীর মতো মনে হয়েছিল আমার। শুধু আমারই নয়, হয়তো ওদেরও তাই মনে হয়েছিল। ওরাও ভয় পেয়েছিল; তাই হয়তো ওকে মরতে হল।


শনিবার
আজ যখন দরজাটা প্রথম খুলেছিল, তখন ফাঁক গলে আলো এসেছিল। দরজার ফাঁক গলে-আসা সেই অপরিসর আলোর বুকে মুখ রেখে আমার ঘরের সামনের দাওয়ার কথা মনে পড়েছিল। দোতলার যে-ক্যান্টিলিভার বারান্দাটা বাঁদিকে, সেটা আগুন-লাগা অবস্থায় ভেঙে পড়েছিল দাওয়ার উপর। ঘরে ঢোকার মূল ফটকখানা তাতেই আটকে যায়। আমি আগুন দেখেছিলাম। দাউদাউ আগুন। গরম ভাপে তেতে উঠছিল শরীর। যখন আব্বাকে পিছমোড়া করে বসিয়ে এক কোপে কণ্ঠনালীটা কেটে ফেলল ওরা, আমি আগুনে মিশে যেতে চেয়েছিলাম। ওরা শক্ত হাতে আটকে রেখেছিল আমাকে। শুনেছিলাম, আগুনের কাছে থাকলে গরম লাগে বেশি; কিন্তু আগুনের ভিতর থাকলে অত জ্বালা নেই। জানি না, সত্যি কিনা। তবে আমি যে ওই আগুনকেই জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলাম, সেটা নিখাদ সত্যি।
     আম্মিকে আমি আর দেখতে পাইনি। শেষবার দেখেছিলাম ঘরে আগুন লাগার আগে। কাঁধের উপর জামাকাপড় নিয়ে গোসলঘরে ঢুকে গেছিল। গোসলখানার ধরে-রাখা সামান্য জল ওই আগুনকে নেভানোর পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। নেভেওনি। আম্মি কি একবারও চিৎকার করেনি? বাঁচবার জন্য সাহায্য চায়নি? আমি জানি না। ওরা তখন আকাশের দিকে বন্দুক তাক করে গুলি ছুঁড়ছিল। ওই আওয়াজ ছাপিয়ে কোনো আর্তি আমার কান পর্যন্ত পৌঁছোয়নি তখন।
     আজ সেই একচিলতে আলো নিয়ে-আসা ভারি বুট শব্দ করে জানিয়ে গেল, আমাকে দ্রুত তৈরি হতে হবে। মুখে পাতলা জালি কাপড়ের দু'টি অংশ—একটি ঊর্ধ্বাঙ্গের জন্য, অন্যটি নিম্নভাগের—ছুঁড়ে দিয়ে মুহূর্তে চারপাশ অন্ধকার করে দরজা বন্ধের শব্দ করল বুট জোড়া।
     নিজেকে এবার সাজাতে হবে। ঘরে আমার জন্য আম্মি সুর্মা পেতে রাখত। সুর্মা ছাড়া আমি কখনো ঘরের বাইরে যাইনি। এখানে ওসবের দরকার পড়ে না। আমাদের প্রত্যেকের চোখের তলায় কালি পড়ে সুর্মার কাজ করে। আমাদের চোখে এখন সবসময়ই সুর্মার প্রলেপ।

