Agony Opera
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন
Search

যোনিকাহন:  ইভ এন্সলারের 'ভ্যাজাইনা  মনোলগ' এর নির্বাচিত  অংশ।। উপাসনা

23/6/2019

4 Comments

 
Picture

​[মার্কিনী নাট্যকার ও অভিনেত্রী ইভ এন্সলার এই মুহূর্তের আন্তর্জাতিক নারীবাদী আন্দোলনের একজনের প্রথিতযশা নেত্রী। থিয়েটার কর্মী হওয়ার সাথে সাথে তিনি একজন সমাজসেবী ও রাজনৈতিক কর্মী। তিনি সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত তার নাটক 'ভ্যাজাইনা মনোলগ' এর জন্য যা আজ অবধি ৪৮ টি ভাষায় অনূদিত ও ১৪০ টি দেশে অভিনীত হয়েছে। ভ্যাজাইনা মোনলগে অভিনয় করেছেন জেন ফন্ডা, হুপি গোল্ডবার্গ ও অপরা উইনফ্রের মত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্না অভিনেত্রীরা। মহিলাদের বিরূদ্ধে ঘটে চলা ক্রমিক হিংসার বিরূদ্ধে ইভ গড়ে তুলেছেন তাঁর 'ভি ডে ফাউন্ডেশন' যা বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত মহিলাদের পাশে দাঁড়ায়৷ পেয়েছেন অসংখ্য পুরষ্কার যার মধ্যে টোনি অ্যাওয়ার্ড ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মিডিয়া স্পটলাইট অ্যাওয়ার্ড উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য নাটকের মধ্যে 'গুড বডি', 'নেসেসারি টার্গেটস' ও 'ইমোশনাল ক্রিচার' বিশেষভাবে সমাদৃত। ]


ভূমিকা  ১

যোনি শিহরক, হৃদয় বিস্ফোরক সেই দেবদূতকে ।

আমরা সেই প্রজন্মের মানুষ যখন যোনিকে বলা হত “ওই জায়গাটা”। তাও ফিসফিস করে। এমন নয় যে কেউ যোনি, ক্ষুদ্রোষ্ঠ, বৃহদোষ্ঠ, ভগাঙ্কুর, যোনিদ্বার এই শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত ছিল না। তবু…

হিন্দু মন্দিরে প্রথম দেখি লিঙ্গম ও যোনি। পুরুষ ও স্ত্রী যৌনাঙ্গের প্রতীক। সংস্কৃত শব্দ যোনি, যার প্রতীক ফুলের মত, তার পুরুষ অর্ধাঙ্গের থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী বলে পূজিত হত। সেই বিশ্বাস তন্ত্রসাধনাতেও চারিত হয়। তান্ত্রিকদের বিশ্বাস, পুরুষ আধ্যাত্মিকতার শীর্ষে পৌঁছাতে পারে না, যতক্ষণ না তার দৈহিক ও মানসিক মিলন হয় উচ্চতর শক্তি, স্ত্রীশক্তির সঙ্গে।

আধ্যাত্মিক খ্রীষ্টানরা সোফিয়াকে আরাধনা করেছেন পবিত্র আত্মা হিসেবে, মেরি ম্যাগড্যালেনকে যীশুর বিচক্ষণতম শিষ্য হিসেবে। তান্ত্রিক বৌদ্ধরা এখনো বিশ্বাস করেন বোধির বাস স্ত্রীযোনিদ্বারে। ইসলামের সুফী সাধকেরা বিশ্বাস করে্ন ‘ফানা’ অর্থাৎ নির্বাণ লাভ সম্ভব শুধুমাত্র ফ্রাভাশি বা স্ত্রী আত্মার মধ্যে দিয়ে। ইহুদী ধর্মে শেকিনা হল স্ত্রীশক্তির এক রূপ। এরকম অজস্র উদাহরণ আছে।

এসব বিশ্বাস ও আচারকে যদিও পরবর্তীতে মূলধারার ধর্ম সম্পূর্ণ উলটে দিয়েছে, প্রান্তিক করে দিয়েছে নারীকে।

ইন্দো-ইউরোপিয়ান শব্দ কান্ট এসেছে দেবী কালীর কুণ্ডা বা কান্তি থেকে। এখন যে নারীবাদীরা কান্ট-পাওয়ার শব্দবন্ধটিকে প্রতিষ্ঠা করছেন, টিশার্ট থেকে বোতামে লিখে, এই মূল্যহীন হয়ে যাওয়া বা সরিয়ে দেওয়া শব্দের পুনরুদ্ধারকে আমার সেই প্রাচীন স্ত্রীশক্তির পুনর্প্রতিষ্ঠা মনে হয়।

১৯৭০ থেকে শুরু করে তৎপরবর্তী নারীবাদের তিন দশককে এক দুরন্ত রাগের প্রকাশ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। নারীশরীরের ওপর যাবতীয় অত্যাচার, ধর্ষণ থেকে শুরু করে জরায়ু ও জন্মদানের সিদ্ধান্তের অধিকারে বাধা, ধর্মের নামে শৈশবেই ভগাংকুর কেটে যোনিদ্বার সেলাই করার যে বিশাল মাপের আন্তর্জাতিক অপরাধ, সব যখন আলোচনায় উঠে আসে, রাগ হ‌ওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সুস্থির হয়ে ওঠা প্রয়োজন। এই রাগকে সৃষ্টিশীলতায় বদলে দিয়ে নিজেদের যন্ত্রণাকে প্রশমিত করা এবং হিংস্রতাকে দূর করা যায়।  
প্রথম যখন ইভ এন্সলারের এই উপস্থাপনা দেখতে যাই, দ্য ভ্যাজাইনা মনোলগ, যা কিনা দু’শ জন নারীর অত্যন্ত গভীর, নিবিড় ও লুকিয়ে থাকা অভিজ্ঞতা ও চিন্তার সাক্ষাতকারকে একটা নাটক ও কাব্যের রূপ দেওয়া—আমার মনে হয়েছিলঃ আমি তো এই পথ চলার কথা সবটাই জানি, এই যে সত্যিকে তুলে ধরা, গত ত্রিশ বছর ধরে হচ্ছে।

কিন্তু এই বইটি বিগত তিন দশকের রাগ উগরোতে থাকা ওই নেতিবাচক প্রকাশের থেকে একটু আলাদা। এতে রয়েছে ব্যক্তিগত, শরীরে ও মনে গেঁথে থাকা অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার কথা বলে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবার প্রয়াস।

~ গ্লোরিয়া স্টেইনেম

ভূমিকা ২

ভি-ডে অর্থাৎ ভ্যাজাইনা ডে

আমি জানিনা কী থেকে ঠিক হ’ল। ছোটবেলায় এমন কোন দিবাস্বপ্ন আমি দেখিনি যে বড় হ’লে আমাকে সবাই “দ্য ভ্যাজাইনা লেডি” বলে ডাকবে। কোনদিন ভাবিওনি যে যোনি নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কথা বলে বেড়াব এথেন্স, গ্রীসে অব্দি, কিংবা বাল্টিমোরে চার হাজার পাগল মহিলামহলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ভ্যাজাইনা মন্ত্র আবৃত্তি করব।

ফেব্রুয়ারী ১৪, ১৯৯৮, ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে জন্ম হয় আমাদের ভ্যাজাইনা ডে-র। নিউ ইয়র্কের হ্যামারস্টাইন বলরুমের বাইরে আড়াই হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছিল আমাদের এই উন্মাদ কার্যকলাপ দেখতে। ২০০০ সালে তা ছড়িয়ে পড়ে লস এঞ্জেলেস, সান্তা ফে, সারাসোতা, অ্যাস্পেন ও শিকাগোয়। তারপরে হাজার হাজার কলেজে ছাত্রছাত্রীরা উপস্থাপনা করেছে এই নাটকের। বর্তমানে ভি ডে র যে ফান্ড তা সারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে, প্রান্তিক নারীরা যেখানে অত্যাচারিত ও কঠিন লড়াইয়ে রত, তাঁদের সাহায্যে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হয়।

~ইভ এন্সলার 


যোনিকাহন

আপনাদের ভয় করছে নিশ্চয়ই? আমারও ভয় ছিল। সেজন্য এই লেখা শুরু করা। আমার ভয় ছিল নিজের যোনি নিয়ে। ভয় ছিল যোনি নিয়ে আমরা কী ভাবি তা নিয়ে, আর তার থেকেও বেশী ভয় ছিল যোনি নিয়ে আমরা যা এখনও ভাবি না তা নিয়ে।

নিজের যোনি নিয়েই ভয় ছিল। আমার যোনির দরকার ছিল অন্য যোনিদের- একটা গোষ্ঠীর, একটা চর্চার। ব্যাপারটা ঘিরে এত লুকোচুরি আর অন্ধকার—যেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। সেখান থেকে কেউ ফিরে আসেনা, তাই সেখানকার খবরও বাইরের দুনিয়ায় পৌঁছয় না।

প্রথমতঃ নিজের যোনি খুঁজে পাওয়াটাই একটা কঠিন কাজ। মেয়েদের, মহিলাদের সপ্তাহ, মাস এমনকি বছরও কেটে যায় নিজের যোনির দিকে একবারও না তাকিয়ে। আমি একজন বেশ প্রতিপত্তিশীল ব্যবসায়ী ভদ্রমহিলা কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সাক্ষাতকার নিতে গিয়ে; তিনি বলেছিলেন তিনি ব্যস্ত, এতটাই ব্যস্ত যে তাঁর সময় হয়নি নিজের যোনির দিকে তাকিয়ে দেখার। ওঁর বক্তব্য অনুযায়ী, নিজের যোনিকে আবিষ্কার করা মানে একটা গোটা দিনের কাজ। একটা লম্বা আয়নার সামনে থেবড়ে বসতে হবে, তারপরে সঠিক অবস্থান খুঁজে পাওয়া গেলেও চাই ঠিকঠাক আলো, যেন আয়নায় প্রতিফলনের সঙ্গে বসার কৌণিক অবস্থানের কাটাকুটি না হয়, ইত্যাদি। নিজের শরীরকে বাঁকিয়ে চুরিয়ে এত কিছু করার পর উঠে যখন দাঁড়াবে, ঘাড় শক্ত, পিঠে কোমরে ব্যথা, তুমি ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত। সে সময় ওঁর নেই। তাই আমি ঠিক করলাম কথা বলব যোনি নিয়ে, মহিলাদের সঙ্গে, যোনির জন্য সাক্ষাতকার, আর তার থেকেই জন্ম নিল এই যোনিকাহন বা ভ্যাজাইনা মনোলগস।

দুশ’র ওপর মহিলার সঙ্গে আমি কথা বলেছি। কেউ বৃদ্ধা, কেউ তরুণী, কেউ বিবাহিতা, কেউ একা থাকেন, কেউ সমকামী, কেউ হয়তো কলেজে পড়ান, কেউ অভিনয় করেন, কেউ কর্পোরেট জগতে, যৌনকর্মী, আফ্রিকান আমেরিকান, হিস্প্যানিক, এশিয়ান আমেরিকান, নেটিভ আমেরিকান, ককেশীয়, ইহুদী, ইত্যাদি।

প্রথম প্রথম মেয়েরা একটু অনিচ্ছুক ছিল কথা বলতে। লজ্জা পেত একটু। কিন্তু, একবার যদি বলা শুরু হয়ে যায়, তাহলে থামানোই মুশকিল। আসলে মেয়েরা নিজেদের যোনি নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসে, একান্তে। ব্যাপারটা নিয়ে আমি ওদের মধ্যে একটা ভীষণ উত্তেজনা লক্ষ্য করেছি, কারণ আগে কেউ এরকম প্রশ্ন তাদের করেইনি।

আচ্ছা, প্রথমে শুরু করা যাক যোনি শব্দটা দিয়ে। শুনলে যেন মনে হয় একটা ছোঁয়াচে রোগ, কিংবা ডাক্তারি কোন যন্ত্র। “নার্স, যোনিটা দিন, জলদি।“

যোনি

যোনি

যতবারই বলুন না কেন, ফারাক পড়ে না। শব্দটা এমনই যে কখনই যেন বলতে ইচ্ছে করে না। একটা হাস্যকর শব্দ, যৌনতার গন্ধও নেই। যৌনমিলনের সময়, পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকার জন্য যদি যৌনসঙ্গীকে বলেন “সোনা, আমার যোনিতে আঙুলটা ঘষ”, কতখানি হাস্যকর শোনায়!! যোনিকে নিয়ে ভয় হয়। তাকে যে কী নামে ডাকব, আর কী নামে ডাকব না। একজন ভদ্রমহিলা বলেছিলেন তাঁর মা তাকে বলতেন “পাজামার নীচে প্যান্টি পরিস না, তোর পুসিক্যাটকে হাওয়া লাগাতে দিতে হবে তো!”। ওয়েস্টচেস্টারে কেউ বলে পুকি, নিউ জার্সিতে টোয়াট। এছাড়া রয়েছে পাউডারবক্স, ডিরিয়ারি, পুচি, পুপি, পিপি, পুপেলু, পুনানি, প্যাল, পিচে, টোডি, ডিডি, নিষি, ডিগনিটি (!!), মাংকিবক্স, কুচি স্নরচার, কুটার, ল্যাবে, উই উই, হর্সস্পট, ন্যাপি ডাগ আউট, মঙ্গো, ফ্যানিবু, কনি, মিমি, তমালি, মার্শ্মেলো, ঘুলি, পসিবল, শমেন্ডে, স্প্লীটনিশ, এমনিতর কত শত নাম।

তাও আমি বেশ ভয়ে আছি।

যোনি নিয়ে।

কাহিনী ১: যৌনকেশ

লোম না ভালোবাসলে যোনিকে ভালোবাসা যাবে না। অনেকেই লোম পছন্দ করে না। আমার প্রথম স্বামী একদমই লোম পছন্দ করত না। ও বলত নোংরা লাগে। আমাকে শেভ করাতো। আমার যোনি ফুলে ফুলে থাকত, নিরাভরণ, যেন ছোট বাচ্চা মেয়ের, সেটা ওকে উত্তেজিত করত। কিন্তু সঙ্গমের সময় আমার যেন মনে হত দাড়ি ঘষার মত লাগছে। ছড়ে যেত, জ্বালা করত। লাল লাল হয়ে ফুলে ফুলে উঠত। আমি বললাম আমি শেভ করব না। তা আমার বর অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ল। যখন আমরা থেরাপি করাতে গেলাম, ও বলল যে আমি ওকে শারীরিক তৃপ্তি দিতে পারি না, তাই অন্য মেয়েদের সঙ্গে ওকে শুতেই হয়।

থেরাপিস্ট এর পরামর্শ  মত বিয়ে বাঁচাতে, যেহেতু বিয়ে নাকি একটা জটিল ব্যাপার, আমি আবার শেভ করলাম, ওই করে দিল খুশিতে। যদি এইভাবে ওর অন্য সম্পর্ক বা অন্য মেয়েদের দিকে আকর্ষণ কমে। কিন্তু আবার সঙ্গমের সময় আমার ব্যথা লাগতে থাকল, আমার বরের যৌনকেশের তীব্র ঘষা। আমি বুঝলাম যে লোমটা আছে একটা কারণেই। ফুলের গর্ভাশয়ের চারপাশে পাপড়ির মত, বাড়ির চারপাশে লনের মত। যোনিকে ভালোবাসতে গেলে যৌনকেশকে মেনে নিতেই হবে। ইচ্ছেমত বেছে তো নেওয়া যাবে না। তাছাড়া, আমার বরের অন্যান্য মেয়েদের সঙ্গে শুয়ে বেড়ানো বন্ধ হয়নি যদিও।

কাহিনী ২: জলস্রোত

(ইনি একজন ইহুদী মহিলা)

ওইখানটা? ওইখানটার ঠিক কোন খোঁজ রাখি নি ১৯৫৩ থেকে। না না, আইসেনহাওয়ারের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। ওই জায়গাটা আসলে বাড়ির বেসমেন্টের সেলারের মত। স্যাঁতসেঁতে, চিটচিটে। সচরাচর কেউ যেতে চায় না।

কিছু মনে কোরো না,তোমার সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলতে পারব না। একজন আধুনিকা, সপ্রতিভ মেয়ে, কী যে আমাদের মত বুড়িদের এইসব নিয়ে জিজ্ঞেস করে বেড়াচ্ছ!

উফফ

জিসাস।

আচ্ছা।

বলছি।

একটা ছেলে ছিল, ভালো লাগত তাকে। অ্যান্ডি লেফটকভ। আমার মতই লম্বা। একদিন সে আমাকে ডেট এ ডাকল… তার গাড়িতে করে বেরনো। ইসস!! বলতে পারব না তোমাকে এসব। অসম্ভব। ছি ছি।

জানোই তো ওই জায়গাটা, সেলারের মত, নানারকম অদ্ভুত শব্দ শুনতে পাবে মাঝে মাঝে। যেমন সেলারের পাইপ, ইঁদুর পোকামাকড় বা ছোটখাটো আরও কত কী আটকা পড়ে যায় সেখানে, ভিজে ওঠে কখনও কখনও, তখন কাউকে গিয়ে সেই ফুটোফাটা বন্ধ করতে হয়। নইলে বন্ধই থাকে ওখানকার দরজা। মানে, বাড়ির এই অংশটা সবাই ভুলেই যায়। কিন্তু একটা সেলার সবার বাড়িতেই আছে।

যাহক। বলছিলাম অ্যান্ডি র কথা। দারুণ দেখতে ছিল। বেশ দাঁও বলতে পারো। অন্তত সেযুগে আমরা তাইই বলতাম। ওর শেভি বেল এয়ার গাড়িতে যাচ্ছিলাম। মনে আছে, আমার পা লম্বা বলে বসতে অসুবিধে হচ্ছিল। ড্যাশবোর্ডে বারবার ঠোকা খাচ্ছিল। ও হঠাৎ করেই সিনেমার মত আমাকে টেনে নিয়ে চুমু খেল। আমি খুব উত্তেজিত হয়ে পড়লাম স্বাভাবিকভাবেই। এতটাই উত্তেজিত যে ওইখানটা ভিজে উঠল। কিছুতেই সামলাতে পারছি না, যেন বাঁধভাঙা বন্যার জল। প্যাণ্টি ভেসে সিট পুরো ভিজে গেল। নতুন গাড়ি। হিসি নয় ওটা, গন্ধও পাচ্ছিলাম না আমি তেমন কোন। কিন্তু অ্যান্ডি বলল, পচা দুধের মত গন্ধ নাকি পাচ্ছে, তাছাড়া ওর গাড়ির সিটে দাগ লেগে গেল। ওর কাছে আমি একটা নোংরা অদ্ভুত মেয়ে হয়ে গেলাম। আমি বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে এমনিতে এমন হয় না, চুমুর জন্যই। আমার হলুদ রঙের সুন্দর নতুন জামা দিয়ে সীট টা মুছলাম, জামায় দাগ, বিশ্রী। ও আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিল ঠিকই, কিন্তু আর একটাও কথা বলল না। সেই যে গাড়ি থেকে আমি নামলাম, ওই দরজাটা ওইখানকার দরজাটাও বন্ধ করে দিলাম। পরে আরও অনেকের সঙ্গে ডেট এ গেছি, কিন্তু এত ভয় করত যে আবার যদি ওরকম হয়, তাই বেশি ঘনিষ্ঠ হইনি।

এ নিয়ে ভয়ানক সব দুঃস্বপ্ন দেখতাম একসময়। দেখতাম বার্ট বলে আরেকটি ছেলে, যদিও আমার জীবনে সে বেশিদিন ছিল না। তবু স্বপ্নে তাকে দেখতাম। বার্ট আর আমি, একটা রেস্তোরাঁইয় গেছি। , আটলান্টিক সিটির মত একটা জায়গায়। বিশাল বড় রেস্তোরাঁ, ঝাড়লন্ঠন, ভেস্ট পরা পরিচারক পরিচারিকা। বার্ট আমাকে একটা অর্কিড করসেজ দিচ্ছে, আমি আমার ব্লেজারে সেটা লাগাচ্ছি, হাসছি, ককটেল খাচ্ছি, চিঙড়ির দারুণ দারুণ পদ। হঠাত বার্ট আমাকে টেনে নিয়ে আমার চোখের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে চুমু খেতে যাবে-- ঘরটা কেঁপে ওঠে। টেবিলের তলা থেকে একঝাঁক পায়রা বেরিয়ে ডানা ঝাপ্টাতে থাকে, ঘরময় উড়তে থাকে, পায়রা ওখানে কোত্থেকে এলো জানি না। আর তারপরেই আমার ওইখান থেকে বন্যার জল হুড়হুড় করে বেরিয়ে আসবে। তার মধ্যে মাছ অব্দি খেলা করে বেড়াবে, ছোট ছোট নৌকো। সারা রেস্তোরাঁ সেই জলে ভরে যাবে। বার্ট সেই হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ভয় আর হতাশা মেশানো একটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে। উফফফ… আবার সেই একই কাজ করে ফেললাম আমি!!

নাহ এখন আর এইসব স্বপ্ন দেখি না। যবে থেকে ক্যান্সারের জন্য গর্ভাশয় এবং গোটা ব্যাপারটাই বাদ পড়েছে।

নাও এবার খুশি? বলতে বাধ্য করলে তুমি আমাকে। আমার মত এক বুড়িকে ওই জায়গাটা নিয়ে কথা বলতে বাধ্য করলে। খুশি তো। তবে কী জানো, এই প্রথম এই নিয়ে কারুর সঙ্গে কথা বললাম। সত্যি বলতে কি, ভালোই লাগছে।


কাহিনী ৩: ভ্যাজাইনা ওয়ার্কশপ!

আমার যোনি একটা ঝিনুকের খোলার মত। একটা সুডৌল গোলাপী, ঝিনুকের খোলা যেন। খুলছে, বন্ধ হচ্ছে, বন্ধ হচ্ছে, খুলছে। আমার যোনি একটা ফুলের মত, টিউলিপ ফুলের মত মাঝখানটা গভীর, একটা মৃদু সুগন্ধ, নরম কিন্তু সটান পাপড়ি। এসব আমি উপলব্ধি করেছি এক ভদ্রমহিলার সঙ্গে আলাপ হবার পরে, যিনি ভ্যাজাইনা ওয়ার্কশপ করেন। প্রথমদিন উনি আমাদের প্রত্যেককে নিজের নিজের অপূর্ব, অদ্বিতীয় সুন্দর যোনির ছবি আঁকতে বললেন। একজন, যার বাচ্চা হবে, একটা বড় লাল মুখ আঁকল, যার থেকে টাকা ঝরছে। একজন খুব রোগাটে ভদ্রমহিলা আঁকলেন ডেভনশায়ার নকশা আঁকা একটা বড় থালা । আমি আঁকলাম একটা কালো বড় ব্ল্যাকহোলের মত গর্ত, চারপাশে হিজিবিজি রেখা। আমার যোনিকে আমি সবসময় ভেবেছি শরীরের মধ্যে যেন একটা ভ্যাকুয়াম, যা চারপাশের সবকিছুকে গিলে খেয়ে নেবে। আমার যোনিকে আমার সবসময় একটা আলাদা সত্ত্বা মনে হয়েছে, নিজের ছায়াপথে ঘুরতে থাকা একটা নক্ষত্র, ধীরে ধীরে নিজেকেই পুড়িয়ে বিস্ফোরিত হয়ে, হাজার হাজার টুকরোয় ছড়িয়ে পড়ে জন্ম দিচ্ছে নতুন ছোট ছোট যোনির। তারা আবার ঘুরতে থাকছে তাদের ছায়াপথে। আমি আমার যোনিকে কোন অঙ্গ হিসেবে দেখি না, যা শুধুমাত্র আমার দু পায়ের ফাঁকে আটকে থাকবে।

তারপরে আমাদের বলা হ’ল হাত আয়না দিয়ে নিজেদের যোনি দেখতে এবং তারপরে বর্ণনা করতে। সত্যি বলতে কি, এর আগে কখনও আমি দেখিইনি নিজের যোনি, মনেই হয় নি। প্রথমে একটু অস্বস্তিই হচ্ছিল। সবচেয়ে আশ্চর্য লাগল এতগুলো চামড়ার স্তর দেখে। বাকরুদ্ধই হয়ে গেছিলাম। যেন গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, সুপ্রাচীন এবং সুন্দর। একটা টাটকা তাজা বাগানের মত সরলতাও আছে। বেশ মজাও লাগছিল, হাসি পাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, ওয়ার্কশপে ওই নীল ম্যাটে শুয়ে শুয়ে সারাদিন যেন আমি আমার যোনিকে পরীক্ষা করে যেতে পারি। তখন সেই ভদ্রমহিলা আমাদের জিজ্ঞেস করলেন কতজনের অর্গ্যাজম হয়েছে। দু’জন হাত তুলল। আমি তুলিনি। যদিও অর্গ্যাজম আমার হয়েছিল, কিন্তু সবগুলোই আচমকা। কখনও স্বপ্নে, কখনও স্নানের সময়, কখনও সাইকেল চালাতে গিয়ে বা ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে, কিন্তু নিজে নিজে কী করে অর্গ্যাজম করা যায় তা আমি জানতাম না। চেষ্টাই করিনি কোনদিন, কারণ ব্যাপারটা খানিকটা নিষিদ্ধ মনে হয়েছিল, খানিকটা যেন রহস্যাবৃত রাখাই সমীচীন মনে হয়েছিল। উনি আমাদের বললেন হাত আয়না দিয়ে দেখে ভগাঙ্কুর খুঁজতে। আমার হঠাত করে ভয় করতে শুরু করল। বুঝতে পারলাম যে চিরকাল আমি ব্যাপারটাকে এড়িয়ে গেছি এই ভয়ে যে আমার হয়তো ভগাঙ্কুর নেইই। আমি হয়তো একটা অক্ষম, ঠাণ্ডা, শুকনো, তেতো মেয়ে—উফফফ। মনে পড়ল দশ বছর বয়সে, সাঁতার কাটতে গিয়ে সোনার আঙটি হারিয়ে ফেলার কথা। লেক এর নীচ অব্দি খুঁজেই যাচ্ছি, খুঁজেই যাচ্ছি, পাচ্ছি না। উনি এগিয়ে এলেন আমার কাছে আমাকে ঘেমে নেয়ে হাঁফিয়ে যেতে দেখে। বললাম, “আমার ভগাঙ্কুর নেই, হারিয়ে গেছে।“ উনি হেসে উঠলেন। আমার কপালে আলতো টোকা দিয়ে বললেন, কিচ্ছু হয় নি, ভগাঙ্কুর কোন হারানোর জিনিষ না। আবার চেষ্টা করতে করতে আমার মনে হ’ল যেন আমি এক মহাকাশচারী, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আবার ঢুকছি। ধীরে ধীরে, শান্তভাবে। নিজের পেশী, রক্ত, কোষ যেন নতুন করে আবিষ্কার করছি। তারপরে এক ঝটাকায় পিছলে ঢুকে গেলাম, সহজেই। ভেতরটা উষ্ণ, অল্প অল্প কাঁপছে, জীবন্ত যেন। চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে থাকলাম আর মনে হ’ল আমার আঙুলের ডগায় যেন আমি নিজেই। প্রথমে একটা শিরশিরানি হ’ল, যেটা উপভোগ করতে ইচ্ছে হ’ল, মনে হচ্ছিল থাকুক আরেকটু। তারপরে যেন একটা ভূমিকম্প হয়ে গেল, লাভাস্রোত বেরিয়ে এল, ওই অতগুলো চামড়ার স্তর ভেদ করে। আমি গিয়ে দাঁড়ালাম আলো আর নৈঃশব্দে মাখামাখি একটা দিগন্ত, যা মিলিয়ে যাচ্ছে আমার একটা ফুল ফল গান ভরা সাজানো সুন্দর সবুজ মাটিতে।  স্তব্ধ হয়ে শুয়ে রইলাম খানিকক্ষণ।আমার যোনিই যেন আমার ভবিতব্য। আমার যোনি আমার যোনি, আমিই।

কাহিনী ৪: ও দেখতে ভালোবাসত বলে

আমার যোনিকে ভালোবাসতে শেখাটা কিন্তু ঠিক পলিটিক্যালি কারেক্ট নয়। মানে বাথটাবে বসে আত্মরতিতে মগ্ন অবস্থায় তেমনটা হওয়া হয়তো উচিত ছিল, কিন্তু উঁহু, তা হয়নি। যোনি সুন্দর। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতা আমাদের হাড়েমজ্জায় গেঁথে যাওয়া নিপীড়ন নিজেদের ঘেন্না করতে শেখায়। আমিও তাই শিখেছিলাম। এতই ঘেন্না করতাম নিজের ঊরু, নিজের যোনিকে যে, ভাবার চেষ্টা করতাম আমার দু’পায়ের ফাঁকে একটা অন্য কিছু আছে। এই নরম, সুন্দর, আরামদায়ক, রাজকীয় একটা বিছানা; কিংবা রেশমী রুমাল, বা ফুলদানি, বা ছোট্ট সাজানো বাগান, স্ফটিকজল একটা ছোট্ট পুকুর- ইত্যাদি। মোটামুটি ভুলেই গেছিলাম যে যোনি বলে একটা কিছু সত্যি সত্যিই আছে।

যখনই কারুর সঙ্গে শুতাম, সেই পুরুষটিকে কল্পনা করতাম মিঙ্ক ফার এর দামী মাফলার, অথবা টকটকে লাল গোলাপ, বা চিনেমাটির পাত্র, এই ধরণের কিছু। তারপরে আলাপ হ’ল বব এর সঙ্গে। বব অতি সাধারণ, রোগা লম্বা, খাকি রঙের জামাকাপড় পরা। বব মশলাদার খাবার পছন্দ করত না, প্রডিজি দের গান শুনত না। সেক্সি অন্তর্বাসে কোন আগ্রহ তার ছিল না। নিজের অনুভূতির কথাও বিশেষ বলত না। জীবনে যে গভীর কোন সমস্যা ছিল, তাও না। মদ্যপ ছিল না, রহস্যময় ছিল না, খুব ঠাট্টা ইয়ার্কি বা গুছিয়ে কথা বলা এসবও পারত না। আবার বাজে ব্যবহার করছে, কিংবা সময় দিচ্ছে না, তাওও নয়। নিজেকে নিয়ে মগ্নও থাকত না, জোরে গাড়িও চালাতো না। খুব যে পছন্দ আমার তাকে হয়েছিল, তা না। ওকে আমার চোখেই পড়ত না কোনদিন, যদি না আমার পড়ে যাওয়া কয়েকটা খুচরো পয়সা কুড়িয়ে দিতে গিয়ে হাতে হাত ঠেকে যেত। সেই থেকে একটা কী হ’ল, আমিও ওর সঙ্গে শুয়ে পড়লাম! ঠিক তখনই অত্যাশ্চর্য ঘটনার সূত্রপাত। বব কে বলা যায় যোনিবিশেষজ্ঞ, বা যোনিপ্রেমিক, বা যোনির সমঝদার। যোনি বিষয়ক সবকিছু বব ভালোবাসত- স্বাদ, গন্ধ, স্পর্শ, এবং সবচেয়ে বেশী ভালোবাসত দেখতে। প্রথমবার যৌনতার সময় আমাকে ও বলল

-তোমাকে দেখতে চাই।

- আমি এখানেই আছি।

-না, সেরকম না, আমি দেখতে চাই।

-আলোটা জ্বালাও তালে।

আমি মনে মনে তখন ভাবছি অদ্ভুত একটা লোক, ভয় ও করছে…

আলোটা জ্বালিয়ে বব বলল “হুঁ তৈরি, দেখি।“

আমি হাত নাড়িয়ে বললাম “আমি এখানেই আছি, এইখানেই।“

তারপরে ও আমার জামাকাপড় খুলতে শুরু করল।

-কী করছ বব?”

-দেখতে চাই তোমাকে।

-কেন, কোন দরকার তো নেই, এমনিই ঝাঁপ দাও।

-না, আমাকে দেখতেই হবে।

-তা তুমি কি আগে কখনও লাল রঙের চামড়ার কাউচ দেখো নি?

বব কোন উত্তর না দিয়ে খুলতে থাকল। আমার বমি পেল।

বললাম “ এতটা ঘনিষ্ঠতা আমি চাই না, কেন তুমি এমনি করতে পারবে না?”

না, আমাকে দেখতেই হবে তোমায়।

আমি নিঃশ্বাস বন্ধ করে রইলাম। আর বব দেখতে শুরু করল। বড় বড় চোখ করে, গভীর শ্বাস নিয়ে, হাসল, একটা মৃদু শব্দ করল, আবার দেখতে থাকল। ওর নিঃশ্বাস আরও দ্রুত ও ঘন হয়ে উঠতে থাকল, একটা হিংস্র, ক্ষুধার্ত কিন্তু সুন্দর জন্তুর মত দেখাতে থাকল ওকে।

আমায় বলল,

“তুমি অসম্ভব সুন্দর, মার্জিত, গভীর, নির্মল এবং বন্য।“

“তুমি ওইখানে এইসব দেখতে পাচ্ছ?

“হ্যাঁ, তার চেয়েও অনেক অনেক অনেক বেশী কিছুও দেখতে পাচ্ছি। “

প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে ও শুধু তাকিয়েই রইল যেন ম্যাপ দেখছে, বা চাঁদ, কিন্তু দেখছে আমার যোনি! আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওর মুখের ভাব এতটাই অকৃত্রিম আর বাঙময় ছিল যে আমি ভিজতে শুরু করলাম। উত্তেজিত বোধ করলাম। ওর চোখ দিয়ে যেন নিজেকে দেখতে পেলাম। নিজেকে একটা মহামূল্যবান ছবির মত সুন্দর লাগতে শুরু করল। ববের মুখে কোন ভয় নেই, ঘেন্না নেই। আমার গর্ব হতে থাকল, নিজের যোনিকে নিয়ে।বব তো নিজেকে হারিয়ে ফেললই, আমিও।


কাহিনী ৫ : আমার জমি, আমার গাঁ 

১৯৯৪ সালে লরেন লয়েড এর সহায়তায় দুমাস ক্রোয়েশিয়া আর পাকিস্তানে কাটানোর সুযোগ পাই, বসনিয়ার উদ্বাস্তু মেয়েদের সাক্ষাতকার নিতে। যখন নিউ ইয়র্কে ফিরলাম, অসহ্য কষ্ট, রাগ নিয়ে। ২০০০০- ৭০০০০ মেয়ে তখন মধ্য ইউরোপে ধর্ষিত হচ্ছে ১৯৯৩ থেকে, যেমন হয় যুদ্ধের নিয়মে, এবং সেটা থামাতে কেউ কিচ্ছু করছে না। য়ামার এক বন্ধু বলল এত আশ্চর্য হবার তো কিছু নেই। পাঁচ লাখেরও বেশি মেয়ে প্রত্যেকবছর এদেশে ধর্ষিত হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি ছাড়াই।

এটা সেইরকম একজন ধর্ষিতার গল্প। আমি তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ আমাকে বলার জন্য। তার সাহস ও শক্তির কাছে মাথা নুইয়ে আসে। প্রত্যেকটি মেয়ে যারা এই প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়ার ভয়াবহতার শিকার। বসনিয়ার মেয়েদের জন্য…

আমার যোনি তো ছিল যেন আমার নিজের গ্রামের মত। সবুজে ঘেরা, গোলাপী ফুলে ভরা মাঠ, গরু চরে বেড়াচ্ছে, আর সূর্য ঢলে পড়ার মুখে আমার প্রেমিক নরম খড়ের টুকরো বোলাচ্ছে আমার গায়ে।

আমার দুপায়ের ফাঁকে কিছু একটা ছিল। কী তা জানি না। কোথায় তাও জানি না। ছুঁয়েও দেখিনি কখনো। তখনও না, এখনও না, সেই ঘটনার পর থেকে কোনদিনই না।

আমার যোনি কথা বলত খুব, অধৈর্য, ছটফটে, কিছুতেই থামতে চায় না, কিছুতেই থামে না তার আহ আহ করে পুলকিত চিৎকার। কিন্তু যবে থেকে দুঃস্বপ্ন আসতে শুরু করল যে ওইখানে একটা মোটা কালো মাছ ধরার জালের মধ্যে একটা মরা জন্তু আটকে পড়েছে। সেই মরা দেহের গন্ধটা কোনদিন যাবে না। গলাটা চেরা, আর রক্ত ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার জামাকাপড়।

আমার যোনি মেয়েদের গান গাইত, ছাগলের গলায় বাঁধা ঘণ্টার মত মিষ্টি শব্দ করত, হেমন্তের মাঠের গান, যোনির গান, ঘরের গান। কিন্তু সেই যে জওয়ানরা এসে ওখানে রাইফেল ঢুকিয়ে দিল, সেই থেকে আর গায় না। এত ঠাণ্ডা সেই লোহার দণ্ড, যে হৃদপিণ্ড অব্দি চিরে দিল। বুঝতে পারছিলাম না ওইভাবেই গুলি করে ঘিলুসমেত উড়িয়ে দেবে কিনা। ছ’জন, ছ’টা কালো মুখোশ পরা রাক্ষস, যা পারছিল ঢোকাচ্ছিল। বোতল, লাঠি, ঝ্যাঁটাও।

আমার যোনিতো ছিল স্বচ্ছতোয়া নদীর মত, তার টলটলে জল ছাপিয়ে উঠত রোদ ঝলমলে পাড়। আমার ভগাঙ্কুর যেন নুড়িপাথর, তার ওপর দিয়ে বয়ে যেত কুলকুল করে। সেই তখন থেকে আর নয়, যখন টের পেলাম আমার ভগাঙ্কুর ছিঁড়ে নিচ্ছে ওরা, ছিড়ে নিচ্ছে ঠোঁট, যোনিমুখের চামড়া, লেবুর খোসা ছাড়ানোর মত করে।

আমার যোনি ছিল আমার শস্যশ্যামলা গ্রাম, আমার গ্রাম। তখন থেকে আর নয় যখন ওরা সাতদিন ধরে ক্রমাগত একের পর এক ওদের নোংরা বীর্য ঢালল। পোড়া মাংস আর গুয়ের গন্ধ। আমি একটা দূষিত, পুঁজ রক্ত বিষ ভরা নদী হয়ে গেলাম। সব মাছ মরে গেল, শুকিয়ে গেল সব ফসল।

ওরা আমার গ্রামে হামলা করল, ভেঙেচুরে আগুন ধরিয়ে দিল আমার ঘরবাড়িতে। আমি এখন আর ছুঁই না, তাকাই না। এখন আমি অন্য কোথাও থাকি। জানি না কোথায়।


কিছু তথ্য:

১। ভগাঙ্কুর একটা অদ্ভুত জিনিস। এর একটাই কাজ, সেটা হচ্ছে শিহরণ অনুভব করা, অনন্য শিহরণ। আট হাজার স্নায়ু রয়েছে এই ছোট্ট প্রত্যঙ্গটায়, যা শরীরের আর কোথাও নেই। পুরুষের লিঙ্গের দ্বিগুণ। উনিশ শতকে যেসব মেয়েরা হস্তমৈথুন করে কামশীর্ষে পৌঁছনো শিখে ফেলত, পেয়ে যেত অপূর্ব সুখের সন্ধান, তাদের অসুস্থ ভাবা হত। তাদের “সারিয়ে” তোলা হত, ভগাঙ্কুর কেটে বাদ দিয়ে, কিংবা সতীত্বের পর্দা পরিয়ে অর্থাৎ, যোনির ওষ্ঠদুটি সেলাই করে দিয়ে। কখনো কখনো গর্ভাশয় বাদ দেওয়া হত। কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্রের  ইতিহাসে ছেলেদের হস্তমৈথুন বন্ধ করার জন্য অণ্ডকোষ বাদ দেবার কোন নথি নেই।

যোনিকে পঙ্গু করে দেবার এই কাজ আট থেকে দশ কোটি মেয়ের ওপর হয়ে চলেছে। মূলতঃ আফ্রিকান দেশগুলোয়। সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকরভাবে এবং কোন সঠিক ডাক্তারি পদ্ধতি ছাড়াই এভাবে ভগাঙ্কুর কেটে বাদ দেওয়া বা ল্যাবিয়া (ওষ্ঠ) সেলাই করার ফলে টিটেনাস, সেপটিসেমিয়া, হেমারেজ, কঠিন ইনফেকশন গর্ভাশয়ে, ফিসচুলা, গর্ভপাত, প্রসবের সময় চরম কষ্ট ও ঝুঁকি এবং তা থেকে মৃত্যু এসব তো সাধারণ ব্যাপার।


২। ১৫৯৩ সালে ডাইনি বলে চিহ্নিতকরণের পর এক মহিলার বিচারসভায় একজন আইনজীবী, যিনি নাকি একজন বিবাহিত পুরুষ, প্রথমবার ভগাঙ্কুর আবিষ্কার করেন এবং নাম দেন শয়তানের বোঁটা, যা নাকি ডাকিনী হবার অকাট্য প্রমাণ। একটা মাংসপিণ্ড।


[অনুবাদকের বিবৃতি

বইটির অংশবিশেষ অনুবাদের চেষ্টা করলাম। আমাদের দেশে নারীবাদ এখনো এই স্তরে এসে পৌঁছয়নি। ভারতের গ্রামেগঞ্জের নিপীড়িত শোষিত ধর্ষিত এবং প্রতিমুহূর্তে পর্বতপ্রমাণ বাধা অতিক্রম করে ন্যূনতম অধিকার আদায় করতে চাওয়া বা না চাওয়া বা একেবারেই না পাওয়া নারীদের কাজে হয়তো এই অনুবাদ লাগবে না। এমনকি মধ্যবিত্ত সমাজের সাধারণ মেয়েদেরও না। এখনই লাগবে না। এ হয়তো শুধুমাত্রই সুযোগ সুবিধাপ্রাপ্ত বুদ্ধিজীবি গোষ্ঠীর নারীবাদের আখ্যান। অনেকে বলবেন বড়লোক শৌখিন নারীবাদীদের বাড়াবাড়ি। ইত্যাদি। কিন্তু সবকিছুই তো কোথাও না কোথাও শুরু করতে হয়। আমরা শুরু করলাম। রইল। অনেকের কাজে লাগতেও পারে। কিছু আগুন জ্বলতেও পারে।]


4 Comments
Tapas
23/6/2019 17:35:19

Good subject beautiful translet thanks for new exploration of woman deep dream

Reply
ইমরান ওয়াহিদ
24/6/2019 14:32:02

যে যাই বলুক না কেন, যোনীকে যতদিন কোটরন্দী করে সঙ্গোপনে রাখা হবে ততদিন এ নিয়ে ফ্যাসিনেশন এবং অপ্রেশন চলবেই। এমনকি সুবিধাপ্রাপ্তদেরও অধিকাংশই নিজের যোনীর সাথে পরিচিত নন। পরিবারের নারীমহলেও যোনী ট্যাবু। ট্যাবু তো ভাংতে হবেই। তার জন্যে এক না একভাবে প্রচেষ্টাও চালাতে হবে

Reply
priyanka das
24/6/2019 17:23:18

যোনি নিয়ে সংস্কারবদ্ধ ধারণার উত্তরণ ঘটানো কষ্টসাধ্য। তবে চেষ্টা ছাড়া যাবে না

Reply
kabir ahmed
25/6/2019 12:19:56

দারুণ তথ্যসমৃদ্ধ!

Reply



Leave a Reply.

    Archives

    February 2021
    December 2020
    November 2020
    September 2020
    August 2019
    June 2019
    April 2019
    February 2019
    December 2018
    October 2018
    August 2018

Proudly powered by Weebly
  • Home । হোম
  • Blog । ব্লগ
  • Submit | লেখা পাঠাবার নিয়ম
  • Subscribe। গ্রাহক হোন