শুক্রবার
গত ক'দিনে থেকে-থেকে মূর্চ্ছা গেছি। কোনোমতে হয়তো উঠতে পারলাম, মাথাটা তুলতে পারলাম, সঙ্গে-সঙ্গেই অজ্ঞান। ওরা যখন ফেলে দিয়ে গেছিল, তারপর থেকেই আমার নিম্নাঙ্গে কোনো সাড় ছিল না। কখন যে প্রস্রাবে ভাসিয়েছি বিছানা, নিজেই বুঝিনি। সেই ভেজা বিছানাতেই পড়ে থেকেছি। জ্ঞান এলে দেখতাম, আমার পা দুটো দু'পাশে ছড়ানো। অনেক চেষ্টা করেছি কাছাকাছি আনার, পরক্ষণেই জ্ঞান হারিয়েছি। আচ্ছন্নের মতো পড়ে থাকতাম। এখন ধীরে-ধীরে সাড় ফিরছে।
     সেদিন আমাকে নিয়ে গেল যখন, ভেবেছিলাম, আবারও রুল ঢোকাবে পিছন দিয়ে। দাঁতে-দাঁত চেপে কষ্ট করে সইয়ে নেব ওই সময়। কিন্তু ওরা দু'জন আমাকে এনে ফেলল এক ঘর জানোয়ারের সামনে। মদখেকো জানোয়ার সব। কতজন ছিল ওরা? আবছা মনে পড়ছে। ষোলো জন? উনিশ জন? নাকি চোদ্দো জন? ষোলো জনই মনে হয়। আমায় ওদের সামনে আনা মাত্রই কয়েকজন ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার উপর। ওই ছোট্ট কাপড়ের ফালি কোথায় চলে গেল! একজন দাঁত বসিয়ে দিল আমার ডান বুকে। আমি যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠতেই আমার হাঁ-মুখের ভিতর ঢুকে গেল দলা-পাকানো সেই নোংরা কাগজ। আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমারই পা দু'পাশে সরে গিয়ে আমার যৌনাঙ্গকে উন্মুক্ত করছে দেখে, কোনোরকমে মাথা তুলেছিলাম। ওদের মধ্যে দু'জন আমার পা দুটোকে দু'দিকে ফাঁক করে ধরে রেখেছিল। তারপর ওরা এসেছিল। একে-একে। লাইনের নিয়ম মেনে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় জ্ঞান হারানোর ঠিক আগে, যতদূর খেয়াল আছে, এগারো নম্বর তখন আমার উপর। লাইনে নিজের পুরুষাঙ্গ ধরে দাঁড়িয়ে বারো, তেরো, চোদ্দো,...।

মঙ্গলবার
অবশ ভাবটা না-থাকলেও একটা চিনচিনে ব্যথা আছে এখনো। ওইদিনটার পর যখন থেকে একটু ধাতস্থ হতে শুরু করেছি, ততবার অন্ধকারে দেখবার চেষ্টা করেছি নিজেরই যৌনাঙ্গ। অন্ধকারে কিছুই ঠাহর হয় না। মাঝেমধ্যে দরজার ফাঁক গলে সামান্য যে-আলো আসে, তাও এসে পড়ে না আমার যোনিদেশে। কুমারীকাল ঘোচার মাহেন্দ্রক্ষণেই বোধহয় আলো পড়ে সেখানে; রেত গমনের থেকেও দ্রুত পৌঁছে যায় ডিম্বাশয়ে। সবাই যেন কীভাবে জেনে যায়, মেয়েটা আর কুমারী নেই! আশ্চর্য! নারীর ছেঁড়াখোঁড়া যৌনপ্রদেশ নতুন প্রাণকে জন্ম দেয়, নতুন করে কামনা জাগায় না।
     ফাঁক-গলে-আসা ওইটুকু আলোয় নিজের হাতের পাতা আবছা বোঝা গেলেও নিম্নাঙ্গ আঁধারেই ডুবে থাকে। আমি বারবার কেন দেখতে চাই? ওই বিশেষ অঙ্গটির কারণে আমি নারী বলে? নাকি ওটার কারণেই আমি এমন ভোগ্যা? আব্বাকে তো ওরা একেবারে নিকেশ করে দিল। আমাকে বাঁচিয়ে রাখল কি শুধু আমার দু'পায়ের ফাঁকে যে-কোনো কিছুই ঢুকিয়ে দেওয়া যায় বলে?
     আমি এখন ঘুপচি ঘরের অন্ধকারে আমার যৌনাঙ্গে হাত রাখি। যখন-তখন। আঙুল দিয়ে ফালাফালা করি নারীর পরিচয়চিহ্ন। অন্য হাত তখন ঢুকিয়ে দিই মুখের ভিতর। সেই হাতে কেটে বসে আমার বহুদিনের অপরিষ্কার দাঁত। রক্ত বেরোয় কিনা বুঝি না; প্রাণপণে সবটুকু শক্তি এক করে বেদনার চিৎকারকে আটকানোর চেষ্টা করি। উনিশ নম্বর আর চার নম্বর এর মধ্যে দু-একবার আমার গোঙানি শুনে ফেলেছিল।

বুধবার
আমি আমার যৌনাঙ্গকে বিকৃত, কুৎসিত করে দিতে চাই। এতই কদাকার যে কেউ প্রবেশ করবার আগেই ঘেন্নায় ছিটকে যাবে দূরে। তাই আমি নিজেকে ব্যথা দিই, ব্যথা সহ্য করি। আর সমানে আল্লাহ্-কে ডাকি, যাতে আমার এমন কোনো কঠিন অসুখ দাও, যা নিরাময়ের অযোগ্য। তা যদি সংক্রামক হয়, তবে আরও ভালো। সঙ্গে ওই হারামজাদাদের কয়েকটাকেও নিয়ে মরব।

রবিবার
আমাকে আর আট নম্বরকে সেদিন একসঙ্গে ধরে নিয়ে গেছিল ওরা। বধ্যভূমিতে। আট নম্বরের উপর চড়ে গেছিল একজন। লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষমাণ আরও কয়েকজন। আমার শরীর থেকে ফিনফিনে লাল কাপড়ের ফালিটা টেনে খুলে দিয়ে উদ্ধত পৌরুষ নিয়ে এগিয়ে এসেছিল আর-একটা জন্তু। কিন্তু ছিটকেও গেছিল সঙ্গে-সঙ্গে। রক্ত দেখে ভয়ে। মেয়েদের নারীত্বকে যারা কখনো চিনতে পারেনি, চিনতে চায়নি, তারা যে যোনিমুখে রক্তস্রোতকে ঋতুস্রাব মানবে, তাতে আর আশ্চর্যের কী! ঋতুকালীন অস্পৃশ্যতায় আমাকে ক'দিন আর ছুঁয়েও দেখেনি ওরা। ওরাও তার মানে অশুচি মানে!

শনিবার
আজ আবার ডাক পড়েছিল। আজ অবশ্য আমি একাই। তা বাদে বাকি সবকিছুই হুবহু আগের দিনের মতো। সেই এক কাপড়-খোলা, সেই এক পুরুষাঙ্গ নাড়াতে-নাড়াতে এগিয়ে-আসা, আর তারপর রক্ত দেখে লেজ গুটিয়ে দৌড়!
     আজ কিন্তু ওদের সন্দেহ হয়েছে। খটকা লেগেছে যে, সাধারণত এতদিন তো কেউ ঋতুমতী থাকে না! মনে হয়, ওরা আমাকে আর এখানে রাখবে না। হয় চালান করে দেবে, কিংবা মেরে ফেলবে।
     আমাকে মারবে! আমাকে মারবে? একটা মানুষকে কতবার মারা যায়? একটা মরা মানুষকে কি আর একবারও মারা যায়? তবু, তবু এই শরীরটাকে আমি ছাড়তে চাই না। আমায় চালান করে দিলেই ভালো। সেখানেও নিশ্চয় এদের মতো কিছু তিনপেয়ে জানোয়ারের দেখা মিলবে; আর আমি তাদের সামনে গিয়ে পা ফাঁক করে দাঁড়াব। দেখা যাবে, কার জোর বেশি! যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারে, তার; নাকি যে ধাক্কা খেয়েও পড়ে যায় না, তার!
0 Comments



Leave a Reply.

    Archives

    February 2021
    December 2020
    November 2020
    September 2020
    August 2019
    June 2019
    April 2019
    February 2019
    December 2018
    October 2018
    August 2018

Proudly powered by Weebly
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন